বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১২ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১২ – সোমালি (Somali): এটি আফ্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবারের পূর্ব কুশীয় (East Cushtic) শাখার সদস্য। ইথিওপিয়া, জিবুতি এবং কেনিয়ায় এ ভাষার প্রায় দেড় কোটি লোক আছেন। সোমালিতে এটি অফিসিয়াল ভাষা। এসব দেশে প্রায় ৫ লাখ মানুষ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে এ ভাষা ব্যবহার করেন।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১২ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১২

সাউদার্ন সোথো (Southern Sotho)

এ বান্টু ভাষাটি দক্ষিণ আফ্রিকার একটি দাপ্তরিক ভাষা। বতসোয়ানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া এবং জাম্বিয়ার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষায় প্রথম ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৮৪১ সালে।

স্প্যানিশ (Spanish)

রোমানস (Romance) এ ভাষায় কথা বলেন প্রায় ৪২ কোটি মানুষ। স্পেন ছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ২১টি দেশে ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। ১২ শতকে ‘ল কোডস’ (Fueros) অনুবাদ হয় স্প্যানিশ ভাষায়। স্প্যানিশ গদ্য সাহিত্য বিকশিত হয় King Alfonso x the wise of Castile-এর (১২৫২-৮৪) শাসনামলে। King Alfonso নিজে একজন কবি ছিলেন এবং Las Partidas নামে একটি স্প্যানিশ এনসাইক্লোপিডিয়া রচনা করেছিলেন।

প্রথম স্প্যানিশ ব্যাকরণ এবং ডিকশনারি প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ১৫ এবং ১৬ শতকে। স্পেনে এ ভাষাকে দুনিয়ার অন্যান্য ভাষার সঙ্গে তুলনার সময় ডাকা হয় espanol (Spanish) নামে কিন্তু যখন স্পেনে প্রচলিত অন্যান্য ভাষা যেমন- গ্যালিসিয়ান, কাটালিনের সঙ্গে তুলনা করা হয় তখন ডাকা হয় Castellano (Castilian, the language of the castile region) নামে।

সানদানিজ (Sundanese)

পলিনেশীয় এ ভাষায় কথা বলেন Greater Sunda Island এবং জাভা দ্বীপের প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। ল্যাটিন এবং সানদানিজ লিপি ব্যবহার করে এ ভাষা লেখা হয়।

সুসু (Susu)

এটি নাইজার কঙ্গো ভাষা পরিবারের Manle শাখার সদস্য। সুসুভাষীর সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ যার বেশিরভাগ বাস করেন গিনিতে। এছাড়া সিয়েরালিয়ন ও সেনেগালেও ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। এটি গিনির একটি জাতীয় ভাষা।

সোয়াহিলি (Swahili)

বান্টু এ ভাষায় কথা বলেন তাঞ্জানিয়া, বুরুন্ডি, কঙ্গো, কেনিয়া, মোজাম্বিক, রুয়ান্ডা, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডার প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ। পূর্ব আফ্রিকাজুড়ে এ ভাষাটি লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সোয়াহিলি নামটি এসেছে আরবি শব্দ Sawahil (উপকূল) থেকে।
এ ভাষায় প্রথম লিখিত নিদর্শন ছিল ১৭২৮ সালের আরবি বর্ণমালায় লেখা একটি মহাকাব্য। ১৯ শতকে পূর্ব আফ্রিকার ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রধান প্রশাসনিক ভাষা ছিল এটি। এ ভাষায় প্রথম সংবাদপত্র Habari ya Mwezi প্রকাশিত হয় ১৮৯৫ সালে। বর্তমানে ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা হয়।

সোয়াতি (Swati)

বান্টু এ ভাষায় কথা বলেন সোয়াজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার ১১টি অফিসিয়াল ভাষার একটি। এ ভাষায় আছে চারটি উপভাষা – Shiselweni, Hhoho, Nandzini এবং shiselweni.

তাবাস্স্সারান (Tabassaran)

তাবাস্সারান একটি নর্থ ইস্ট ককেশিয়ান (North East Caucasian) ভাষা। রাশিয়ান রিপাবলিক অব দাগেস্তানে প্রায় ১ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। দাগেস্তানের ১৪টি সরকারি ভাষার মাঝে তাবাস্স্সারান অন্যতম। আজারবাইজান, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানেও এ ভাষার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়।

তাবাসসারানের দুটি প্রধান উপভাষা রয়েছে সাউদার্ন তাবাস্স্সারান (Southern Tabassaran) এবং নর্দার্ন তাবাস্স্সারান (Northern Tabassaran) I বিশ শতকের শুরু থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত তাবাস্স্সারান আরবি বর্ণমালায় লেখা হতো। এরপর ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার হয়েছিল অল্প সময়ের জন্য। ১৯৩৭ সাল থেকে তাবাস্স্সারান সিরিলিক বর্ণমালায় লেখা হয়।

টাগালোগ (Tagalog)

টাগালোগ একটি অস্ট্রোনেসিয়ান (Austronesian) ভাষা। এ ভাষা ফিলিফাইন- বিশেষ করে ম্যানিলা, লুজন, লুবাং দ্বীপ, ম্যারিনদুকু এবং মিনদোরোতে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ব্যবহার করে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, সৌদি আরবেও এ ভাষার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়। টাগালোগ এক সময় বেবেইন (Baybayin) বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখা হতো। এ বর্ণমালা জাভা, বালি ও সুমাত্রার কাওয়ি (Kawi) লিপি হতে উদ্ভূত।

কাওয়ি (Kawi) লিপি আবার দক্ষিণ ভারতীয় ব্রাহ্মী লিপি হতে উদ্ভুত। বর্তমানে টাগালোগ ভাষা ল্যাটিন বর্ণমালায় লেখা হয়। ‘টাগালোগ’ শব্দটির ইংরেজি অর্থ ‘Resident beside river’। ১৬ শতকে স্পেনীয় ফিলিপিনোরা আসার পূর্বে এ ভাষা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। টাগালোগ ভাষার প্রথম বইটির নাম ‘Doctrina Cristana’। ১৫৯৩ সালে স্প্যানিশ এবং টাগালোগ দুটি ভাষা ব্যবহার করে এ বইটি লেখা হয়েছিল।

তাহিতিয়ান (Tahitian)

তাহিতিয়ান একটি পলিনেশিয়ান (Polynesian) ভাষা। ফ্রেঞ্চ পলিনেসিয়াতে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। তাহিতিয়ান ভাষী অধিকাংশ মানুষ সোসাইটি আইল্যান্ড এবং টুয়ামোটোসের কয়েকটি দ্বীপে বসবাস করে। নিউ ক্যালোডানিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ভানুয়াতেও এ ভাষার ব্যবহার শোনা যায়। উনিশ শতকের আগ পর্যন্ত তাহিতিয়ান সম্পূর্ণরূপে মৌখিক ভাষা ছিল। ১৮০৫ সালের ৮ মার্চ জন ডেভিস নামক একজন ভাষাবিদ ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে একটি তাহিতিয়ান বানান পদ্ধতি উদ্ভবন করেন।

তাইওয়ানিজ (Taiwanese)

তাইওয়ানিজ ভাষা তাইওয়ানে প্রচলিত। এ তাইওয়ানিজভাষীদের পূর্বপুরুষরা ফুজিয়ান প্রদেশের দক্ষিণ অংশ থেকে এসেছিলেন। এ কারণে এ ভাষার সাথে ঐ অঞ্চলের ভাষার গভীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত বিদ্যালয়ে তাইওয়ানিজ ভাষার ব্যবহার ও রেডিও টেলিভিশনে তাইওয়ানিজ অনুষ্ঠান সম্প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।

তাই নিষেধাজ্ঞা পরে শিথিল করা হয়। বর্তমানে তাইওয়ানিজ বিদ্যালয়ে পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। অনেক কোম্পানিতে এখন তাইওয়ানিজ অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাইওয়ানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ তাইওয়ানিজ ভাষায় কথা বলে।

তাজিক (Tajik)

তাজিক, পারসি (Persian) বা ফারসি ভাষার একটি রূপ। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, ইউক্রেন ও আফগানিস্তানে প্রায় ৪৪ লক্ষ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ইরানের পারসি ভাষীদের থেকে মধ্য এশিয়ার পারসি ভাষীদের আলাদা করার জন্য ১৯৩২ সালে স্ট্যালিন এই অঞ্চলের পারসি ভাষার নামকরণ করেন ‘তাজিক’। ১৯২৮ সালের পূর্বে তাজিক ভাষা পার্সো-অ্যারাবিক (Perso-Arabic) বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখা হতো। ১৯২৮-১৯৪০ সাল পর্যন্ত সিরিলিক বর্ণমালা ব্যবহার হতো। ১৯৮৯ সালে তাজিক সরকার তাজিক ভাষা লেখার জন্য আরবি বর্ণমালা ব্যবহারের অনুমোদন করে।

তালাইশ্ (Talysh)

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইরানি (Nothwestern Iranian) ভাষা। ইরানের গিলান ও আরদাবিল প্রদেশ ও আজারবাইজানের দক্ষিণ অংশে প্রায় ৫-১০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। এর তিনটি প্রধান উপভাষা আছে নর্দার্ন, সেন্ট্রাল ও সাউদার্ন তালাইশ্। আজারবাইজানে নর্দার্ন এবং ইরানে অন্যান্য উপভাষা দুটি ব্যবহার হয়। তালাইশের সঙ্গে পার্সির বেশ সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে ইরানে তালাইশ্ পার্সো অ্যারাবিক (Perso-Arabic) বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখা হয় এবং আজারবাইজানে ব্যবহার হয় ল্যাটিন বর্ণমালা।

তামিল (Tamil)

দ্রাবিড়ীয় ভাষা। ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ভারতীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর প্রথম ভাষা (First Language) তামিল। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দে তামিল ভাষায় প্রথম সাহিত্য রচনা হয়েছিল।

ধারণা করা হয়, তামিল বর্ণমালা ব্রাহ্মী লিপি হতে উদ্ভূত। এই বর্ণমালা শুধু তামিল ভাষা লেখার উপযোগী হলেও আঞ্চলিক তামিল ভাষা লেখার জন্য উপযুক্ত নয়। উনিশ শতকে আঞ্চলিক তামিলের জন্য একটি লিখিত রূপ উদ্ভব হয় যা বর্তমানে স্কুলে বই এবং নাটকে ব্যবহার হচ্ছে।

ট্যাট (Tat)

ট্যাট অথবা ট্যাটি দক্ষিণ-পশ্চিমী ইরানি (Southwest Iranian) ভাষা। আজারবাইজান, ইরান ও দাগেস্তানে প্রায় ২৮০০০ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। পার্সির সঙ্গে এ ভাষা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাতার (Tatar) তাতার একটি তুর্কি (Turkic) ভাষা। রাশিয়ান রিপাবলিক অব তাতারস্তানে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। তবে আফগানিস্তান, আজারবাইজান, বেলারুশ, ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, কাজাখস্তান, কিকিরগিজস্তান, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান প্রভৃতি অঞ্চলেও তাতারভাষী মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়।

নবম শতকের পূর্বে তাতার ভাষা লেখার জন্য ওরখোন বর্ণমালা ব্যবহার করা হতো। ১৯২০ সাল পর্যন্ত আরবি বর্ণমালাও ব্যবহার হয়েছে। ১৯২৭ সালের পর তাতার লেখার জন্য সিরিলিক এবং ল্যাটিন বর্ণমালার ব্যবহার শুরু হয়।

তেলুগু (Telugu)

দ্রাবিড়ী ভাষা। দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। এখানে তেলুগু সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। এ ভাষার ব্যবহার ভারতের কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্র ও ছত্তিশগড়েও খুঁজে পাওয়া যায়। এটি ভারতের ২২টি প্রধান ভাষার একটি।

তেলুগু বর্ণমালার উৎপত্তি প্রাচীন ভারতে ব্রাহ্মী লিপি হতে। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে এ ভাষায় প্রথম লেখা হয়েছিল। ২০ শতকের পূর্ব পর্যন্ত তেলুগু একটি প্রাচীন পদ্ধতিতে লেখা হতো। পরবর্তীতে একটি নতুন আধুনিক লিখন পদ্ধতি তেলুগু লেখার জন্য উদ্ভূত হয়।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তেতুম (Tetum)

অস্ট্রোনেসিয়ান (Austronesian) ভাষা পরিবারের মালায়ো-পলিনেশিয়ান (Malayo-Polynesian) শাখার সদস্য। পূর্ব তিমুরে প্রায় ৮ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। এ ভাষা পূর্ব তিমুরের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গৃহীত। পশ্চিম তিমুরেও এ ভাষার প্রচলন আছে। ২০০৪ সালে তিমুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুয়িস্টিকস তেতুম ভাষা লেখার জন্য একটি আদর্শ বানান পদ্ধতি অনুমোদন করে।

থাই (Thai)

একটি তাই-কাদাই (Tai-kadai) ভাষা। থাইল্যান্ডের প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষের ভাষা। থাই ভাষা লাওয়ের (Lao) সঙ্গে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। থাই ভাষায় সংস্কৃত, পালি ও পুরানো খেমরের অনেক শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়। থাই বর্ণমালা ব্যবহার করে সংস্কৃত, পালি এবং অন্য আরও কিছু পরস্পর সম্পর্কিত ভাষা লেখা যায়।

তিবেতান (Tibetan)

তিবেতান একটি সিনো-তিবেতান (Sino-Tibetan) ভাষা। চীন, ভারত, ভুটান, সিকিম, লাদাখ ও নেপালের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে।মঙ্গোলিয়াতে এ ভাষাকে ‘Classical Language of Buddhism’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

টিগ্রে (Tigre)

সাউথ সেমিটিক (South Semitic) ভাষা পরিবারের ইথিওপিক (Ethiopic) শাখার অন্তর্গত। এরিত্রিয়াতে প্রায় ৮ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। এর পার্শ্ববর্তী দেশ সুদানেও এ ভাষার প্রচলন আছে। মুসলিম টিগ্রে জনগণ এ ভাষা আরবি বর্ণমালায় লেখে। অন্যদিকে খ্রিস্টান টিগ্রে জনগণ ইথিওপিক বর্ণমালা (Ethiopic) ব্যবহার করে।

তিগ্রিন্যা (Tigrinya)

সেমিটিক (Semitic) ভাষা পরিবারের ইথিওপিক (Ethiopic) শাখার অন্তর্গত। ইথিওপিয়া ও মধ্য এরিত্রিয়ার প্রায় ৬০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। তিগ্রিন্যা ভাষা গি’জ লিপি (Ge’ez Script) ব্যবহার করে লেখা হয়।

টোকেলাউয়ান (Tokelauan)

পলিনেসিয়ান ভাষা। টোকেলাউ ও টুভালুতে প্রায় ৩০০০ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। টোকেলাউয়ান প্রধানত একটি মৌখিক ভাষা। এ ভাষায় খুব সামান্যই লিখিত উপকরণ পাওয়া গেছে। যদিও নিউ টেস্টামেন্টের একটি টোকেলাউ অনুবাদ আছে।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ১২ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

 

টোংগান (Tongan)

অস্ট্রোনেসিয়ান (Austronesian) ভাষা পরিবারের পলিনেশিয়ান (Polynesian) শাখার অন্তর্গত। টোঙ্গাতে প্রায় ৯৫০০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। আমেরিকান সামোয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফিজি, নিউজিল্যান্ডেও এ ভাষার প্রচলন আছে। উনিশ শতকে টোঙ্গান ভাষা প্রথম লেখা হয় মিশনারীদের দ্বারা। ১৯৪৩ সালে প্রাইডি কাউন্সিল অব টোঙ্গা এ ভাষার জন্য একটি আদর্শ বানান পদ্ধতি অনুমোদন করে।

টিশিলুবা (Tshiluba)

বান্টু (Bantu) ভাষা গোত্রের সদস্য। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। কঙ্গোর জাতীয় ভাষাসমূহের মাঝে এটি অন্যতম। ‘টিশিলুবা’ শব্দটির অনুবাদ করা বেশ জটিল। তবে ইংরেজিতে মোটামুটি এর অর্থ এ রকম, “A person who is ready to forgive any abuse for the first time, to tolerate it a second time but a never a third time.”

সঙ্গা (Tsonga)

নাইজার-কঙ্গো (Niger-congo) ভাষা গোত্রের বান্টু (Bantu) শাখার অন্তর্গত। প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। তাদেরকে ‘শানগান’ নামে অভিহিত করা হয়। অধিকাংশ শানগান দক্ষিণ আফ্রিকার লিমপোপো, গৌটেঙ্গ ও এমপুমালাঙ্গা প্রদেশে বসবাস করে। সেখানে সঙ্গা অন্যতম সরকারি ভাষা।

সটসিল (Tsotsil)

মায়া (Mayan) ভাষা গোত্রের সদস্য। মেক্সিকোর চিয়াপাস প্রদেশে ৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। এ ভাষার ৬টি উপভাষা রয়েছে। মধ্য চিয়াপাসে এ ভাষা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়।

সোয়ানা (Tswana)

বান্টু (Bantu) ভাষাগোত্রের সদস্য। বতসোয়ানা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রায় ৪৪ লক্ষ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এ ভাষা বতসোয়ানার জাতীয় ভাষা। সোয়ানভাষী অধিকাংশ মানুষ (৩৬ লাখ) বাস করে দক্ষিণ আফ্রিকাতে এবং সেখানে এ ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে গৃহীত। সোয়ানা সাউদার্ন ও নর্দার্ন সোথো (Soartho) ভাষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

টুকানো (Tucano)

ইস্টার্ন টুকানোন (Eastern Tucanon) ভাষাগোত্রের অংশ। ব্রাজিলের আমাজনে অঞ্চল ও কলম্বিয়ার প্রায় ৫০০০ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। টুকানো ভাষী মানুষ পাপুরি নদী এবং এর শাখা-প্রশাখার তীরে বসবাস করে। আমাজন প্রদেশে এ ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে গৃহীত। এ ভাষা টুকানা, দাসেয়া, জুরুটি, তারিয়ানা ইত্যাদি নামেও পরিচিত।

তামবুকা (Tumbuka)

বান্টু (Bantu) ভাষাগোত্রীয়। উত্তর ও মধ্য মালাবি এবং জাম্বিয়ার লুন্দাজি জেলায় ২০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। শহরাঞ্চলের তামবুকা ভাষা হতে গ্রামাঞ্চলের তামবুকা ভাষায় বেশ পার্থক্য দেখা যায়। অনেকে গ্রামাঞ্চলের তামবুকা ভাষাকে আসল তামবুকা বলেন। মালাবি কিংবা জাম্বিয়া কোথাও তামবুকার সরকারি স্বীকৃতি নেই। জাম্বিয়াতে সাহিত্য রচনা ও মালাবিতে ধর্মীয় আলোচনা লেখায় তামবুকা ব্যবহৃত হয়।

তুর্কিশ (Turkish)

তুর্কিক (Turkik) ভাষাগোত্রের সদস্য। তুরস্কে প্রায় ৭ কোটি মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। এছাড়া আরও ৩৫টি দেশে তুর্কিশ ভাষী আছে। ১৯২৮ সালের আগ পর্যন্ত পার্সো-অ্যারাবিক (Perso-Arabic) লিপি ব্যবহার করে এ ভাষা লেখা হতো। ১৯২৮ সাল থেকে মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের আইন অনুযায়ী আরবি ও ল্যাটিন বর্ণমালা এ ভাষা লেখার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।

তুর্কমেন (Turkmen)

তুর্কিক (Turkik) ভাষা। তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান, জার্মানি, ইরান, ইরাক, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কি, উজবেকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করে। ২০ শতকের শুরুর দিকে তুর্কমেন ভাষা আরবি বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখা হতো। ১৯২৮-১৯৪০ পর্যন্ত ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহৃত হতো। ১৯৪০ সাল থেকে সিরিলিক বর্ণমালার ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৯১ সালে পৃথক রাষ্ট্র হবার তুর্কমেনিস্তান পর তুর্কমেন লিখতে তুর্কিশ ভিত্তিক ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখা হয়।

টুভান (Tuvan)

তুর্কিক (Turkik) ভাষা। রিপাবলিক অব টুভাতে প্রায় ২ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। চীন ও মঙ্গোলিয়াতেও টুভানভাষী মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়। টুভান ভাষা খাকাস (Khakas) এবং অলটায় (Altai) ভাষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ ভাষার ওপর মঙ্গোলীয় ও রুশ ভাষার প্রভাব রয়েছে।

এ ভাষার চারটি প্রধান উপভাষা আছে: ওয়েস্টার্ন, সেন্ট্রাল, নর্থইস্টার্ন ও সাউথ ইস্টার্ন। ১৯৩০ সালে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু, মনগুস লোপসাং চিন্নিত সর্বপ্রথম ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে এ ভাষার লিখিত রূপ উদ্ভাবন করেন। ১৯৪৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে টুভান সিরিলিক বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখা হয়।

টই (Twi)

আকান (Akan) ভাষার একটি উপভাষা এবং নাইজার-কঙ্গো (Niger-Congo) ভাষা পরিবারের কওয়া (Kwa) উপগোষ্ঠীর সদস্য। ঘানাতে প্রায় ৭০ লাখ টই ভাষী মানুষ আছে। টই ভাষার উপভাষাগুলি হলো: আকুপি টই, কন্টে টই এবং অশান্টি টই। এগুলো পরস্পর বোধগম্য। বাইবেল অনুবাদের জন্য আকুপি টই উপভাষা ব্যবহার করা হয়। ঘানার ভাষা সম্পর্কিত অধিদপ্তর টই উপভাষাগুলো লেখার জন্য একটি পদ্ধতি উদ্ভবন করেছে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment