Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

রেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা

রেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা ,

রেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

বাসভ্রমণের অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও রেলভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। ছোটবেলা থেকেই রেলে ভ্রমণের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা আছে। এই দুর্বলতা জন্মেছে কবি শামসুর রাহমানের সেই ছড়াটি পড়ে— ‘ঝক্ ঝক্ ঝক্ ট্রেন চলেছে রাত দুপুরে অই । ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে, ট্রেনের বাড়ি কই?” কল্পনার কান পাতলেই যেন শুনতে পেতাম তীব্র হুইসেল বাজিয়ে ঝিকঝিক্ শব্দ তুলে চলে যাচ্ছে ট্রেন। একদিন সেই স্বপ্নের রেলভ্রমণের সুযোগও এসে গেল। বড় মামার বিয়ে। ঢাকায় বিয়ে হচ্ছে। বড়মামার বিয়ে উপলক্ষে আমরা সপরিবারে ঢাকায় যাব ট্রেনে। সকাল সাড়ে সাতটায় ‘উর্মি অরুণা’ করে আমরা চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা হলাম।

 

 

নির্দিষ্ট সময় হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন হেলেদুলে চলতে শুরু করল। বাবা বললেন, ‘একটু ধৈর্য ধর,’ পাহাড়তলি স্টেশন পেরুলেই গতি বাড়বে। সত্যি তাই, আমি অবাক হয়ে দেখলাম, মাঠ-ঘাট, গাছপালা, গ্রাম, বাড়িঘর বন কেমন সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে। ইলেকট্রিকের খাম, টেলিফোন খাম্বা দ্রুত যেন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। জানালার পাশে বসে আমি অপলক দৃষ্টিতে এই দৃশ্য দেখছি। দিগন্তজোড়া সবুজ মাঠটি যেন ট্রেনের গতির সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে আবার অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, অদ্ভূত সুন্দর সে দৃশ্য। বাতাসের গতি গেল বেড়ে। জানালার কাচ টেনে দিলাম কিন্তু ট্রেনের ভিতরে চোখ ফেরাতে পারছি না। শুধু একপলক দেখে নিলাম।

 

 

ট্রেনের যাত্রীরা কেউ ঝিমোচ্ছে, কেউ কথা বলছে, কেউ আড্ডা দিচ্ছে, হাসছে। এর মধ্যে বাদামওয়ালা ‘বাদাম, বাদাম’ বলে হেঁকে গেল। একটা চা-ওয়ালা বিশেষ ভঙ্গিতে বলছে ‘চা-গরম, চা-গরম’। আর ট্রেন চলছে ছন্দ তুলে। একটা স্টেশনে এসে কিছু সময়ের জন্যে ট্রেনটি থামলো। অনেক যাত্রী উঠানামা করতে শুরু করল। এরই মধ্যে হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচিতে আমি একটু উঠে দাঁড়ালাম। ঘটনাটি জানার জন্যে সিট ছেড়ে একটু এগিয়ে গেলাম। এক ভদ্রলোক তার নিজের ব্রিফকেসটি খুঁজে পাচ্ছে না। সম্ভবত ভুলে কিংবা ইচ্ছা করেই হউক কিংবা কৌশলেই হউক ঘটনাটি যে কোনো চোর কিংবা প্রতারক ঘটিয়েছে সেটি আর বোঝতে বাকি রইল না কারোরই।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

একটি পুরাতন ব্রিফকেস রেখে ভদ্রলোকের ব্রিফকেসটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ইতোমধ্যে হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল। পুরাতন ব্রিফকেসটি ফেলে রেখেই ভদ্রলোক কাঁদো কাঁদো মুখে ট্রেন থেকে নেমে গেল। ঘটনাটি আমার মনে এমনভাবে দাগ কাটল যে কোনোভাবেই আর মনের বিষণ্নতা কাটাতে পারলাম না বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে এসে ট্রেন থামলে আমার রেল ভ্রমণ শেষ হয়। পথে ভিক্ষুক, ফেরিওয়ালার হাঁক-ডাক, যাত্রীদের নানা ক্রিয়াকাণ্ড দেখতে দেখতে আমার রেলভ্রমণের অভিজ্ঞতাটি বেশ চমকপ্রদই ছিল।

আরও দেখুন:

 

Exit mobile version