শব্দকোষ ও পারিভাষিক শব্দ – যখন কোন ভাষার শেষ বক্তা মৃত্যুবরণ করেন তখন সে ভাষাটিকে মৃত বা বিলুপ্ত ভাষা হিসেবে গণ্য করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ভাষার পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। ৭০ খৃষ্টাব্দে হিব্রু ভাষার মৌখিক ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। ১৯ শতকে এসে এলিজার বেন ইয়েহুদা (১৮৫৮-১৯২২)’র প্রচেষ্টায় দৈনন্দিন কাজে হিব্রু ভাষার ব্যবহার নতুন করে শুরু হয়।
বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ হিব্রু ভাষায় কথা বলেন। পৃথিবী থেকে কতগুলো ভাষা এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য নেই কারো কাছে। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার তথ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এখানে ইস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটির স্বায়ত্তশাষিত গবেষণা সংস্থা ইনষ্টিটিউট ফর ল্যাংগুয়েজ ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি’ (আইএলআইটি) এর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। আইএলআইটি এ পর্যন্ত ৫৭৩টি বিলুপ্ত ভাষাকে সনাক্ত করেছে।
Table of Contents
শব্দকোষ ও পারিভাষিক শব্দ
পিজিন (Pidgin)
পিজিনের প্রচলিত ব্যুৎপত্তি হল ইংরেজি business। চীনারা ইংরেজি business কে বিকৃতভাবে উচ্চারণ করতো এবং তার থেকেই পিজিন শব্দের উদ্ভব (য়েসপের্সেন ১৯২২:২২২)। বর্তমানে এই ব্যুৎপত্তির যথার্থতা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে এমন ব্যুৎপত্তি মানতে রাজি নন (দ্র. ক্লিনেক ১৯৫৯: ২৭১-২৭২)। পিজিন শব্দটি প্রথমে চীনা পিজিন ইংরেজি সম্বন্ধে ব্যবহৃত হত এবং পরে তা একই ধরনের অন্যান্য ভাষা সম্পর্কে ব্যবহৃত হতে থাকে।
পিজিন হলো সংযোগ ভাষা (Contact Language), কারো মাতৃভাষা নয়। সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেখানে ভাষীরা একে অপরের ভাষা জানে না, সেখানে সীমিত ক্ষেত্রে সংজ্ঞাপনের জন্য পিজিনের উদ্ভব হয়ে থাকে। পিজিনের বৈশিষ্ট্য হলো তার সীমিত শব্দভাণ্ডার। অনেক ব্যাকরণগত সংক্রিয়া (System) যেমন বচন, লিঙ্গ এবং বহু অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য হ্রাস প্রাপ্ত হয়। এই হ্রস্বায়নের অপর নাম সরলীকরণ (Simplification)। বর্তমানে এটা বিতর্কের বিষয় যে অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যহীন (less redundant) পিজিন মান্য ভাষার চেয়ে সরল না জটিল (ডি ক্যাম্প ১৯৭১: ১৫)।
পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই পিজিন ভাষা বলা হয়ে থাকে। ভারতবর্ষে চার রকমের পিজিনের কথা শুখার্টু বলেছেন (দ্রু গিলবার্ট ১৯৮০: ৩৮-৬৪)। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও এই ভাষা বলা হয়। জার্মান দেশে বিদেশী শ্রমিকেরা স্থানীয় ভাষাকে অর্থাৎ জার্মানকে ভিত্তি করে একটি পিজিন তৈরী করেছে।
ক্রেয়ল (Creole)
হিম্পানি এবং ফরাশি ভাষার মাধ্যমে পর্তুগিজ Crioulo থেকে আগত ইংরেজি ক্রেয়ল (Creole) শব্দের মৌলিক অর্থ ক্রান্তিবৃত্তীয় এবং আধা-ক্রান্তিবৃত্তীয় (tropical or semi-tropical) অঞ্চলে জাত এবং পরিপালিত ইউরোপীয় মানুষ।
পরবর্তীকালে এর অর্থ বিস্তার ঘটে, স্থানীয় (Native) লোকেদের এবং অন- ইউরোপীয় লোকেদের বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়, যেমন এই অর্থে আফ্রিকান দাসদেরও বুঝিয়ে থাকে। পরে এই পরিভাষা ব্যবহৃত হত ক্যারিবীয় অঞ্চলে এবং পশ্চিম আফ্রিকার ক্রেয়লদের দ্বারা কথিত কোনো কোনো ভাষা বোঝাতে।
পরে এই পরিভাষা এই ঠাটের অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হতে শুরু করে। অধিকাংশ ক্রেয়লই, পিজিনের মতো ইউরোপীয় ভাষা-ভিত্তিক অর্থাৎ প্রতিটি ক্রেয়লই এক বা একাধিক ইউরোপীয় ভাষা থেকে তার শব্দভাণ্ডার আহরণ করেছে। ফরাসি ক্রেয়ল (একে পাতোয়া (Patois)ও বলা হয়) এবং ইংরেজি ক্রেয়ল পশ্চিম আফ্রিকা এবং নোতুন বিশ্বে (New World) দেখা যায়, হিম্পানি, ওলন্দাজ, পর্তুগিজ ক্রেয়লও পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে লব্ধ। ক্রেয়লের সমস্ত শব্দভাণ্ডারই ইউরোপীয় ভাষা থেকে আহৃত একথা বলা ঠিক হবে না।
লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা (Lingua franca)
দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংজ্ঞাপক ব্যবধান দূর করবার জন্য যদি দুই সম্প্রদায়ের কোন ভাষার সাহায্য না নিয়েই, তৃতীয় একটি ভাষার সাহায্য নেয়া হয় তখন তাকে বলা হয় লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা বা সংযোগ ভাষা (Lingua franca)। লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা শব্দের মূল অর্থ “ফরাশি ভাষা”। লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা বলতে যা বোঝায় তা মূলত ছিল প্রভেনশাল (Provencal) ভাষার একটি রূপ। মধ্যযুগে বহুভাষিক ক্রুসেডাররা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের তথা আদান-প্রদানের জন্য নিজেদের মধ্যে সংজ্ঞাপনে এ ভাষা ব্যবহার করতো। [ভাষা ও সমাজ, মৃণাল নাথ]
পারিভাষিক শব্দ
Colloquial- কথ্য, চলিত।
Constructed Language নির্মিত ভাষা, কৃত্রিম ভাষা।
Dialect-উপভাষা।
Linear Script- একরৈখিক লিপি, পার্শ্বক্রমিক লিপি।
Lingua France-সংযোগের ভাষা
Linguist- ভাষাতাত্ত্বিক, ভাষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী
Linguistic- ভাষাতাত্ত্বিক, ভাষাতত্ত্বগত।
Mnemonic-স্মৃতিসহায়ক
Orthogrophy- লিপিবিন্যাস, লিপিবিধি, বানানরীতি।
Phoneme-ধ্বনিমূল, মূলধ্বনি
Pictogram-চিত্রলিপি
Script- লিপি
Alphabet- বর্ণমালা
Syllabary- দলবর্ণমালা, দললিপি
Tone- স্বর
Official Language- দাপ্তরিক ভাষা
National Language – জাতীয় ভাষা।
আরও পড়ুনঃ