বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৮ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৮ – লিনগালা (Lingala): এটি কঙ্গোর অন্যতম প্রধান ভাষা। এ ভাষার সৃষ্টি হয়েছে বোবানজি (Bobangi) ভাষা থেকে। ১৯ শতকের শেষ দিকে ইউরোপিয়ানরা এ অঞ্চলে পৌছানোর আগ পর্যন্ত বোবানজি ছিল কঙ্গো নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ভাষা। লিনগালা ভাষা চারটি ভিন্ন গঠনে বিভক্ত- আদর্শ লিনগালা, কথ্য লিনগালা, কিনশাসা লিনগালা এবং ব্রাজ্জাভিলে লিনগালা।

Table of Contents

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৮

লিথুয়ানিয়ান (Lithuanian)

বাল্টিক এ ভাষায় কথা বলেন লিথুয়ানিয়ার প্রায় ৩২ লাখ মানুষ। ১৫৪৭ সালে এ ভাষার প্রথম বই প্রকাশিত হয়। প্রথম ডিকশনারি প্রকাশিত হয় ১৭ শতকে। ১৮৬৪ থেকে ১৯০৪ সাল সময়কালে এ ভাষায় প্রকাশনা ও ভাষা শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। ১৯০৪ সালে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে এ ভাষায় সাহিত্যচর্চার জোয়ার আসে। ১৯১৮ থেকে ১৯৪০ সাল সময়কালে এ ভাষায় ৭ হাজারের বেশি বই প্রকাশিত হয়। এটি লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রীয় ভাষা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি অফিসিয়াল ভাষা।

লিভোনিয়ান (Livonian)

ফিনিক ভাষার দক্ষিণ-পশ্চিম শাখার সদস্য এ ভাষা। ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এ ভাষার শেষ বক্তা ভিক্টর বার্থোন্ড মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু কিছু মানুষ এ ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করতে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে এ ভাষা শিখছেন। এ ভাষার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ সালে।

লুগান্ডা (Luganda)

নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের বান্টু শাখার সদস্য এটি। উগান্ডার বুগান্ডা অঞ্চলে বসবাসরত বাগান্ডা নামক নৃ-গোষ্ঠীর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এ ভাষার কথা বলেন। উগান্ডা নামটি প্রকৃতপক্ষে বাগান্ডার সোয়াহিলি ভার্সন। এ ভাষার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে এবং ১৯৪৭ সালে অল-বাগান্ডা কনফারেন্সে এ ভাষার আদর্শ বানানরীতি প্রকাশ করা হয়।

লুও (Luo)

নিলো-সাহারান ভাষা পরিবারের সদস্য এ ভাষায় কথা বলেন কেনিয়ার লেক ভিক্টোরিয়ার তীরবর্তী, সুদান এবং তাঞ্জানিয়ার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ।

লোনটারা (Lontara)

এ ভাষার বর্ণমালা এসেছে প্রাচীন ভারতের ব্রাহ্মী লিপি থেকে। লোনটারা নামটি এসেছে তালপাতার মালয় নাম লোনটার থেকে। এটি ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পাণ্ডুলিপি তৈরির উপকরণ।

লুক্সেমবার্গিশ (Luxembourgish)

লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানের প্রায় চার লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষায় সাহিত্যচর্চা সমৃদ্ধ হয় ১৯ শতকে। প্রি-স্কুল শিক্ষা কার্যক্রমে এ ভাষা ব্যবহার হয় লুক্সেমবার্গে। লুক্সেমবার্গ পার্লামেন্টের কাজ প্রধানত চলে এ ভাষাতেই।

মাসাই (Maasai)

এটি নিলো-সাহারান ভাষা পরিবারের পূর্ব নিয়োলিটিক শাখার সদস্য। দক্ষিণ কেনিয়া ও উত্তর তানজানিয়ার প্রায় ৯ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। মাসাই শব্দের অর্থ-যিনি মা (Maa) ভাষায় কথা বলেন। মাসাই ভাষার আরেকটি নাম ‘মা’। লেখার কাজে এ ভাষা খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না।

মেসিডোনিয়ান (Macedonian)

এটি দক্ষিণ স্লাভিক ভাষা। এ ভাষায় কথা বলেন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ২০ লাখ আছেন সাবেক যুগোস্লাভ রিপাবলিক অব মেসিডোনিয়ায়। আলবেনিয়ায় এটি সংখ্যালঘু ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। বুলগেরিয়ান ভাষার সঙ্গে এ ভাষার পারস্পরিক বোধগম্যতা আছে। এ ভাষার আদর্শ লিখিত ভার্সন চালু হয় ১৯৪৫ সালে।

মাদুরেজ (Madurese)

এটি অস্ট্রোনেশিয়ান ভাষা পরিবারের মালায়ো-সামবাওয়ান Malayo- Sumbawan) শাখার সদস্য। ইন্দোনেশিয়ার মাদুরা দ্বীপ এবং পূর্ব জাভায় প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ঐতিহ্য অনুসারে এ ভাষা জাভানিজ বর্ণমালা দিয়ে লেখা হয় কিন্তু বর্তমানকালে এ ভাষা লিখতে ব্যবহৃত হচ্ছে ল্যাটিন বর্ণমালা।

মৈথিলি (Maithili)

এটি ভারতের বিহার রাজ্যের স্থানীয় ভাষা। বিহার এবং নেপালের তরাই অঞ্চলের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটি ইন্দো-আর্য ভাষা পরিবারের সদস্য। এটি লেখা হয় মৈথিলি বর্ণমালা দিয়ে। এ বর্ণমালার সৃষ্টি হয় খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে। ব্রাহ্মী লিপি থেকে তৈরি হয় এ বর্ণমালা। বর্তমানকালে এ ভাষা লেখা হয় দেবনাগরি বর্ণমালা দিয়ে।

মাখুবা (Makhuwa)

এ বান্টু ভাষায় কথা বলেন মোজাম্বিকের ২৫ লাখ মানুষ। এটি মোজাম্বিকের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আদিবাসী ভাষা। এটি লোম্বে ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত।

মালাগাসি (Malagasy)

অস্ট্রোনেশীয় ভাষার মালায়ো-পলিনেশিয়ান শাখার সদস্য এ ভাষা। এ ভাষার প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ বক্তা আছেন। এর বেশিরভাগ বক্তা বাস করেন মাদাগাস্কারে। এটি মাদাগাস্কারের জাতীয় ভাষা। এ ভাষায় বান্টু ভাষা এবং আরবি থেকে অনেক শব্দ এসেছে। বর্তমানে এ ভাষা ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে লেখা হয়।

মালয় (Malay)

অস্ট্রোনেশিয়ান এ ভাষাটিতে কথা বলেন প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই এবং থাইল্যান্ডে ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। এ ভাষার প্রথম লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায় সুমাত্রা এবং বাংকা দ্বীপে। লেখার সময়কাল ৬৮৩ থেকে ৬৮৬ খ্রিস্টাব্দ। ১৪ শতকে এ অঞ্চলে ইসলামের প্রভাব শুরু হওয়ার পর এ ভাষা লিখতে শুরু হয় আরবি বর্ণমালার ব্যবহার। এরপর ১৭ শতকে ডাচ এবং ব্রিটিশদের আগমনের পর চালু হয় ল্যাটিন বর্ণমালা।

মলয়ালম (Malayalam)

এটি একটি দ্রাবিড় ভাষা। ভারতের কেরালা রাজ্য এবং তার আশপাশের রাজ্যে প্রধানত ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। প্রায় ৩ কোটি আশি লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৩ শতকে সুসংবদ্ধ মলয়ালম বর্ণমালার আবির্ভাব ঘটে। ১৯ শতকের মধ্যভাগে এ বর্ণমালা বর্তমান রূপের চেহারা পায়। ছাপা কঠিন বিধায় ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে এ বর্ণমালাকে কিছুটা সরল রূপ দেয়া হয়। কেরালা এবং সিঙ্গাপুরের মুসলমানরা আরবি বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখেন।

মালটেজ (Maltese)

এ সেমেটিক ভাষায় কথা বলেন আইল্যান্ড অব মাল্টা এবং গোজোর প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। এ ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে সিসিলিয়ান আরবি থেকে, আরবি ভাষার এই রূপ তৈরি হয় সিসিলি এবং মাল্টায় ৯ম থেকে চতুর্দশ শতক জাময়কালে। ১৩৬৪ সালে মালটেজ স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে আবির্ভূত হয়। আবার অনেকের ধারণা পিউনিক ভাষা থেকে এর উদ্ভব। এ ভাষার প্রথম সাহিত্য রচনা হয় ১৫ শতকে, যার নাম ‘II cantilena’। এটি মাল্টার জাতীয় ভাষা।

মাম (Mam)

গুয়েতেমালার প্রায় ৫ লাখ মানুষ কথা বলেন এ মায়া ভাষায়। এ ভাষার আছে অনেক উপভাষা। এমনকি পাশাপাশি গ্রামগুলোর মাঝেও রয়েছে এ ভাষার ভিন্নতা। তবে মামভাষীরা এসব পার্থক্য সত্ত্বেও পরস্পরের কথা বুঝতে পারেন।

মান্দারিন (Mandarin)

এটি চায়নিজ ভাষার একটি প্রকার। প্রধানত ব্যবহৃত হয় চীনে। এ ভাষায় কথা বলেন প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ। এটি চীন এবং তাইওয়ানের সরকার, মিডিয়া এবং শিক্ষার প্রধান ভাষা। চায়নিজ ভাষার লিখিত রূপ মৌখিক মান্দারিনের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। চায়নিজ লেখা এবং পড়ার জন্য সবাইকেই মান্দারিনের ব্যাকরণ এবং শব্দ জানতে হয়।

মানসি (Mansi)

এটি ফিনো-উজরিক (Finno- Ugric) ভাষা পরিবারের অব-উজরিক শাখার সদস্য। রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে এ ভাষার প্রায় ৩ হাজার একশ চুরাশি জন বক্তা বাস করেন। ১৯০৩ সালে বিশপ নিকোনর এ ভাষা লেখার প্রাথমিক নিয়ম প্রণালীবদ্ধ করেন। ১৯৩১ সালে লেনিনগ্রাদের ‘রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ইনস্টিটিউট অব দ্য নর্ডিক পিপল’ এ ভাষার একটি আদর্শ বানানরীতি চালু করে। তখন ব্যবহার করা হয় ল্যাটিন বর্ণমালা। এরপর ১৯৩৭ সালে শুরু হয় সিরিলিক বর্ণমালার ব্যবহার।

মাওরি (Maori)

অস্ট্রোনেশিয়ান এ ভাষায় কথা বলেন নিউজিল্যান্ড এবং কুক আইল্যান্ডের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। ৪০০ খ্রিস্টাব্দ বা তারও আগে পলিনেশীয় মানুষেরা তাহিতি থেকে এ অঞ্চলে মাওরি ভাষা নিয়ে আসে। ১৮৪০ সালের আগে মাওরি ছিল নিউজিল্যান্ডের অন্যতম প্রধান ভাষা। এ ভাষার প্রথম প্রকাশিত বই “E korao no NewZealand” (Talk from New Zealand)। এর লেখক থমাস কেনডাল বইটি প্রকাশিত হয় ১৮১৫ সালে।

১৮৪২ সালে এ ভাষার প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ১৮৬৭ সালে নেটিভ স্কুল অ্যাক্ট ডিক্রির মাধ্যমে মাওরি শিশুদের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে একমাত্র ইংরেজিকে চাপিয়ে দেয়া হয়। ১৯৭০ সালে নিজেদের ভাষা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে মাণ্ডার জনগোষ্ঠী।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

মাপুচে (Mapuche)

এটি একটি বিচ্ছিন্ন ভাষা কোনো ভাষা বা ভাষা পরিবারের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। চিলির দক্ষিণাঞ্চল এবং আর্জেন্টিনার পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সাত লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। স্থানীয় মাপুচেভাষীরা তাদের এ ভাষাকে ডাকেন Mapudungun নামে। এখানে Mapu অর্থ পৃথিবী বা মাটি আর dungun অর্থ কথা। ১৬০৬ সালে জেনুইট যাজক লুইম দে ভালদিভিয়া প্রকাশ করেন এ ভাষার ব্যাকরণ। ১৭৬৫ সালে বের হয় এ ভাষার ডিকশনারি।

মারাঠি (Marathi)

ইন্দো-আর্য এ ভাষায় কথা বলেন ভারতের প্রায় ৭ কোটি মানুষ। এদের বেশিরভাগের বাস মহারাষ্ট্র রাজ্যে। পাথর এবং তামার পাত্রের ওপর এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায় ১১ শতকে। ১৩ থেকে ২০ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ ভাষা লেখা হতো মোদি বর্ণমালা দিয়ে। ১৯৫০ থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে দেবনাগরি বর্ণমালা।

মারি (Mari)

উরালিক (Uralic) এ ভাষায় কথা বলেন রাশিয়ার মারি রিপাবলিকের প্রায় ৬ লাখ মানুষ। এ ভাষার রয়েছে দুটি প্রধান উপভাষা। হিল মারি এবং মিডও মারি।

মার্শালিজ (Marshallese)

