আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সংবাদপত্রের জন্যে প্রতিবেদনের একটা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি আমরা। শিক্ষার্থীরা এই নমুনা থেকে শুধুমাত্র ধারণা নেবেন। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা নেবেন প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও বিভিন্ন তথ্য। এরপর প্রতিজন শিক্ষার্থীরা উচিৎ হবে নিজের মতো করে নিজের ভাষায় লেখা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সংবাদপত্রের জন্যে প্রতিবেদন
আরেফিন খান, সিলেট ॥ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ॥ যথাযোগ্য মর্যাদায় সিলেট সরকারি কলেজের আয়োজনে একুশে ফেব্রুয়ারির তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়। কলেজ ছাত্রসংসদ সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও, কলেজ-শিক্ষকদের উদার মনোবৃত্তি ও সহযোগিতা এবং ছাত্র-ছাত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণে, অমর একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটি স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ভোর ৬টায় কলেজ অধ্যক্ষের নেতৃত্বে প্রভাত ফেরির মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি আরম্ভ হয়।
শহরের বিভিন্নস্থান থেকে সেই কাকডাকা ভোরে ছাত্রছাত্রীরা নগ্নপায়ে এসে হাজির হয়। কলেজের প্রায় সকল ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপকবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করেন। এতে মাইকের ব্যবস্থা ছিল। কলেজের শহীদ মিনারের উদ্দেশে নগ্নপদে শোভাযাত্রা শুরু হলে সকলের কণ্ঠে অনুরণিত হয়ে ওঠে একুশে ফেব্রুয়ারির অমর সঙ্গীত ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ শহীদ মিনারের পাদদেশে এ মিছিল উপনীত হলে প্রথমে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ, এরপর উপাধ্যক্ষ, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং ছাত্রছাত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময়ে সকলের বুকেই কালো ব্যাজ শোভা পাচ্ছিল। পরে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক জনাব আবদুল হাকিম। পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের পর শুরু হল একুশে উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাতীয়জীবনে একুশের তাৎপর্য ও এর প্রভাব সম্পর্কে শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকগণ নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করলেন। শিক্ষার্থীরাও এতে অংশগ্রহণ করল।

সবশেষে বক্তব্য উপস্থাপন করলেন কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলা ভাষাকে স্ব- মর্যাদায় আসীন করার বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম নয়— আত্মচেতনা সমৃদ্ধ জাতীয় জাগরণের উন্মেষ মুহূর্ত, শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের, খণ্ডিত অধিকারের বিরুদ্ধে সামগ্রিক অধিকারের এবং অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের চিরন্তন সংগ্রামের স্মারক। একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনাই বাঙালিকে স্বাধিকার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে, একুশের প্রেরণা থেকেই ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটে এবং স্বাধীনতার বীজ উপ্ত হয়। এরই ফলশ্রুতিতে আমরা ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র লাভ করতে সক্ষম হই।
তাই আজকের দিনে আমাদের সর্ববিধ অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, শোষণ ও নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শপথ নিতে হবে। তারপর একুশের গান, দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে দিবসটি যেমনি হয়ে উঠেছিল বেদনাবিধুর তেমনি হয়ে উঠেছিল তাৎপর্যমণ্ডিত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষে একুশে উপলক্ষে প্রবন্ধ ও কবিতা পাঠ ও রচনা, সুন্দর হস্তাক্ষর প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে অধ্যক্ষ পুরস্কার বিতরণ করেন।
ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদ্যাপিত একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানমালায় শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে অংশগ্রহণ করে। একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। মহান একুশ আমাদের সবার এবং সাধারণভাবে বিশ্ববাসীর মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচনা করে বর্তমান ও অনাগতদিনের মানুষের মধ্যে তা কালজয়ী ঐক্য ও কল্যাণবোধে দীপ্ত হোক, আজকের দিনে এটাই আমাদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা।
আরও দেখুন: