Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ২ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ২ – আরোমানিয়ান (Aromanian): আরোমানিয়ান ভাষা পূর্ব রোমানস ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য। গ্রিস, আলবানিয়া, মেসিডোনিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং সার্বিয়ার প্রায় ৩ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটি রোমানিয়ান ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। যদিও আরোমানিয়ান ভাষার অনেক শব্দ গ্রিক থেকে উদ্ভূত কিন্তু রোমানিয়ান ভাষায় অনেক শব্দ এসেছে স্নাভ এবং হাঙ্গেরিয়ান ভাষা থেকে।

আরোমানিয়ান ভাষার সব থেকে প্রাচীন লিখিত উদাহরণ হল ৮৬০-৮৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্যাট্রিয়ার্ক ফোটিয়াসের পাণ্ডুলিপি। একই সময়ে লিখিত হয় ওহরিডের সেইন্ট নম-এর পাণ্ডুলিপি। ১৮ শতকের শেষ ভাগে আরোমানিয়ান ভাষায় প্রচুর বই প্রকাশিত হয়, যার সব গ্রিক বর্ণমালায় লিখিত।

দুর্ভাগ্যক্রমে আরোমানিয়ান ভাষার প্রাথমিক কালের বহু কাজ ১৭৫০-১৭৮৮ সাল সময়কালে যুদ্ধের সময় পুড়ে গেছে। ধারণা করা হয়, ল্যাটিন বর্ণমালায় প্রথম আরোমানিয়ান ভাষায় লেখা প্রকাশ করেছিলেন ড. আইওরাই কন্সট্যানটিন রোজা উনিশ শতকের শুরুতে। ১৯৮০ সালে নতুন একটি আরোমানিয়ান উচ্চারণ পদ্ধতি বিকাশ লাভ করে এবং গ্রিস ও রোমানিয়া বাদে এ ভাষা ব্যবহৃত হয় এমন সব দেশে পদ্ধতিটি গৃহীত হয়। গ্রিস ও রোমানিয়ায় এখনও পুরনো রীতিই ব্যবহৃত হয়।

রিপাবলিক অব মেসিডোনিয়ায় এ ভাষার অফিসিয়াল মর্যাদা রয়েছে এবং অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে এ ভাষাটি শেখানো হয়। মেসিডোনিয়ায় আরোমানিয়া ভাষীরা আদালতে চাইলে তাদের ভাষা ব্যবহার করতে পারেন। এটি তাদের অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। ২০০৬ সাল থেকে ক্রুশুভা শহরে এটি দ্বিতীয় অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এ ভাষায় উপভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে-সিপান ভারগারিন, সারবিন, ফারসিলোটু, গ্রামাসটিন এবং রিনডিন।

 

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ২

আরেরনটে (Arrernte)

আরেরনটে পামা-নিয়ুনগান ভাষা পরিবারের আরানদিক গ্রুপের অংশ। পামা নিয়ুনগান অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সব থেকে বিস্তৃত ভাষা পরিবার মধ্য অস্ট্রেলিয়ার বিশেষত অ্যালিস স্প্রিংয়ের প্রায় তিন হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের অন্যতম শক্তিশালী ভাষা। এ আরেরনটে ভাষী জনগোষ্ঠী একটু বিচ্ছিন্ন-দুর্গম এলাকায় বসবাস করায় বাইরের ভাষার অনুপ্রবেশ থেকে রক্ষা পেয়েছে এ ভাষাটি।

এ ভাষার রয়েছে পাঁচটি উপভাষা কেন্দ্রীয় আরেরনটে (অ্যালিস স্প্রিংয়ে ব্যবহৃত), পূর্ব আরেরনটে (অ্যালিস স্প্রিংয়ের পূর্বদিকে ব্যবহৃত), পশ্চিম আরেরনটে (অ্যালিস স্প্রিংয়ের পশ্চিম দিকে ব্যবহৃত), পারটামে বা দক্ষিণ আরেরনটে এবং নিম্নআরেরনটে। অ্যালিস স্প্রিংয়ের প্রাইমারি স্কুলের সব শিক্ষার্থীকে এ ভাষা শেখানো হয়। হাই স্কুল এবং কলেজে এটি ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। এ ভাষায় রেডিও এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানও হয়।

অসমিয়া (Assamese)

অসমিয়া একটি পূর্ব ইন্দো-আর্য ভাষা। ভারতের আসাম, মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশে অসমিয়া ভাষী প্রায় ২ কোটি মানুষ বাস করেন। ভুটানেও এ ভাষার কিছু লোক আছেন। এ ভাষাটি বাংলা এবং ওড়িশা ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। বাংলা বর্ণমালার একটি ভার্সন ব্যবহার করে অসমিয়া লেখা হয়। এ ভাষায় প্রথম ছাপানো প্রকাশিত বই হলো আত্মরাম শর্মার বাইবেলের অনুবাদ। ১৮১৩ সালে কলকাতায় সিরামপোর ইংলিশ মিশনারি প্রেস বইটি প্রকাশ করে।

আসতুরিয়ান (Asturian)

আসতুরিয়ান একটি রোমানস ভাষা যার অপর নাম বেবল (Bable)। স্পেনের উত্তরে অবস্থিত স্বায়ত্তশাসিত আসতুরিয়ার কিছু অংশের প্রায় পাঁচ লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি মিরানদেজ (Mirandese) ভাষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং আসতুরিয়া অঞ্চলের প্রাক-রোমান ভাষাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত।

১১৫৫ খ্রিস্টাব্দে এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায়। স্প্যানিশ ভাষা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ার আগে ১৪ শতক পর্যন্ত এ ভাষাটি অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত হতো। এ সময়ে কিছু সাহিত্যকর্মেও এ ভাষাটি ব্যবহৃত হয়। ১৪ থেকে ১৭ শতকের মধ্যে অফিসিয়াল নথিপত্র থেকে আসতুরিয়ান অদৃশ্য হয়ে যায়। শুধু আনুষ্ঠানিক পরিমণ্ডলে এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৭ শতকে অ্যান্টন দে ম্যারিরেগুয়েরার (Anton de Marirreguea) হাত ধরে সাহিত্য পরিমণ্ডলে এ ভাষার পুনরুজ্জীবন শুরু হয়।

অ্যাভার (Avar)

অ্যাভার বা (Maarul mats)-উত্তর-পূর্ব ককেশীয় ভাষা। রাশিয়ান রিপাবলিক অব দাগেস্তান এবং আজারবাইজানের জাকাতালা অঞ্চলের প্রায় ৬ লক্ষ ১০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এর বাইরে চেচনিয়া, জর্জিয়া, কাজাখস্তান, জর্ডান এবং তুরস্কের কিছু মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার রয়েছে চারটি প্রধান উপভাষা-খানজাখ (Khunzakh), আনতসুখ (Antsukh), সারোদা (Charoda) এবং জিদাতল (Gaidatl)। এ উপভাষাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোধগম্যতা খুব সামান্য।

এদের মধ্যে খানজাখ উপভাষাটি বিভিন্ন উপভাষা ব্যবহারকারীদের মধ্যে সংযোগ ভাষা হিসেবে কাজ করে। লিখিত অ্যাভারের ভিত্তিতে এটিতে ১৭ শতক থেকে শুরু হয় আরবি বর্ণমালা ব্যবহার এবং ২০ শতকের শুরু পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করা হয় ল্যাটিন বর্ণমালা আর এরপর সিরিলিক বর্ণমালা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

আবানজি (Awngi)

ইথিওপিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় চার লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি একটি কেন্দ্রীয় কুশীয় ভাষা। এ ভাষার বেশিরভাগ মানুষ বাস করেন আমহারা অঞ্চলের আজিউ আবি জোনে। আরও কিছু এ ভাষার মানুষ বাস করেন বেনিশাংগুল গুমুজ অঞ্চলের মেতেকেল জেনে। ইথিওপিক বর্ণমালার একটি ভার্সন দ্বারা লেখা হয় এ ভাষা। তবে লেখার পদ্ধতির মধ্যে কিছু ভিন্নতা লক্ষণীয়। আবি জোনের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এ ভাষা ব্যবহৃত হয়।

অ্যায়মারা (Aymara)

এটি অ্যায়মারান (Aymaran) ভাষা পরিবারের একটি সদস্য। বলিভিয়া এবং পেরুর প্রায় ২২ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন এবং দেশ দুটোতে এটি একটি অফিসিয়াল ভাষা। আর্জেন্টিনা এবং চিলিতেও এ ভাষার মানুষ বাস করেন। এ ভাষায় ২০ লাখ অ্যামারা ভাষী বাস করেন বলিভিয়ায়, কয়েক লাখ পেরুতে এবং আর্জেন্টিনা ও চিলিতে কয়েক হাজার।

লিখিত রূপের ক্ষেত্রে এ ভাষায় প্রকৃতপক্ষে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন প্রকারের প্রতীক, মানুষ অথবা বিভিন্ন বস্তুর। এসব প্রতীক বিভিন্ন জিনিসকে প্রকাশ করে। এ ভাষার কোনো পূর্ণাঙ্গ লিখিত রূপ গড়ে ওঠেনি। আগে পশুর চামড়ার ওপর গাছ বা খনিজ পদার্থের রং দ্বারা এসব প্রতীক আঁকা হতো। ১৬ শতকে এ অঞ্চলে স্প্যানিশদের আগমনের পর কাগজের প্রচলন শুরু হয়।

প্রতীক ব্যবহারে কোন আদর্শ ঠিক করা হয়নি। তাই বিভিন্ন অ্যায়মারা গ্রুপের মধ্যে প্রতীক ব্যবহারে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। স্প্যানিশদের প্রভাবে অ্যায়মারা লিখতে ল্যাটিন বর্ণমালা গৃহীত হয়। এর পর বেশ কয়েক বছর ধরে গড়ে ওঠে বিভিন্ন উচ্চারণ পদ্ধতি। ১৯৮০ সালে পেরুর সরকার একটি নতুন উচ্চারণ পদ্ধতি প্রচলন করে, যা অ্যায়মারা অফিসিয়াল বর্ণমালা বা একীভূত বর্ণমালা নামে পরিচিত।

আজারবাইজানি (Azerbaijani)

এটি একটি তুর্কি ভাষা। আজারবাইজান, ইরান, ইরাক, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া, রাশিয়ার প্রায় তিন কোটি দশ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষায় রয়েছে দুটি প্রধান প্রকার-উত্তর আজারবাইজানি ও দক্ষিণ আজারবাইজানি। উত্তর আজারবাইজানি ভাষায় কথা বলেন আজারবাইজানের ৬০ লাখ মানুষ, আর্মেনিয়ার এক লাখ ৬০ হাজার, জর্জিয়ায় ২ লাখ ৮৫ হাজার, রাশিয়ার দাগেস্তানের ১ লাখ ১২ হাজার মানুষ।

দক্ষিণ আজারবাইজানি ভাষায় কথা বলেন ইরানে আড়াই কোটি, তুরস্কে ৫ লাখ ৩০ হাজার, ইরাকে তিন লাখ সিরিয়ায় ৩০ হাজার এবং আফগানিস্তানের অল্প কয়েকজন। ভাষাটি আজোরি টার্কিশ বা আজারবাইজানি টার্কিশ নামেও পরিচিত। ৭ম শতকে আজারবাইজান এলাকায় আরবি বর্ণমালার আগমন ঘটে। ১৯২০ সাল পর্যন্ত আজারবাইজানি লিখত আরবি বর্ণমালায়।

৭ম শতকে আজারবাইজান এলাকায় আরবি বর্ণমালার আগমন ঘটে। ১৯২০ সাল পর্যন্ত আজারবাইজানি লিখতে আরবি বর্ণমালা ব্যবহৃত হত। এসময়কালে আরবি বর্ণমালার ৩টি ভিন্ন ভার্সন ব্যবহৃত হয়। ২৮ অক্ষর বিশিষ্ট আরবি বর্ণমালা, ৩২ অক্ষর বিশিষ্ট পার্সো- আরবি বর্ণমালা এবং ৩৩ বর্ণবিশিষ্ট তুর্কি-আরবি বর্ণমালা। আজারবাইজানি লিখতে এগুলোর কোনটাই আদর্শ হিসেবে গণ্য হয়নি। বিভিন্ন ধরনের সংস্কার প্রস্তাবিত হয়েছে।

বিশেষত ১৯ শতকের শেষ ও ২০ শতকের শুরুতে। ইরানে এ ভাষা লিখতে সব সময় আরবি বর্ণমালার একটি ভার্সন ব্যবহার করা হয়েছে, যা আজেরি-তুর্ক নামে পরিচিত। ১৯২৯ সালে এ ভাষা লিখতে ল্যাটিন বর্ণমালা যা ইয়ানালিফ, (Yanalif) ‘নতুন বর্ণমালা’ নামে পরিচিত, চালু করা হয়। ১৯২৯ সলে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত উত্তর আজারবাইজানে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯২৯ সালের আগে পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত আরবি বর্ণমালা।

১৯৩৯ সালে এ ভাষার জন্য সিরিলিক বর্ণমালা প্রবর্তন করেন জোসেফ স্ট্যালিন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর আজারবাইজান এ ভাষা লিখতে পুনরায় ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করে। অবশ্য এটি ১৯২৯-৩৯ এর ভার্সন থেকে কিছুটা ভিন্ন ছিল। এ সময় তৈরি হয় দারুন সন্দেহ আর ভুল বোঝাবুঝি।

সাথে সাথে এ বর্ণমালার ফ্রন্ট সমৃদ্ধ টাইপ রাইটার এবং কম্পিউটারের মারাত্বক সংকট দেখা দেয়। সৌভাগ্যক্রমে তুর্কি ভাষা লিখতে ব্যবহৃত ল্যাটিন বর্ণমালার সাথে এবারের বর্ণমালার বেশ সাদৃশ্য ছিল। ফলে তুর্কি টাইপ রাইটারের চাহিদা দারুন বেড়ে যায়।

প্রধান সমস্যাটি ছিল (e) অক্ষরটির একটি বিশেষ চেহারা, যা দুনিয়ার অন্য কোন ভাষায় ব্যবহৃত হয় না। একে বলে (Schwa)। Schwa না পাওয়া গেলে মানুষ এটিকে” আকৃতিতে লেখেন। ১৯৯২ সালের ১৬ই মে প্রচলিত ল্যাটিন বর্ণমালায় সামান্য কিছু সংস্কার করা হয়। ἃ বর্ণমালাটির পরিবর্তে আসে ‘১’। বদলে যায় বর্ণমালার সজ্জা।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বালি (Balinese)

বালি বর্ণমালা বা কারাকান (carakan) এসেছে প্রাচীন ভারতের ব্রাহ্মী লিপি থেকে এ পরিক্রমায় মাঝে ছিল পল্লব এবং প্রাচীন কাবি লিপি। বালি বর্ণমালার সব থেকে পুরানো লিখিত রূপ পাওয়া যায় যেগুলো, তার সময়কাল ১১ শতক। কিন্তু গবেষকদের ধারণা, এগুলো আরও আগে তালপাতায় লিখিত মূল রচনার পুনরুৎপাদন। অর্থাৎ বালি বর্ণমালার প্রচলন হয়েছে ১১০০ খ্রিস্টাব্দের আগে।

আজও বালি বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়, যদিও এতে দক্ষ মানুষের সংখ্যা খুব কম। প্রধানত ধর্মীয় কাজেই এর প্রচলন রয়েছে। স্কুল, কলেজ এবং সাধারণ কাজে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ল্যাটিন বর্ণমালা। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন ল্যাটিন বর্ণমালায় বালি ভাষা শেখানো হয়।

মজার ব্যাপার, এ ভাষার লিখিত রূপে দুটি শব্দের মধ্যে কোনো ফাঁকা জায়গা রাখা হয় না। বালি ভাষা বাসা বালি (Basa Bali) নামেও পরিচিত। এটি একটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষা। প্রধানত ইন্দোনেশিয়ায় বালি দ্বীপ এবং দক্ষিণের প্রতিবেশী দ্বীপ লোমবোকের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এর বাইরে জাভা এবং সুলাবেশী দ্বীপেও এ ভাষা ব্যবহৃত হয়।

কারাছায়-বালকার (Karachay-Balkar)

এটি একটি তুর্কি ভাষা। দুই লাখ চল্লিশ হাজার মানুষ কথা বলেন এ ভাষায়। ভাষাটি প্রধানত ব্যবহৃত হয় রাশিয়ার কাবারজিনা-বালকারিয়ায় এবং আরও ব্যবহৃত হয় কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজানে। বালকার শব্দটি এসেছে Bolgar বা Bulgar থেকে এটি বালকার জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এই বালকার জনগণই বুলগেরিয়া দেশটির নামকরণ করেছেন।

বালুচি (Baluchi)

এটি উত্তর-পশ্চিম ইরানীয় ভাষা। প্রায় ৭০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার বেশিরভাগ মানুষ বাস করেন পাকিস্তান, ইরান এবং আফগানিস্তানে।

 

 

এছাড়াও ভারত, তুর্কমেনিস্তান পূর্ব-আফ্রিকা এবং আরব গাল্ফ দেশগুলোতে এ ভাষার দেখা পাওয়া যায়। এ ভাষাটি প্রথম লিখিত হয় ১৯ শতকে। ব্রিটিশ এক ভাষাবিদ কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চারণ পদ্ধতিকে ভিত্তি করে ল্যাটিন বর্ণমালায় লেখা হতো এ ভাষা।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা পাওয়ার পর বালুচ বুদ্ধিজীবীরা ফার্সি-আরবি বর্ণমালা গ্রহণ করেন বালুচি ভাষা লিখতে। আফগানিস্তানে পশতুর ওপর ভিত্তি করে আরবি বর্ণমালার একটি ভার্সন ব্যবহার করা হয় বালুচি লিখতে। পূর্ব এবং পশ্চিম বালুচি নামে এ ভাষার দুটি প্রধান উপভাষা রয়েছে।

ব্রাহ্মীলিপি (Brahmi Script)

ভারতের আধুনিক ৪০টি বা তারও বেশি বর্ণমালার উৎস বা পূর্বপুরুষ হল ব্রাহ্মীলিপি। এছাড়া খমের, তিব্বতি বর্ণমালার উদ্ভবও হয়েছে এ লিপি থেকে। ধারণা করা হয়, এ লিপি সৃষ্টি হয়েছে আরামায়িক এবং ফোনেসিয়ান বর্ণমালা থেকে। খৃস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে এ লিপির আবির্ভাব ঘটে ভারতে।

অন্য একটি ধারণা অনুযায়ী এ লিপির উদ্ভব হয়েছিল সিন্ধু বা হরপ্পা লিপি থেকে। সিন্ধু বা হরপ্পা লিপি খৃষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দ পর্যন্ত সিন্ধু উপত্যকায় ব্যবহৃত হয়েছে। এ লিপির প্রাচীনতম নিদর্শন হল সম্রাট অশোকের শিলালিপি (খৃস্টপূর্ব ২৭০-২৩২ অব্দ)।

বামবারা (Bambara)

এটি একটি মান্দি ভাষা। মালি, বারকিনা ফাসো, কোট ডি’আইভর, সেনেগাল, গাম্বিয়া, গায়ানা, সিয়েরালিয়ন, ঘানার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি মালির জাতীয় ভাষা। মালির বামবারা জাতির মানুষই এ ভাষার প্রধান উৎস।

ফরাসি দখলদারিত্বের (১৮৮০-১৯৬০) সময় বামবারা ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায়। এতে ব্যবহার করা হয় ল্যাটিন বর্ণমালা। যদিও কিছু মাত্রায় এন’ কো (N’ ko) এবং আরবি বর্ণমালাও ব্যবহৃত হয়। এ ভাষায় রয়েছে সমৃদ্ধ মৌখিক সাহিত্য, যার বেশিরভাগজুড়েই রয়েছে রাজা আর নায়কদের কাহিনী।

বানতাওয়া (Bantawa)

এটি তিব্বতি-বর্মি ভাষাগুলোর পূর্ব কিরানতি শাখার সদস্য। সিকিম এবং নেপালের প্রায় চার লক্ষ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। সিকিমে এ ভাষাটি এক ধরনের বর্ণমালা দিয়ে লেখা হয় যার নাম কিরাত রাই।

বাশকির (Bashkir)

এটি তুর্কি ভাষার ক্যাপচাকর বেলগার গ্রুপের সদস্য। এ ভাষার রয়েছে ১৫ লাখ মানুষ। প্রধানত রিপাবলিক অব বাশকোরতোস্তান, রাশিয়ার কিছু অংশ যেমন-

মেরিয়াবিনস্ক, ওরেনবার্গ, পার্ম, কার্গান সামারা, তিউমেন ও উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান তাতারস্তানে এ ভাষার প্রচলন রয়েছে। ৯ম শতকে রুনিক (Runic) বর্ণমালা ব্যবহার করে প্রথম এ ভাষা লেখা শুরু হয়। দশম শতক থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত এ ভাষা লেখা হয় আরবি বর্ণমালায়। এরপর আসে ল্যাটিন। আর ১৯৪০ সালে ল্যাটিনকে সরিয়ে জায়গা নেয় সিরিলিক বর্ণমালা।

বাসা (ভাহ) Bassa (vah) বর্ণমালা

বাসায় এর ভাষার নাম ভাহ যার অর্থ ‘প্রতীকের মাধ্যমে’। ১৯ শতকে লাইবেরিয়ায় এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে।

১৯০০ সালে ড. ফ্লো ডারভিন লুইস আবিষ্কার করেন, ব্রাজিল এবং ওয়েস্টইন্ডিজ তখনও বসবাসরত সাবেক বাসা দাসরা বাসা বর্ণমালা ব্যবহার করে। ড. লুইস এর আগে এ বর্ণমালা দেখেননি এবং নিজে শেখার পর তিনি লাইবেরিয়াতে এ বর্ণমালার পুনরুজ্জীবন ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ড. লুইস পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন Syracuse বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর তিনি লাইবেরিয়া ফিরে আসেন। পথিমধ্যে যান ড্রেসডেনে। সেখানে তিনি প্রথমবারের মতো বাসা বর্ণমালায় লেখা ছাপানোর একটি প্রিন্টিং প্রেস তৈরির জন্য দায়িত্ব দেন একটি কোম্পানিতে। লাইবেরিয়াতে বাসা বর্ণমালা শেখানোর জন্য তিনি একটি স্কুল খোলেন।

প্রকৃত ঘটনা হলো বাসা বর্ণমালা লেখা হতো স্লেটের ওপর কয়লা দিয়ে। যা সহজেই ইয়ান (yan) নামের পাতা দিয়ে মুছে ফেলা যেত। ১৯৪০ সালের শুরুর দিকে মানুষ পেন্সিল ব্যবহার শুরু করে। এ বর্ণমালার প্রকৃত লেখার পদ্ধতি ছিল বুসট্রোফেডন (Boustrophedon) অর্থাৎ বাম থেকে ডানে লিখে পরের লাইনের আবার ডান থেকে বাম দিকে। অবশ্য ১৯৬০ সাল থেকে শুধু বাম থেকে ডানে লেখার রীতি চালু হয়।

আজকের দিনে বাসা ভাহ এ্যাসোসিয়েশনস বাসা বর্ণমালার ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে।

বাসা একটি ক্রু (Kru) ভাষা। লাইবেরিয়ায় ৩ লাখ ৫০ হাজার এবং সিয়েরালিয়নে ৫ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে।

 

 

বাসকিউ (Basque)

বাসকিউ ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক আত্মীয় নেই। প্রধানত স্পেনের উত্তরে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের Basque country (Euskal Herria)-তে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। বাসকিউ ভাষার এক উত্তরসূরি যার নাম অ্যাকুইতানিয়ান, এর আবির্ভাব ঘটে দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের অ্যাকুইতাইনে। এতে ব্যবহৃত হয় রোমান বর্ণমালা। এ রোমান লিপিতে আছে মানুষ এবং দেবতাদের নাম, সঙ্গে আরও কিছু শব্দ। ১ম এবং ২য় খ্রিস্টাব্দে এটি লিপিবদ্ধ হয়।

বাসকিউ প্রথম লিখিত রূপ পায় ল্যাটিন ধর্মীয় আলোচনা দ্য গ্লোসাস এমিলিয়ানেনসিসে (Glosas Emilianeses)। এ ভাষায় প্রকাশিত প্রথম বইটি ছিল একটি কবিতা সংকলন, “Linguae Vasconum Primitiae”। ১৫৪৫ সালে বইটি প্রকাশ করে বার্নার্ড ডেচেপেয়ার। শত শত বছর আগে এ ভাষার কোনো আদর্শ উচ্চারণ পদ্ধতি ছিল না। রোমানস (Romance) উচ্চারণ রীতি অনুসরণ করে এ ভাষা লেখা হতো। এর সঙ্গে ছিল আরও কিছু উচ্চারণ যা রোমানস ভাষায় ছিল না।

বেজা (Beja)

মিসর, সুদান এবং ইরিত্রিয়ার প্রায় ১২ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এটি উত্তর কুশীয় ভাষা। যদিও অনেক ভাষাতাত্ত্বিক মনে করেন এটি আফ্রো-এশীয় ভাষা পরিবারের সদস্য। ভাষাটি বেদাবি (Bedawi), বেদাউয়ে (Bedauye) নামেও পরিচিত।

ইরিত্রিয়াতে ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে বেজা লেখা হয় এবং সেখানকার স্কুলগুলোতে শিক্ষা দেয়া হয়। এ লিখন পদ্ধতি তৈরি করেন ভাষাতত্ত্ববিদ মিস্টার এবং মিসেস ওয়েডকাইন্ড। সুদানে বেজা লেখার জন্য আরবি বর্ণমালা ব্যবহৃত হয় কিছু স্থানে, যদিও এর কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই।

বেমবা (Bemba)

বেমবা একটি বান্টু ভাষা। জাম্বিয়া, কাঙ্গো এবং তাঞ্জানিয়ার বিভিন্ন অংশে প্রচলিত আছে এ ভাষা। এ ভাষার লোকসংখ্যা ছত্রিশ লাখ থেকে ষাট লাখ। বেমবা জাম্বিয়ার জাতীয় ভাষা এবং বিভিন্ন এলাকায় এটি লিংগুয়া ফ্রাংকা (Lingua Franca) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রেডিওতেও এ ভাষা ব্যবহৃত হয়। জাম্বিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে বেমবার জন্য একটি আদর্শ উচ্চারণ রীতি নির্ধারণ করে।

ভোজপুরি (Bhojpuri)

ভোজপুরি একটি বিহারি ভাষা। প্রধানত ভারতে ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। এর সঙ্গে নেপাল, গায়ানা, সুরিনাম, ফিজি, ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো ও মরিশাসেও ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। ভারতে ভোজপুরি ভাষীরা বাস করেন বিহারের দক্ষিণাংশে, ঝারখণ্ডের উত্তর- পশ্চিম এবং উত্তরপ্রদেশের পূর্ব অঞ্চলে, সুরিনামে এ ভাষা সরনামি হিন্দি বা সরনামি নামে পরিচিত। ইংরেজি এবং ডাচ ভাষা থেকে এখানে অনেক শব্দ যুক্ত হয়েছে।

ভোজপুরীকে হিন্দি ভাষার উপভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু ভারতীয় সরকারের বিবেচনায় এটি একটি জাতীয় ভাষা। ভোজপুরি ভাষা মৈথিলি এবং মাগধি ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং এদের একত্রে বলা হয় বিহারি ভাষা। ভোজপুরি পূর্ব ইন্দো-আর্য ভাষার অংশ এবং বাংলা ও ওড়িশি ভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত।

২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ভারতে এ ভাষার মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ। যদিও অনেকের মতে সংখ্যাটি হবে ১০ কোটি ৫০ লাখ। আর ভারতের বাইরে আছে আরও ৬০ লাখ। ১৬ থেকে ২০ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ভোজপুরি লেখা হতে কাইথি (Kaithi) এবং ফার্সি-আরবি লিপি ব্যবহার করে। কাইথি লিপির ব্যবহার সামান্য হলেও এখনও দেখা যায়। ১৮৯৪ সাল থেকে ভোজপুরি লিখতে ব্যবহৃত হচ্ছে দেবনাগরী (Devanagari) লিপি।

আরও পড়ুনঃ

Exit mobile version