“মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন” — এই প্রবাদটির ভাবসম্প্রসারণের একটি নমুনা নিচে তুলে ধরা হলো। এটি ‘ভাষা ও শিক্ষা’ সিরিজের অন্তর্গত একটি রচনা। সত্যিকারের সাধনা বা লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আত্মনিবেদন ও ত্যাগের চূড়ান্ত উদাহরণ স্থাপন করতে হয়। এ প্রবাদটি মূলত একাগ্রতা, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের প্রতীক। এখানে ‘মন্ত্রের সাধন’ বলতে বোঝানো হয়েছে কঠোর সাধনা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য অর্জন; আর ‘শরীর পাতন’ বোঝায় সেই সাধনা সফল না হওয়া পর্যন্ত জীবন বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত থাকা।
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন
জগতে সবকিছুতেই সাধনা করা লাগে। সাধনা দ্বারাই সিদ্ধি লাভ করা সম্ভব। পরিশ্রম ছাড়া জগতে ভালাে কিছু অর্জন করা যায় না। তাই পরিশ্রম বা সাধনা করা সবারই লক্ষ্য হওয়া আবশ্যক। প্রচলিত ও প্রমাণিত সত্য কথা- পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি । পরিশ্রম ছাড়া ভাগ্যের দুয়ার কখনাে খােলে না। পরিশ্রম ছাড়া অলস সময় কাটালে কোনাে সফলতা ধরা দেয় না। যথার্থ পরিশ্রমই ভাগ্যের লক্ষ্মীকে ডেকে আনে। পরিশ্রমবিমুখ অলস ব্যক্তির কাছে সবকিছুই নাগালের বাইরে থাকে। অন্যদিকে, কষ্ট করলেই কেষ্ট মিলে। কষ্ট করলে বা পরিশ্রম করলে সবকিছুই সহজ হয়ে যায়। নয়তাে সবই কেমন যেন কঠিনের বৃত্তের মধ্যে দোলাচল খেতে থাকে।

পৃথিবীতে যারা খ্যাতি, প্রতিপত্তি, সুনাম, সাফল্য লাভ করেছেন, তাঁদের জীবন-ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, তারা বিনা আয়াসে এসব অর্জন করেননি। তাদের সব সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, কঠিন সাধনা। একজন কৃষক যেমন মন্ত্র পড়ে ফসল ফলান না, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলান, তেমনই অলৌকিক কোনাে জাদুমন্ত্রের বলে নয়, সনিষ্ঠ শ্রমের মাধ্যমে বিমুখ ভাগ্যকে জয় করতে হয়। পরিশ্রমী লােকমাত্রই জীবনযুদ্ধে বিজয়ে ঝান্ডা উত্তোলনে সমর্থ হয়।
আর কর্মবিমুখ তথা অলস শ্রমবিমুখ লােকেরা কোনাে কিছুতেই হাসিমুখে ফিরতে পারে না। তাদের জীবনের আষ্টেপৃষ্ঠে শুধু ব্যর্থতার গ্লানি বই কিছুই থাকে না। কোনাে অলৌকিক মন্ত্রবলে নয়, বরং শ্রমের মাধ্যমেই আসে কাজের সাফল্য। পরিশ্রম ছাড়া কোনােকিছু লাভ করা যায়। আব্রাহাম লিংকন বারবার নির্বাচনে পরাজিত হয়েও হতাশ হননি। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তিনি অবশেষে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন।