বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৭ – কাম (Kam) এটি একটি তাই-কাদাই (Tai-kadai) ভাষা। চীনের গুইঝোউ হুনান এবং গুয়াংশি প্রদেশের প্রায় ১৫ লাখ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষায় আছে দুটি পরস্পর বোধগম্য উপভাষা। অনেক ভাষাবিদ উপভাষা দুটিকে ভিন্ন ভাষা হিসেবে মনে করেন।
Table of Contents
বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৭
কানুরি (Kanuri)
নাইজিরিয়া, নাইজার, চাদ এবং ক্যামেরুনে এ ভাষার প্রায় ৪০ লাখ বক্তা আছেন। এটি আসলে একটি লিংগুয়া ফ্রাংকা। নিলো-সাহারান ভাষা পরিবারের বেশ কিছু উপভাষা থেকে সৃষ্টি হয়েছে কানুরি। বর্তমানে এটি ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখা হয়।
কাপাম্পাঙ্গান (Kapampangan)
ফিলিপাইনের আইল্যান্ড অব লুজনের প্রায় ২৪ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষা পরিবারের মালয়ো-পলিনেশীয় শাখার সদস্য। ভাষাটি বর্তমানে ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে লেখা হয়।
কাকচিকেল (Kaqchikel)
এটি একটি মায়া ভাষা। গুয়েতেমালার উচ্চভূমির প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি মায়া ভাষার কুইচিন-মামিয়ান (Quichean-Mamean) শাখার সদস্য। গুয়েতেমালা অ্যাকাডেমী অব মায়া ল্যাঙ্গুয়েজেস এ ভাষার একটি বানানরীতি তৈরি করেছে।
কোরিয়ান (Korean)
অন্যান্য ভাষার সাথে কোরিয়ান ভাষার সম্পর্ক নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন ভাষাবিদরা। অনেকে ধারণা করেন, এটি অলটাইক (Altaic) ভাষা পরিবারের সদস্য হতে পারে। এ ভাষা প্রধানত ব্যবহৃত হয় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। দুনিয়ায় এ ভাষার মোট বক্তার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ কোটি। ব্যাকরণের দিক থেকে এ ভাষা জাপানিজ ভাষার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আর এ ভাষার শব্দভাণ্ডারের প্রায় ৭০ শতাংশ এসেছে চায়নিজ ভাষা থেকে।
১৪৪৪ সালে আবিষ্কার হয় কোরিয়ান বর্ণমালা। বর্তমানে এ বর্ণমালা হানগেউল (Hangeul) নামে পরিচিত। এ বর্ণমালা আবিষ্কারের পরও সমাজের বেশিরভাগ মানুষ বিশেষত উচ্চ শ্রেণীর জনগণ চায়নিজ বর্ণমালা ব্যবহার করতে থাকেন। ১৯৪৫-এরপর এ প্রবণতা হ্রাস পায়।
বর্তমানে সাহিত্য চর্চায় প্রধানত ব্যবহার হয় হানগেউল। যদিও বিভিন্ন দাপ্তরিক লেখার কাজে এখনও বেশি ব্যবহার হয় হানগেউল এবং হানজা (কোরিয়ান ভাষা লিখতে আমদানি করা চায়নিজ বর্ণমালা সমূহ) এর মিশ্রণে।
কারাকালপাক (Karakalpak)
তুর্কি ভাষাগুলোর ক্যাপচাক (Kypchak) শাখার সদস্য এটি। উজবেকিস্তানের কারাকালপাকস্তান এলাকার প্রায় চার লাখ ১২ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ এলাকায় ভাষাটির অফিসিয়াল মর্যাদা রয়েছে। আফগানিস্তান, রাশিয়া এবং কাজাখস্তানেও এ ভাষার কিছু বক্তা আছেন। ভাষাটি কাজাখ এবং নোগাই ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। ১৯২৮ সাল পর্যন্ত আরবি বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা হতো। বর্তমানে সিরিলিক অথবা ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহৃত হচ্ছে।
কারামোজোং (Karamojong)
নিলো-সাহারান ভাষা পরিবারের একটি নিলোটিক (Nilotic) ভাষা এটি। উগান্ডার প্রায় চার লাখ nikaramojon মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ গোষ্ঠীটির নামের অর্থ ‘দ্য ওল্ড মেন স্যাট ডাউন’।
প্রায় ৩০০ বছর আগে এ গোষ্ঠীটি মাইগ্রেশন শুরু করে এবং এক পর্যায়ে আর কোথাও যাওয়ার জন্য অসম্মতি জানায়। যে ঘটনা থেকেই এমন নামকরণ হয়। এরা ছিল মূলত পশুপালক জাতি। পরবর্তীতে তারা স্থায়ী চাষাবাদ শুরু করে। এ ভাষার বানান পদ্ধতি তৈরি করেন মিশনারিরা ১৯৬০ সালে। ভাষাটি লেখা হয় রোমান বর্ণমালা ব্যবহার করে।
কারেলিয়ান (Karelian)
এটি একটি ফিনিক ভাষা। রাশিয়ার রিপাবলিক অব কারেলিয়ার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। অনেকে ভাষাটিকে ফিনিশ ভাষার উপভাষা হিসেবে বিবেচনা করেন। কারেলিয়ান তথা যে কোনো ফিনিক ভাষার প্রথম লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায় ১৯৫৭ সালে নোভগোরোডে। এটি ছিল কারেলিয়ান ভাষায় লেখা ১৩ শতকের একটি বার্চ গাছের বাকলে লেখা পাণ্ডুলিপি। সিরিলিক বর্ণমালায় লেখা ছিল পাণ্ডুলিপিটি। বর্তমানে এ ভাষা লেখা হয় ফিনিশ বর্ণমালা দিয়ে, যা সর্বশেষ ২০০৭ সালে পরিমার্জিত হয়েছে।
কাশ্মীরি (Kashmiri)
এটি একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। ভারত, পাকিস্তান এবং যুক্তরাজ্যে এ ভাষার প্রায় ৪৫ লাখ বক্তা আছেন। আরবি বর্ণমালার উর্দু ভার্সন থেকে কাশ্মীরি বর্ণমালা তৈরি হয়েছে। এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায় অষ্টম শতকে শারদা বর্ণমালা দিয়ে। ১৫ শতকে কাশ্মীরে ইসলামের আগমনের পর গৃহীত হয় আরবি বর্ণমালা। এছাড়া ল্যাটিন এবং দেবনাগরি বর্ণমালা দিয়েও এ ভাষা লেখা হয়েছে।
কাশুবিয়ান (Kashubian)
স্নাভ ভাষার পশ্চিম স্নাভ গ্রুপের সদস্য এ ভাষা। এ ভাষার আছে প্রায় ২ লাখ বক্তা। বাল্টিক সাগরের দক্ষিণ উপকূলের নর্থ সেন্ট্রাল পোল্যান্ডে প্রধানত এ ভাষার মানুষ বাস করেন। কানাডাতেও এ ভাষার কিছু মানুষ বাস করেন। বেশিরভাগ পোলিশ ভাষাবিদ ভাষাটিকে পোলিশ ভাষার একটি উপভাষা হিসেবে মনে করেন।
এ ভাষার প্রথম ছাপা নিদর্শন প্রকাশিত হয় ১৫৮৬ সালে। এটি ছিল এসজাইমন ক্রোফেজের Dra Marcina Lutherai inztich naboznich Mezow. বর্তমানে প্রায় ৯০টি স্কুলে শিশুদের এ ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়। এ ভাষায় প্রচুর বই এবং ম্যাগাজিন প্রকাশিত হচ্ছে, আরও আছে টেলিভিশন এবং রেডিও অনুষ্ঠান।
কায়াহ লি (Kayah li)
এটি সিনো-তিবেতান ভাষা পরিবারের কারেন (Karen) শাখার সদস্য। মায়ানমারের কারেন এবং কায়াহ রাজ্যের প্রায় ৬ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৯৫২ সালে হটায় বু ফে এ ভাষার বর্ণমালা তৈরি করেন। থাই এবং বর্মি লিপির সঙ্গে এ বর্ণমালার সাদৃশ্য রয়েছে।
কাজাখ (Kazakh)
এটি একটি তুর্কি ভাষা। কাজাখস্তান, রাশিয়া, চীনের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৯২৭ সালের পর ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা শুরু হয়। ১৯৪০ সালে ল্যাটিনের বদলে আসে সিরিলিক বর্ণমালা। বর্তমানে পুনরায় ল্যাটিন বর্ণমালা প্রচলনের খরচ এবং অন্যান্য পরিণতি বিবেচনা করা হচ্ছে।
কেট (Ket)
ইয়েনিসেই (yenisei) ভাষা পরিবারের সর্বশেষ জীবিত সদস্য কেট। সাইবেরিয়ার ইয়েনিসেই নদীর তীরবর্তী পায় ৫৫০ জন মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন। ভাষাটি ইযুগ (Yug) ভাষার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত, যেটি ১৯৭০ সালে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভাষাবিদদের ধারণা, এ ভাষাগুলো উত্তর ককেশীয় এবং সিনো তিবেতান ভাষাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

থাকাস (Khakas)
রাশিয়ার থাকাসিয়ায় তুর্কি এ ভাষাটির প্রায় ৬০ হাজার বক্তা বাস করেন। এটি তুর্কি ভাষাগুলোর ইস্টার্ন হুন শাখার উইঘুর- ওগুঝ গ্রুপের সদস্য। খাকাস ভাষীরা নিজেদের ‘তাতার’ নামে ডাকেন। ১৯ দশকের মধ্যভাগে রুশ ভাষাবিদরা এ ভাষার বিভিন্ন উপাদান সংরক্ষণ শুরু করেন। ১৯৩৯ সালের পর থেকে সিরিলিক বর্ণমালা দিয়ে লেখা হচ্ছে এ ভাষা।
খোয়েখোয়ে (Khoekhoe)
এটি একটি খোইসান (Khoisan) ভাষা। বতসোয়ানা, নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। তিনটি নৃ- গোষ্ঠী এ ভাষায় কথা বলে-নামা, দামার এবং হাইলোম। এটি নামিবিয়ার জাতীয় ভাষা।
অতীতে এ ভাষাকে এবং ভাষার লোকদের বলা হতো হট এন উট (Hott-entot) – নামটির উদ্ভব ঘটেছিল এ অঞ্চলের ডাচ সেটেলারদের থেকে এবং কারণটি ছিল বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।
এ অঞ্চলের মানুষদের ভাষা শুনে ডাচরা ভাবত এখানকার মানুষ শুধু বলে ‘হট’ (Hot) এবং ‘টট’ (Tot)। বর্ণবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্ভব হওয়ায় এ নামটি এখন আর ব্যবহার করা হয় না। প্রথম যে ইউরোপীয় নাগরিক এ ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন তার নাম জর্জ ফেডরিখ রিডে। ১৬৬৯ সালে তিনি কেপটাউনে পৌঁছান।
খাবারশি (Khwarshi)
উত্তরপূর্ব ককেশীয় এ ভাষায় কথা বলেন দাগেস্তনের তিন হাজার মানুষ। এ ভাষার আছে ছয়টি উপভাষা।
কিলদিন সামি (Kildin sami)
এটি একটি পূর্বাঞ্চলীয় সামি ভাষা। রাশিয়ার কোলা উপদ্বীপের প্রায় ৬০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার আছে চারটি উপভাষা। এ ভাষায় প্রথম লিখিত বই ছিল ‘গসপেল অব ম্যাথিউ’-এর অনুবাদ। ১৮৭৮ সালে ফিনিশ লিটারেচার সোসাইটি বইটি প্রকাশ করে। ১৯৩০ সালের পর এ ভাষায় সাহিত্য চর্চা বন্ধ হয়ে যায়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর এ ভাষা নিয়ে গবেষণা ও চর্চা আবার শুরু হয়।
কিনইয়ারবান্ডা (Kinyarwanda)
এটি একটি বান্টু ভাষা। এ ভাষার রয়েছে প্রায় ৭০ লাখ বক্তা যার বেশিরভাগ বাস করেন রুয়ান্ডায়। রুয়ান্ডায় এটি জাতীয় ভাষা। কঙ্গো এবং উগান্ডায়ও আছে এ ভাষার বক্তা। ১৯৪০ সালে এ ভাষার আদর্শ উচ্চারণ পদ্ধতি প্রচলিত হয়।
কিরগিজ (Kyrgyz)
এ তুর্কি ভাষাটির প্রায় ৪০ লাখ বক্তার অধিকাংশ বাস করেন কিরগিজস্তানে। এটি কাজাকিস্তানের দাপ্তরিক ভাষা। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এ ভাষা লিখতে ব্যবহৃত হতো ল্যাটিন বর্ণমালা। এরপর আসে সিরিলিক বর্ণমালা। ১৯৯১ সালে কিরগিজস্তান স্বাধীনতা পাওয়ার পর পুনরায় ল্যাটিন বর্ণমালা চালুর সিদ্ধান্ত হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। ভাষাটি কাজাখ ভাষার সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ এবং এ দুটি ভাষার পারস্পরিক বোধগম্যতা আছে।
কিরিবাতি (Kiribati)
এটি একটি মাইক্রোনেশিয়ান ভাষা। কিরিবাতি, ফিজি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টুভালু এবং ভানাতুর প্রায় ৭০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায় ১৯ শতকের মাঝামাঝি। ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি কিরিবাতি ল্যাঙ্গুয়েজ বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয় এ ভাষার আদর্শ বানানরীতি, ব্যাকরণ, ডিকশনারী ইত্যাদি তৈরির জন্য।
কিরুনডি (Kirundi)
এই বান্টু ভাষায় কথা বলেন প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ, যাদের বেশিরভাগ বাস করেন বুরুন্ডিতে। ১৯৪০ সালে এ ভাষার আদর্শ উচ্চারণ পদ্ধতি তৈরি হয়। এটি বুরুন্ডির দাপ্তরিক ভাষা। প্রধানত হুতু গোষ্ঠীর লোকেরা এ ভাষাটি ব্যবহার করেন। সঙ্গে তুতসি এবং তাওয়া গোষ্ঠীর মানুষও ব্যবহার করেন এ ভাষা।
কুমাইক (Kumyk)
তুর্কি ভাষার কিপচাক শাখার সদস্য এ ভাষা। রাশিয়ার দাগেস্তানের প্রায় ২ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৯২৮ পর্যন্ত এ ভাষা লেখা হতো আরবি বর্ণমালায়, এরপর ১৯৩৮ পর্যন্ত ল্যাটিন বর্ণমালায় এবং তারপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ব্যবহার হচ্ছে সিরিলিক বর্ণমালা।
কুনা (Kuna)
এটি একটি সিবসান (Chibchan) ভাষা। পানামার উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং কলম্বিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার দুটি ভিন্ন প্রকার রয়েছে-একটি হলো আইল্যান্ড কুনা, অন্যটি মাউনটেইন কুনা। এ দুটিকে কুনার উপভাষা মনে করা হলেও অনেক ভাষাবিদ এদের দুটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত ভিন্ন ভাষা বলে মনে করেন।
কুর্দিশ (Kurdish)
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পশ্চিম ইরানীয় শাখার সদস্য এ ভাষা। ইরাক, তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, লেবানন, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান প্রভৃতি দেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ৭ম শতকে ফার্সি বর্ণমালার একটি ভার্সন দ্বারা এ ভাষা লিখিত রূপ পায়। প্রথম বিখ্যাত কুর্দি কবির নাম এল হারিরি (১৪২৫-১৪৯৫)। ১৬ শতকে কুর্দিশ সাহিত্য জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
কুকাটজা (Kukatja)
এটি পামা-নিয়ুনগান (Pama-Nyungan) ভাষা। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বালগো, লেক গ্রেগরি, হলস ক্রিকের প্রায় ৩০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষায় স্কুলের বই, ডিকশনারি ইত্যাদি থাকলেও এখনো কোনো আদর্শ উচ্চারণ পদ্ধতি গড়ে ওঠেনি।
কেভেন (Kven)
উরালিক (Uralic) ভাষা পরিবারের ফিনিক শাখার সদস্য এ ভাষার প্রায় ৮ হাজার বক্তা আছে নরওয়েব উত্তরাংশে। ২০০৫ সালে এ ভাষা ইউরোপিয়ান চার্টার ফর রিজিওনাল অর মাইনরিটি ল্যাঙ্গুয়েজের অধীন মাইনরিটি ভাষার মর্যাদা পায়। এ ভাষায় নরওয়েজিয়ান এবং ফিনিশ ভাষা থেকে অনেক শব্দ এসেছে। এ ভাষার উন্নয়নে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছে কেভেন ইনস্টিটিউট।
লডিন (Ladin)
উত্তর ইতালির ট্রেনটিনোর ডলোমাইট পর্বত, দক্ষিণ টাইরল এবং বেলুনো প্রদেশের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি রোমানস ভাষার রেহটো-রোমানস (Rhaeto-Romance) শাখার সদস্য। ১৯৯০ সাল থেকে এ ভাষা এবং সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য অনেক আইন পাস হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রদেশগুলোতে স্কুলে এ ভাষা শিক্ষা দেয়া হয় এবং রাস্তার সাইনে ব্যবহৃত হয়।
লাডিনো (Ladino)
লাডিনো বা জুডিও স্প্যানিশ ভাষাটি মধ্যযুগীয় ক্যাসটিলিয়ান স্প্যানিশ থেকে উদ্ভূত। ১৪৯২ সালে স্পেন থেকে বহিষ্কৃত ইহুদিরা এ ভাষায় কথা বলেন। বর্তমানে ইসরায়েলে এক লাখ, তুরস্কে ৮ হাজার এবং গ্রিসে ১ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষা লেখা হয় ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে।
লাক (Lak)
এটি উত্তর ককেশীয় ভাষার নাচঙ্কো-দাগেস্তান (Nachsko-Daghestan) শাখার সদস্য। দাগেস্তানের প্রায় ১ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৯২৮ সাল পর্যন্ত এ ভাষা লিখতে ব্যবহৃত হতো আরবি বর্ণমালা। এরপর আসে ল্যাটিন। সবশেষ ১৯৩৮ সালের পর থেকে সিরিলিক বর্ণমালার একটি ভার্সন ব্যবহার করে লেখা হচ্ছে এ ভাষা।
লাও (Lao)
এটি লাওসের অফিসিয়াল ভাষা। এটি তাই-কাদাই (Tai-kadai) ভাষা পরিবারের সদস্য। থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। ভাষাটি মূলত একটি মৌখিক ভাষা। ১৪ শতকে ল্যান ঝ্যাং সাম্রাজ্যের সময়কালে সেখানকার পন্ডিতদের নির্দেশ দেয়া হয় এ ভাষার লিপি তৈরি করতে। তারা মন (Mon) লিপির ওপর ভিত্তি করে একটি লিপি তৈরি করেন।
ল্যাটিন (Latin)
খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে মধ্য ইতালির আরও অনেক ইতালীয় ভাষার একটি ছিল ল্যাটিন। যে এলাকায় ল্যাটিন ভাষা প্রচলিত ছিল তার নাম ছিল ল্যাটিয়াম (Latium) এবং রোম ছিল ল্যাটিয়ামের একটি শহর। ল্যাটিনের লিখিত লিপির সন্ধান পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে, তখন এট্রসকান বর্ণমালা থেকে তৈরি করা ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে লেখা হতো এ ভাষা।
ধীরে ধীরে রোম পুরো ইতালি এবং ইউরোপের বিভিন্ন অংশে তার প্রভাব বিস্তার করে। আর ক্রমবর্ধমান এ সাম্রাজ্যের আইন, প্রশাসন এবং দৈনন্দিন জীবনের ভাবা হয়ে ওঠে ল্যাটিন। রোমান সাম্রাজ্যে অনেক শিক্ষিত মানুষ ছিলেন, ফলে ল্যাটিনে লিখিত সাহিত্য ও অন্যান্য রচনা জনপ্রিয় হয়ে উঠে এ সময় পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রিক ভাষা ছিল লিংগুয়া ফ্রাংকা। এমনকি ল্যাটিন সাহিত্যের প্রথম দিককার নিদর্শনগুলো ছিল গ্রিক নাটকের ল্যাটিন অনুবাদ।
প্রাথমিক যুগের সাহিত্যে ব্যবহৃত ল্যাটিন ছিল ক্লাসিক্যাল যা, চলিত ল্যাটিনের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন ছিল। এরপরও সিসেরো, পেট্রোনিয়াসের মতো লেখকরা তাদের কাজে চলিত ল্যাটিন ব্যবহার করেছেন। পরবর্তীতে সময়ের বয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসিক্যাল ও চলিত ল্যাটিনের পার্থক্য বাড়তে থাকে।
আর এই চলিত ল্যাটিন থেকেই উদ্ভব ঘটে বিভিন্ন আধুনিক ইতালীয় বা রোমানস ভাষার। যেমন- ইতালিক, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, রোমানিয়ান, কাতালান ইত্যাদি। খ্রিস্টীয় ১৫ শতকে ইউরোপজুড়ে সাহিত্য এবং ধর্মীয় ভাষা হিসেবে প্রভাব কমতে থাকে ল্যাটিনের। ২০ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত রোমান ক্যাথলিক গির্জাগুলো ল্যাটিন ব্যবহার অব্যাহত রাখে।
ভ্যাটিকান সিটিসহ কিছু ক্ষেত্রে এখনও ব্যবহৃত হয় ল্যাটিন। ভ্যাটিকান সিটিতে এটি দাপ্তরিক ভাষা। দুনিয়ার জীববিজ্ঞান, আইনসহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অগণিত সংজ্ঞা, বৈজ্ঞানিক নাম এখনো ল্যাটিন ভাষাতেই ব্যবহৃত হয়।
লাটভিয়ান (Latvian)
বাল্টিক এ ভাষায় কথা বলেন লাটভিয়ার ১৪ লাখ মানুষ। ভাষাটি লিথুয়ানিয়ান এবং প্রাচীন প্রুশীয় ভাষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ১৫৮৫ সালে এ ভাষার প্রথম ছাপা প্রকাশনা প্রকাশিত হয়। ১৬৩৮ সালে গিয়র্গ ম্যানসেলিয়াস Lettus নামে এ ভাষার প্রথম ডিকশনারি রচনা করেন।
জার্মান ধর্মীয় সন্ন্যাসীরা ফ্রাকচার (Fractur) বর্ণমালার একটি ভার্সন দিয়ে এ ভাষা লেখা শুরু করেন কিন্তু এটি লাটভিয়ান ভাষার জন্য উপযুক্ত ছিল না। ১৯৩০ সালের মধ্য পর্যন্ত এ বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়। এরপর ল্যাটিন বর্ণমালার একটি ভার্সন দিয়ে এ ভাষা লেখা শুরু হয়। নতুন এ বর্ণমালা তৈরি করেন ড. জে. এনডজেলিনস এবং কে.
মুহলেনবাক।
লাজ (Laz)
কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ কথা বলেন দক্ষিণ ককেশীয় এ ভাষায়। তুরস্কে এ ভাষা লেখা হয় ল্যাটিন বর্ণমালার একটি ভার্সন দিয়ে আর জর্জিয়ায় ব্যবহৃত হয় জর্জিয়ান বর্ণমালার একটি ভার্সন।
লেজগি (Lezgi)
এটি নখ-দাগেস্তানিয়ান ভাষা পরিবারের সদস্য। দাগেস্তান, আজারবাইজানের প্রায় চার লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষায় আছে অনেক উপভাষা যেমন-কিউরি, কুবা, গারকিন ইত্যাদি। ১৯৩০ সালের পর সিরিলিক বর্ণমালা দিয়ে লেখা হচ্ছে এ ভাষা।
লিগুরিয়ান (Ligurian)
উত্তর-পশ্চিম ইতালির বিশেষত লিগুরিয়ার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৩ শতক থেকে এ ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। ২০০৮ সালে প্যাকডেমিয়া লিগাসটিকা দো ব্রেন্নো এ ভাষার অফিসিয়াল বানানরীতি প্রকাশ করে।
লিনগালা (Lingala)
এটি কঙ্গোর অন্যতম প্রধান ভাষা। এ ভাষার সৃষ্টি হয়েছে বোবানজি (Bobangi) ভাষা থেকে। ১৯ শতকের শেষ দিকে ইউরোপিয়ানরা এ অঞ্চলে পৌছানোর আগ পর্যন্ত বোবানজি ছিল কঙ্গো নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ভাষা। লিনগালা ভাষা চারটি ভিন্ন গঠনে বিভক্ত- আদর্শ লিনগালা, কথ্য লিনগালা, কিনশাসা লিনগালা এবং ব্রাজ্জাভিলে লিনগালা।
লিথুয়ানিয়ান (Lithuanian)
বাল্টিক এ ভাষায় কথা বলেন লিথুয়ানিয়ার প্রায় ৩২ লাখ মানুষ। ১৫৪৭ সালে এ ভাষার প্রথম বই প্রকাশিত হয়। প্রথম ডিকশনারি প্রকাশিত হয় ১৭ শতকে। ১৮৬৪ থেকে ১৯০৪ সাল সময়কালে এ ভাষায় প্রকাশনা ও ভাষা শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। ১৯০৪ সালে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে এ ভাষায় সাহিত্যচর্চার জোয়ার আসে। ১৯১৮ থেকে ১৯৪০ সাল সময়কালে এ ভাষায় ৭ হাজারের বেশি বই প্রকাশিত হয়। এটি লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রীয় ভাষা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি
অফিসিয়াল ভাষা।
লিভোনিয়ান (Livonian)
ফিনিক ভাষার দক্ষিণ-পশ্চিম শাখার সদস্য এ ভাষা। ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এ ভাষার শেষ বক্তা ভিক্টর বার্থোল্ড মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু কিছু মানুষ এ ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করতে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে এ ভাষা শিখছেন। এ ভাষার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ সালে।
লুগান্ডা (Luganda)
নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের বান্টু শাখার সদস্য এটি। উগান্ডার বুগান্ডা অঞ্চলে বসবাসরত বাগান্ডা নামক নৃ-গোষ্ঠীর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এ ভাষার কথা বলেন। উগান্ডা নামটি প্রকৃতপক্ষে বাগান্ডার সোয়াহিলি ভার্সন। এ ভাষার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে এবং ১৯৪৭ সালে অল-বাগান্ডা কনফারেন্সে এ ভাষার আদর্শ বানানরীতি প্রকাশ করা হয়।
লুও (Luo)
নিলো-সাহারান ভাষা পরিবারের সদস্য এ ভাষায় কথা বলেন কেনিয়ার লেক ভিক্টোরিয়ার তীরবর্তী, সুদান এবং তাঞ্জানিয়ার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ।
আরও পড়ুনঃ