মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য

মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আজকের আলোচনা। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রুদ্ধদল সর্বদাই ‘বিশ্লিষ্ট-উচ্চারণে দুই মাত্রার এ ছন্দে সুস্পষ্ট উচ্চারিত অক্ষর-ধ্বনি থেকেই মাত্রার রীতি বা পরিমাণ স্থিরীকৃত হয়। এতে হসন্ত অক্ষরের স্বর, অনুস্বার (ং), বিসর্গ (ঃ), পূর্ববর্তী হসন্ত অক্ষরের স্বর এবং যৌগিক স্বর (ঐ = ওউ) বা যুগ্ম-ধ্বনি সর্বদাই দীর্ঘ বা দ্বি-মাত্রিক। এ-ছন্দে স্বরান্ত, হলন্ত বা কেবল স্বরান্ত অক্ষর দ্বারাই পর্ব সংঘটিত হয়। ওই; ঔ এ-ছন্দে সাধুভাষা বা সাধুক্রিয়ার ব্যবহারই বেশি।

মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য

শব্দের অর্থ পরিবর্তন | শব্দের অর্থ পরিবর্তনের কারন | ভাষা ও শিক্ষা

এ-ছন্দে শব্দ-ধ্বনির প্রাধান্য বেশি; তদতিরিক্ত কোনো সুর বা তান এতে থাকে না । এ-ছন্দে স্বরবৃত্তের মতো ধ্বনিসংকোচ নেই; আছে ধ্বনি- বিস্তার। b. এ-ছন্দের মূল পর্ব চার, পাঁচ, ছয়, সাত এবং আট মাত্রার। তবে, এ-ছন্দে ছয় মাত্রার চালই বেশি।  এ-ছন্দের লয় বিলম্বিত, এবং এর গতিবেগ ঢালা সুরে একটানা প্রবাহিত। এর ভাব ললিত মধুর। এবং  এ-ছন্দের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য এর গীতিপ্রবণতা বা সুরনিষ্ঠতা।

অক্ষরবৃত্ত ছন্দ

উৎপত্তির বিচারে যে ছন্দটিকে আমরা খাঁটি বাংলা অর্থাৎ ‘তদ্ভর ছন্দ’ নামে আখ্যায়িত করেছি, তাকেই প্রচলিত ভাষায় বলা হয় অক্ষরবৃত্ত ছন্দ । যে ছন্দে শব্দের আদিতে ও মধ্যে যুগ্মধ্বনি থাকলে তা সংশ্লিষ্ট উচ্চারণে এক-মাত্রা এবং শেষে যুগ্মধ্বনি থাকলে বিশ্লিষ্ট উচ্চারণে দুই মাত্রা ধরা হয়, সে ছন্দকে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বলা হয়।

 

মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য | অক্ষরবৃত্ত ছন্দ | ছন্দ ও অলঙ্কার | ভাষা ও শিক্ষা

 

এ ছন্দে অক্ষর উচ্চারণের ধ্বনি আচ্ছন্ন করে একটি অতিরিক্ত তান বা সুরের তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। ফলে যুক্তাক্ষরবিহীন ও যুক্তাক্ষরবহুল সব চরণই এ ছন্দে দেখা যায়। মন্থর বা ধীর লয় বা গতির এ ছন্দ সাধারণত দুই পর্বের হয় এবং ৬, ৮ ও ১০ মাত্রার পর্বই এ ছন্দে বেশি দেখা যায়। বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা ছন্দ এ ছন্দের অন্তর্ভুক্ত। যেমন— তিনি মরিতে চাহিনা আমি । সুন্দর ভুবনে, ।

 

মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য | অক্ষরবৃত্ত ছন্দ | ছন্দ ও অলঙ্কার | ভাষা ও শিক্ষা

 

মানবের মাঝে আমি। বাঁচিবারে চাই এই সূর্যকরে এই । পুষ্পিত কাননে । জীবন্ত হৃদয় মাঝে । যদি স্থান পাই। উপর্যুক্ত চরণগুলোর মাত্রাসংখ্যা যথাক্রমে ৮ + ৬ = ১৪ মাত্রার। প্রতি চরণে পর্ব সংখ্যা দুটি করে। সংজ্ঞার্থ : চোখের দেখা অর্থাৎ দৃষ্টিগ্রাহ্য বিযুক্ত বা যুক্ত অক্ষরকে একটিমাত্র মাত্রাহিসেবে গণনা করে যে ছন্দের অক্ষরকেই মাত্রাগণনার এককরূপে গ্রহণ করা হয়, যাবতীয় বিশ্লেষণ সম্ভবপর অথবা যে-জাতীয় ছন্দে দৃষ্টিগ্রাহ্য অক্ষরকেই মাত্রাগণনার তাকেই বলা হয় ‘অক্ষরবৃত্ত’ ছন্দ। অথবা, যে জাতীয় ছন্দে সর্বপ্রকার মুক্তদল একমাত্রাবিশিষ্ট এবং বদ্ধদল শব্দ শেষে দুই মাত্রা, কিন্তু অন্যত্র একমাত্রা ১ তাকেই বলা হয় ‘অক্ষরবৃত্ত ছন্দ’।

 

সূত্র: মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য | অক্ষরবৃত্ত ছন্দ | ছন্দ ও অলঙ্কার | ভাষা ও শিক্ষা

আরও দেখুন:

Leave a Comment