মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুকে চিঠি | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , স্বাক্ষরতা টিকিয়ে রাখতেও একসময় চিঠির অবদান ছিল।প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চিঠি আদানপ্রদান করেছে, ইলিয়াডে তার উল্লেখ ছিল।হিরোডোটাস এবং থুসিডাইডিসের রচনাবলীতেও তা উল্লেখ করা হয়েছে।
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুকে চিঠি
তেজগাঁ; ঢাকা ১১ মার্চ,২০০০
প্ৰিয় ‘ক’,
আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। গত সপ্তাহে তোমার চিঠি পেয়েছি। কিন্তু তুমি যে নতুন ঠিকানা দিয়েছ তা হারিয়ে গিয়েছিল বলে লিখতে বিলম্ব হল। মা ঠিকানাসহ তোমার চিঠিটি আমার হাতে দিল, কাপড় ধোয়ার সময় মা-ই নাকি রেখেছিল। সে যাক, মনে পড়ছে। চিঠিতে আজ অন্য কিছু লেখার সুযোগ নেই।
বার বার শুধু সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনাটির কথাইতুমি তো জান ছোট ভাইকে প্রতিদিন স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হল আমার দায়িত্ব আর ছুটির পর বাসায় ফিরিয়ে আনা আব্বুর দায়িত্ব। প্রতিদিনের মতো সেদিনও ছোট ভাইকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম। জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পথ অতিক্রম করতে যাচ্ছি, ঠিক এমন সময় একটি যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস সাঁ করে পাশ দিয়ে দ্রুত ছুটে গেল।
সঙ্গে সঙ্গে একটা আর্তনাদ। পেছন ফিরে দেখি রক্তাক্ত একটি দেহ স্থির হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। তখনও রক্ত ফিনকি দিয়ে বের হচ্ছে। তাজা রক্তে রাজপথ ভেসে যাচ্ছে। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে আমার হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়ার মতো অবস্থা। মুহূর্তেই শত শত লোক জড় হল, ঘাতক বাসটিকে আটক করা খুবই সহজ হয়েছিল, কারণ সামনেই ট্রাফিক সিগন্যাল ছিল। কিন্তু ড্রাইভার পালিয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে গেল ।

আমার মনের অবস্থা তোমাকে লিখে জানাবার ভাষা নেই। সে যাক, ওইদিনকার মতো স্কুলে আর যাওয়া হল না। এত কাছ থেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করা আমার জীবনে এ-ই প্রথম। এর পর থেকে যখনই ঘটনাস্থল দিয়ে ছোট ভাইকে নিয়ে স্কুলে যাই, তখনই চোখে ভেসে ওঠে সেই ভয়াবহ দৃশ্য। কবে যে নিরাপদ রাস্তায় পথ চলা যাবে তা বলাই কঠিন। জনগণের জন্যে নিরাপদ সড়ক যে কত প্রয়োজন তা কেউ প্রত্যক্ষভাবে সড়ক দুর্ঘটনা না দেখলে অনুধাবন করতে পারবে না। তুমিও রাস্তাঘাট চলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করবে, কখনো তাড়াহুড়ো করে পথ চলবে না। মনে রেখো, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আজ আর নয়। চিঠি লিখো।
ইতি
গুণমুগ্ধ
বাংলা চিঠি লেখার নিয়ম :