এটি অস্ট্রোনেশিয়ান ভাষা পরিবারের মালায়ো-পলিনেশীয় শাখার মাইক্রোনেশিয়ান গ্রুপের সদস্য। মার্শাল আইল্যান্ডের ২৩ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি এখানকার দাপ্তরিক ভাষা। ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা হয়।

মারওয়ারি (Marwari)

ইন্দো-আর্য এ ভাষায় কথা বলেন প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ মানুষ। এটি প্রধানত ব্যবহৃত হয় ভারতের রাজস্থান রাজ্যে। এটি সাধারণত দেবনাগরি বর্ণমালা দিয়ে লেখা হয়।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৮ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

 

মরিশিয়ান ক্রেয়ল। (Mauritian creole)

ফরাসিভিত্তিক এ ক্রেয়ল ভাষায় কথা বলেন মরিশাসের প্রায় ১২ লাখ মানুষ। ফরাসি ছাড়াও ইংরেজি এবং বিভিন্ন আফ্রিকান ও এশীয় ভাষার অনেক শব্দ যোগ হয়েছে এ ক্রেয়লে।

মাঝাহুয়া (Mazahua)

ওট-মানগুয়েয়ান (Oto-Manguean) এ ভাষায় কথা বলেন মেক্সিকোর প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। মাঝাহুয়া শব্দটি এসেছে Nahuati থেকে যার অর্থ ‘হরিণের মালিক’।

মাঝানদারানি (Mazandarani)

ইরানের মাঝানদারান, জিলান এবং গুলেস্তান রাজ্যের প্রায় তেত্রিশ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষায় সাহিত্যের ভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ যা সৃষ্টি হয় দশম থেকে পঞ্চদশ শতকের মধ্যকার সময়কালে। ১৭ শতক থেকে এ ভাষাকে সরিয়ে প্রভাব বিস্তার করে ফার্সি ভাষা।

মাঝাটেক (Mazatec)

এ ভাষাটি বলতে মূলত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কয়েকটি ওটমানগুয়েয়ান ভাষাকে বোঝানো হয়। মেক্সিকোতে প্রায় দুই লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটি মৌখিক ভাষা। এ ভাষাগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এগুলোকে একটি ভাষা হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

মেরিয়াম মির (Meriam Mir)

পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ২ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাবিদরা একে স্থানীয় ট্রান্স-ফ্লাই ভাষা পরিবারের সদস্য বলে মনে করেন।

মিকাসুকি (Mikasuki)

এটি যুক্তরাষ্ট্রের রেড ইন্ডিয়ানদের ভাষা। মাসকোজিয়ান ভাষাগোষ্ঠীর এ ভাষায় কথা বলেন ফ্লোরিডার পাঁচশ ইন্ডিয়ান। এরা বেশিরভাগই মিকোসুকি গোত্রের সদস্য। আরো আছেন সেমিনোলে গোষ্ঠীর অনেক সদস্য।

মিকমাক (Mikmaq)

রেড ইন্ডিয়ানদের এ ভাষাটি একটি অ্যালগনকুইয়ান ভাষা। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি হায়ারোগ্লিফিক পদ্ধতিতে লেখা হতো অতীতে। ১৮৯৪ সালে সাইলাস টি. র‍্যান্ড ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখার পদ্ধতি চালু করেন। ১৯৭৪ সালে নতুন উচ্চারণ পদ্ধতি প্রণীত হয়।

মিনাংকাবাউ (Minangkabau)

সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ কথা বলেন এ মালয় ভাষায়। এ ভাষার বেশ কয়েকটি উপভাষা আছে যার মধ্যে প্রধান হলো আগাম-তানাহ দাতার। বর্তমানে ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা হয়।

মিরানদেজ (Mirandese)

রোমানস এ ভাষায় কথা বলেন পর্তুগালের প্রায় দশ হাজার মানুষ। ১৯ শতকের ২য় ভাগে এ ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। এ ভাষায় সব থেকে বিখ্যাত লেখকের নাম Jose Leite de Vasconcelos.

মিসকিটো (Miskito)

নিকারাগুয়া এবং হন্ডুরাসের প্রায় দুই লাখ মানুষ কথা বলেন এ মিসুমালপান (Misumalpan) ভাষায়। ২০ শতকে এ মিসকিটোভাষীদের ওপর স্প্যানিশ ভাষা চাপিয়ে দেয়া হয়। এরপর বিভিন্নভাবে চেষ্টা চলছে এ ভাষার বিকাশকে রক্ষা করার।

মিক্সটেকান (Mixtecan)

ওট-মানগুয়েয়ান কয়েকটি ঘনিষ্ঠ ভাষার গ্রুপ মিক্সটেকান নামে পরিচিত। মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। মেসোআমেরিকান ইতিহাসের পোস্ট-ক্লাসিক পর্যায়ে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১ হাজার অব্দে এ ভাষা ব্যবহারকারীরা লোগোগ্রাফিক পদ্ধতিতে এ ভাষা লেখার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন।

১৫২২ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলের ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনী চর্চা হয় এ ভাষায়। এরপর স্প্যানিশরা এ এলাকা দখল করে এবং অনেক মিক্সটেকান সদস্য ভাষা ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখার পদ্ধতি চালু করে মিশনারিরা।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা

 

মোহক (Mohawk)

এটি যুক্তরাষ্ট্রের রেড ইন্ডিয়ানদের ভাষা। ইরোকুয়োইয়ান এ ভাষায় কথা বলেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রেড ইন্ডিয়ান। এ ভাষা ব্যবহারকারীরা মোট ছয়টি গোত্রে বিভক্ত। ১৮ শতকের শুরুতে একজন ফরাসি মিশনারি প্রথম এ ভাষাকে লিখিত রূপ দেন। ১৯৭০ সাল থেকে স্কুলে এ ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত মোহক ল্যাঙ্গুয়েজ স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন কনফারেন্সে এ ভাষার আদর্শ লিখিত রূপ গৃহীত হয়।

মোকশা (Moksha)

রিপাবলিক অব মলডোভিয়া এবং রাশিয়ার প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। মলডোভিয়ায় এ ভাষার অফিসিয়াল মর্যাদা আছে।

মঙ্গোলিয়ান (Mongolian)

অলটাটিক (Altatic) এ ভাষায় কথা বলেন মঙ্গোলিয়া, চীন, আফগানিস্তান এবং রাশিয়ার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। ১৯৪১ সালে মঙ্গোলিয়ান সরকার আইন পাস করে ক্লাসিক্যাল মঙ্গোল লিপি বিলুপ্ত করে। কিন্তু ১৯৯৪ সাল থেকে পুনরায় এ লিপি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সাধারণ মানুষ ক্লাসিক্যাল লিপি প্রায় ভুলে গেছে। শুধু কবি, শিল্পী, ডিজাইনার, ক্যালিওগ্রাফাররা সাজসজ্জার জন্য এ লিপি ব্যবহার করেন। বর্তমানে সিরিলিক বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লিখিত হয়।

মনট্যাগনাইস (Montagnais)

রেড ইন্ডিয়ানদের অ্যালগনকুইয়ান ভাষা এটি। কানাডার প্রায় ৯ হাজার আদিবাসী ইন্ডিয়ান এ ভাষায় কথা বলেন। মনট্যাগনাইস ভাষীরা নিজেদের ‘ইনু’ (Innu) বলে ডাকেন।

মন্টেনেগ্রিন (Montenegrin)

দক্ষিণ স্লাভিক এ ভাষাটি ব্যবহৃত হয় মন্টেনিগ্রোতে। ২০০৭ সাল থেকে এ ভাষা মন্টেনিগ্রোর দাপ্তরিক ভাষা। ২০০৯ সালে তৈরি হয় এ ভাষার বানান পদ্ধতি।

মসি (Mossi)

নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের গার (Gar) শাখার সদস্য এটি। বারকিনা ফাসোর ৫০ লাখ এবং মালি ও টোগোর ৬০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। বারকিনা ফাসোতে ল্যাটিন বর্ণমালার একটি ভার্সন দিয়ে লেখা হয় এ ভাষা।

মুরুই হুইতোতো (Murui Huitoto)

পেরু এবং কলম্বিয়ায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। পেরুতে এ ভাষার অফিসিয়াল মর্যাদা আছে এবং স্কুল ও চার্চে ব্যবহৃত হয়। ভাষাটি এক সময় ব্রাজিলে ব্যবহৃত হতো। এ ভাষার ব্যাকরণ এবং ডিকশনারি আছে।

মারিন-পাথা (Murrinh-Patha)

এটি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী ভাষা। ওয়াদেয় অঞ্চল এবং ফিটজমাউরিক নদীর তীরবর্তী প্রায় ১৫০০ আদিবাসী এ ভাষায় কথা বলেন। এরা সবাই মারিন-পাথা আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্য। এ অঞ্চলে ভাষাটি লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মারিন-পাথা নামটির অর্থ ‘Language good’

নাগামিজ ক্রেয়ল (Nagamese Creole)

এটি অসমিয়া, হিন্দি, ইংরেজি এবং নাগা ভাষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ক্রেয়ল। ভারতের নাগাল্যান্ডের প্রায় ৩ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। নাগাল্যান্ডের প্রায় ২০টি ভাষা প্রচলিত যেসব ভাষা পরস্পর ভিন্ন ভাষাভাষীদের বোধগম্য নয়। তাই পারস্পরিক ভাব বিনিময়ে নাগাল্যান্ডে এ ক্রেয়ল ভাষা বহুল ব্যবহৃত। ১৯৩৬ সালে এ ক্রেয়ল ভাষাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

নাহুয়াটল (Nahuatl)

উতো-আজটেকান (Uto-Aztecan) এ ভাষায় কথা বলে মেক্সিকোর প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। এ ভাষার অনেক উপভাষা রয়েছে। ক্লাসিক্যাল নাহুয়াটল ছিল আজটেক সাম্রাজ্যের ভাষা। ৭ম শতক থেকে ১৬ শতক পর্যন্ত এ ভাষা মেসোআমেরিকার লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

এ ভাষা মূলত চিত্রলিপি দিয়ে লেখা হতো। পাথরে খোদাই করা বা বইয়ে আঁকা চিত্রলিপি ব্যবহার করা হতো। ১৬ শতকে এ অঞ্চল স্প্যানিশরা দখল করে এবং এসব চিত্রলিপির বেশিরভাগই ধ্বংস করে দেয়। স্প্যানিশরা এ ভাষা লিখতে ল্যাটিন বর্ণমালার প্রচলন করে।

নানাই (Nanai)

এটি মাঞ্চু তুংগুস (Manchu-Tungus) ভাষার দক্ষিণাঞ্চলীয় শাখার সদস্য। সাইবেরিয়ার প্রায় ৫ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৯৩০ সালে ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা প্রথম লিখিত হয়। এরপর ১৯৩৭ থেকে এ ভাষা লিখতে ব্যবহৃত হচ্ছে সিরিলিক বর্ণমালার একটি ভার্সন।

নাসকাপি (Naskapi)

এটি রেড ইন্ডিয়ানদের ভাষা। সেন্ট্রাল অ্যালগনকুইয়ান ভাষা পরিবারের সদস্য এটি। কানাডায় বসবাসরত ইনু (Innu) গোষ্ঠীর সদস্যরা এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষা লেখা হয় ক্রি (Cree) দলবর্ণমালা বা ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে।

নরুয়ান (Nauruan)

অস্ট্রোনেশিয়ান ভাষার মাইক্রোনেশিয়ান শাখার সদস্য। দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের উত্তরে অবস্থিত নাউরু দ্বীপের প্রায় ৭ হাজার মানুষ কথা বলেন এ ভাষায়। এ ভাষা লেখা হয় ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে। এ ভাষায় ব্যবহৃত হয় ৫টি Vowel এবং ১২টি Consonant |

নাক্সি (Naxi)

এটি তিব্বতি-বর্মি ভাষা পরিবারের ‘ই’ (yi) শাখার সদস্য। চীনের লিজিয়াং অঞ্চলের ইউনান ও সিচয়ান প্রদেশের প্রায় ৩ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এর বাইরে তিব্বত এবং মিয়ানমারে এ ভাষার মানুষ আছেন। তিন ধরনের বর্ণমালা ব্যবহার করে এ ভাষা লেখা হয়: * দংবা (Dongba) * জেবা (Geba)* ল্যাটিন (latin)

নাভাহো (Navaho)

এটি উত্তর আমেরিকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের ভাষা। Na-Dene ভাষা পরিবারের আহাবাসকান শাখার সদস্য এ ভাষা। নিউ মেক্সিকো এবং আরিজোনার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার আদিবাসী ইন্ডিয়ান এ ভাষা ব্যবহার করেন। এ ভাষা অ্যাপাচি ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত হলেও অন্য কোনো রেড ইন্ডিয়ান ভাষার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

১৮৪৯ সালে এ ভাষা প্রথম লিখিত হয়। লেফটেন্যান্ট জেমস এইচ সিম্পসনের পরিদর্শনকালে তৈরি করা মিলিটারি জার্নালে প্রথমবার নাভাহো শব্দের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এভাবেই প্রথম লিখিত হয়েছিল রেড ইন্ডিয়ানদের এ ভাষা। ২০ শতকের শুরুতে মিশনারিরা নিজেদের মতো করে নাভাহো ভাষায় ধর্মীয় লেখা, ডিকশনারি, ব্যাকরণ ইত্যাদি লেখা শুরু করেন। ফলে নাভাহো ভাষার ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারণ এবং বানানরীতি গড়ে ওঠে।

এর প্রেক্ষিতে ১৯৩০ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ারে প্রধান এবং ইন্ডিয়ান এডুকেশনের প্রধান John Gollier ও ইন্ডিয়ান এডুকেশনের প্রধান Wilard Beatty আদর্শ নাভাহো বর্ণমালা তৈরির উদ্যোগ নেন। চারজন বিশেষজ্ঞকে তারা নাভাহো বর্ণমালা তৈরি এবং প্রকাশনার দায়িত্ব দেন। ১৯৩৯ সালে নতুন বর্ণমালা তৈরির কাজ শেষ হয়।

১৯৪০ সালে প্রথম দ্বিভাষিক পাঠ্যপুস্তক, নাভাহো ল্যাঙ্গুয়েজ চিলড্রেনস বুক, আধুনিক ডিকশনারি এবং মাসিক নিউজলেটার প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ বর্ণমালা নাভাহোদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়নি। কারণ ছিল শ্বেতাঙ্গদের প্রতি আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের অবিশ্বাস এবং ক্রোধ। শ্বেতাঙ্গদের আগ্রাসন ধ্বংস করে উত্তর আমেরিকার আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের ঐতিহ্য, জীবনধারা। এক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে John Gollier নাভাহোদের পশুপালন নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। ফলে এর উদ্যোগকে তারা ভালোভাবে নিতে পারেননি।

সাম্প্রতিক সময়ে নাভাহো ভাষার কিছুটা পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। এ ভাষার কম্পিউটার ফ্রন্ট তৈরি হয়েছে। এর ফলে সহজ হয়েছে এ ভাষা লেখা এবং এ ভাষার প্রকাশনা তৈরি।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা

 

নডেবেল (Ndebele)

দুটি ভিন্ন ভাষা নডেবেল নামে পরিচিত। সাউদার্ন নডেবেল এবং নর্দার্ন নডেবেল। ভাষা দুটি বান্টু ভাষায় নগুনি (Nguni) গ্রুপের সদস্য। সাউদার্ন নডেবেল (Southern Ndebel) ভাষায় কথা বলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ৬ লাখ মানুষ। এদেশে এ ভাষার অফিসিয়াল মর্যাদা আছে। এর আছে দুটি উপভাষা Northern Transvaal Nebele এবং Southern Transvall Nedebele. অন্যদিকে নর্দার্ন নডেবেলা (Sindebele) ভাষায় কথা বলেন জিম্বাবুয়ে এবং বতসোয়ানার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। এটি জুলু ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত।

নিয়াপলিটান (Neapolitan)

রোমানস (Romance) ভাষায় কথা বলেন দক্ষিণ ইতালির প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। বিশেষত নেয়পলস (Naples), ক্যাম্পানিয়া এবং সাউদার্ন ল্যাজিওতে এ ভাষা বেশি ব্যবহার হয়।
ইতালির বেশিরভাগ ভাষার মতো নিয়াপলিটানেরও উৎপত্তি ঘটেছে কথ্য ল্যাটিন থেকে। ১৫ শতক থেকে সাহিত্যে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এ ভাষা মূলত মৌখিক কাজেই ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় জনপ্রিয় গান তৈরিতে এ ভাষা ব্যবহৃত হয়।

নেনেটস (Nenets)

এটি ফিনো-উজরিক (Finno-Ugric) ভাষার স্যাময়েডিক (Samoyedic) শাখার সদস্য। সাইবেরিয়া এবং তদসংলগ্ন এলাকার প্রায় ২৭ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার দুটি উপভাষা রয়েছে-তুন্দ্রা নেনেটস এবং ফরেস্ট নেনেজ। ৯৫ শতাংশ নেনেজ ভাষী তুন্দ্রা নেনেটস ব্যবহার করেন। ১৮৩০ সালে এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায়। এর আগে চিত্রলিপি দিয়ে এ ভাষা লিখিত হতো। ১৯৩৭ সাল থেকে সিরিলিক বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা হচ্ছে।

নেপালি (Nepali)

এটি ইন্দো-আর্য ভাষা। নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এবং ভারতের প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। নেপালি ভাষা মূলত ‘খাস কুরা’ (Khas Kura) নামে পরিচিত। এ ভাষা ছিল খাসা (Khasa) রাজত্বের ভাষা। এ রাজত্ব নেপালে শাসন করেছে ১৩ ও ১৪ শতকে। ১২ শতকে এ ভাষা প্রথম লিখিত হয়। দেবনাগরি লিপি ব্যবহার করে এ ভাষা লেখা হয়।

এনজিয়ামবা (Ngiyambaa)

এটি পামা-নিয়ুনগান (Pama-Nyungan) পরিবারের Wiradhuric সাব-গ্রুপের সদস্য। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের অল্প কয়েকজন আদিবাসী এ ভাষায় কথা বলেন। ধারণা করা হয়, এনজিয়ামবা ভাষীর সংখ্যা এখন মাত্র ১০ জন। এ ভাষার দুটি প্রকার আছে- Wailwan, Wiraibon.

এনহিনগাটু (Nheengatu)

এটি তুপি-গুয়ারানি (Tupi-Guarani) ভাষা। ব্রাজিলে ৩ হাজার, কলম্বিয়ায় ৩ হাজার এবং ভেনিজুয়েলার ২ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি লাতিন আমেরিকাতে আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের ভাষা। ব্রাজিলে রিও নিগ্রো নদীর তীরবর্তী ইন্ডিয়ানরা এ ভাষা ব্যবহার করে। এ ভাষা ‘Lingua geral da Amazonia or Amazonian general Language’ নামে পরিচিত।

১৭ শতকে এ ভাষা মিশনারি, সেটেলার, ইউরোপীয় এবং আদিবাসীদের মধ্যে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে কাজ করে। ভাষাটির উদ্ভব ঘটেছে তুপি গোষ্ঠীর ভাষা Tupinamba থেকে।

নিউয়েন (Niuean)

পলিনেশীয় এ ভাষায় কথা বলেন প্রায় ৮ হাজার মানুষ। এর বেশিরভাগ বাস করেন নিউজিল্যান্ডের এ। নিউয়ে নামক দ্বীপরাষ্ট্রের প্রায় ২ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। টোংগান ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে নিউয়েনের। ১৯ শতকে এ ভাষাকে প্রথম লিখিত রূপ দেন মিশনারিরা।

নিভখ (Nivkh)

বিচ্ছিন্ন এ ভাষায় কথা বলেন মাঞ্চুরিয়ার প্রায় ১ হাজার মানুষ। বিশেষত Amgun ও Amur নদীর তীরবর্তী এবং শাখলিন দ্বীপের মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন। এ ভাষার রয়েছে তিনটি উপভাষা Amur, East sakhlin এবং North sakhlin. এ ভাষাটিকে অন্য কোনো ভাষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করা যায়নি।

অনেক সময় সুবিধার জন্য একে Paleosiberian ভাষাগুলোর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৮০ সালে এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায়। ১৯৩১ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত এ ভাষা লিখতে ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহৃত হতো এবং ১৯৫৩ থেকে শুরু হয় সিরিলিক বর্ণমালার ব্যবহার।

নোগাই (Nogai)

তুর্কি এ ভাষায় কথা বলেন রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৯০ হাজার মানুষ। এটি কিপচাক তুর্কি ভাষার কিপচাক-নোগাই শাখার সদস্য। এ ভাষায় আছে তিনটি উপভাষা Qara-Nogay, Nogai Proper এবং Aqnogay.
নোগাই গোষ্ঠী মোঙ্গল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল ১২৪০ থেকে ১৫০২ সাল পর্যন্ত। নোগাই নামটি এসেছে চেঙ্গিস খানের নাতি নোগাই খানের নাম থেকে। ১৯৩৮ সালের পর এ ভাষা লেখা হয় সিরিলিক বর্ণমালা দিয়ে।

নুনগার (Noongar)

অস্ট্রেলীয় এ ভাষা পামা-নিয়ুনগান ভাষা পরিবারের নিয়ানগার গ্রুপের সদস্য। এ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন এমন মানুষ এখন খুবই অল্প। এ ভাষাটির অনেকগুলো উপভাষা রয়েছে। ভাষাটি পূর্বাঞ্চলীয় একটি উপভাষা থেকে উদ্ভূত একটি ক্রেয়ল রূপে, যা নিও নিয়ানগার (Neo-Nyungar) নামে পরিচিত। এ ভাষায় কথা বলেন প্রায় ৮ হাজার মানুষ। ১৮০১ সালে ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স প্রথম এ ভাষা এ লিখিত রূপ দেন।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment