ভাষারীতি এবং ভাষারীতি রূপান্তরের নিয়ম – বিষয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিষয়ের “বাংলা ভাষা” বিভাগের একটি পাঠ।
Table of Contents
ভাষারীতি এবং ভাষারীতি রূপান্তরের নিয়ম
উদাহরণ দুটি লক্ষ কর :
ক. সাধু রীতি :
পর দিন প্রাতে হেডমাস্টার সাহেবের প্রস্তুত লিস্ট অনুসারে যে তিন জন শিক্ষক সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিবার অনুমতি পাইয়াছিলেন, তাঁহারা আটটার পূর্বেই ডাক বাংলায় উপস্থিত হইলেন। একটু পরে আবদুল্লাহ আসিয়া হাজির হইল। তাহাকে দেখিয়া এক জন শিক্ষক জিজ্ঞাসা করিলেন- আপনি যে, আপনার নাম তো হেডমাস্টার লিস্টে দেন নাই। -কাজী ইমদাদুল হক
খ. চলিত রীতি :
পুল পেরিয়ে সামনে একটা বাশ বাগান পড়ল। তারি মধ্যে দিয়ে রাস্তা। মচমচ্ করে শুকনোবাঁশ পাতার রাশ ও বাঁশের খোসা জুতোর নিচে ভেঙে যেতে লাগল। পাশে একটা ফাকা জায়গায় বুনো গাছপালা লতা ঝোপের ঘন সমাবেশ। সমস্ত ঝোপটার মাথা জুড়ে সাদা সাদা তুলোর মত রাধালতার ফুল ফুটে রয়েছে। – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ওপরের ‘ক’ ও ‘খ’ অনুচ্ছেদ দুটোর ভাষার উপাদানে সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য নিচে দেখানো হল :
রূপতত্ত্বগত এবং পদবিন্যাসগত পার্থক্য
সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার প্রধান পার্থক্য এই রূপ ও পদবিন্যাসের এলাকাতেই দেখতে পাওয়া যায়। এই পার্থক্যগুলো ক্রিয়ারূপের পার্থক্য, সর্বনামের পার্থক্য, অনুসর্গের পার্থক্য, অব্যয়ের পার্থক্য, শব্দের প্রয়োগগত পার্থক্য, পদবিন্যাসের পার্থক্য, সুরের পার্থক্য। কোনো রচনায় ভাষারীতিকে ‘সাধু’ থেকে ‘চলিত’ রীতিতে কিংবা ‘চলিত’ থেকে ‘সাধু’ রীতিতে রূপান্তর করতে হলে সাধারণত যেসব নিয়ম মেনে চলতে হয়, সেগুলো নিম্নরূপ :
১। ক্রিয়াপদের রূপগত পার্থক্য
সাধু ভাষার সঙ্গে চলিত ভাষার পার্থক্য ঘটে ক্রিয়াপদের রূপে। সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদের প্রাচীন পূর্ণাঙ্গ রূপটি বজায় থাকে, বিপরীতপক্ষে চলিত ভাষায় উচ্চারণগত ধ্বনি পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত রূপ গৃহীত হয়।
ক. অসমাপিকা ক্রিয়া :
সাধু ভাষায় অসমাপিকা ক্রিয়া-বিভক্তি -ইয়া, ইতে, ইনে চলিত ভাষায় যথাক্রমে হয়েছে -এ, তে, -লে, যেমন——
অপিনিহিতি ও অভিশ্রুতির রূপ পরিবর্তন
সাধু চলিত
করিয়া > কইরা (অপিনিহিতি) > করে (অভিশ্রুতি)
হাসিয়া > হাইস্যা > হেসে
আসিয়া > আইস্যা > এসে
জাগিয়া > জাইগ্যা > জেগে
খ. সমাপিকা ক্রিয়া
[i] সাধারণ বর্তমান কালের সাধু ও চলিত ক্রিয়ারূপ এক। যেমন পড়ে, খায়, বলে, হাঁটি, চলি, বসি ইত্যাদি।
liil ঘটমান বর্তমান ও ঘটমান অতীত কালের সাধু ক্রিয়া-বিভক্তি – ইতেছ, ইতেছে, ইতেছিল, -ইতেছিলে, —ইতেছিলাম থেকে ‘ইতে’ লোপ পেয়ে চলিতে যথাক্রমে হয়েছে ছ/ হু – ছে/ -চ্ছে, ছি ছি, ছিল, ছিলে, ছিলাম। যেমন-
[iii] পুরাঘটিত বর্তমান ও পুরাঘটিত অতীত কালের সাধু ক্রিয়া-বিভক্তি -ইয়াছ, -ইয়াছে, -ইয়াছি, -ইয়াছিল, -ইয়াছিলে, ইয়াছিলাম চলিত রূপে ইয়া -এ-তে পরিণত হয়ে যথাক্রমে হয়েছে -এছ এছে, এছি; এছিল, এছিলে, এছিলাম। যেমন——
[iv] সাধারণ অতীত ও সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের ইলে, ইন, ইনাম, ইবে, “ই” লোপ পেয়ে চলিতে যথাক্রমে হয়েছে -লে, -, লাম, যে, -ব।
[v] নিত্যবৃত্ত অতীতকালের ইতে, –ইত, –ইতাম সাধু ক্রিয়া-বিভক্তির ‘ই’ লোপ পেয়ে চলিতে যথাক্রমে হয়েছে –তে, ত, তাম। বর্তমান অনুজ্ঞার সাধু ও চলিতের রূপ দু-একটি ক্ষেত্রে এক অন্যত্র পার্থক্য আছে। ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় সাধু ও চলিতের পার্থক্য লক্ষণীয়।
lvil যৌগিক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে অসমাপিকা ও সমাপিকা উভয় ক্রিয়ারূপের পরিবর্তন দেখা যায় চলিত ভাষায়।
যেমন—
২। সর্বনাম পদের রূপগত পার্থক্য
সাধু ভাষার পূর্ণাঙ্গ সর্বনাম পদ চলিত ভাষায় সংক্ষিপ্তাকারে ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ই ধ্বনি লোপ পেয়েছে। যেমন-
৩। অনুসর্গের রূপগত পার্থক্য
কোথাও ধ্বনি পরিবর্তনের ফলে, কোথাও ধ্বনির লোপ হেতু, আবার কোথাও বা পৃথক শব্দ যোগে সাধু ভাষা থেকে চলিত ভাষায় অনুসর্গের রূপের তফাত ঘটেছে। যেমন-
৪। অব্যয়-এর রূপগত পার্থক্য
[i] অতএব, অতঃপর, অচিরাৎ, এবংবিধ কদাপি, কদাচ, যদ্যপি, প্রায়শ, বরঞ্চ, নচেৎ, ইদানীং, পরন্তু, যুগপৎ ইত্যাদি সংস্কৃত থেকে আগত অব্যয় পদ সাধু ভাষায় ব্যবহৃত হয়। বাংলার নিজস্ব অব্যয় পদ, যেমন— না, বা, কি বা, আচ্ছা, তবু, আর, আরও, তো, আবার, মতো, মতন, ছি, দুর, দুত্তোর প্রভৃতি চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
(ii) চলিত ভাষায় বিদেশি ভাষা থেকে আগত অব্যয় পদের চলন আছে। যেমন — শাবাশ মারফত নাগান ইত্যাদি।
[iii] তথাপি (সাধু), তবু (চলিত), প্রায়শ (সাধু) > প্রায়ই (চলিত), বরঞ্চ (সাধু) > বরং (চলিত), অতঃপর (সাধু) > তারপর (চলিত) এরকম কিছু অব্যয় সাধু ভাষা থেকে চলিত ভাষায় এসেছে।
[vi] ইদানীং, এবং, বরং, তবু, তারপর ইত্যাদি অব্যয় পদ সাধু ও চলিত উভয় ভাষায় ব্যবহৃত হয়।
[v] প্রায়শ, বরঞ্চ ইত্যাদি দু-একটি শব্দ সাধু হলেও কথ্য ভাষায়ও ব্যবহৃত হয়।
৫। শব্দের প্রয়োগগত ও রূপগত পার্থক্য
[i] বাংলা সাধু ভাষা বা চলিত ভাষা একই ভাষার দুটি রূপ বা রীতি। উভয় ভাষাতেই সংস্কৃত শব্দের (বিশেষ্য) বিশেষণ জাতীয়) প্রয়োগ অবাধ, তবে সাধুর তুলনায় চলিতে কিছু কম। বিদেশাগত শব্দের প্রয়োগ চলিতে কিছু বেশি হলেও সাধু ভাষার প্রয়োগ ব্যাপারে বাধা-নিষেধ নেই।
সাধু ভাষায় অর্ধতৎসম শব্দের ব্যবহার একেবারেই নেই, বিপরীতপক্ষে চলিত ভাষায় অর্ধতৎসম শব্দের অবাধ প্রবেশ ঘটেছে। যেমন : কুৎসিত > কুচ্ছিত, গৃহিণী > গিন্নি, যার দুয়ার, উৎপন্ন উচ্ছন্ন ইত্যাদি। চলিত ভাষায় তদ্ভব শব্দের বহুল ব্যবহার। যেমন— কার্য > কাজ , ব্রাহ্মণ > বামুন , কর্মকা > কামার , চন্দ্র > চাঁদ ইত্যাদি।
[ii] ই-কার লোপের প্রবণতা চলিত ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন- সিপাহি > সিপাই, ফলাহার > ফলার, মহাশয় > মশায় ইত্যাদি।
[iii] সাধু ভাষায় ব্যবহৃত সন্ধি ও সমাসবদ্ধ দীর্ঘপদ ভেঙে চলিত ভাষায় সহজ সরল করে প্রয়োগ করা হয়। যেমন—
অন্যাপি > আজও, নিরুপদ্রব-ভাব > শান্তিপ্রিয়, প্রকারান্তর > অন্য প্রকার, দস্যুবৃত্তি ডাকাতি, ক্রিয়ারন্ডের কাজ শুরুর যৎপরোনাস্তি > যার পর নেই, তদপেক্ষা তার চেয়ে, উপর্যুপরি পর পর, মনস্কামনা মনের ইচ্ছা, তদবধি সেই থেকে সমভিব্যাহারে সঙ্গে, দীর্ঘোদর বিশাল পেট, আদ্যোপান্ত আগাগোড়া, ক্ষুদ্রাশয় নীচ মনের স্বহস্তোৎপাদিত নিজের হাতে জন্মানো, আত্মগোপন > নিজেকে লুকিয়ে রাখা, আপাদমস্তক, পা থেকে মাথা পর্যন্ত রাজসন্দর্শনে রাজার সঙ্গে দেখা করতে, বসতিস বড় বড় গাছে এরা ইত্যাদি।
(iv) ধ্বন্যাত্মক, অনুকারাত্মক ও দ্বিত্ত্ব শব্দের প্রয়োগ-বৈচিত্র্য চলিত ভাষার রীতি। যেমন— ‘উত্তর পশ্চিমের আমবাগানে শোনা গেল সোঁ সোঁ করে হাপিয়ে ওঠা একটা আওয়াজ- বাতাসের খটকা আসে, ছুঁড়ে ছুঁড়ে ছড়ায় জলের টুকরো, ঘন আঁধির ভিতর থেকে উঠছে ঘরহারা গোরুর উত্তরোগ ডাক, দূরে নদীর ঘাটে হৈ হৈ রব। বোঝা গেল না কোন্ দিকে হুড়মুড় সুড়পাড় করে কী একটা ভেঙে চুরে পড়ল, বুক দুরদুর করছে, ভাবনা উঠছে- কী হল, কী হল।
৬। পদবিন্যাসের পার্থক্য
সাধু ভাষায় পদবিন্যাসে আছে নিয়মবদ্ধ রীতির প্রচলন, যেমন—— ছেলেরা জানিতে পারিল। সকলে আসিয়া কাদিয়া পড়িল। ক্রিয়াপদগুলি বাক্যের শেষে বসেছে। কিন্তু চলিত রীতিতে নিয়মবন্ধ রীতি ভেঙে পদবিন্যাসের ক্ষেত্রে এসেছে স্বাধীনতা। যেমন- “বিষম ব্যস্ত হয়ে পড়ল সফিক, সে যাবে রাজশাহীর দিকে। ” প্রথম অংশে কর্তার আগে ক্রিয়া এসেছে। শেষাংশে ক্রিয়া কর্তার পরে বসলেও স্থান হয়েছে বাক্যের মাঝে।
৭। সুরের পার্থক্য
সাধু ও চলিত রীতিতে সুরের তফাতও লক্ষণীয়। রবীন্দ্রনাথের দেওয়া দৃষ্টান্তের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করা যাক। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের গায়ে নগদ করছে লাল আলো, যেন ছিটকে পড়া রক্ত। বিদ্যুৎ লাফ মারছে মেঘের থেকে মেঘে চালাচ্ছে তার ঝকঝকে খাড়া, বস্তুশব্দে গর্জে উঠছে তার দিগন্ত ডাক ছাড়া জন্তুর মতো।
সর্বোপরি “সাধু” ও “চলিত রীতির আকৃতি স্বরূপ, আত্মা ও প্রাণ সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রেখে বাক্যের পদসমূহেরসামগ্রিক সামঞ্জস্য বিধানে নজর রাখা।
সাধু ও চলিত ভাষারীতির রূপান্তর নিয়ে আরও কিছু কথা
কখনও কখনও সাধু রীতির পদ চলিত রীতিতে দুটি রূপ পরিগ্রহ করে। যেমন :
সাধারণত অনেকেরই মনে এমন একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে, কেবল ‘সাধু’ ভাষার সর্বনাম ও ক্রিয়াপদকে চলিত ভাষায় রূপান্তর করলেই বুঝি ভাষা ‘চলিত’ হয়ে যায়। কিন্তু, আসলে তা মোটেই ঠিক নয়। কারণ সাধু ও চলিত ভাষার রূপান্তরের সময় সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ ছাড়াও অপরাপর পদসমূহের (যেমন— বিশেষ্য, বিশেষণ, অব্যয় (যোজক), ক্রিয়া প্রভৃতির রূপসমূহেরও। রূপান্তর সাধন করতে হয়— ওপরের আলোচনায় তা আমরা দেখেছি।
আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, ক্রিয়াপদের বিভিন্ন রূপ হয় কালের জন্যে বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ কালের পরিপ্রেক্ষিতে, সেই সঙ্গে উত্তম পুরুষ, মধ্যম পুরুষ ও প্রথম পুরুষের রূপে পার্থক্যের দিক থেকেও। আর এই ক্রিয়ারূপের জন্যে সাধু ও চলিত রীতিতে যে পার্থক্য ঘটে তা নিচে √কর ধাতুভিত্তিক ক্রিয়াপদের রূপভেদ দেখানো হল এবং ‘হ’, ‘খা’, ‘দি’, ‘শু’, ‘কহ’, ‘কাট্’, ‘গাহ্’, ‘লিখ’, ‘উঠ’, ‘লাফা’, ‘নাহা’, ‘ফিরা’, ‘ঘুরা ধোয়া, ‘দৌড়া’, ‘চট্কা’, ‘বিগড়া’, ‘উল্টা’, ‘ছোবলা ধাতুর গণভিত্তিক রিয়াপদের রূপভেদগুলোও একইভাবে পরিবর্তিত হবে——
নিচের উদাহরণগুলো পড়ার আগে দ্বিতীয় ভাগ— শব্দতত্ত্ব’ থেকে পদ, পুরুষ, ধাতু ও ক্রিয়ার কাল অধ্যায়গুলো পড়ে নিলে বিষয়গুলো বুঝতে সুবিধা হবে।
[২.১৬] ‘√কর্’ ধাতুর রূপ (সর্, গড়ু, চল্ প্রভৃতি কর- আদিগণ)
চলিত রীতি থেকে সাধু রীতিতে রূপান্তরের নিয়ম
১. ক্রিয়া, সর্বনাম ও অনুসর্গের সংক্ষিপ্ত রূপকে পূর্ণাঙ্গ চেহারায় রূপান্তর করতে হবে। যেমন: পড়ছি । পড়িতেছি, লিখছি > লিখিতেছি, যাদের যাহাদিগের, এদের ইহাদের হতে হইতে, থেকে থাকিয়া ইত্যাদি।
২. তদ্ভব, দেশি, বিদেশি এ ধ্বন্যাত্মক শব্দের বদলে সমার্থক তৎসম শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করতে হবে।
৩. চলিত ভাষার নিজস্ব বাগ্ধারার বদলে সমার্থক তৎসম শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
৪. সাধু ভাষার বিশেষ পদবিন্যাস-রীতির প্রয়োগ করতে হবে।
কবিতায় সাধু ও চলিত রীতির রূপান্তর
কবিতাকে গদ্যরীতিতে রূপান্তর করা যায়। গদ্যভাষায় সাধু ও চলিত দুই রীতি থাকায় কবিতাকে সাধু ও চলিত এই উভয় রীতিতেই রূপান্তর করা যায়। আমরা ২.১৫-যে জেনেছি যে, কবিতার বেলায় সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ দূষণীয় নয়। অর্থাৎ হল, নির্দিষ্ট মাপের পর্ব ও পর্যন্ত, মাত্রা সংখ্যা ইত্যাদি নানা কারণে কবিতা রচনার বেলায় কবি যেমন সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ করে থাকেন, তেমনি ভাব প্রকাশের জন্য কবি উপযুক্ত শব্দ বাছাই করেন এবং নতুন নতুন শব্দও তৈরি করেন।
এসব শব্দ কাব্যে বিশেষ রূপে ব্যবহৃত শব্দ হিসেবে পরিচিত [নিচের ২.২২-এ এরকম শব্দের তালিকা দেখানো হল]। এখানে লক্ষণীয় যে, কোনো কবিতা যদি শুধু সাধু ভাষায় রচিত হয় তবে সে ক্ষেত্রে কবিতাটিকে চলিত ভাষায় রূপান্তর করা যায়, একইভাবে কবিতাটি যদি চলিত ভাষায় রচিত হয় তবে তা সাধু ভাষায় রূপান্তর করতে হবে। কিন্তু কবিতাটি যদি সাধু ও চলিত উভয় ভাষার মিশ্রণ হয় তবে তাকে দুই রীতিতেই রূপান্তর করা যুক্তিযুক্ত। তবে প্রশ্নের নির্দেশানুযায়ী পরিবর্তন করাই উত্তম। এক্ষেত্রে কবিতায় ব্যবহৃত বিশেষ শব্দগুলোকেও শিষ্ট চলিত গদ্যে রূপান্তর করতে হয়। যেমন :
“হে বা ভান্ডারে তব বিবিধ রতন;
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।”
চলিত রীতিতে রূপান্তর :
হে বঙ্গ, তোমার ভাণ্ডারে বিবিধ রত্ন। আমি অবোধ, সে সব অবহেলা করে পরধন গোতে মত্ত হয়ে কুক্ষণে ভিক্ষাবৃত্তি অবলখন করে পরের দেশে ভ্রমণ করলাম।
সাধুরীতিতে রূপান্তর :
হে বঙ্গ, তোমার ভাঙারে বিবিধ রত্ন। আমি অবোধ, সেই সমস্ত অবহেলা করিয়া, পরধনলোতে মত্ত হইয়া কুক্ষণে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বনপূর্বক পরদেশে ভ্রমণ করিলাম।

আরও দেখুন: