মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে রচনার একটা নমুনা তৈরি করি আজ। এই রচনাটি আমাদের ” বিচিত্র বিষয়” সিরিজের একটি রচনা। আমাদের সকল রচনা শিক্ষার্থীদের ধারণা দেবার জন্য। মুখস্থ করার জন্য নয়। এই রচনা থেকে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ধারণা নেবেন। তারপর নিজের মতো করে নিজের নিজের ভাষায় লিখবেন।

Table of Contents

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস | আন্তর্জাতিক ও জাতীয় দিবস | বাংলা রচনা সম্ভার

ভূমিকা :

পৃথিবীর যে কোনো দেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। মৌলিক অধিকারগুলো একদিকে যেমন জনগণের বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ অধিকারকে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেয়, অন্যদিকে এগুলো শাসকশ্রেণীকে স্বৈরাচারী হওয়া থেকেও বিরত রাখে। ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণার (১৭৭৬) পর থেকেই মূলত বিভিন্ন দেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার বা অধিকারের সনদ সন্নিবেশ করা একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য মৌলিক অধিকারগুলো পরিবর্তনযোগ্য। তবে আইন পরিষদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এগুলো পরিবর্তন করা যায় না।

সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষার ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য থাকে। মৌলিক অধিকারগুলো আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য বলে সরকার যেমন সচেতন থাকে, তেমনি জনগণ এসব অধিকার বাস্তবায়ন করার জন্য আদালতের আশ্রয় নিতে পারে।

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার | বিচিত্র বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

মৌলিক অধিকার:

মৌলিক অধিকার বলতে আমরা সেসব অধিকারকে বুঝি যা কোনো দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং যা বাস্তবায়নের ব্যাপারে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেয়া হয়। মৌলিক অধিকারগুলো সবই মানবাধিকার, তবে পার্থক্য এই যে, মানবাধিকারগুলোকে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেয়া হয় না। সুতরাং বলা যায় যে, যখন কতিপয় মানবাধিকারকে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করে তাদের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেয়া হয় তখন এগুলোকে মৌলিক’ অধিকার বলা হয়। সাংবিধানিক নিশ্চয়তা বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে, এসব অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত হলে সে ব্যক্তি আদালতের মাধ্যমে ঐ সব অধিকার ফিরে পাবে।

আদালত তার রায়ের মাধ্যমে সরকারকে ঐ সব অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার হুকুম দিতে পারে । পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মুনির State vs Dosso মামলার রায়ে অন্যান্য বিষয়ের সাথে মৌলিক অধিকারের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিচারপতি মুনিরের মতে, ‘মৌলিক অধিকারের প্রকৃত উপাদান হলো, এগুলো কমবেশি স্থায়ী এবং সাধারণ আইনের মতো পরিবর্তনযোগ্য নয় ।’

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, মৌলিক অধিকারগুলো এমন অধিকার যা কোনো দেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেয়া হয়। গণতান্ত্রিক সরকার তার শাসনতান্ত্রিক উৎকর্ষের জন্য মৌলিক’ অধিকারকে অত্যন্ত যত্নসহকারে লালন করে এবং এগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে সাধ্যমতো চেষ্টা করে। বস্তুত বর্তমান বিশ্বে শাসকশ্রেণীর সফলতা নির্ণয়ের

অন্যতম মাপকাঠি হলো তারা কতটুক মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা জনগণকে দিতে পেরেছে।

বাংলাদেশ সংবিধানে সন্নিবেশিত মৌলিক অধিকারসমূহ :

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাগণ সংবিধানে মৌলিক’ অধিকার সন্নিবেশের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। ১৭৮৯ সালের মার্কিন সংবিধান এবং ১৯৪৯ সালের ভারত সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক’ অধিকারের ব্যাপারে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাগণ ওয়াকিফহাল ছিলেন। ফলে এসব দেশের সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক’ অধিকারের আলোকে মুজিব সরকারের গণপরিষদ বাংলাদেশ সংবিধানে মৌলিক’ অধিকার সংযুক্ত করে। বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ২৭ অনুচ্ছেদ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মৌলিক’ অধিকার সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে।

সংবিধান প্রণেতাগণ শুধু বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্যই মৌলিক অধিকার প্রণয়ন করেননি, বরং বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিকদের ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংযোজন করেছেন। মৌলিক অধিকার মোট ১৮টি। 

ক. শুধু বাংলাদেশের নাগরিকরা ভোগ করতে পারে এমন মৌলিক অধিকার ১২টি। যথা:

১. আইনের দৃষ্টিতে সমতা :

সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। এই অনুচ্ছেদকে ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, সকল ব্যক্তিই আইন দ্বারা সমভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সমপর্যায়ভূক্ত সকল ব্যক্তির প্রতি আইন সমান আচরণ করবে এবং সকলকে সমভাবে রক্ষা করবে। তবে ব্যক্তির কার্য ও দায়িত্বের ভিন্নতা থাকতে পারে এবং বিভিন্ন শ্রেণীর কর্তব্য এবং অধিকার ভিন্ন হতে পারে। 

২. ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ বৈষম্য করা যাবে না :

ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না এবং উক্ত কারণে নাগরিককে সাধারণ বিনোদন ও বিশ্রাম কেন্দ্রে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ বা ভর্তি হতে বঞ্চিত করা যাবে না। রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বস্তরে নারী ও পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে। তবে নারী, শিশু ও অনগ্রসর নাগরিকদের অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। 

৩. চাকরির সমান সুযোগ :

প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন নাগরিকদের মধ্যে রাষ্ট্রের চাকরিতে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।

৪. বিদেশী রাষ্ট্রের উপাধি গ্রহণ :

১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে বিধান ছিল যে, রাষ্ট্র কোনো উপাধি, সম্মান বা ভূষণ প্রদান করবে না এবং রাষ্ট্রের বিনা অনুমতিতে কোনো নাগরিক কোনো বিদেশী পুরস্কার গ্রহণ করবে না। তবে রাষ্ট্র সাহসিকতার জন্য পুরস্কার বা Academic distinction দান করতে পারে। 

৫. আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার :

বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল ব্যক্তি কেবল আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং আইনের বিধি ছাড়া কারো জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি করা যাবে না। 

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার | বিচিত্র বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

৬. চলাফেরার স্বাধীনতা :

সকল নাগরিক বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধে চলাফেরা করতে পারবে। নাগরিকরা যে কোনো স্থানে বসবাস করতে পারবে এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও এ দেশে পুনঃপ্রবেশ করতে পারবে। এতে অবশ্য কিছুটা ব্যতিক্রমও আছে। সেটা হলো সরকার জনস্বার্থে চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবে। 

৭. সমাবেশের স্বাধীনতা :

জনশৃঙ্খলা বা জনস্বার্থের জন্য আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে বা নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। 

৮. সংগঠনের স্বাধীনতা :

জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংগঠন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। 

৯. বাক-স্বাধীনতা:

সকলের চিন্তা ও বিবেকের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। এ অনুচ্ছেদে বাক-স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকার করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে রাষ্ট্র আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবে। 

১০. পেশা ও বৃত্তির অধিকার :

যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিক আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে যে কোনো আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণ করতে পারবে এবং যে কোনো আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারবে। 

১১. ধর্মীয় স্বাধীনতা :

ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, আইনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার থাকবে। প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার থাকবে। 

১২. গৃহ ও যোগাযোগ রক্ষণ :

প্রত্যেক নাগরিকের স্বীয় গৃহে নিরাপত্তা লাভের অধিকার থাকবে। এ অনুচ্ছেদের অর্থ দাঁড়ায় কারো গৃহে প্রবেশ করা, তল্লাশি করা এবং কাউকে আটক করা চলবে না । এছাড়া চিঠিপত্রের এবং যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। তবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা বা জনস্বার্থের জন্য আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করা যাবে। 

খ. বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগরিক ও বিদেশীরা ভোগ করতে পারে এমন মৌলিক অধিকার ৬টি । যথা : 

১. জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার :

বাংলাদেশে বসবাসরত সকল নাগরিক ও বিদেশী কেবলমাত্র আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হবে। আইনের ধারা ব্যতীত কারো জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। 

২. গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ :

কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কারণ না জানিয়ে আটক রাখা যাবে না, কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে এবং আদালতের আদেশ ছাড়া তাকে আটক রাখা যাবে না। অবশ্য সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে বলা হয়, সরকার বিনা বিচারে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে আটক রাখতে পারবে। অবশ্য বিদেশী শত্রুর এই অধিকার প্রযোজ্য নয় । 

৩. জবরদস্ত শ্রম নিষিদ্ধকরণ :

সকল প্রকার জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ। তবে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য এই বিধি কার্যকর নয়। রাষ্ট্র জনগণের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে আইনের দ্বারা বাধ্যতামূলক শ্রমের বিধান করতে পারবে। 

৪. বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বিধান :

এ ধারায় বলা হয়েছে, যে সময়ে কোনো কার্য সংঘটিত হয়েছে সে সময়ে প্রচলিত আইনের বিধান লঙ্ঘন করা না হলে ঐ কার্যের জন্য কাউকেও দোষী করা যাবে না। এক অপরাধের জন্য ব্যক্তিকে একাধিকবার অভিযুক্ত করা যাবে না। ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারী। কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বাধ্য করা যাবে না। কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না বা নিষ্ঠুর ও অমানুষিক দত্ত দেয়া যাবে না। 

৫. ধর্মীয় স্বাধীনতা :

আইনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকেরা যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে এবং প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রয়েছে। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোনো ছাত্রকে নিজস্ব ধর্ম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হবে না । 

৬. সাংবিধানিক প্রতিকার পাওয়ার অধিকার:

মৌলিক অধিকারসমূহ বলবৎ করার জন্য যে কোনো ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে মামলা রুজু করতে পারে (অনুচ্ছেদ ৪৪)। সুপ্রিম কোর্ট কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে কোনো মৌলিক’ অধিকার বলবৎ করার জন্য যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে আদেশ বা নির্দেশ দান করতে পারবে (অনুচ্ছেদ ১০২)। রাষ্ট্র মৌলিক’ অধিকারসমূহ লঙ্ঘন করে কোনো আইন প্রণয়ন করবে না ।

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে পার্থক্য :

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ : 

১. সংবিধানে লিপিবদ্ধ ও নিশ্চয়তা অর্থে পার্থক্য :

সকল মৌলিক অধিকারই মানবাধিকার। কিন্তু সকল মানবাধিকার মৌলিক অধিকার নয়। মৌলিক অধিকারগুলো সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে এবং কোনো কোনো মৌলিক- অধিকারকে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেয়া হয়। কিন্তু মানবাধিকার সংবিধানে ভিন্নভাবে লেখা থাকে না । মানবাধিকারের ক্ষেত্র ব্যাপক কিন্তু মৌলিক’ অধিকারের ক্ষেত্র সংকীর্ণ ।

২. উৎসগত পার্থক্য :

মৌলিক’ অধিকারের উৎস মূলত কোনো দেশের সংবিধান। অর্থাৎ কোনো মানবাধিকার যখন সংবিধানে স্থান পায় তখন তাকে মৌলিক ‘অধিকার বলে। অন্যদিকে মানবাধিকারের উৎস হলো আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন বিষয় ।

৩. অবস্থানগত পার্থক্য :

মৌলিক অধিকারগুলো দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এক দেশের মৌলিক’ অধিকারের সাথে অন্য দেশের মৌলিক’ অধিকারের পার্থক্য থাকতে পারে। মানবাধিকারগুলো কোনো দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়ে আন্তর্জাতিকতা লাভ করে অর্থাৎ মানবাধিকারকে ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ রাখা যায় না।

৪. সাংবিধানিক নিশ্চয়তা অর্থে পার্থক্য :

মৌলিক অধিকারকে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেয়া হয়। অর্থাৎ কোনো সংস্কৃত ব্যক্তি মৌলিক’ অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে আদালত তার মৌলিক’ অধিকার বলবৎ করতে পারে। পক্ষান্তরে মানবাধিকারগুলোর কোনো সাংবিধানিক নিশ্চয়তা নেই অর্থাৎ এগুলো আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয় । 

৫. প্রযোজ্যতা ক্ষেত্রে পার্থক্য :

মৌলিক অধিকারগুলো একটি নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে মানবাধিকারগুলো সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর প্রতিটি দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার :

বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলো মূলত সামজিক ও রাজনৈতিক। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো আমাদের সংবিধানেও অর্থনৈতিক অধিকারের গুরুত্ব ও নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারের মতো আমাদের সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক’ অধিকারগুলো সম্পূর্ণ অবাধ ও নিরঙ্কুশ নয়। আমাদের সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯(২) (ক) (খ), ৪১ ও ৪৩ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত মৌলিক’ অধিকারের ওপর যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করা যাবে। ভারত, জাপান, রাশিয়া প্রভৃতি দেশেও কতিপয় মৌলিক ‘অধিকারের ওপর বাধানিষেধ আরোপ করার বিধান রয়েছে। তবে সিভিল সমাজে সরকারের গতিশীলতা ও কার্যকারিতা নির্ভর করে সরকার কর্তৃক সর্বাধিক মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের ওপর।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment