মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাববীজটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পারি, এ ধরনের কবিতার চরণে বা গদ্যাংশে সাধারণত মানবজীবনের কোনাে মহৎ আদর্শ, মানবচরিত্রের কোনাে বিশেষ বৈশিষ্ট্য, নৈতিকতা, প্রণােদনমূলক কোনাে শক্তি, কল্যাণকর কোনাে উক্তির তাৎপর্যময় ব্যঞ্জনাকে ধারণ করে আছে।
মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে
মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ পালাক্রমে আসে। কাজেই কখনো দুঃখ কারণ দুঃখের আড়ালেই সুখ লুক্কায়িত। খ এলে ভেঙে পড়লে চলবে না, আকাশ যখন মেঘাচ্ছন্ন থাকে তখন সূর্যের প্রখর আলোতে পৃথিবী উজ্জ্বল ও আলোকিত হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে সূর্য যখন মেঘে ঢেকে যায় তখন সমস্ত পৃথিবীও অন্ধকারে ঢেকে যায়, নিস্তেজ হয়ে পড়ে। অমাবশ্যার গভীর আঁধারেও চাঁদের আলো হারিয়ে যায়। চাঁদের স্নিগ্ধ আলো তখন কালো অন্ধকারে তলিয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে মেঘের আড়ালে সূর্য ঢাকা পড়লেও তা সাময়িক, কিছুক্ষণ পর আবার মেঘ কেটে যায়।
অন্ধকারে চাঁদের আলো সাময়িক ঢাকা পড়লেও অন্ধকারের বুকে চাঁদের আলো আবার সারা পৃথিবীকে উদ্ভাসিত করে দেয়। মানুষের জীবনও তেমনি। মানুষের জীবন হলো সুখ এবং দুঃখ দিয়ে গাঁথা এক বিচিত্র মালার মতো। নিরবচ্ছিন্ন সুখ কিংবা নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ কোনো মানুষের জীবনে স্থায়ী হয় না। তার জীবনে যখন আসে দুঃখের অমানিশা, দুঃখ-বেদনা তখন অসহ্য বোধ হয়। মনে হয় সেই দুঃখ-রজনীর বুঝি শেষ নেই। কিন্তু অবশেষে তার দুঃখ-বেদনার সেই অমানিশার অবসান হয়। পূর্বদিগন্তে উদিত হয় সুখের সূর্য। কাজেই দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-বাধা সাময়িক।
তা দেখে মানুষের ভয় পাওয়া বা বেদনায় ভেঙে পড়া উচিত নয়। তাই আকস্মিক দুর্যোগ ও বিপদে ভেঙে না পড়ে প্রতিকূলতা মোকাবেলায় ধৈর্য ধরতে হয় দৃঢ়চিত্তে। বিপদ-বাধাকে জয় করার জন্যে নিতে হয় সংগ্রামের প্রস্তুতি। তাই জীবনে অমারাত্রির কালো আঁধার দেখে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ, নিকষ কালো অন্ধকারই কেবল মানুষের জীবনে অনিবার্য সত্য নয়, সেই আঁধারের বুকেই আবার উদিত হয় অস্তমিত চাঁদ আর রাতের পরেই প্রভাত সূর্যের আবির্ভাব ঘটে।

মানুষের জীবনেও তেমনি দুঃখের আঁধারে সুখের আলো লোপ পায়, কিন্তু তা ক্ষণিকের জন্যে। দুঃখের পর সুখ আসতে বাধ্য । মানব জীবনে আলো-অন্ধকার, সুখ-দুঃখ পালাক্রমে আসে। এর কোনোটিই এককভাবে আসে না। সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা ইত্যাদির পালাবদলের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবনচক্র পূর্ণ হয়।
আরও দেখুন: