বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১৪ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১৪ –  ইয়ুকাঘির (Yukaghir):  ইয়ুকাঘির ভাষাগোত্র মাত্র দুটি ভাষা নিয়ে গঠিত উত্তরাঞ্চলীয় অথবা তুন্দ্রা ইয়ুকাঘির এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় অথবা ফরেস্ট ইয়ুকাঘির। দুটি ভাষাই উত্তর-পূর্ব সাইবেরিয়ার কোলিইমা নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রচলিত। এদের পরস্পরের মাঝে কোনো ভাষাগত মিলই খুঁজে পাওয়া যায় না। উত্তরাঞ্চলীয় ইয়ুকাঘির ওডুল, তুন্দ্রা অথবা তুন্দ্রে নামেও পরিচিত।

প্রায় ১৫০ জন মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় ইয়ুকাঘির কালিইম কোলিইমা অথবা ওডুল নামে পরিচিত। ৫০ জনেরও কম মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন। ১৯৭০ সালে সিরিলিক বর্ণমালা ব্যবহার করে ইয়ুকাঘির ভাষার লিখিত রূপ তৈরি হয়। একজন স্থানীয় তুন্দ্রা ইয়ুকাঘির ভাষী মানুষ, গ্যাভ্রিল কুরিলোড এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

পরে ১৯৮৭ সালে ইয়াকুত শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই পদ্ধতি সরকারি ইয়ুকাঘির বানান পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত হয়। কিছু কবিতা, ছোটগল্প, অভিধান এবং কিছু রুশ ভাষা থেকে অনুবাদ ইয়ুকাঘির ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮০ থেকে কিছু স্কুলে উভয় ইয়কাঘির ভাষার পাঠদান শুরু হয়।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১৪ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১৪

ইয়ুকাটেক মায়া (Yucatec Maya)

ইয়ুকাটেক মায়া একটি মায়া ভাষা। মেক্সিকো এবং বেলিজের ৮-১২ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। প্রধানত মেক্সিকোর ইয়ুকাটেক ভাষাটি প্রচলিত। তবে মেক্সিকোর ক্যামপোচ, ট্যাবাস্কো, চিয়াপাস এবং কুইনটানারু রাজ্যগুলো এবং উত্তর বেলিজ ও গুয়াতেমালাতেও এ ভাষার কমবেশি ব্যবহার দেখা যায়। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মায়া লিপি ব্যবহার করে ইয়ুকাটেক মায়া ভাষার লিখিত রূপ তৈরি করা হয় এবং ষোল শতক পর্যন্ত এই লিপির ব্যবহার টিকে থাকে।

সম্প্রতি ইয়ুকাটেক মায়া ভাষী কিছু মানুষ পুনরায় এই লিপি শেখার ও ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। ১৬ শতকে স্পেনীয়দের ইউকেটান বিজয়ের পর স্পেনীয় বানান পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে ইউকেটান মায়ার আরেকটি লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়।

১৯৮৪ সালে আকাদেমিয়া ডি লিঙ্গুয়াস মায়াস ডি গুয়াতেমালার (এএলএমজি) ভাষাবিদগণ কর্তৃক একটি নতুন বানান পদ্ধতি প্রণীত হয়, যা পাঠ্যবই ও সরকারি দলিল দস্তাবেজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৮৯৮ সাল হতে কয়েকটি অভিধান এ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। মেক্সিকোতে রেডিওর কিছু অনুষ্ঠানও এ ভাষায় অনুষ্ঠিত হয়।

ইয়োরুবা (Yoruba)

নাইজিরিয়ার চারটি সরকারি ভাষার মাঝে অন্যতম এবং এটি নাইজার-কঙ্গো ভাষাগোত্রের সদস্য। দক্ষিণ-পশ্চিম নাইজিরিয়া, বেনিন, টোগো, ব্রিটেন, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। উনিশ শতকে প্রথম এ ভাষার লিখিতরূপ পাওয়া যায়। ১৮৩০-৩২ সালে জন রাবান সর্বপ্রথম শিক্ষাদান প্রসঙ্গে লেখা কিছু পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তবে ইয়োরুবা সাহিত্যে যার অবদান সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন বিশপ আযায়ি ক্রাউথার (১৮০৬-১৮৯১)।

তিনি ইয়োরুবাসহ নাইজেরিয়ার অনেক ভাষা নিয়ে জ্ঞান আহরণ করেন। এ ভাষায় তিনি কিছু মৌলিক রচনা লেখেন এবং অনুবাদ করেন। ১৮৫০ সালে ইয়োরুবা বানান পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়। যদিও এই বানান পদ্ধতিতে বহুবার পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে।

ইয়িদ্দিশ (Yiddish)

ইয়িদ্দিশ একটি জার্মান ভাষা যা প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ব্যবহার করে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, রাশিয়া, ইউক্রেইন ও অন্যান্য দেশের অ্যাশকেনাজিক ইহুদিগণ। ইয়িদ্দিশ (Yiddish) শব্দটি yidish-taytsh-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এর অর্থ ইহুদি-জার্মান। রোমান সাম্রাজ্যকাল থেকেই জার্মানিতে ইহুদিদের বসতি ছিল। দশম শতকে একটি বিশেষ ইহুদি সংস্কৃতির সূচনা হয় যা অ্যাশকেনাজি অথবা জার্মান ইহুদি সম্প্রদায় নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

জার্মানির মধ্যযুগীয় হিব্রু প্রতিশব্দ ছিল অ্যাশকেনাজ। যদিও অ্যাশকেনাজ অঞ্চলের মাঝে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চল এবং ইউরোপের পূর্বাঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত। অ্যাশকেনাজিক ইহুদিদের দৈনন্দিন ভাষা কমবেশি জার্মানই ছিল। তারা হিব্রু এবং জার্মান মিশ্রিত হিব্রু বাক্যাংশও ব্যবহার করত। ১৩ শতক থেকে তারা তাদের ভাষা লেখার জন্য হিব্রু লিপির ব্যবহার শুরু করে।

ভাষাবিদগণ একে জুডো-জার্মান বা কখনো কখনো প্রোটো-ইয়িদ্দিশ নামে অভিহিত করে থাকেন। জুডো-জার্মানের সবচেয়ে পুরানো নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে ১২৭২ অথবা ১২৭৩ সালে রচিত হিব্রু প্রার্থনা বইয়ে একটি শ্লোক হিসেবে। কয়েক শতকের বিবর্তনে, জুডো জার্মান, দুটি উপভাষাসহ একটি পৃথক সম্পূর্ণ ভাষা ইয়িদ্দিশ গঠন করে।

পশ্চিমা ইয়িদ্দিশ ১৮ শতক পর্যন্ত সেন্ট্রাল ইউরোপে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় আর পূর্বীয় ইয়িদ্দিশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়ায় ব্যবহৃত হয়। ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের কারণে ইউরোপে ইহুদি সম্প্রদায়গুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে শুরু করে। বর্তমানে ইয়িদ্দিশ ভাষার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

ইয়ি লিপি ও ভাষা (Yi)

ইয়ি লিপির উৎপত্তি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয় তাং সাম্রাজ্যকালে (৬১৮-৯০৭ খ্রিস্টাব্দ) এটি উদ্ভাবিত হয়। ইয়ি লেখার আদিতম নিদর্শনটি ১৪৮৫ সালের। তবে এগুলোর মাঝে কিছু পুঁথি ও শিলালিপি তার চেয়েও পুরানো।
বহু শতক ধরে পুরোহিতগণ সিলাবল (syllable) যুক্ত বর্ণমালা ধর্মীয়, জাদুবিদ্যা ও চিকিৎসা শাস্ত্র লেখার কাজে ব্যবহার করতেন।

১৯৭৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত ইয়ি ভাষা লেখার জন্য কোনো আদর্শ বর্ণমালা ছিল না এবং বিভিন্ন অঞ্চলের ইয়ি বর্ণমালার মাঝে পার্থক্য লক্ষ্য করা যেত। আদর্শ ইয়ি লিপিতে সর্বমোট ১১৬৫ টি বর্ণ ব্যবহার হয়। এগুলোর সঙ্গে ৮২০টি বর্ণ সম্ভাব্য সব সিলেবল লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়। অবশিষ্ট ৩৪৫টি বর্ণ অন্যান্য উচ্চ স্বরযুক্ত সিলেবল লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ইয়ি ভাষা তিবেতো বার্মান ভাষাগোত্রের লোলোয়িল শাখার সদস্য। চিনের ইয়ুম্মান, গুইবৌ, গুয়াংজি ও সিচুয়ানের প্রদেশগুলোয় ৪০-৫০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। ইংরেজি ভাষায় ইয়িকে লোলো নামে অভিহিত করা হয়। এর ৬টি প্রধান উপভাষা রয়েছে। নর্দার্ন ইয়ি, ওয়েস্টার্ণ ইয়ি, সেন্ট্রাল ইয়ি, সাউদার্ন ইয়ি, সাউথ ইস্টার্ন ইয়ি ও ইস্টার্ণ ইয়ি। এগুলোর মাঝে ভাষাগত মিল সামান্য। প্রায় ২০ লাখ মানুষ নর্দার্ন ইয়ি ভাষায় কথা বলেন। এই উপভাষাটিই অন্য ৫টি উপভাষার চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

ইয়েরুকুলা (Yerukula)

ইয়েরুকুলা একটি দ্রাবিড় ভাষা। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের প্রায় ৭০,০০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষাকে কুরু বাশা বা কুলাবাথ নামেও ডাকা হয়। ইয়েরুকুলা ভাষার সঙ্গে রডুলা ও ইরুলা ভাষার গভীর সাদৃশ্য রয়েছে। তামিল ভাষার সঙ্গে এ ভাষার খুব সামান্য মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ইয়েরুকুলা ভাষী জনগোষ্ঠী কুরু নামে পরিচিত। ‘ইয়ুরুকুলা’ শব্দটি এসেছে এ জনগোষ্ঠীর নারীদের ঐতিহ্যবাহী সৌভাগ্যের ভবিষ্যদ্বাণী করা পেশা থেকে।

লিপি: অধ্যাপক প্রসন্ন শ্রী ইয়েরুকুলা ভাষা লেখার জন্য একটি লিপি বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছেন। এ ভাষার আরেকটি বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের নেলোরি শহরের গুন্না কোটেশ্বর রাও। এতে তেলেগু, দেবনাগরি ও ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিটিই কিন্তু স্কুল পাঠ্যবইয়ে ব্যবহৃত হয়েছে।

ইয়াকুই (Yaqui)

ইয়াকুই অথবা ইয়োয়িমি একটি উতো-অ্যাজটেকান ভাষা।
মেক্সিকোর সোনোরা ও সিনালোয়াতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা রাজ্যের তাসকোন ও গুয়াদালুপেতে প্রায় ১৬,০০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ইয়াকুই ভাষী জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মেক্সিকোর অধিবাসী।

ইয়াপেসে (Yapese)

ইয়াপেসে অস্ট্রোনেসিয়ান ভাষাসমূহের মালায়ো-পলিনেশিয়ান গোত্রের একটি সদস্য। পাপুয়া নিউগিনির উত্তর-পূর্বে অবস্থিত প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জ মাইক্রোনেসিয়ার ইয়াজ রাজ্যে প্রায় ৬৬০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। একজন স্পেনীয় মিশনারি, ফাদার অ্যামব্রোসিও ভ্যালেনসিনা ইয়াপেসে ব্যাকরণ নিয়ে কাজ করার সময় সর্বপ্রথম এ ভাষার লিখিত রূপ উদ্ভাবন করেন।

ইয়াপেসে ব্যাকরণ ১৮৮৮ সালে ম্যানিলা প্রকাশিত হয়। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ফাদার ভ্যালেনসিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত ইয়াপেসের জন্য স্পেনীয় বানান পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। এরপর ইয়াপেসে ভাষা লেখার জন্য একটি নতুন বানান পদ্ধতির প্রচলন হয়। ঔপনিবেশিক শাসনের কারণে ইয়াপেসে ভাষায় স্পেনীয় জার্মান, জাপানিজ, ইংরেজি ভাষার ব্যাপক প্রভাব আছে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

জুনি (Zuni)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯৫০০ জন মানুষ জুনি ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে জুনি পুয়েবলো, নিউ মেক্সিকো এবং আরিজোনার কিছু অংশে বাস করেন। এসব অঞ্চলের অন্য ভাষা দ্বারা জুনি ভাষা কিছুটা প্রভাবিত হয়েছে; বিশেষ করে হোপি, কেরেসান, টোনোয়ান এবং নাভাহো ভাষা ব্যবহার হয় এমন অঞ্চলে এই প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ্য করা যায়। জুনির স্থানীয় নাম ‘শিওয়ি’। এর অর্থ ‘জুনির পথ’। আর, এ ভাষায় যারা কথা বলে তারা নিজেদের এ:শিওয়ি (A:Shiwi) নামে পরিচয় দেয়।

জুনি পুয়ে বলোতে যোগাযোগের প্রধান ভাষা জুনি। কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলে জুনি ভাষা শুধু গৃহে ব্যবহার করা হয়। কয়েকজন ভাষাবিদ এবং নৃতত্ত্ববিদ ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে জুনি ভাষার লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তাদের মাঝে স্ট্যানলি নিউম্যান ও ডেনিস টেডলক উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি কার্টিস কুক একটি বানান পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তিনি জুনি ভাষার শত শত লৌকিক ইতিহাস, লোককথা, ধর্মীয় শিক্ষা লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করেছেন এবং ভাষা শেখার পাঠ্যবই তৈরি করেছেন।

জুলু (zulu)

জুলু দক্ষিণ আফ্রিকার দাপ্তরিক ভাষাগুলোর মাঝে অন্যতম এবং এটি বান্টু ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য। প্রায় ৯০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। প্রধানত জুলুল্যান্ড এবং সাউথ আফ্রিকার নাটালের উত্তরাংশে জুলু ভাষার প্রয়োগ দেখা যায়। তবে বতসোয়ানা, লিসোথো, মোজাম্বিক এবং সোয়াজিল্যান্ডেও অল্পসংখ্যক জুলু ভাষী জনগোষ্ঠী বিদ্যমান।

উনিশ শতকের প্রথম দিকে খ্রিস্টান মিশনারিগণ কর্তৃক জুলু ভাষার লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়। ১৮৩৭-৩৮ সালে নিউটন অ্যাডামস, জর্জ নিউটন এবং আলডিন গ্রাউট কর্তৃক জুলু ভাষায় প্রথম খ্রিস্টান ধর্মীয় পুস্তিকা লিখিত হয় এবং এ পুস্তিকায় জুলু শব্দের বানান পদ্ধতি ও ওল্ড টেস্টামেন্টের ইতিহাস ব্যাখ্যা করা হয়। ১৮৪৫-১৮৮৩ সালে বাইবেলের জুলু ভাষার সংস্করণ লেখা হয়। ১৮৫৯ সালে এল. গ্রাউট জুলু ব্যাকরণ বই প্রকাশ করেন।

ঝুউয়িন ফুহাও (Zhuyin Fuhao)

‘ঝুউয়িন ফুহাও’ হলো চাইনিজ ভাষা শেখার জন্য একটি ধ্বনির উচ্চারণ সংক্রান্ত লিখন পদ্ধতি যা ডিকশনারি, শিশুদের বই, পাঠ্যপুস্তক এবং কিছু সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে বর্ণের উচ্চারণ বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি তাইওয়ানিজ বর্ণমালার উচ্চারণ বোঝানোর জন্য এবং তাইওয়ানিজ ভাষার যেসব বর্ণের অস্তিত্ব নেই সেগুলো দিয়ে গঠিত তাইওয়ানিজ শব্দের উচ্চারণ বোঝানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়।

১৯১২-১৯১৩ সালের মাঝামাঝি চীনের উচ্চারণ একত্রীকরণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ এই লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালের পর হানযু জিনয়িন কর্তৃক এটি আরও সমৃদ্ধ হয়। তখন থেকে তাইওয়ানেও এটির ব্যবহার শুরু হয়।
ঝুউয়িন প্রতীকগুলো চাইনিজ ভাষা থেকে নেয়া হয়েছে এবং বর্ণমালার কিছু অংশের মান্দারিন ভাষার অনুষাঙ্গিক উচ্চারণের সঙ্গে মিল রয়েছে।

ঝুয়াং (Zhuang)

ঝুয়াং একটি নর্দার্ন তাই (Northern Tai) ভাষা। প্রায় ১ কোটি লোকের মুখের ভাষা ঝুয়াং প্রধানত গুয়াংজি, চীনের দক্ষিণে ঝুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং ইয়ূন্নান, গুয়াংডং, গুইঝৌ ও হুনান প্রদেশের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ঝুয়াং ভাষা লেখার উৎপত্তি হয়েছিল বর্তমান চীনা বর্ণমালা, চীনা বর্ণমালার মতো কাছাকাছি কিছু প্রতীক এবং অন্যান্য প্রতীকের মিশ্রণ থেকে।

এই লিখন পদ্ধতি পুরানো ঝুয়াং লিপি নামে পরিচিত ছিল, যা ব্যবহার করে বহু রূপকথা, উপকথা, গান, নাটক, চিকিৎসা পদ্ধতি, পারিবারিক বংশ তালিকা, সর্বহারা বিপ্লবী প্রপাগান্ডা ইত্যাদি লেখা হয়েছিল। ঝুয়াং ভাষার প্রধান ১৬টি উপভাষা রয়েছে। এগুলোর কয়েকটির মাঝে এতই অমিল যে, এগুলো পরস্পর থেকে একেবারেই দুর্বোধ্য।

এ কারণে কিছু ভাষাবিদের ধারণা ঝুয়াং কয়েকটি উপভাষাসহ কোন একক ভাষা নয়, বরং এটি নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত অনেক ভাষার সমষ্টি। ঝুয়াং ভাষার প্রমিত রূপটি ইয়ংকেই ঝুয়াং নামে পরিচিত, যা গুয়াংজির উমিং কাউন্টির উপভাষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এ ভাষার লিখন পদ্ধতি উমিং উপভাষার ওপর নির্ভরশীল। ১৯৫৫ সালে এ ভাষায় ল্যাটিন ও সিরিলিক বর্ণমালার ব্যবহার উদ্ভাবিত হয়।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১৪ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

 

জারমা (Zarma)

জারমা ভাষা নিলো-সাহারান ভাষাগোষ্ঠীর সোনঘাই শাখার সদস্য। প্রায় ২২ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। নাইজারে জারমা ভাষার বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। এছাড়া মালি, বেনিন, নাইজিরিয়া, ঘানা ও বারকিনা ফাসোতেও এ ভাষার জনগোষ্ঠী খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভাষা ডি জারমা, ডায়াবারমা, ডায়ারমা, ডায়েরমা, অ্যাডজারমা, জাবারমা, জারবারমা, জারমা, ক্যারমাসি এবং জেরমা নামেও পরিচিত।

জাজাকি (Zazaki)

মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় তুরস্কের প্রায় ৩০-৬০ লাখ লোক জাজাকি ভাষা ব্যবহার করে। ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর ইরানীয় শাখা থেকে এ ভাষার উৎপত্তি এবং ইরানীয় শাখা হতে উৎপন্ন অন্যান্য ভাষা যেমন, গিলাকি ও তালিশির সঙ্গে এ ভাষার প্রচুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। জাজাকি ভাষার লিখিত রূপ সর্বপ্রথম উদ্ভাবিত হয় ১৮৫০ সালে আরবি বর্ণমালা ব্যবহার করে।

পরবর্তীতে ১৯৮০ সাল থেকে জাজাকি ভাষা লিখতে ল্যাটিন বর্ণমালার ব্যবহার সুইডেন, ফ্রান্স ও জার্মানির জাজাকি জাতিসত্তার মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তখন থেকে জাজাকি ভাষায় বেশ কিছুসংখ্যক বই, পত্রিকা ছাপা হয়েছে। এছাড়া রেডিও-টেলিভিশনের কিছু অনুষ্ঠানও জাজাকি ভাষায় সম্প্রচারিত হয়েছে।

জ্যাপোটেক (Zapotec)

মেক্সিকোতে প্রায় ৬০টি জ্যাপোটেকান ভাষা প্রচলিত। এগুলো ওটো-ম্যানগুয়েন ভাষা গোত্রের সদস্য এবং এদের অনেক সদস্যের মাঝে বিদ্যমান ভাষাগত মিলগুলো ব্যবহার করে মানুষ এ ভাষাগুলো ব্যবহার করে; বিশেষ করে ওজ্যাকা, জু এবলা, গুয়েররিও রাজ্যে জ্যাপোটেকান ভাষাগুলোর ব্যবহার লক্ষণীয়।

এগুলোকে চারটি গোত্রে ভাগ করা হয়েছে নর্দার্ন জ্যাপোটেক, জালি জ্যাপোটেক, সাউদার্ন জ্যাপোটেক এবং ইসথমাস জ্যাপোটেক। ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব এবং ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে ধ্বনি নির্দেশক প্রতীক ব্যবহার করে প্রাচীন জ্যাপোটেক ভাষা লেখা হয়েছিল।

জাপারো (Zaparo)

জাপারো, জাপারোয়ান ভাষাগোত্রের সদস্য। পূর্বাঞ্চলীয় পেরুর কাসতাজা প্রদেশের কুরারেই ও বোবোনাজা নদী দুটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে এ ভাষার প্রচলন ছিল। সর্বোচ্চ এক লাখ মানুষ জাপারো ভাষা ব্যবহার করত। কিন্তু ইউরোপীয়দের আনা দুরারোগ্য রোগ এবং রাবার ব্যবসার প্রসারের কারণে জাপারো ভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করে।

২০০০ সালের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি ১৫০ জন জাপারো লোকের মাঝে মাত্র একজন জাপারো ভাষায় কথা বলে এবং অতি অল্প কয়েকজন বুড়ো মানুষের জাপাকো ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান আছে। অন্যান্য জাপারো জনগোষ্ঠী বর্তমানে কুয়েচুয়া ভাষায় কথা বলে। তবে জাপারো ভাষা পুনরুদ্ধারের জন্য বর্তমানে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং দুটি স্কুলে এ ভাষার ওপর পাঠদান করা হয়। জাপারো ভাষা জাপারা ভাষা নামেও পরিচিত। আনজেয়া, এরাবেলা ও কোনামবো ভাষার সঙ্গে এ ভাষার মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment