যানজট সমস্যা ও সমাধান রচনা [ ২০০০ + শব্দ ]

যানজট সমস্যা ও সমাধান নিয়ে রচনার একটা নমুনা তৈরি করি আজ। এই রচনাটি আমাদের “বিচিত্র বিষয়াবলী” সিরিজের একটি রচনা। আমাদের সকল রচনা শিক্ষার্থীদের ধারণা দেবার জন্য। মুখস্থ করার জন্য নয়। এই রচনা থেকে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ধারণা নেবেন। তারপর নিজের মতো করে নিজের নিজের ভাষায় লিখবেন।

Table of Contents

যানজট সমস্যা ও সমাধান

যানজট সমস্যা ও সমাধান | বিচিত্র বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

ভূমিকা :

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী ও প্রধান শহর। এ শহরটিতে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ লোকের বসবাস। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের ২০০৩-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ঢাকা বিশ্বের ১১তম মেগাসিটি। সামগ্রিকভাবে ঢাকা মহানগরীর গুরুত্ব অত্যধিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ ও জনসংখ্যার চাপের প্রতি লক্ষ্য রেখে মহানগরীর প্রধান সড়কগুলো সম্প্রসারণ, বর্ধিতকরণ ও ব্যাপক সংস্কারমূলক কার্যগুলো মূলত কোনো সরকারই গুরুত্ব সহকারে তাদের আমলে নেননি। ফলে রাজধানীতে ক্রমবর্ধমান যানবাহন ও লোকসংখ্যার চাপে ঢাকার জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকা মহানগরী কার্যত স্থবির হয়ে পড়বে।

শুধুমাত্র নগরীর প্রধান সড়কগুলো নয়, বরং কর্পোরেশনের ৯০টি ওয়ার্ডের পাড়া- মহল্লার অলি-গলিও নিত্যদিনের অসহনীয় যানজট গ্রাস করে চলেছে। ভোর ৬টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অকল্পনীয় যানজটের চাপে নগরীর অধিবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাই সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীর যানজট থেকে স্থায়ী পরিত্রাণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বেশ কিছু বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সত্যিকার অর্থে মহানগরীর যানজটের কারণে এ পর্যন্ত জাতীয় অর্থনীতিতে কি পরিমাণ ক্ষতিসাধন হচ্ছে বা পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বা যানজটের মূল কারণগুলো কি তা তলিয়ে দেখা হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন জাগরিত হওয়া স্বাভাবিক ।

যানজট সমস্যা ও সমাধান | বিচিত্র বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

যানজটের ফলে সৃষ্ট সমস্যাসমূহ:

ইউএনডিপি পরিচালিত এক সমীক্ষায় জানা গেছে, শুধু ঢাকা শহরেই যানজটের কারণে যে সময়ের অপচয় হয় তাতে প্রতি বছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা অপচয় হয়। ঢাকা মহানগরীর এ যানজটের কারণে জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতিসাধনসহ সুষ্ঠ নাগরিক ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ এবং বঞ্চিত হচ্ছে ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ সুবিধা। এর ফলে নিম্নলিখিত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে

১. মহানগরীসহ আশেপাশের শহরের মানুষ জরুরি চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে মারাত্মক অসুস্থ রোগী যানজটের কবলে পড়ে রাস্তায় প্রাণ হারাচ্ছেন।

২. নগরীর অপ্রীতিকর ঘটনা ও জরুরি সংকটে পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড, এম্বুলেন্সসহ নাগরিক সুবিধা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট মহল প্রয়োজনীয় ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে না । ভেঙ্গে পড়ছে জননিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ।

৩. স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাদের নির্ধারিত সময়ের শিক্ষাক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

৪. যানজটের ফলে নির্ধারিত সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অফিস-আদালতসহ কল-কারখানায় তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে সার্বিক ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্তসহ উৎপাদনশীলতায় প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা বিনষ্ট হচ্ছে। চাপ পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে।

৫. যানজটের কারণে যানবাহনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যমানের অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ানো হচ্ছে। ফলে প্রতি বছর অতিরিক্ত জ্বালানি ক্রয়ের জন্য কয়েক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা জাতীয় কোষাগার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় রিজার্ভ । 

৬. যানবাহনের জীবনীশক্তি হ্রাস পেয়ে গ্যারান্টি বা লাইফ পিরিয়ডের পূর্বেই সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। এক্ষেত্রেও বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে। 

৭. যানজটের কারণে যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস সামগ্রিকভাবে পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে তুলেছে। সুস্থ স্বাস্থ্য রক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি নগরীর মানুষ সকলের অজান্তে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়াও নগরীর সড়কের পার্শ্বে আবাসিক বাড়িঘরের মানুষ শব্দ দূষণের ফলে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া বিঘ্নসহ মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে । প্রতিদিনের কর্মজীবন শেষে বিশ্রামের ব্যবস্থাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

এক্ষেত্রে প্রতীয়মান হয় যে, যুগ-যুগ ধরে রাজধানী ঢাকার সড়কগুলোর তেমন কোনো উন্নয়ন, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন না করা এবং মহানগরীতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপে ধীরে ধীরে নগরীকে ক্যান্সারের মতো গ্রাস করেছে। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে তা বলার অবকাশ রাখে না ।

রাজধানীর যানজট সমস্যা সমাধানের উপায় :

ঢাকা মহানগরীর সকল সড়ক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন। পক্ষান্তরে, নগরীতে চলাচলকারী সকল যান্ত্রিক যানবাহন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর সড়ক পথগুলোর ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট ত্বরিতভাবে সমাধান এবং এর জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে :

১. ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ ও প্রস্থান মুখ থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল স্থানান্তরকরণ ও নতুন টার্মিনাল নির্মাণকরণ :

ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ ও প্রস্থান মুখে তিনটি আন্তঃজেলা বাস ও দুটি ট্রাক টার্মিনাল বিদ্যমান, যার কারণে নিয়মিত সড়কে প্রতিবন্ধকতা ও যানজট হচ্ছে। নগরীর মুখ থেকে এই টার্মিনালগুলো নগরীর বাইরে যে কোনো স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। নতুন টার্মিনালগুলোকে যুগোপযোগী করে নির্মাণ এবং বর্তমান পরিধির চেয়ে ৩/৪ গুণ বর্ধিত আকারে নির্মাণ করতে হবে।

ভবিষ্যৎ বর্ধিত যানবাহনের চাপের প্রতি লক্ষ্য রেখে আন্তঃজেলা টার্মিনালের পাশে শহর ও শহরতলীর স্ট্যান্ড নির্মাণ করতে হবে। ঢাকা মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়কের উপর থেকে পরিচালিত টার্মিনালগুলোকে অপসারণের লক্ষ্যে স্টপওভার টার্মিনাল নির্মাণসহ পুরাতন/পরিত্যক্ত টার্মিনালগুলোকে স্থানান্তর ব্যবস্থা এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাময়িক স্টপেজ প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বে নির্মাণ করা জরুরি।

২. নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে যানবাহন পরিচালন ব্যবস্থা প্রত্যাহারকরণ :

নির্ধারিত স্থানে লোকাল বাস, মিনিবাসের জন্য টার্মিনাল না থাকার কারণে নগরীর প্রায় প্রধান প্রধান সড়কের উপর থেকে যানবাহন পরিচালনা করতে হচ্ছে। তাই প্রধান প্রধান সড়ক থেকে যানবাহন পরিচালনা বন্ধ করা জরুরি প্রয়োজন । তবে তার পূর্বেই প্রয়োজনীয় টার্মিনালের ব্যবস্থা করা দরকার।

৩. নগরীর সকল বাণিজ্যিক এলাকার প্রধান সড়কের উপর পার্কিং নিষিদ্ধকরণ :

নগরীর সকল বাণিজ্যিক এলাকার প্রতিটি বিল্ডিংই বহুতলবিশিষ্ট এবং প্রায় প্রতিটি বিল্ডিংয়ের আওতায়া কমপক্ষে ২০/৩০টি করে প্রাইভেট কার রয়েছে। অথচ এই গাড়িগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে বাণিজ্যিক এলাকার প্রধান রাস্তাগুলোতে ২/৩ সারিতে সকাল থেকে রাত্র পর্যন্ত গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয় । ফলে এই সকল এলাকা নিয়মিতভাবে যানজটের কবলে থাকছে। এ অবস্থার নিরসনকল্পে প্রত্যেক ভবনের নিচের তলায় বা বেইজমেন্টে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থার জন্য সরকার আইন জারি করে বাণিজ্যিক এলাকার পার্শ্ববর্তী অপেক্ষাকৃত কম চাপের রাস্তায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারে।

৪. নগরীর সড়কের মোড়গুলোতে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাসের দৌরাত্ম্য বন্ধকরণ :

ঢাকা মহানগরীর যানজটের অন্যতম আরো একটি কারণ হচ্ছে নগরীর সকল মোড়েই যাত্রী উঠানামার জন্য এক সাথে ৩/৪টি বা তারও বেশি পরিমাণ বাস/মিনিবাস ইচ্ছামাফিক ও এলোপাথাড়িভাবে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে সম্পূর্ণ সড়কে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। এক্ষেত্রে নগরীর প্রত্যেকটি মোড়ে কমপক্ষে ৫০ গজ পূর্বে/পরে স্টপেজের ব্যবস্থা করতে হবে। সড়কের যেখানে সেখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামার ব্যবস্থা রোধ করতে হবে এবং আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কাঠার ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান করতে হবে এবং ঢাকা মহানগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে স্থাপিত ট্যাম্পো স্ট্যান্ডও অন্যত্র স্থানান্তর প্রয়োজন ।

৫. মহানগরীতে ট্রাক চলাচলের সময়সীমা নির্ধারণ :

যানজট নিরসনকল্পে ট্রাক মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে মহানগরীতে ট্রাক চলাচলের নির্ধারিত সময়ের (রাত ৮.০০টা থেকে সকাল ৮.০০) ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। 

৬. নগরীর সড়কের বাঁক ও মোড় সংস্কারকরণ :

নগরীর প্রায় সকল সড়কেই ১০০ থেকে ৩০০ গজের মধ্যে বাঁক ও মোড় রয়েছে। এই বাঁক ও মোড়গুলো গাড়ির গতি স্তিমিত করে দিচ্ছে। ফলে রাস্তায় যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ হচ্ছে। ঢাকার রাস্তার এই বাঁকগুলো সরলকরণ ও মোড়ের বামদিকের টার্নগুলো প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রশস্তকরণ জরুরি।

৭. উচ্চ চাপের সড়কের উপর ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক যানবাহনের কাগজপত্র চেকিং ব্যবস্থা বন্ধকরণ :

প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায় নগরীর প্রধান সড়কের উপর বা মোড়গুলোতে যানবাহন দাঁড় করিয়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করে থাকে। ফলে অতি অল্প সময়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এর বদলে খোলামেলা যানবাহনের চাপবিহীন রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বা অন্যভাবে চেকিং করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে ।

৮. ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা কঠোর হস্তে রোধের ব্যবস্থা :

ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা সকল শ্রেণীর যানবাহন চালকদের একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাফিক আইন না মানার কারণে নগরীর যানজট ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট  বিভাগকে কঠোর মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে ট্রান্সপোর্ট সেক্টরের মালিক, শ্রমিক, নেতৃবৃন্দ ও জনগণের সমন্বয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

৯. নগরীর সড়কের উপর যত্রতত্র গ্যারেজ ও ভাসমান মেরামত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ :

নগরীর প্রায় প্রতিটি বাস ও ট্রাক স্ট্যান্ডের পার্শ্বে রয়েছে অসংখ্য মোটর গ্যারেজ এবং ভাসমান/ভ্রাম্যমাণ মেরামতকারী। এরা সাধারণত প্রধান সড়কের গুরুত্ব অনুধাবন করতে চায় না। সড়কের পার্শ্বে বা ক্ষেত্রবিশেষ সড়কের বিরাট অংশ দখল করে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মেরামত করে থাকে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী গাড়িকে জরিমানা ও মেরামতকারীকে আর্থিক জরিমানাসহ সকল যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্তকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

যানজট সমস্যা ও সমাধান | বিচিত্র বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

১০. বিপণী বিতানের সামনে যানজট :

ঢাকা নগরীর প্রায় সকল বিপণী বিতান নির্মাণকালে গাড়ি, রিকশা, স্কুটার প্রভৃতি পার্কিংয়ের জন্য স্থান না রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ঐসব স্থানে দিনরাত্রি যানজট লেগেই আছে। ঐ সকল স্থানে পার্কিং সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধকরণসহ ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিটি বিপণী বিতান কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে নির্ধারিত জনবল সরবরাহের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রয়োজনে এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিপণী বিতান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ জারি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে নগরীর সড়কের পার্শ্বে নতুন নতুন বিপণী বিতান তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজস্ব পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে অনুমতি প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১১. নগরীর সড়কের উপর বাজার ও এতদক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা :

নগরীর অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়কের পার্শ্বে বা সড়কের কিয়দংশ জুড়ে নানা পণ্যের বাজার বসছে। মূলত সড়কের উপর এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বাজার বসানোর কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ সড়ক, ফুটপাত ও ওভারব্রিজ হকারমুক্ত করতে হবে।

১২. সড়কের পার্শ্বে দোকানপাটের মালামাল রাখা ও দোকানের সামনে ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা বন্ধকরণ :

নগরীর প্রধান প্রধান এলাকায় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রেতা যেমন- নির্মাণসামগ্রী বিক্রেতা, খাদ্যদ্রব্য বিক্রেতাসহ অন্যান্য জিনিসের বিক্রেতারা প্রায় প্রত্যেকেই অভ্যাসজনিত কারণে তাদের দোকানের পার্শ্বের ফুটপাত ও সড়কের কিয়দংশ জুড়ে মালামাল রেখে যুগ যুগ ধরে সড়ক দখলের প্রবণতার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। উপরন্তু তাদের ক্রীত এবং বিক্রীত মালামাল বহনের জন্য দোকানের পার্শ্বে আন ও ঠেলাগাড়ির স্থায়ী স্ট্যান্ড পড়ে তুলেছে।

ফলে নগরীর বহু উচ্চচাপের সড়কের যানজট স্থায়ীরূপ ধারণ করেছে এবং সর্বসাধারণের পায়ে হেঁটে চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বিষয়টি স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রত্যেক দোকান বা প্রতিষ্ঠানের অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটাতে হবে এবং সড়কের উপর থেকে ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির স্ট্যান্ড উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৩. নির্মাণসামগ্রী নগরীর সড়ক ও ফুটপাত থেকে অপসারণ :

নগরীর ছোট ছোট সড়কপথ ছাড়াও প্রধান প্রধান সড়কের পার্শ্বে বড় বড় বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে এবং সকল ভবনেরই বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী যেমন- রড, পাথর, বালু, মিকচার মেশিন, কাঠ প্রভৃতি সামগ্রী প্রচণ্ড অবহেলিতভাবে মাস থেকে বছর পর্যন্ত ফেলে রেখে ইচ্ছামতো সড়কে প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মালিকের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক জরিমানার বিধানসহ মালামাল বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

১৪. বর্ষাকালে নগরীর সড়কে বৃষ্টির জমাট পানির জরুরি নিষ্কাশন ও আধুনিক পদ্ধতিতে সড়ক উন্না প্রথা চালুকরণ :

বর্ষাকালে ঢাকা মহানগরীর বেশ কয়েকটি প্রধান সড়কে বৃষ্টির পানি জমার বিষয়টি দীর্ঘ বছরের পর বছরের। বিগত সরকারগুলো এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে, তারপরও সংকটের তেমন উন্নতি হয়নি। সম্ভবত পানি দ্রুত সরে না যাওয়ার কারণ হিসেবে ঐ সকল সড়কের পানি নিষ্কাশন মুখগুলো অপর্যাপ্ত এবং বিভিন্ন স্থানে ব্লুইজ গেটে পাম্প মেশিনের অপর্যাপ্ততা।

এ সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তাছাড়াও পানিবদ্ধতার কারণে, যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে ও চাপে সড়ক ভেঙ্গে গর্তের সৃষ্টি করছে। ফলে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে সড়ক নির্মাণের সময় সড়কের লোড বহনক্ষমতা ও আয়ুষ্কাল সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক নির্ধারণ করে ঠিকাদার ফার্মকে নিযুক্ত করতে হবে এবং ঐ সড়ক নির্মাণের বা মেরামতের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বসহ বৃষ্টিবহুল দেশে অর্থনৈতিক সাশ্রয় ও দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য উন্নত রাবার জাতীয় সিনথেটিক কার্পেটিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনে আমাদের দেশে এ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

১৫. সড়কের উপর ডাস্টবিন নিয়ন্ত্রণ:

মহানগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানের প্রধান সড়কের প্রায় এক-চতুর্থাংশ স্থান জুড়ে আধুনিক স্থানান্তরযোগ্য ডাস্টবিনগুলো বহনকারী গাড়ি থেকে নামিয়ে রেখে যায়। ফলে প্রচুর ময়লা-আবর্জনা ডাস্টবিনের চতুর্দিকে অর্ধেক সড়ক পর্যন্ত পুঁতিগন্ধময় অবস্থা সৃষ্টি করে এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। এটা সিটি কর্পোরেশনের কনজারভেন্সি বিভাগ কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।

১৬. বর্ষায় সমন্বিতভাবে নগরীর সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধকরণ :

বর্ষা মৌসুম এলেই মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে মহাসমারোহে চলে খোঁড়াখুঁড়ির উৎসব। এ সময়টাতে একের পর এক ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, টিএন্ডটি, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগসহ মোটামুটি সকল বিভাগই সমন্বয়বিহীনভাবে ঢাকা শহরের সড়কগুলোকে নাস্তানাবুদ করে তোলে। ফলে সর্বসাধারণের চলাচলের ভোগান্তিসহ যানবাহন চলাকালে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

অথচ যে কোনো উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা একত্রিতভাবে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বছরের শুষ্ক মৌসুমে সফলভাবে এ কাজ সম্পন্ন করতে পারে। ফলে সামগ্রিক ব্যয় বহুলাংশে কমিয়ে আনাসহ কাজগুলো ত্বরিত ও ঝামেলাবিহীনভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব এবং জনগণের ভোগান্তিও কমে যাবে। তাছাড়া মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোর যে কোনো মেরামত কাজ দিনের পরিবর্তে গভীর রাতে সম্পন্ন করার স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া জরুরি প্রয়োজন ।

১৭. সিটি কর্পোরেশনের অযান্ত্রিক যানবাহন নিয়ন্ত্রণ :

সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত নম্বরের বাইরে হাজার হাজার নম্বরবিহীন ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের রিকশাগুলো মহানগরীতে চলাচল করছে। পাশাপাশি চলছে রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি। অথচ মহানগরীর সমগ্র রিকশার ২০ ভাগের বেশি নম্বর ও ড্রাইভারের লাইসেন্স আছে কিনা সন্দেহ। এক্ষেত্রে অনুমোদিত রিকশার বাইরে সকল রিকশা চলাচল বন্ধ করা ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারকে রিকশা চালানো বন্ধ করা, পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় অবৈধ চলাচলকারী সকল রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি আটক ও সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণসহ মালিক ও ড্রাইভারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

১৮. স্কুল-কলেজের সামনে যানজট নিরসনের ব্যবস্থাকরণ :

ঢাকা মহানগরীর সিংহভাগ স্কুল-কলেজ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পার্শ্বে অবস্থিত। এ সকল স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস আরম্ভ হওয়া এবং ছুটির সময়ের প্রায় ২/১ ঘণ্টা পূর্ব থেকে রিকশা, স্কুলভ্যান, প্রাইভেট কার প্রভৃতি এলোপাতাড়িভাবে দণ্ডায়মান থেকে মারাত্মক যানজট সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে স্কুল ও কলেজ সময়ে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের মাধ্যমে এর যথাযথ সমাধান সম্ভব ।

১৯. সিনেমা হলের সামনে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ:

ঢাকা মহানগরীর ২/১টি সিনেমা হল ছাড়া অন্য কোনো হলের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। বরং সবগুলো হলেরই পার্কিং প্রধান সড়কের উপর। সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এবং এ সময়ের মাঝে ২/১ ঘণ্টা নতীত সকল সময়ে হলগুলোর সামনে রিকশা ও স্কুটারের বিশাল বহর সর্বদাই অপেক্ষা করতে থাকে এবং এলোমেলোভাবে সড়কে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সড়ক সনজটমুক্ত রাখার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সিনেমা হল কর্তৃপক্ষের জনবল নিয়োগের ফবস্থা করার সরকারি আদেশ জারি জরুরি প্রয়োজন। অমান্যকারী হল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলাসহ জরিমানার বিধান চালু করা যেতে পারে।

২০. পাড়া-মহল্লার প্রবেশ মুখ থেকে রিকশা ও ফুটার স্ট্যান্ড উচ্ছেদ :

ঢাকা মহানগরীর এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই, যেখানে প্রবেশ ও প্রস্থান মুখসহ অলিগলিতে স্কুটার ও রিকশা স্ট্যান্ড নেই। ফলে সর্বত্রই এ কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ সকল স্ট্যান্ড করার প্রবণতা রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। উপরন্তু মহল্লাবাসীদের কাজে লাগানো যেতে পারে। এই সকল স্ট্যান্ডগুলোতে প্রতিটি স্কুটার দাঁড়ানোর জন্য কমপক্ষে ৩/৪ টাকা হারে অবৈধ চাদাও আদায় করা হয়। অবৈধ চাদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

২১. সভা-মিছিল :

দেশের সকল রাজনীতি, দাবি-দাওয়া, মিটিং-মিছিলের কেন্দ্রস্থল ঢাকা মহানগরী। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকা মহানগরী কর্মচঞ্চল থাকে রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন কারণে। প্রায় প্রতিদিন মিটিং-মিছিল চলে। সরকার মিটিং করার জন্য সড়কের বদলে স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার ফলে সড়কের উপর মিটিং এবং এর কারণে যানজট বন্ধ হলেও মিছিলের কারণে প্রতিদিনই সড়কপথে যানজট হচ্ছে। এক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা করে সড়কের একপাশ দিয়ে মিছিল করার প্রচলন চালু করা প্রয়োজন ।

ওপরের পদক্ষেপগুলো ছাড়াও সমস্যার স্থায়ী সমাধানকল্পে সরকারকে বাস্তবসম্মত দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য দাতাগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা ও সাহায্য গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও নগরবাসীর নিকট থেকে স্থানীয়ভাবে ফান্ড গঠনের লক্ষ্যে যমুনা সারচার্জের অনুরূপ চার্জ আদায় করা যেতে পারে।

ঢাকায় বসবাসকারী বিজ্ঞ মহলের মতে, ঢাকার যানজট নিরসনে বৃহৎ পরিকল্পনা ছাড়াও অল্প সময় ও ব্যয়ে কিছু কিছু জরুরি পদেক্ষেপ ঢাকা মহানগরীর যানজট বহুলাংশে হ্রাস করতে পারে। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রয়োজন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কিছু সড়কের বর্ধিতকরণ, বাইপাস নির্মাণ, ট্রাফিক পুলিশ সংখ্যা বৃদ্ধি, আধুনিকীকরণ, যানবাহন পরিচালন আইন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতির মাধ্যমে যানজট মুক্তকরণের প্রাথমিক লক্ষ্য হাসিল করা যেতে পারে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার :

যুগ যুগের সৃষ্ট অনিয়ম ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে ঢাকা মহানগরী ও নগরীর আশেপাশের শহরগুলো যানজটের চরম সংকটে নিপতিত। জাতীয় স্বার্থ তথা নগরবাসীর ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ও নগরীর জীবনযাত্রা সচল রাখার স্বার্থে যত কষ্টই হোক না কেন সীমিত সম্পদের মাঝেও নগরীর সড়কপথগুলোর সংস্কার জরুরি প্রয়োজন। বিষয়টি ধীরে ধীরে গুরুতর জটিল অবস্থার সৃষ্টি করছে, যা আগামী বছরগুলোতে ঢাকা মহানগর ও আশেপাশের শহরগুলোকে স্থবির করে দিতে পারে। এ নিয়ে এখনই ভাববার সময়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি মহল ছাড়াও জনসাধারণের পক্ষ থেকে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট কাজে সহায়তা।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment