বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৯ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৯ – নর্থ সামি (North Sami): এটি পশ্চিম সামি (Western Sami) ভাষা। নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৮ শতকের মধ্যভাগে Knud Leen এ ভাষার ব্যাকরণ এবং ডিকশনারি তৈরি করেন।

বর্তমানে প্রচলিত বানান পদ্ধতির মূল ১৮৩২ সালে তৈরি করেন Rasmus Rask। নরওয়ে, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডে ভিন্ন ভিন্ন বানান পদ্ধতি গড়ে ওঠে। তিন দেশে একই ধরনের বানান পদ্ধতি রাখার জন্য ১৯৭৯ সালে অফিসিয়ালভাবে একটি বানানপদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে এটি সামান্য পরিবর্তন করা হয়।

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৯

নর্দার্ন সোথো (Northern Sotho)

বান্টু ভাষা পরিবারের এ সদস্য দক্ষিণ আফ্রিকার একটি দাপ্তরিক ভাষা। দেশটির প্রায় ৪২ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন।

নরওয়েজিয়ান (Norwegian)

উত্তর জার্মান এ ভাষায় কথা বলেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ, যার বেশিরভাগ বাস করেন নরওয়েতে। এ ভাষার প্রাথমিক সাহিত্য রচিত হয় ৯ম থেকে ১৪ শতকের মধ্যবর্তী সময়কালে। এরপর নরওয়ে ড্যানিশ শাসনের অধীন চলে যায় এবং তখন আধিপত্য বিস্তার করে ড্যানিশ ভাষা।

১৮১৪ সালে নরওয়ে, ডেনমার্ক থেকে পৃথক হয় কিন্তু অব্যাহত থাকে সুইডিশ ভাষার প্রভাব। ১৮৩০ সালে নিজেদের জাতীয় ভাষার জন্য আন্দোলন দানা বাঁধে। নরওয়েজিয়ান ভাষার আছে দুটি ধরন Mynorsk (New Norwegian) এবং Bokmal (Book Language) I এ দুটি ধরনকে একীভূত করে একটি আদর্শ নরওয়েজিয়ান ভাষা তৈরির বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা সফল হয়নি। ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি এ উদ্যোগকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৯ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

 

নুয়ের (Nuer)

এটি নিলো-সাহারন ভাষা পরিবারের Western Nitotic গ্রুপের সদস্য। সুদান এবং ইথিওপিয়ার প্রায় ৮ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষা লেখা হয় ল্যাটিন বর্ণমালার একটি ভার্সন দিয়ে। এ ভাষার বানানরীতি গৃহীত হয় ১৯২৮ সালে Rejaf Language Conference-এ।

নু-চাহ-নালথ (Nuu-chah-Nulth)

ভাষাটি নুতকা (Nootka) নামেই অধিক পরিচিত। এটি কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় বসবাসরত রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীদের ভাষা। মাত্র ২০০ মানুষ এখন এ ভাষায় কথা বলেন। নু-চাহ-নালথ শব্দটির অর্থ ‘পর্বত বারবার’। এ ভাষাটি আধুনিক জগতের নজরে আসে ইউরোপীয় অভিযাত্রী এবং ব্যবসায়ীদের কল্যাণে। তারা এ অঞ্চলে ভ্রমণের সময় নুতকা ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়।

১৮১৫ সালে ইংরেজ কামার জন আর জিওইট এ অঞ্চল সম্পর্কে একটি স্মৃতিকথা লেখেন, যেখানে এ ভাষা সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে। এ স্মৃতিকথায় তিনি নুতকা ভাষায় একটি গ্লসারি (Glossary) যুক্ত করেন। জিওইট নু-চাহ-নালথ গোষ্ঠীর নেতা মাকুইন্নার হাতে তিন বছর বন্দি ছিলেন। তখন তিনি এ ভাষা শেখার চেষ্টা করেছিলেন।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

এনএনজি (Nilng)

ভাষাটি নিউ (Nlu) নামেও পরিচিত। এটি খোইসান (Khoisan) ভাষা পরিবারের উই (Ui) শাখার একমাত্র জীবিত সদস্য। ১৯৭৩ সালে ভাষাটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯০ সালে সাউথ আফ্রিকান স্যান ইনস্টিটিউট ২৫ জন মানুষকে খুঁজে পায় যারা এ ভাষা বলতে এবং বুঝতে পারেন। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বতসোয়ানায় এ ভাষার মাত্র ১০ জন মানুষ বেঁচে আছেন। জাতিবিদ্বেষের কারণে এনএনজি ভাষীরা তাদের ভাষা এবং অন্যান্য নিজস্ব পরিচয় লুকিয়ে রাখে। ফলে এ ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পর্যায়ে এসে পৌছেছে।

ওজিবুয়ে (Ojibwe)

এটি উত্তর আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের একটি অ্যালাগনকুইয়ান ভাষা। কানাডায় ৫০ হাজার এবং যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাষার ৩০ হাজার বক্তা আছেন। কানাডায় এ ভাষা লিখতে ওজিবুয়ে বর্ণমালা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়।

ওজি-ক্রি (Oji-cree)

ওজি-ক্রি বা সেভার্ন ওজিবুয়ে রেড ইন্ডিয়ানদের অ্যালগনকুইয়ান ভাষা। এটিওজিবুয়ে ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। কানাডার প্রায় ১৬ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষাকে রেড ইন্ডিয়ানরা ডাকে Anishininiimowin নামে। এর অর্থ Language of ordinary people. ক্রি ভাষার প্রভাবও রয়েছে এ ভাষায়।

ওকিনাওয়ান (Okinawan)

এটি Ryukuan ভাষা পরিবারের সদস্য। জাপানের Ryukyu দ্বীপমালার অনেক দ্বীপ এবং ওকিনাওয়া দ্বীপের মানুষ এভাষায় কথা বলেন। এভাষার স্থানীয় নাম Dchina । রাজা শো শিনের (১৪৭৭-১৫২৬) শাসনামলে এ ভাষার শুরি উপভাষাকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে একে দাপ্তরিক এবং অভিজাতদের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ওই সময় গান এবং কবিতা রচনাতেও ব্যবহৃত হতো এ ভাষা।

১৩ শতকের শুরুতে হিরাগানা (Hiragana) বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা শুরু হয়। ১৬ শতকে শুরু হয় কাঞ্জি (Kanji) এবং হিরাগানা বর্ণমালার মিশ্রণ দিয়ে লেখা। Ryukyu ১৮৭৯ সালে জাপানের সঙ্গের যুক্ত হলে এ ভাষার ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়। কদর বাড়ে জাপানিজ ভাষার। উল্লেখ্য, Ryukyu দ্বীপমালায় আরও চারটি ভাষা ব্যবহৃত হয়-Amami, Miyako, Yaeyama, Yonaguni ।

ওরখোন/পুরানো তুর্কিক (Orkhon/old Turkic)

উনিশ শতকে তুর্কি ভাষা লেখার আদিতম নিদর্শনটি খুঁজে পাওয়া গেছে মঙ্গোলিয়ার ওরখোন নদীর উপত্যকায়। এগুলো ৮ম শতকের আগে লেখা এবং যে বর্ণমালা এখানে ব্যবহৃত হয় তা ওরখোন বর্ণমালা অথবা পুরানো তুর্কি লিপি অথবা ওরখোন-ইয়োনিসেই নামে পরিচিত।

অষ্টম শতকের শেষার্ধে রচিত পুঁথিগুলোয় ব্যবহৃত বর্ণমালা ওরখোন বর্ণমালা হতে সামান্য ভিন্ন। এগুলো ইয়োনিসেই অথবা সাইবেরীয় রুন (Rune: বিশেষ ধরনের প্রতীক যা প্রাচীন টিউটনিক বর্ণমালায় ব্যবহৃত হয়েছে) নামে পরিচিত, যা ইয়োনিসেই এবং সাইবেরিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে পাওয়া যায়। রুনিক বর্ণমালার সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য থাকায় এ বর্ণমালাকে ওরখোন অথবা তুর্কি রুনও বলা হয়। এই সাদৃশ্য সম্ভবত লেখার উপকরণের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।

অধিকাংশ পুঁথি লেখা হয় শক্ত পৃষ্ঠে যেমন, পাথর অথবা কাঠপৃষ্ঠে আর এসব পৃষ্ঠে বাঁকানো প্রতীক লেখা একটি দূরূহ কাজ। ধারণা করা হয়, ওরখোন বর্ণমালা সোগদিয়ান লিপি হতে উদ্ভাবিত। নবম শতকের মাঝে ওরখোন ও ইয়েনিসেই বর্ণমালা দুটি উইঘুর বর্ণমালা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, যা সোগদিয়ান লিপিরই আরেকটি রূপ হতে উদ্ভাবিত।

ও’ডম (O’odham)

এটি আরিজোনা এবং মেক্সিকোতে ব্যবহৃত উতো-আজটেকান ভাষা। রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীদের সব থেকে বেশি ব্যবহৃত ভাষার একটি এ ভাষা। এ ভাষায় আছ প্রায় ৪৫ হাজার বক্তা। এ ভাষার আছে দুটি উপভাষা-Tohono O’odham এবং Akimel O’odham ।

ওক্কিতান (occitan)

এটি একটি রোমানস (Romance) ভাষা। প্রধানত দক্ষিণ ফ্রান্স এবং ইতালি ও স্পেনের কিছু জায়গায় এ ভাষায় কথা বলে মানুষ। ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলতে পারেন। এদের মধ্যে ১৫ লাখ দৈনন্দিন কাজে এ ভাষা ব্যবহার করেন। এ ভাষার বেশিরভাগ বক্তাই প্রবীণ এবং গ্রামে বাস করেন। এ ভাসায় আছে ছয়টি উপভাষা Provencal, Gascon, Languedocien, Limousin, Alpine এবং Auvergne. ১০ম শতকে এ ভাষা লিখিত রূপ পায়। এ সময় প্রধানত ট্রবডোরদের (Troubdour) গীতি-কবিতা লিখতে এ ভাষা ব্যবহৃত হতো।

ট্রবডোর হলো মধ্যযুগে (১১০০-১৩৫০) সালে ওক্কিতান গীতি-কবিতার লেখক এবং আবৃত্তিকার। এরপর ১৫ শতকে ফ্রান্স একীভূত হলে ফরাসি প্রশাসন langue d’oil কে ওক্কিতান এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা থেকে বেশি প্রাধান্য দেয়। ফলে এসব ভাষা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। langue d’oil থেকে বিকশিত হয় আধুনিক ফ্রেঞ্চভাষা। ১৯ শতকে এসে পুনরায় এ ভাষার উজ্জীবন ঘটে।

এর অন্যতম কৃতিত্ব নোবেলজয়ী (১৯০৪) কবি ফ্রেডরিক মিস্ত্রালের (১৮৩০-১৯১৪)। তিনি তার বিখ্যাত Mireio কবিতাটি এ ভাষায় লেখেন এবং এ ভাষার লিখন পদ্ধতি সুসংবদ্ধ করার কাজ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ফ্রান্সে এ ভাষার বেশ কয়েকটি পত্রিকা আছে। রেডিও, টিভিতে অনুষ্ঠানও হয় এ ভাষায়। স্পেনে আরান ভ্যালিতে এ ভাষার প্রচলন রয়েছে এবং সেখানে এ ভাষা স্প্যানিশের সঙ্গে কো-অফিসিয়াল মর্যাদাসম্পন্ন।

ওল্ড চার্চ স্লাভোনিক (Old Church Slavonic)

এটি খ্রিস্ট ধর্মযাজক পর্যায়ে ব্যবহৃত বই রচনার ভাষা। এ ভাষার উৎপত্তি হয় ৯ম শতকের বাইজানটিয়ামের মিশনারি সেন্ট সিরিল এবং সেন্ট মেথোডিয়াসের ব্যবহৃত ভাষা থেকে। বাইবেল এবং অন্যান্য ধর্মীয় রচনা অনুবাদের জন্য সৃষ্টি হয় এ ভাষা। Thessalonika অঞ্চলের একটি উপভাষাকে ভিত্তি করে সেন্ট সিরিল মেথোডিয়াস তাদের অনুবাদ এবং ওল্ড চার্চ স্লাভোনিক ভাষার আদর্শ রূপ তৈরি করেন। ভাষাটি লেখার জন্য এ দুজন সেন্ট তৈরি করেন Glagolitic বর্ণমালা।

১০ম শতকে এ ভাষা লেখার জন্য তৈরি হয় নতুন বর্ণমালা। সেন্ট সিরিলের নামানুসারে এ নতুন বর্ণমালার নাম দেয়া হয় সিরিলিক আলফাবেট। সিরিলিক বর্ণমালার আবিষ্কারক ওহরিডের সেন্ট ক্লিমেন্ট। দুনিয়ার অনেক ভাষা লিখতে বর্তমানে ব্যবহৃত হয় সিরিলিক বর্ণমালা। ১৪ শতকে এ ভাষার একটি আধুনিক রূপের আবির্ভাব ঘটে যার নাম চার্চ স্লাভোনিক। রাশিয়ার অর্থডক্স চার্চ এখনও এ ভাষা ব্যবহার করেন।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৯ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment