বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৫ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৫ – ফক্স বা মেসকবাকি (Fox or Meskwaki): এটি একটি অ্যালগনকুইয়ান (Algonquian) ভাষা। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি রেড ইন্ডিয়ান গোষ্ঠী মেসকবাকি (Meskwaki), সাউক (Sauk) এবং কিকাপুর (Kickapoo) প্রায় ১ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এই তিনটি রেড ইন্ডিয়ান গোষ্ঠীর বাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস ওকলাহোমায়, টেক্সাস,নেবরাস্কা, পাইওয়া এবং আরিজোনায়। এ ভাষাটি প্রকৃতপক্ষে তিনটি উপভাষায় বিভক্ত। তিনটি গোষ্ঠীর নামেই উপভাষা তিনটির নাম। অনেকে এ উপভাষা তিনটিকে পৃথক ভাষা হিসেবে গণ্য করেন।

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৫

ফেঞ্চ গায়ানিজ ক্রেয়ল (French Guianese creole)

এটি ফরাসি ভাষাভিত্তিক একটি ক্রেয়ল ভাষা। ভাষাটি প্রায় দেড় লাখ মানুষ কথা বলতে ব্যবহার করেন যার বেশিরভাগের বাস ফ্রেঞ্চ গায়ানায়। এছাড়া সুরিনাম এবং গায়ানার কিছু মানুষও এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটির শব্দভাণ্ডার প্রধানত তৈরি হয়েছে ফরাসী, আমেরিন্ডিয়ান (American Indian) এবং আফ্রিকার ভাষাগুলো থেকে উদ্ভূত শব্দের মাধ্যমে। ভাষাটি লিখতে মূলত ফরাসি বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়। ভাষাটি গায়ানে ক্রেয়ল, পাতোয়িজ এবং পাতবা নামেও পরিচিত।

ফরাসি (French)

এটি একটি রোমানস (Romance) ভাষা। পৃথিবীতে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ফ্রেঞ্চ গায়ানা, কানাডা, ইতালি, লেবানন, ইউএসএ, মাদাগাস্কার, ভারত মহাসাগরের অনেক দ্বীপ, ইন্দোচীন, হাইতি ও ক্যারিবীয়গুলো আরও কিছু এলাকায় এ ভাষা ব্যবহৃত হয়।

ভাষাটি ল্যাটিনের বংশধর এবং ৮৪২ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রাসবার্গ ওথে (Strasbourg Oaths) ব্যবহারের মাধ্যমে এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায়। এর আগে ইউরোপে সাহিত্য রচনায় প্রধানত ল্যাটিন ভাষা ব্যবহৃত হতো। ১০ম এবং একাদশ শতকে বিভিন্ন দলিল এবং ধর্মীয় রচনায় এ ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। এ ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু হয় ১২ শতকের শেষভাগে। ফরাসি ভাষায় সাহিত্য সাধনায় প্রথম বড় মাপের কাজটি হলো Chanson de Roland’ (Song of Roland)। এটি প্রকাশিত হয় ১২০০ খ্রিস্টাব্দে।

ফ্রিজিয়ান (Frisian)

ফ্রিজিয়ান মূলত পশ্চিম জার্মান (West Germanie) ভাষার একটি গ্রুপ। জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসে ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। এ ভাষার রয়েছে তিনটি প্রকার: ১। পশ্চিম ফ্রিজিয়ান; নেদারল্যাস্টের প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ২। উত্তর ফ্রিজিয়ান জার্মানির সেলজভিজ-হোলসটেইনের (Schleswig-Holstein) প্রায় আট হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ৩। স্যাটার ফ্রিজিয়ান (Sater Frisian): জার্মানির স্টেট অব লোয়ার স্যাপ্রোনির প্রায় ২ হাজার মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে।

ফ্রিজিয়ান ভাষা ইংরেজির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। আভিধানিকভাবে অনেক সময় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত মিল দেখা যায়।

ফ্রিউলিয়ান (Friulian)

এটি একটি রোমানস (Romance) ভাষা। উত্তর-পূর্ব ইতালির Friuli-venezia Giulia অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ ২৬ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এটি ইস্টার্ন লাদিন (Eastern ladin) নামেও পরিচিত। ভাষাটি লাদিন ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। ১১ শতকে এ ভাষা লিখিত রূপ পায়। ১৪ শতকের সময়কালে এ ভাষায় সাহিত্য এবং কবিতা লেখা হয়।

ফুলা (Fula)

ফুলা বা ফুলানি (Fulani) নাইজার-কঙ্গো (Niger-Congo) ভাষা পরিবারের সেনেগামবিয়ান (Senegambian) শাখার সদস্য। পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। আরবরা আফ্রিকা জয় করার পর আরবি বর্ণমালায় এ ভাষা লেখা শুরু হয়। ইউরোপীয় শিক্ষকরা এবং ঔপনিবেশিক প্রশাসন চালু করে ল্যাটিন বর্ণমালা। ১৯৬৬ সালে আফ্রিকান ভাষাগুলোর বানান পদ্ধতি দিয়ে অনুষ্ঠিত এক কনফারেন্স এ ভাষা লেখার জন্য বর্তমানে প্রচলিত আদর্শ পদ্ধতিটি গৃহীত হয়। যদিও বিভিন্ন দেশের এ ভাষা উচ্চারণে এখনও ভিন্নতা আছে।

গা (Ga)

এটি নাইজার কঙ্গো ভাষা পরিবারের কাওয়া (Kwa) শাখার সদস্য। ঘানার প্রায় ৬ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ১৭৬৪ সালে ক্রিস্টিয়ান জ্যাকবসেন প্রোটেন ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখার পদ্ধতি চালু করেন। প্রোটেনের বাবা একজন ড্যানিশ এবং মা ছিলেন আফ্রিকান।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৫ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

 

জেলিক বা আইরিশ (Gaelic or Irish)

ভাষাটি আইরিশ ভাষা নামেই বহুল প্রচলিত। এটি একটি সেলটিক (celtic) ভাষা যা আয়ারল্যান্ডে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯৬ সালের আদমশুমারি অনুসারে আয়ারল্যান্ডের ১৪ লাখ ৩০ হাজার মানুষের এ ভাষায় প্রাথমিক জ্ঞান আছে। সাড়ে তিন লাখ নিয়মিতভাবে এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটির আনুষ্ঠানিক আদর্শ নাম হলো জেইলিগ (Gaelige)-এ ভাষায় রয়েছে তিনটি প্রধান উপভাষা: Manster, Connacht এবং Uister। ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সময়কালে এ ভাষার একটি আদর্শ রূপ গ্রহণ করা হয়।

গাগাউজ (Gagauz)

এটি একটি তুর্কি ভাষা। তুরস্ক, বুলগেরিয়া, গ্রিস, কাজাখস্তান, ইউক্রেন, রোমানিয়া, মলদোভার প্রায় দেড় লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ভাষাটি মূলত লেখা হয় গ্রীক বর্ণমালা দিয়ে তবে অঞ্চলভেদে সিরিলিক ও ল্যাটিন বর্ণমালাও ব্যবহার হয়।

গ্যালিসিয়ান (Galician)

এটি একটি রোমানস (Romance) ভাষা। স্পেনের উত্তর পশ্চিম কোণে গ্যালিসিয়ার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এটি পর্তুগিজ ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। ১৮৬৩ সালে কবি Rasalia de castro cantares Gallegos নামক কবিতাটি গ্যালিসিয়ান ভাষায় রচিত হয়। এটিকে এ ভাষার পুনর্জাগরণের শুরু ধরা হয়। ১৯৭৮ সালে এ ভাষা স্পেনের ৫টি অফিসিয়াল ভাষার একটি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এ ভাষায় রয়েছে দৈনিক পত্রিকা এবং টিভি ও রেডিও চ্যানেল।

গ্যালো (Gallo)

এটি একটি রোমানস (Romance) ভাষা। ব্রিটানি (Brittany) এবং ফ্রান্সের উত্তর- পশ্চিমের নরম্যান্ডিতে প্রায় ২৮ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ব্রিটানি ১৫৩২ সালে ফ্রান্সের অংশে পরিণত হয়। এরপর ১৫৩৯ সালে অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে সেখানে ফ্রেঞ্চ ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সের আরও আঞ্চলিক ভাষাগুলোর সঙ্গে সঙ্গে গ্যালো নীরবে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে।

১১৭৮ সালে Etienne de Fougeres লিখিত Le Livre des Manieres নামক একটি কাব্যিক রচনার মধ্য দিয়ে এ ভাষা লিখিত রূপ নেয়। ১৯ শতকে মৌখিক সাহিত্যগুলো সংগ্রহ করে এ ভাষায় লিখিত রূপ দেন গবেষকরা। ১৯৭৯ সালে Alan J. Raude এ ভাষার একটি বানান পদ্ধতি প্রকাশ করেন।

১৯৭৬ সালে গ্যালো ভাষা নিয়ে গবেষণা এবং একে জীবন্ত রাখার জন্য এ ভাষার লোকজন তৈরি করেন দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্রেন্ডস অব স্পিকিং গ্যালো। এ সংগঠন ভাষাটির অফিসিয়াল স্বীকৃতির জন্যও চেষ্টা চালায়। ভাষাটি পূর্ব ব্রিটানির বিভিন্ন কলেজ এবং Unicasity of Rennes IIতে শিক্ষা দেয়া হয়। সাধারণত গ্রামাঞ্চলের বয়স্করা এ ভাষায় কথা বলেন। অনেক ফরাসি মানুষ এ ভাষাটিকে ফরাসি ভাষার ভুল উপভাষা হিসেবে বিবেচনা করেন।

গান (Gan)

গান বা জিয়াংজিহুয়া (Jiangihua) ভাষাটি চায়নিজ ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকার। চীনের জিয়াংগি (Jiangni) প্রদেশের এবং পূর্ব হুনানের প্রায় ৬ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। মান্দারিন এবং ‘যু’ (Wu) নামক চায়নিজ ভাষার অন্য দুটি প্রকারের সঙ্গে গানের পারস্পরিক বোধগম্যতা আছে।

গান্ডা (Ganda)

গান্ডা বা লুগান্ডা (Luganda) নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের বান্টু শাখার সদস্য। উগান্ডার বুগান্ডা অঞ্চলে বসবাস করা বাগান্ডা (Baganda) গোষ্ঠীর মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। উগান্ডার অনেক এলাকাতেও দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে এ ভাষা ব্যবহৃত হয়। উগান্ডা নামটি বাগান্ডার সোয়াহিলি ভার্সন। ১৯ শতকের দ্বিতীয় ভাগে এ ভাষা লিখিত রূপ পায়। ১৮৮২ সালে এ ভাষার প্রথম ব্যাকরণ প্রকাশিত হয়। আল-বাগান্ডা কনফারেন্সে ১৯৪৭ সালে এ ভাষার একটি আদর্শ বানানরীতি গৃহীত হয়।

জার্মান (German)

এটি একটি জার্মানিক (Germanic) ভাষা। পৃথিবীতে প্রায় ১২ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এ ভাষা ব্যবহৃত হয় জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, রাশিয়া, ইউক্রেন, চেক রিপাবলিক, স্লোভেনিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। জার্মান ভাষার লিখিত রূপের আবির্ভাব ৮ম শতকে।

সংক্ষিপ্ত ল্যাটিন-জার্মান ডিকশনারি The Abrogans লিখিত হয় ৭৬০ খৃস্টাব্দে। জার্মান ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু হয় ১২ শতকে। এ সময়কার দুটি বিখ্যাত সাহিত্য কীর্তি হল-Nibelungenlied (The song of the Nibelungs) এবং গোটফ্রিড ভন স্ট্রাসবার্গ এর Tristan। এ সময়কার জার্মান ভাষা বর্তমানে Mittelhochdeutsche Dichtersprache বা মিডল হাই জার্মান পোয়েটিক ল্যাংগুয়েজ নামে পরিচিত। এ সময়কালে দাপ্তরিক কাজে ল্যাটিনের জায়গা দখল করতে থাকে জার্মান ভাষা।

জিয়রজিয়ান (Georgian)

এটি একটি দক্ষিণ ককেশীয় বা Kartvelian ভাষা। এ ভাষা প্রধানত ব্যবহার হয় জর্জিয়ায়। এর বাইরে রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, আজারবাইজান এবং ইরানে ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। এ ভাষার মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪১ লাখ। Svan, Laz-এর মতো দক্ষিণ ককেশীয় ভাষাগুলো জিয়রজিয়ান থেকে উৎপন্ন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ ভাষার প্রথম লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায় ফিলিস্তিনের একটি চার্চে পাওয়া লিপি থেকে। ধারণা করা হয় ৪৩০ খ্রিস্টাব্দে Asomtavruli বর্ণমালা ব্যবহার করে এ ভাষা লেখা হয়। বর্তমানে এ ভাষা লিখতে ব্যবহৃত হয় Nushkhuni এবং Mkhedrudi বর্ণমালা।

জিলাকি (Gilaki)

এটি উত্তর-পশ্চিম ইরানীয় ভাষা। ইরানের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত জিলান প্রদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এ ভাষার আছে ৩টি উপভাষা: পশ্চিম জিলাকি, পূর্ব জিলাকি এবং গালেশি (Galeshi)।

গোদোবেরি (Godoberi)

গোদোবেরি বা ঘোদোবেরি (Ghodoberi) রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিম দাগেস্তানের ভাষা। প্রায় তিন হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ভাষাটি উত্তর-পূর্ব ককেশীয় ভাষাগুলোর আভার-আনদিক সাবগ্রুপের সদস্য।

গুনিয়ানদি (Gooniyandi)

এটি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ভাষাগোষ্ঠী বুনবান (Bunban) ভাষা পরিবারের সদস্য। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কিমবারলি অঞ্চলের ফিটজারি ক্রসিংয়ের প্রায় ১০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এছাড়া এ অঞ্চলের নদীগুলো এবং হলস ক্রিকের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত অনেক প্রায়বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগুলো এ ভাষা ব্যবহার করে। ১৯৮৪ সালে ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা বানান করার পদ্ধতি চালু হয়। ১৯৮২ সালের পর থেকে বিভিন্ন স্কুলে শিশুদের এ ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে ভাষাটি বিলুপ্ত হয়ে না যায়।

গথ (Gothic) (বিলুপ্ত)

গথ একটি বিলুপ্ত পূর্ব জার্মান ভাষা। ১৭ শতক পর্যন্ত ক্রিমিয়ার কিছু অংশে এ ভাষা বলা হতো। গথ ছিল গথ জাতির ভাষা। গথ জাতি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল- Ostrogothi (মরু অঞ্চলে বাসকারী) এবং Visigothi (স্তেপ ভূমিতে বাসকারী)। এছাড়া বারগানডিয়ান এবং ভ্যানডালরা ছিল এদের নিকটাত্মীয়।

ধারণা করা হয় প্রকৃতপক্ষে গথ ভাষা লেখা হয় রুনিক বর্ণমালা (Runic alphabet) ব্যবহার করে। এ বর্ণমালার আবিষ্কারক গথরা-এ ধারণাটি অনেক গবেষকের। তবে এ নিয়ে মতভিন্নতা আছে। এরপর ৪র্থ শতকের মাঝামাঝি বিশপ উলফিলা (৩১১-৩৮৩ খ্রিস্টাব্দ) গথ বর্ণমালা আবিষ্কার করে তা দিয়ে ভাষাটি লেখা শুরু করেন। এ বর্ণমালা তৈরি হয়েছিল প্রধানত গ্রিক বর্ণমালার ওপর ভিত্তি করে।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা

 

গ্রিনল্যান্ডিক (Greenlandic)

এটি একটি এসকিমো আলেউট (Eskimo-Alcut) ভাষা পরিবারের সদস্য। এপ্রনল্যান্ড এবং ডেনমার্কের প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এ ভাষার আছে তিনটি প্রধান উপভাষা ওয়েস্ট গ্রিনল্যান্ডিক (kalallisut), ইস্ট গ্রিনল্যান্ডিক (Tunumisut) এবং নর্থ গ্রিনল্যান্ডিক (Inuktun)। এ ভাষাটি গ্রিনল্যান্ডে আসে ১৩ শতকে, ১৭ শতকে ড্যানিশ মিশনারিরা। ডিকশনারি এবং ব্যাকরণ তৈরি করেন। এ ভাষার

গোয়াডেলুপিয়ান ক্রেয়ল (Guodeloupean creole)

ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ড অব গোয়াডেলুপের প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটি মূলত ফরাসি ভিত্তিক হলেও ইংরেজি, বান্টু এবং আমেরিকার আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের অনেক শব্দ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এতে। ভাষাটি Patwa, Patosis নামেও পরিচিত। এ ভাষাটির সঙ্গে মার্টিনিক এবং হাইতি ক্রেয়লের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।

গুয়ামবিয়ানো (Guambiano)

ভাষাটি বারবাকোন (Berbacoan) ভাষা পরিবারের সদস্য। কলম্বিয়ার প্রায় ২৩ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ভাষাটির অপর নাম মোগুয়েজ (Moguez)। ভাষাটি দুটি বিলুপ্ত ভাষা Coconuco এবং totoro-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত।

গুয়ারানি (Guarani)

এটি দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসরত রেড ইন্ডিয়ান গোষ্ঠীর ভাষা। ভাষাটি দক্ষিণ আমেরিকার তুপিয়ান (Tupian) ভাষা পরিবারের তুপি-গুয়ারানি উপ-পরিবারের সদস্য। প্যারাগুয়েতে এ ভাষায় প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ কথা বলেন। এছাড়া বলিভিয়া, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলে এ ভাষার মানুষ রয়েছে। স্প্যানিশের পাশাপাশি এ ভাষা প্যারাগুয়ের একটি দাপ্তরিক ভাষা।

জিবইচ ইন (Gwich in)

এটি একটি আথাবাসকান (Athabaskan) ভাষা। কানাডার নর্থওয়েস্ট টেরিটোরি এবং ইউকোন টেরিটোরিতে এ ভাষার প্রায় ৪০০ বক্তা বাস করেন। নর্থওয়েস্ট টেরিটোরিতে এ ভাষার রয়েছে অফিসিয়াল মর্যাদা। আলাস্কাতে আছে এ ভাষার আরও ৩০০ অধিবাসী। এ ভাষা Loucheux, kutchin এবং Tukudh নামেও পরিচিত। এ ভাষাকে প্রথম লিখিত রূপ দেন চার্চ অব ইংল্যান্ডের মিশনারি রবার্ট ম্যাকডোনাল্ড ১৮৭০ সালে। বর্তমান প্রজন্ম ১৯৬০ সালে রিচার্ড মুয়েলার প্রণীত উচ্চারণ নীতি ব্যবহারে অভ্যস্ত।

হাইদা (Haida)

হাইদা আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের নাদেনে (Na-Dene) ভাষা পরিবারের সদস্য। অনেক ভাষাবিদ এ ভাষাকে বিচ্ছিন্ন ভাষা বলে মনে করেন। ধারণা করা হয় বর্তমানে ৩০-৩৫ জন হাইদা গোষ্ঠীর মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এদের বাস কানাডার কুইন শারলট দ্বীপ এবং আলাস্কার প্রিন্স অব ওয়েলস দ্বীপে।

হাইতিয়ান ক্রেয়ল (Haitian creole)

হাইতির প্রায় পঁচাশি লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এর বাইরে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ডমিনিকান রিপাবলিক, কিউবা, বাহামা এবং অন্যান্য ক্যারিবীয় দেশে আরও প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। এ ক্রেয়লের মূলভিত্তি ফরাসি ভাষা। এর বাইরে রয়েছে কয়েকটি পশ্চিম আফ্রিকান ভাষার প্রভাব যেমন Wolof, Fan এবং Ewe এটি হাইতির অফিসিয়াল ভাষা।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

হাক্কা (Hakka)

এটি চায়নিজ ভাষার একটি প্রকার। প্রধানত দক্ষিণ-পূর্ব চীন, তাইওয়ান এবং হংকংয়ে ভাষা ব্যবহৃত হয়। প্রায় ৪ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। হাক্কা নামটির অর্থ অতিথি ভাষা।

হান (Han)

এটি না দেনে (Na-Dene) ভাষা পরিবারের নর্দার্ন আথাবাসকান সাব-গ্রুপের সদস্য। ডমন সিটি, ইউকোন, ইলপ্যান্ড ফেয়ারব্যাংকস এবং আলাস্কায় এ ভাষার মাত্র ১৫ জন আদিবাসী ইন্ডিয়ান বাস করেন। হাভাষীরা নিজেদের বলেন “Han Hwech’ in বা ইউকোন নদীর তীরে বাসকারী”। ভাষাটি জিবইচ’ইন ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। ১৯৭০ সালে এ ভাষা লেখার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

হারারি (Harari)

এটি একটি দক্ষিণ সেমিটিক ভাষা। ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চলের হারারি অঞ্চলের ২৫ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। প্রাথমিককালে এ ভাষা লিখতে আরবি বর্ণমালা ব্যবহৃত হত। এরপর প্রচলন হয় ইথিওপীয় বর্ণমালার ব্যবহার।

হাউসা (Hausa)

এটি আফ্রিকার চাদিক (Chadic) ভাষা পরিবারের সদস্য। প্রধানত উত্তর নাইজেরিয়া এবং নাইজারে প্রায় চার কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এছাড়া বেনিন, বারকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, কঙ্গো, ঘানা প্রভৃতি আফ্রিকান দেশে এ ভাষা ব্যবহার হয়। ১৭ শতক থেকে ‘আজামি’ নামে আরবি বর্ণমালার একটি ভার্সন দিয়ে এ ভাষা লেখা শুরু হয়। ১৯ শতকে বোকো নামে পরিচিতি ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা শুরু হয়। বর্তমানে বোকো দিয়েই প্রধানত এ ভাষা লেখার কাজ হয়।

হাওয়াই (Hawaiian)

এটি একটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষা। হাওয়াই দ্বীপের প্রায় ৮ হাজার মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন। ১৯ শতকের শুরুতে মিশনারিরা ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে এ ভাষা লেখা শুরু করেন। ১৮৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাওয়াই দ্বীপ অধিকার করে নেয় এবং স্কুলগুলো থেকে এ ভাষা নিষিদ্ধ করে। ফলে দ্রুত এ ভাষা ক্ষয়ে যেতে থাকে।

১৯৮০ সাল নাগাদ এ ভাষা লোকসংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ২ হাজার। ১৯৭৮ সালে ভাষাটি হাওয়াইয়ের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর পুনরায় হৃতগৌরব এবং শক্তি কিছুটা হলেও ফিরে পায় ভাষাটি। স্কুলগুলোতে এখন এ ভাষা ব্যবহৃত হয়।

হিব্রু (Hebrew)

ইহুদি জাতির ধর্ম, সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিব্রু ভাষা। এ ভাষাতেই ইহুদিদের ঈশ্বর বলেছেন ‘Let there be light’। ওল্ড টেস্টামেন্ট রচিত হয়েছে এ ভাষাতে। সেমেটিক ভাষার ক্যানান গ্রুপের সদস্য হিব্রু ভাষা। প্রথম যুগের ইহুদিদের ভাষা ছিল হিব্রু কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ অব্দ থেকে অ্যারামাইক এ ভাষাকে প্রতিস্থাপিত করতে শুরু করে। ৭০ খ্রিস্টাব্দে এসে দৈনন্দিন কাজে হিব্রুর ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ধর্মীয় এবং সাহিত্যচর্চার কাজে অব্যাহত থাকে এর ব্যবহার।

এছাড়া
বিভিন্ন দেশের ইহুদিদের মধ্যে ‘লিংগুয়া ফ্রাংকা’ হিসেবে ব্যবহৃত হয় হিব্রু। দৈনন্দিন কাজে পুনরায় হিব্রু ভাষার ব্যবহার করার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯ শতকের মধ্যভাগে। এ পুনরুদ্ধার কাজে যে মানুষটি প্রধান ভূমিকা রাখেন তার নাম এলিজার বেন ইয়েহুদা (1858-1922)। নিজের গৃহে হিব্রু ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করেন হিব্রু ব্যবহারে।

বিদ্যালয়গুলোতেও হিব্রু ব্যবহারে প্রয়াস নেন তিনি। বর্তমানে ইসরায়েলের ৫০ লাখ মানুষ হিব্রুতে কথা বলেন এবং ভাষাটি দেশের অফিসিয়াল ভাষা। এছাড়া আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ফ্রান্স,জার্মানি, ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর ও গাজা, পানামা, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০-৩০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন।

প্রথম যে বর্ণমালা ব্যবহার করে হিব্রু ভাষা লেখা হতো তার আবির্ভাব ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের শেষদিকে। এ বর্ণমালা ফোনেসীয় বর্ণমালার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। আধুনিক হিব্রু বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছে প্রাক হিব্রু বা প্রাথমিক অ্যারামায়িক বর্ণমালা থেকে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment