রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাব-সম্প্রসারণ হচ্ছে এভাবে সুসংগত সমর্থক প্রসারণ। ভাবের সংহতিকে উম্মোচিত, নির্ণীত করে একটি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত বা প্রবাদ প্রবচন এর সাহায্যে সহজ ভাষায় বিস্তারিত তত্ত্বের প্রসারণ ঘটে তাকে মূলত ভাব-সম্প্রসারণ বলা হয়। ভাব সম্প্রসারণ সাধারণত কবিতা বা যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি চলন এর মাধ্যমে তা ভাবে পূর্ণ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আর এই আলোচনায় ভাবনা লুকায়িত সকল মানব জীবনের আদর্শ এবং ব্যক্তিচরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, নৈতিকতা এবং বিচ্যুতি ফুটে উঠে।

রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি

পৃথিবীতে সম্পদশালীর সম্পদের প্রতি তৃষ্ণা দুর্নিবার ও অসীম। তাদের চিরঅতৃপ্ত এ তৃষ্ণাকে চরিতার্থ করার প্রয়াসে তারা অনাহারী ও নিরন্ন মানুষের সম্পদকেও কেড়ে নিতে কুণ্ঠিত হয় না। ধনিকের দুর্নিবার সম্পদ-ক্ষুধা কোনোদিনই পরিতৃপ্ত হয় না। তারা ক্রমাগত ধন সঞ্চয়ে স্ফীত হয়ে উঠতে থাকে। তাদের ধন-সংগ্রহ এবং ধন সঞ্চয়ের পেছনে থাকে শোষণের নগ্ন ইতিহাস। সমাজের দুর্বলতর অংশকে শোষণ করেই দিনের পর দিন তাদের ঐশ্বর্য স্ফীতকায় হয়ে উঠতে থাকে। অন্যদিকে, বিশ্বের বিত্তহীনেরা তাদের শোষণে সর্বস্বান্ত হয়ে সাজে পথের ভিক্ষুক।

 

রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি

 

মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের স্থান। আর, এশিয়ার গোবি এবং আফ্রিকার সাহারা বিশ্বের বৃষ্টিবিহীন মরুভূমির জীবন্ত উদাহরণ। প্রকৃতির মর্মমূলেও আছে যেমন এক অসাম্যের প্রবণতা, মানুষের মধ্যেও আছে তেমনি বিত্তবানের বিত্ত-সংগ্রহের একটি স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বিত্তবানের এই অতিরিক্ত বিত্ত-সংগ্রহের প্রবণতার কারণে সমাজে দেখা দেয় চৌর্যবৃত্তি। অনিবার্য হয়ে ওঠে নানা অশান্তি, সংঘাত এবং সংগ্রাম। পৃথিবীতে যারা পর্যাপ্ত সম্পদের মালিক, যাদের ধনৈশ্বর্য অফুরন্ত, তাদের সম্পদ-তৃষ্ণা কোনোদিনই পরিতৃপ্ত হয় না।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তারা যত পায়, তত চায়। বিবেকহীন, হৃদয়হীন মানুষেরা নানাভাবে সামাজিক সম্পদ অপহরণ করে দিনের পর দিন নিজেদের মোটা পেট আরো মোটা করে চলে। তাদের সেই নির্বিচার সম্পদ-সংগ্রহের লালসার হাত পড়ে গরিবের কানাকড়িতেও। ধনিকের অপরিসীম ধনতৃষ্ণা ক্রমাগত স্ফীতকায় হতে হতে একদিন দরিদ্রের সর্বশেষ সম্বল— তাদের সামান্য কানাকড়িকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের সম্পদ-তৃষ্ণা মেটাতে বিবেকহীন হয়ে পড়ে। এভাবে পৃথিবীর দরিদ্রেরা তাদের সব কিছু হারিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পথের ভিখারিতে পরিণত হয়। সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে ধনিকের উচিত অতিরিক্ত ধন-সংগ্রহ ও ধন সঞ্চয় থেকে বিরত হওয়া।

 

রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি

 

আজ পৃথিবীতে নবযুগ এলেও বৈষম্য কমে নি। বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের সাধনাই আজ হল শোষণ এবং সামাজিক অবিচার দূর করে সামাজিক সম্পদের ন্যায়সঙ্গত সমবণ্টনের মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তির এক সুস্থ পরিমণ্ডল সৃষ্টি করা। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আধিক্যের গ্রাস থেকে ক্ষুদ্র ও সংক্ষিপ্ত আজও মুক্ত নয়।

আরও দেখুন:

Leave a Comment