মনেরে আজ কহ যে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাবসম্প্রসারণ কি তা বললে বোঝায়, কবি, সাহিত্যিক, মনীষীদের রচনা কিংবা হাজার বছর ধরে প্রচলিত প্রবাদ প্রবচনে নিহিত থাকে জীবনসত্য। এ-ধরনের গভীর ভাব বিশ্লেষণ করে তা সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়াকে বলে ভাবসম্প্রসারণ।
মনেরে আজ কহ যে, / ভাল-মন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লও সহজে।
সত্যই সুন্দর, সত্যই বাস্তব। জীবন চলার পথে ভালো-মন্দ যা-ই ঘটুক সত্যকে সহজ ও সাবলীলভাবে গ্রহণ করতে পারলেই প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়। ভালো এবং মন্দ উভয় সময়েই যে সত্যকে আঁকড়ে থাকতে পারে সেই প্রকৃত মানুষ ।
মানবজীবন বিচিত্র বৈশিষ্ট্যে গড়া, সুখ-দুঃখের সমন্বয়েই সে জীবন এগিয়ে চলে। জীবনে সফলতা লাভের জন্য অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে মানুষকে সামনে এগোতে হয়। একজন মানুষ সারা জীবন সুখেই কাটাবে এটা হতে পারে না। সুখের বিপরীত পিঠেই রয়েছে দুঃখের দহন। অবশ্য ভালো-মন্দ দুটোই যদি না থাকত তবে মানুষ তার জীবনকে আপন সাধনায় সাজিয়ে মানবজন্মকে সার্থক করে তুলতে পারত না।
শুধু সুখময় জীবন যেমন একঘেয়ে, শুধু দুঃখের জীবনও অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ফলে এ দুইয়ের সমন্বয়েই জীবনকে সাজাতে হবে, এটাই জীবনের অমোঘ বাস্তবতা। তাই সবরকম বাস্তবতায় সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোই শ্রেয়। যাঁরা পৃথিবীর এই যথার্থ সত্যটি মাথা পেতে গ্রহণ করতে পারেন তাঁরাই জগতে পূজনীয় ব্যক্তিত্ব, তাঁদেরই মানুষ যুগ যুগ ধরে সম্মানের আসন দান করে, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
সাময়িক লাভ কিংবা লোভের বশে সত্যকে পাশ কাটিয়ে গেলে পরিণামে এর ফল ভালো হয় না। কারণ আমরা এড়িয়ে গেলে বা অস্বীকার করলেই প্রকৃত সত্যটি মিথ্যা হয়ে যায় না। সত্যকে অস্বীকার করার দণ্ড হিসেবে পরবর্তী জীবনে চড়া মাশুল দিতে হয়। যে ব্যক্তি মূল সত্যকে চেনে এবং উপলব্ধি করতে জানে তার কাছে সত্য যে রূপেই আসুক না কেন সে তা গ্রহণ করবে এবং তাতে তার কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়।

কিন্তু জীবন নিয়ে যারা ভয়ে থাকে, যারা প্রকৃত সত্যসন্ধানী নয় তারা মন্দ দেখলেই পিছিয়ে যায়। তাই সত্যসন্ধানী হতে হলে, বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চাইলে মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। সত্য যে রূপেই আসুক না কেন তাকে সহজভাবে গ্রহণ করা উচিত।
আলোকিত সত্যের পথে অগ্রসর হওয়াই জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভালো-মন্দ সকল পরিস্থিতিতে প্রকৃত | সত্যের অনুসন্ধান করাই যথার্থ মানুষের বৈশিষ্ট্য। সাময়িক সুখ অর্জন বা দুঃখ এড়ানোর জন্য সত্যকে পরিহার করা অনুচিত।
আরও দেখুন: