Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

রক্তদান ও স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রতিবেদন রচনা । Essay on Blood Donation

রক্তদান ও স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া [ Essay on Blood Donation  ] অথবা, রক্তদানের উপকারিতা – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

রক্তদান ও স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া রচনার ভূমিকা :

“দেহের একটু রক্ত দিলে যদি বাঁচে একটি প্রাণ,
ধন্য হবে জনম তােমার, মহৎ তােমার দান।”

কামিনী রায় বলেছেন—“সকলের তরে সকলে আমরা/প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।” পারস্পরিক দেওয়া-নেওয়া, সহযােগিতা ও সহানুভূতির ভিত্তিতে সমাজ গড়ে ওঠে। সমাজে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জন্য দায়বদ্ধ থাকে। সকলের উচিত সকলের প্রয়ােজনে পাশে দাঁড়ানাে। কেন-না, পরার্থে যারা জীবন উৎসর্গ করে, তারা মহৎ। রক্তদানও এক মহৎ কর্ম। তাই রক্তদান হল প্রাণদান।

রক্তদান বনাম প্রাণদান :

মানবদেহে সঞ্জীবনী শক্তি দান করে রক্ত এবং জীবনধারাকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। যে ব্যক্তি মুমূর্ষু রােগীকে রক্তদান করে প্রাণদান করতে সাহায্য করে, তাকে তার জীবনদাতা বললেও অত্যুক্তি হয় না।

রক্তের প্রয়ােজনীয়তা :

রক্ত হল মানুষের শরীরের অত্যাবশ্যক সামগ্রী, প্রাণশক্তির দ্যোতক। মানুষের ধমনিতে রক্তপ্রবাহ অবাধ থাকলে, দেহ সুস্থ থাকে। রােগভােগের কারণে বা দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে রক্তক্ষরণ হলে শরীরে রক্তের ঘাটতি পড়ে—তা পূরণ করার জন্য রক্তের প্রয়ােজন জরুরি। মানবদেহে অন্য কোনাে রােগীর রক্তসঞ্চালন করা যায় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মানবদেহের রক্তকে চারটি গ্রুপে ভাগ করেছেন—A, B, AB, O। রক্তের প্রয়ােজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যার রক্তের প্রয়ােজন সে গ্রহণ করতে পারে, তেমন গ্রুপের রক্ত তার শরীরে সঞ্চারিত করতে হবে। অন্য গ্রুপের রক্ত বা অবিশুদ্ধ রক্ত দেহে সঞ্চারিত হলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। রােগী মারাও যেতে পারে।

রক্ত দেয় পুনজীবন এবং দীর্ঘ জীবনও :

খাদ্য থেকে রস, রস থেকে রক্ত আমাদের দেহে সঞ্চারিত হয়। মানুষের দেহে প্রয়ােজনের তুলনায় কিছু বেশি রক্ত সংরক্ষিত থাকে। এই অতিরিক্ত রক্তদানের মধ্য দিয়ে যেমন একটি মানুষ পুনর্জীবন লাভ করে, তেমনি যে রক্তদান করে তার শরীরও সুস্থ থাকে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

রক্ত গ্রহণ ও সংরক্ষণ :

রক্ত গ্রহণের নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। যে-কোনাে সুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে ২৫০ সিসি রক্ত টেনে নেওয়া যায়। সাতদিনের মধ্যেই ওই ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।

পুণ্য কাজ :

যে-কোনাে দানই মহৎ কর্ম। বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, অন্নহীনকে অন্নদান, গৃহহীনকে গৃহদান, তৃষিতকে জলদান, পুণ্যার্জনের ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করে। কিন্তু মৃতজনে দেহ প্রাণ’–এর চাইতে বড়াে কর্ম এবং ধর্ম বােধহয় আর কিছু নেই। তাই রক্তদানের অপর নাম জীবনদান।

রক্তদান শিবির :

নানা প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী জনকল্যাণকারী সংস্থা রক্তদান শিবির খুলে রক্ত সংগ্রহ করে থাকে। মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বছরে একাধিকবার রক্তদান শিবির খুলে সাধারণ মানুষকে রক্তদানে অনুপ্রাণিত করে তুলছে। জনসাধারণকে রক্তদানের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য দূরদর্শন, বেতার, সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান উল্লেখযােগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে।

উপসংহার :

রক্তদান সেবাধর্মের অঙ্গ। রক্তদানের মধ্য দিয়ে শুধু অপরের জীবন রক্ষিত হয় না, নিজেও সুস্থ ও দীর্ঘায়ুর অধিকারী হওয়া যায়। রক্তের কোনাে জাত-ধর্ম নেই। হিন্দু-মুসলমান ভেদ নেই, সাম্প্রদায়িকতা নেই। সব রক্তের রং-ই লাল। তাই রক্তদানের ভিতর দিয়ে আমাদের ভিতর এক অসাধারণ মানব-ঐক্য গড়ে ওঠে। স্থাপিত হয় এক আত্মীয়তা। এই বিশেষ ঐক্যটিও উপেক্ষণীয় নয়। মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের এই যুগে রক্তদানের এই মহান ব্রতকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়ােজন দেখা দিয়েছে।

Exit mobile version