মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা | মানবসম্পদ | বাংলা রচনা সম্ভার , ভূমিকা : একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদগুলোর মধ্যে মানবসম্পদ অন্যতম। মানবসম্পদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যকীয় মৌলিক উপাদান। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত, টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি করার ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষের জন্যই উন্নয়ন এবং মানুষই উন্নয়নের অপরিহার্য নিয়ামক। তাই অর্থসম্পদ ও ভৌতসম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও যদি মানবসম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রক্রিয়া ও গতি মন্থর হয়ে পড়ে। আর মানবসম্পদ উন্নয়নের মুখ্য উপকরণ হলো শিক্ষা।
মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা | মানবসম্পদ | বাংলা রচনা সম্ভার
মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা
কোনো দেশ জনসংখ্যায় শীর্ষস্থানীয় হলেও তাকে মানবসম্পদে সম্পদশালী বলা যাবে না যে পর্যন্ত না এর বিশাল জনগোষ্ঠী শিক্ষিত, সচেতন ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। কারণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মানুষের গুণগত পরিবর্তন সাধন করে তাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে। বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নতি সাধনের জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মানবসম্পদ কী : মানবসম্পদ বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণ তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ পল জে মায়ার বলেছেন, The greatest natural resource of our country is its people’. আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, অন্যান্য সম্পদের মতো মানুষও জাতির সম্পদ। বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, কোনো দেশের জাতীয় আয় (GNP) যেমন তার প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে সম্পর্কযুক্ত ঠিক তেমনি দেশের মানুষের গুণগত মানের সাথেও সম্পর্কযুক্ত।
অর্থাৎ সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ছাড়া সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতি কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। সমাজের উন্নয়নে প্রকৃতপক্ষে অর্থ ও বন্ধুসম্পদের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে মানবসম্পদ। বিশিষ্ট চিন্তাবিদ কার্ল মার্কস মানুষকে তাই মানবীয় মূলধন (Human capital) হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এ মানবীয় মূলধনকে আধুনিক পরিভাষায় মানবসম্পদ (Human resource) হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। মানবশক্তি তখনই মানবসম্পদে রূপান্তরিত হয়, যখন তাকে সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা যায়।
মানব কখন মানবসম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে : মানবসম্পদ (Human resource) সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক বা জন্মগত নয়। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে মানবসম্পদে পরিণত হয় । স্বাভাবিক মানুষ এবং মানবসম্পদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমন—
১. কোনো ব্যক্তিকে তখনই সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হবে যখন সে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। মানবসম্পদের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো স্বাস্থ্য বা দৈহিক সামর্থ্য।
২. কোনো ব্যক্তিকে তখনই সামাজিক দিক থেকে উপযোগী বা সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হবে যখন সে সামাজিক কোনো না কোনো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দক্ষতার সাথে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
৩. প্রত্যেক মানুষের সাধারণ মানসিক ক্ষমতার সাথে কিছু না কিছু বিশেষ মানসিক ক্ষমতা থাকে। এ বিশেষ মানসিক ক্ষমতা তাকে কোনো বিশেষ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করে। এ বিশেষ মানসিক ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিকে মানবসম্পদ বলা হয়।
৪. মানবকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য উপাদান হচ্ছে সাক্ষরতা (Literacy)। কোনো ব্যক্তিকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হবে তখনই যখন সে সামাজিক নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী সাক্ষরতা অর্জন করবে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন কী : মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো জনসম্পদের এমন এক গুণগত পরিবর্তন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তারা উৎপাদনক্ষম ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্রমবর্ধিষ্ণুভাবে বলিষ্ঠ অবদান রাখতে পারে এবং মানবীয় শক্তি-সামর্থ্যের সর্বোত্তম বিকাশে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে ব্যক্তিকে কর্মে নিযুক্ত করার সম্ভাবনা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বিবেচনা করেছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো কোনো রাষ্ট্রের মানুষের সামগ্রিক বিকাশ প্রক্রিয়ার একটি অংশ, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সমগ্র জনসংখ্যার কর্মে নিযুক্তির সম্ভাবনা বাড়ানো যায় এবং তার মাধ্যমে সামাজিক অসাম্য দূর করা যায়। (Human Resource Development is a complementary approach to other development strategies, particularly employment and reduction of inequalities)। ফ্রেডারিক হার্বিসন ও চার্লস এ মায়ার্স-এর মতে, ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে এমন এক প্রক্রিয়াকে বুঝায় যার মাধ্যমে কোনো সমাজের সকল মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।’ (Human Resource development is the process of increasing the knowledge, the skill and the capacities of all the people in a society.)
মানবসম্পদ উন্নয়নের গুরুত্ব উন্নয়নের মূলে রয়েছে মানুষ। তাই পল্লী উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, শিল্প উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হবে মানুষকেই এবং উন্নয়ন ঘটাবে মানুষ। অতএব দেশে যত রকমের বস্তুসম্পদ এবং সম্ভাবনা থাকুক না কেন যতক্ষণ মানুষ এ সম্পদ আহরণ এবং ব্যবহার উপযোগী করতে না পারবে ততক্ষণ আমরা এ সেবা থেকে বঞ্চিত থাকবো। তাই দেশের জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, *রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে মানবসম্পদ উন্নয়ন তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে।
‘৬০-এর দশকে সাহায্যদাতা সংস্থাগুলো মানবসম্পদ উন্নয়নকে একটি সার্বিক উন্নতি এবং আধুনিকায়নের ‘ইঞ্জিন’ হিসেবে গণ্য করতো। বর্তমানে যে কোনো দেশের জনগোষ্ঠী সেই দেশে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। সীমিত ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের দেশ জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর ও নেদারল্যান্ড প্রমাণ করেছে যে, একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করে জনগণের দক্ষতা, পরিশ্রম ও উদ্যোগের ওপর।
সুতরাং বলা যায় যে, উন্নয়ন প্রকৃতপক্ষে মানুষের দ্বারাই সংঘটিত হয়। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ যদিও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু টেকসই উন্নয়নের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় বা যথেষ্ট নয়। সম্পদের অপ্রতুলতা দ্রুত উন্নয়নের জন্য অলঙ্ঘনীয় বাধা নয়। একটি দেশের উন্নয়ন অনেকটা নির্ভর করে সে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং মানবসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের ওপর।
মানবসম্পদ উন্নয়নের উপায় হার্ডিসন এবং মায়ার্স তাদের গবেষণায় মানবসম্পদ উন্নয়নের ৫টি উপায় উল্লেখ করেছেন। যথা :
১. আনুষ্ঠানিক শিক্ষা : প্রাথমিক শিক্ষা স্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাঠামোর মাধ্যমিক শিক্ষা এবং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ পর্যায়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষাকে বোঝানো হয়েছে।
২. কর্মকালীন প্রশিক্ষণ : ধারাবাহিক বা উপানুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা।
৩. আত্মউন্নয়ন যেমন জ্ঞান, দক্ষতা ও সামর্থ্যের উন্নয়ন যা ব্যক্তি তার নিজের চেষ্টায় আনুষ্ঠানিক উপায়ে অথবা দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে অনানুষ্ঠানিক উপায়ে পড়ে বা অন্যের কাছ থেকে শিখে নিজের আগ্রহ ও কৌতূহল অনুযায়ী ব্যাপক গুণমান, দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ।
৪. পুষ্টি উন্নয়ন : পুষ্টি মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে মানুষ অধিক সময় ধরে কাজ করতে পারে এবং তার কর্মজীবন দীর্ঘ হয় ।
মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ত্ব : মানবসম্পদ উন্নয়ন নিঃসন্দেহে সকল প্রকার উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। আর এ ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক। কারণ শিক্ষাই হলো মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধান উপায় । সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চ হারের মাধ্যমিক শিক্ষা এবং সুনির্বাচিত উচ্চশিক্ষা যে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে থাকে সে শিক্ষা আমরা পাই পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে। মানবসম্পদ সঞ্চয়নে শিক্ষা সেখানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর মানবসম্পদ গঠনের এ প্রক্রিয়া ঐ অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বলে প্রায় সকল বিশেষজ্ঞই এক মত।
তবে এর পাশাপাশি রাষ্ট্রে বস্তুগত অবকাঠামো উন্নধান, উপযুক্ত নীতি সমর্থন (যেমন দেশীয় অর্থনীতিকে বিশ্ব বাজারের প্রতিযোগিতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে তার দক্ষতা বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে শিক্ষার জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য সক্রিয় নীতি হস্তক্ষেপ ইত্যাদি) দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নের গতিকে আরো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
শিক্ষার প্রতি প্রাধান্য, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অর্থ প্রবাহিত করে পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ শুধু যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই অর্জন করতে সাফল্য দেখিয়েছে তাই নয় এর ফলে সামাজিক সাম্য অর্জন ও মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। এসব দেশে আয়ের বৈষম্য কমেছে, শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, স্ব সুবিধা বেড়েছে এবং জীবনের গড় আয়ু বেড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা খাতে রাষ্ট্র যেমন উদার হস্তে বিনিয়োগ করেছে, উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে তেমনি ব্যক্তিগত খাত তাদের চাহিদা মতো মানবসম্পদ তৈরির প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে নিয়েছে। প্রযুক্তির উন্নয়নে রাষ্ট্র গভীর মনোযোগ দিয়েছে।

পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তাদের শিক্ষাখাতে দীর্ঘমেয়াদে বেশ কিছু কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে গেছে। এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রাথমিক স্তরেই তাদের জনসংখ্যার প্রায় ১০০ ভাগকেই প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। কেবল তাই নয় এই শিক্ষা যেন সন্তোষজনক গুণগত মান অর্জন করতে পারে সেজন্য সরকারগুলো সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। তাছাড়া এই অঞ্চলের দেশগুলো শিক্ষার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।
কেবল জ্ঞান অর্জন নয় বরং শিক্ষাকে জীবন এবং জীবিকার সাথে সম্পৃক্ত করার কথা তারা ভেবেছে সর্বাগ্রে। বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতা ভেদে আগে থেকেই ছাত্রদের গন্তব্য স্থির করা হয় যা তাদের পরিকল্পনা মাফিক একদল শিক্ষিত কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। এসব দেশে শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন আসার ফলে শিক্ষা ব্যয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার জনগণ থেকে। সরকারের বিশাল শিক্ষা ব্যয়ও যোগ হয় এর সাথে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বর্তমানে তাদের প্রথমিক ও মৌলিক শিক্ষাকে আর বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন পড়ে না।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পরবর্তী শিক্ষাকে এসব দেশে শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী গড়ে তোলা হয়েছে। যা এই পর্যায়ের স্নাতকদেরকে আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সহায়তা করেছে। উদাহরণস্বরূপ সিঙ্গাপুর দ্রুত সাইবার অর্থনীতি গড়ে তুলেছে। এর জন্য তাদের প্রয়োজন একদল সৃজনশীল উচ্চ শিক্ষিত কর্মীবাহিনী। এ উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর তাদের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংযোগ কার্যক্রম শুরু করেছে ব্যাপকভাবে। উন্নয়ন এবং গবেষণা কার্যক্রমে ব্যয় করে চলছে ব্যাপকভাবে।
বিশ্বের বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার সাথে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে কারিগরি উৎকর্ষকে ক্রমেই দৃঢ়ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবার চেষ্টা চলছে। তবে এই সব আধুনিকতার জোয়ারে তাদের সনাতনী শিক্ষা ব্যবস্থাকে (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে) কোনোভাবেই অবহেলা করা হচ্ছে না। এভাবেই যুগোপযোগী মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের ভারসাম্য রক্ষা করা হচ্ছে যা তাদের জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে দৃঢ় বন্ধনে সুসংহত করছে।
মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার অবদান : মানুষকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনায় আনলে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে মানবসম্পদের বিষয়টি মুখ্য হয়ে ওঠে। উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন, সঠিক সংগঠন গড়ে তোলা এবং যথাযথ প্রযুক্তি নির্দিষ্টকরণ ও প্রয়োগের জন্য দক্ষ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক, নিষ্ঠাবান, সৎ ও উৎপাদনশীল মানবসম্পদের প্রয়োজন। আর দেশের জনসম্পদকে মানবসম্পদে রূপান্তর করতে হলে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কারণ শিক্ষা মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখে। যেমন-
১. শিক্ষা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে শিক্ষা আত্মসচেতনতা বাড়িয়ে দেয় এবং মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে। শিক্ষা মানুষকে তাদের অভ্যাস, রীতিনীতি এবং সামাজিক অবস্থা ও ব্যবস্থাপনা জানতে সাহায্য করে এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে জাগ্রত করে।
২. নিজের উদ্যোগে জ্ঞানার্জনের পথ সুগম করে : নিরক্ষর ব্যক্তির জ্ঞান আহরণের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। পাঠে অক্ষম বলে সে শুধু অন্যের কথা, আলাপ-আলোচনা শুনে এবং রেডিও শুনে ও টেলিভিশন দেখে বিভিন্ন বিষয় জানতে ও বুঝতে পারে। নিরক্ষর জনগণ অন্যের ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল বলে স্বার্থনেষী ব্যক্তি ও মহল নিরক্ষরদের সহজেই বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করতে পারে। নিরক্ষর ব্যক্তির সাক্ষর হলে নিজের আগ্রহ ও প্রয়োজন মতো বইপত্র, পুস্তিকা ও সংবাদপত্র পড়ে জ্ঞানার্জন করতে পারে এবং নিজের বিবেক ও বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের ও পরিবারের উন্নয়ন এবং দেশের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে।
৩. শিক্ষা মানুষের চিন্তা ও বিচার শক্তির বিকাশ ঘটায়: মানব সভ্যতার ইতিহাসে সাক্ষরতা অর্জনের আগে ও পরে সমাজের মধ্যে গুণগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সংক্ষেপে বলা যায় একজন সাক্ষর ব্যক্তি যোগাযোগ স্থাপনে অধিকতর ক্ষমতার অধিকারী, সচেতনতায় তীক্ষ্ণধী এবং পরিবেশের ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণের অধিকারী। শিক্ষা মানুষকে আবেগ ও সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে স্বচ্ছ চিন্তা করতে শেখায়। এর ফলে তারা ব্যক্তিগত এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণ করে সঠিক কর্মপন্থা উদ্ভাবন এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রণয়নে সক্ষম হয়। ফলে তারা ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়।
৪. সমাজ সচেতনতা ও ঐক্যবোধ জাগ্রত করে : শিক্ষা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি উদার ও গণতান্ত্রিক করতে সাহায্য করে। শিক্ষা মানুষের চেতনার উন্মোষ ঘটায়। পত্রপত্রিকা পাঠ, আলাপ-আলোচনা এবং জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের ফলে ব্যক্তি জীবনের ওপর সমাজের প্রভাব এবং সমাজের প্রতি ব্যক্তির দায়িত্ব সম্পর্কে অধিক সচেতন হয়। তারা বুঝতে শিখে ব্যক্তির স্বার্থ সমষ্টির স্বার্থের মধ্যে নিহিত, তখন তারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে ভাবতে শেখে এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য এগিয়ে আসে।
মানুষ উপলব্ধি করে আর্থ-সামাজিক জীবনের সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে একক প্রচেষ্টার চেয়ে যৌথ উদ্যোগ অধিকতর ফলপ্রসূ। এই উপলব্ধি থেকেই তারা সংঘবদ্ধ হতে শিখে এবং ঈন্সিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমাজসেবী সংগঠন, সমিতি ও অন্যান্য সমবায় সংগঠন গড়তে উদ্যোগী হয় ।
৫. নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ববোধের উন্মেষ ঘটায় : শিক্ষার মাধ্যমে জনগণ নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জানে এবং দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। অন্যদিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তারা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়। সুশিক্ষিত ব্যক্তিরা গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে না গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।
৬. কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে একজন সাক্ষরকর্মী নিরক্ষরকর্মীর চেয়ে অধিকতর ‘কর্মদক্ষ’। কারণ সাক্ষর ব্যক্তির চিন্তা ও বিচার বিশ্লেষণ, আত্মমূল্যায়ন ও সংশোধন এবং কর্মজীবনের কর্মসম্পাদন ও কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষমতা নিরক্ষর ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়া নিজ পেশা সংক্রান্ত পুস্তক-পুস্তিকা পাঠ এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও সাক্ষর ব্যক্তি তার কর্মদক্ষতা বাড়াতে সক্ষম হয় । দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে আয় বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে এবং আয় বৃদ্ধির সঙ্গে কাজের আনন্দ বিদ্যমান। এই কাজের আনন্দই কর্মীর কর্মনৈপুণ্য আরো বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া শিক্ষা মানুষের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে এবং নতুন আকাঙ্ক্ষার জন্য দেয়।
৭. শিক্ষা সুষম সমাজ গঠনে সহায়তা করে সর্বজনীন শিক্ষা সুষম সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষরা সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা পেলে শুধু যে তাদের আয় বাড়ানোর সুযোগ পায় তাই নয়, শিশু মৃত্যুর হার কমানো, স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণ ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যান্য সুযোগ গ্রহণের সুবিধা পেয়ে থাকে। এর ফলে তাদের জীবনের মান তারা কিছুটা বাড়াতে সক্ষম হয় ।
৮. স্বাস্থ্যবিধি ও পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে নিরক্ষরদের চেয়ে সাক্ষর ব্যক্তি স্বাস্থ্য সম্পর্কে অধিক সচেতন। সাক্ষর ব্যক্তি স্বাস্থ্যহানির কুফল সম্পর্কে অধিকতর সচেতন বলে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলার চেষ্টা করে। অন্যদিকে নিরক্ষর ব্যক্তিরা স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় সম্পর্কে উদাসীন থেকে প্রতিরোধযোগ্য রোগের কবলে পড়ে স্বাস্থ্য ও কর্মদক্ষতা দুই-ই হারায়। শিক্ষিত ব্যক্তিরা পরিকল্পিত পরিবারের সুফল সম্পর্কে সচেতন ও পরিবার পরিকল্পনা নিয়মকানুন সতর্কতার সঙ্গে মেনে চলে বলেই তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা সীমিত থাকে। এ ব্যাপারে অধিকাংশ নিরক্ষর উদাসীন থাকে বলে তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পরিকল্পিতভাবে বাড়তে থাকে। ফলে তাদের পারিবারিক জীবন সংকটে পতিত হয়।
৯. শিক্ষা জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে স্পৃহা জাগায় শিক্ষা মানুষকে আত্মসচেতন করে তোলে এবং : স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর জীবনযাপনের প্রেরণা যোগায়। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে মানুষ অন্যের পরিবেশকে জানতে পারে। ফলে তারা নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে পারে এবং নিজের জীবনযাত্রার মান মূল্যায়ন করে তার সার্বিক মানোন্নয়নের জন্য উদ্যোগী হয়। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তারা পরিবারের আকৃতি ছোট রেখে পোষ্যদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা ইত্যাদির সংস্থান করতে সচেষ্ট হয়। অন্যদিকে নিরক্ষর মানুষ রোগ, শোক, দারিদ্র্য ইত্যাদিকে ভাগ্যের ফল হিসেবে গ্রহণ করে এবং সমাজে মানবেতর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়।
মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য যে ধরনের শিক্ষা দরকার : ১৯৬০-এর দশকে যেখানে দুই এশিয়ার (দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) মাথাপিছু আয় ছিল প্রায় কাছাকাছি, পরবর্তীতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তাদের নাগরিকদের মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রজন্মান্তর সমৃদ্ধি ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষা বিষয়ে অনেক আশাবাদী উচ্চারণ থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক চিত্রটি খুবই হতাশাব্যঞ্জক।
যদিও আমরা বসে নেই তবুও এ কথা বলা চলে যে আমাদের দেশে বয়স্ক শিক্ষার হার এখনো উন্নয়নশীল দেশসমূহের গড় অবস্থান থেকে বেশ পিছিয়ে। এ দেশে শিক্ষা খাতে ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশের বাজেটে শিক্ষাখাতের জন্য বরাদ্দ যাও বা থাকে তা মূলত শিক্ষকদের বেতন ও অবকাঠামো খাতেই ব্যয় করা হয়। শিক্ষাক্রম ও শিক্ষার মানোন্নয়ন, লাইব্রেরির উন্নয়ন ইত্যাদি বাবদ খুব সামান্যই অর্থ বরাদ্দ থাকে।
বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা যে মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য মোটেই উপযোগী নয় তা বিভিন্ন গবেষণায় ধরা পড়েছে। এসব গবেষণায় ধরা পড়েছে যে প্রাথমিক শিক্ষা পেশা পরিবর্তনের সামান্য সাহায্য করলেও মানবসম্পদ উন্নয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার তেমন কোনো ভূমিকাই নেই ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের (BIDS) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাত্ত্বিক জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগে অপারদর্শী। কাজেই তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও সামাজিক চাহিদা পূরণে তেমন সক্ষম নন। এ অবস্থায় যুগোপযোগী মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে আমাদের দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার উৎকর্ষ অর্জনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে জরুরি দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক।
১. জনসংখ্যার বিশালত্ব ও ব্যাপক দারিদ্র্য পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা উচিত। এক্ষেত্রে শুধু পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দই যথেষ্ট নয়, মানসম্পন্ন শিক্ষক, শিক্ষকের যথেষ্ট বেতনাদি, উন্নতমানের শিক্ষাক্রম এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, অভিভাবক এবং শিক্ষক শ্রেণীর আন্তরিকতা ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ।
২. প্রাথমিক শিক্ষার পরপরই মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে হবে। এক্ষেত্রে মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের আমূল পরিবর্তন কাম্য যা জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও মৌলিক উৎকর্ষতাকে উৎসারিত করবে। পরীক্ষা ব্যবস্থা মুখস্ত করার পারদর্শীতা যাচাই কারক না হয়ে সমস্যা সমাধানে দক্ষতা নির্ধারক হওয়া প্রয়োজন। মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেটে ছাত্রবৃত্তি, স্কুল উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়সমূহের সংযুক্তি আবশ্যক। এই পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহার কি করে বাড়ানো যায় সে দিকটাও মাথায় রাখতে হবে।
৩. বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায় জর্জরিত। ছাত্ররাজনীতি, সন্ত্রাস, শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা ইত্যাদি এ ধরনের সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান। ফলে উচ্চ শিক্ষা তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে।
তাই ছাত্রছাত্রীদের তথ্যপ্রযুক্তির সাথে অধিকতর অন্তর্ভুক্তি, বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এনে বিষয়ভিত্তিক লেকচার প্রদানের ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানসমূহে কাজের সুবিধা সৃষ্টি ইত্যাদি বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষার সুনাম পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে। আরো বেশি হারে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর উচ্চশিক্ষিত মানবসম্পদ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। একটি সৃজনশীল উচ্চ শিক্ষিত কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার জন্য সিঙ্গাপুরের মতো ‘Learning to think and thinking to leam’ এই ধারার দিকে জোর দেয়া যেতে পারে।
উপসংহার : বর্তমান যুগে যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি মানবসম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। মানবসম্পদ উন্নয়নই হলো দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার। আর মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আধুনিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক এবং যুগোপযোগী শিক্ষাই মুখ্যভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নানাবিধ কারণে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।
তাই মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রথমেই এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক মানোন্নয়নে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। জনগণকে মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে সকলের জন্য খাদ্যের যোগান দিতে হবে। পুষ্টি সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আর এর ফলে যে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে, তারা দেশের সার্বিক উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
আরও দেখুন: