ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ নিয়ে আজকের পাঠ। এই পাঠটি ভাষা ও শিক্ষা সিরিজের, ধ্বনিতত্ত্ব বিভাগের, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব পাঠের অংশ।

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

Table of Contents

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় ধ্বনি-উৎপাদক বাতাস মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাবার পথে বাপ্রত্যঙ্গের কোনো-না-কোনো স্থানে বাধা পায়, কিংবা ঘষা খায় বা নানা স্থানে স্পর্শ লাগে। ফলে ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে নানারকম বৈচিত্র্য দেখা যায়। সাধারণত (ক) উচ্চারণের স্থান, (খ) উচ্চারণের রীতি, (গ) ফুসফুসতাড়িত বাতাসের চাপ এবং (ঘ) স্বরতন্ত্রীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনি ও ব্যঞ্জনবর্ণগুলোকে নানাভাবে ভাগ করা হয় ।

Capture 12 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

 

(ক) উচ্চারণের স্থান অনুসারে ব্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ:

ফুসফুস থেকে আগত বাতাস বাপ্রত্যঙ্গের যে স্থানে বাধা পেয়ে ব্যঞ্জনধ্বনিটি উচ্চারিত হয় সে-স্থানই ঐ ব্যঞ্জনের উচ্চারণস্থান (place of articulation)। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিসমূহকে মোট ৮টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা :

১. ওষ্ঠ্য ধ্বনি :

যে ধ্বনির উচ্চারণে দুটি ঠোঁট পরস্পরের সংস্পর্শে এসে বাতাসের নির্গম-পথে বাধা সৃষ্টি করে, তাকে ওষ্ঠ্য (bilabials) ধ্বনি বলা হয়। প্, ফ্, ব্, ত্, ম্ হল ওষ্ঠ্য ধ্বনি। যেমন— তাপ, লাফ, ডাব, সভা, নাম।

Capture 13 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

 

২. দন্ত্য ধ্বনি :

জিভের ডগা উপরের পাটির দাঁতের পেছনের অংশকে স্পর্শ করে বায়ুপথে বাধার সৃষ্টি করলে দন্ত্য (dentals) ধ্বনি উচ্চারিত হয়। ত্, খ্, দ্, ধূ দন্ত্য ধ্বনি। যেমন : মত, পথ, দ্রান, ধান।

৩. দন্তমূলীয় ধ্বনি :

জিভের ডগা উপরের পাটির দাঁতের মূলকে স্পর্শ করে : বাতাসের নির্গম-পথে বাধা সৃষ্টি করলে দন্তমূলীয় (alveolar) ধ্বনিগুলো উচ্চারিত হয়। ন, র, ল দন্তমূলীয় ধ্বনি। যেমন : মান, বার, লাল। দন্ত্য-ন ধ্বনির মতো দন্ত্য-স হিসেবে উল্লেখ করলে দন্ত্য-স কে আমরা দন্ত্যমূলীয়-স বলতে পারি। দন্ত্য-ন এবং দন্ত্য-স এ দুটি ধ্বনি উচ্চারণে কোনোক্রমেই দাঁতের স্পর্শ নেই।

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ | ব্যাকরণ ও ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

‘কান’ শব্দ উচ্চারণ করলেই তা বুঝতে পারি। ‘রাস্তা’ কিংবা ‘বস্তা’ শব্দের স্ উচ্চারণের সময় জিভের সামনের অংশ উপরের পাটি দাঁতের মূলের খুব কাছাকাছি আসে। নৃ এবং স্ ব্যঞ্জনকে দন্ত্যমূলীয়- য়-ন এবং দন্ত্যমূলীয়-স বলাই বিজ্ঞানসম্মত। দন্তমূলীয় ধ্বনিগুলো হল— ন, র, ল, স।

Capture 14 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

8. তালব্য ধ্বনি :

যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভ প্রসারিত হয়ে তার সামনের অংশ দিয়ে শক্ত তালু স্পর্শ করে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে সেই ধ্বনিগুলোকে তালব্য (palatal) ধ্বনি বলে। চ্, ছ, জ, ঝ, শ্ হল তালব্য ধ্বনি। যেমন- কাচ, গাছ, কাজু, মাঝ, দশ ।

৫. তালব্য-দন্তমূলীয় ধ্বনি বা মূর্ধন্য ধ্বনি :

জিভের সামনের অংশ উপরে গিয়ে তালু স্পর্শ করে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে যে ধ্বনিগুলো উচ্চারিত হয় তাকে তালব্য-দন্তমূলীয় (palato – alveolar) ধ্বনি বা মূর্ধন্য ধ্বনি বলে। ট্, ত্, ড্, চ্ হল তালব্য-দন্ত্যমূলীয় বা মূর্ধন্য ধ্বনি। যেমন— টাকা, কাঠ, ডাল, ঢাকা।

৬. জিহ্বামূলীয় ধ্বনি বা কণ্ঠ্য ধ্বনি :

জিভের পেছনের অংশ উঁচু হয়ে চিত্র : তালব্য- দন্তমূলীয় ধ্বনির উচ্চারণ। আলজিভের মূলের কাছাকাছি নরম তালু স্পর্শ করে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করলে জিহ্বামূলীয় (velaric) ধ্বনি বা কণ্ঠ্য ধ্বনি উচ্চারিত হয়। ক্, খ্, গ্, খ্, ত্ জিহ্বামূলীয় বা কণ্ঠ্য ধ্বনি। যেমন— কাক, লাখ, দাগ, বাঘ, রঙ।

৭.কণ্ঠনালীয় :

কণ্ঠনালীর সংকীর্ণ পথে ধ্বনিবাহী বাতাস বাধা পেয়ে নির্গত হলে উচ্চারিত হয় কণ্ঠনালীয় (glottal) ধ্বনি। ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে একমাত্র কণ্ঠ্য ধ্বনি হচ্ছে–হ্।

Capture 15 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

৮. প্রতিবেষ্টিত (retroflex) :

জিভের সামনে অংশ পেছনে কুঞ্চিত বা বাঁকা হয়ে এ জাতীয় ধ্বনি উৎপাদিত হয়। ডু, ঢু এ জাতীয় ধ্বনি। যেমন : নড়ি, আষাঢ়।

 

(খ) উচ্চারণের রীতি অনুযায়ী ব্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ:

বিভিন্ন প্রকার বাধ্বনি উচ্চারণের সময় ঠোট, জিভ, জিহ্বামূল ইত্যাদি বাপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন অবস্থান ও আকৃতি গ্রহণ করে বায়ুপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। বায়ু প্রবাহে সৃষ্ট বাধার রীতি-প্রকৃতি অনুযায়ী অর্থাৎ উচ্চারণ-প্রকার বিচার করে ব্যঞ্জনধ্বনিকে নিম্নলিখিত ৮ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :

১. স্পৃষ্ট/স্পর্শ ধ্বনি:

মুখের মধ্যে ফুসফুস থেকে আসা বাতাস মুহূর্তের জন্যে সম্পূর্ণ রুদ্ধ বা বন্ধ হওয়ার পর অকস্মাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে যে সমস্ত ধ্বনি উচ্চারিত হয় সে ধ্বনিগুলোকে সৃষ্ট (plosive) বা স্পর্শ ধ্বনি বলে।

যেমন— বক শব্দের ক, পাট শব্দের ট। স্পর্শ ধ্বনি ২০টি : ক্, খ্, গ্, খ্ চ্, ছ, জ, খ্ ট্‌, ঠ, ড্‌, চ্ ত্, খ্, দ্, র্প্, ফ্, ব্, ভ্ ক্ থেকে ম্ পর্যন্ত ২৫টি ধ্বনি পাঁচটি বর্গে বিভক্ত। পাঁচটি বর্গের প্রথম চারটি করে ধ্বনি বাংলা ভাষায় সৃষ্ট বা স্পর্শ ধ্বনি। প্রতি গুচ্ছের প্রথম ধ্বনিটির নামানুসারে সে গুচ্ছের সবগুলো ধ্বনিকে বলা হয় ঐ বর্গীয় ধ্বনি। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী পৃষ্ট ধ্বনিগুলোকে এভাবে দেখানো যায় :

Capture 16 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

২. নাসিক্য ধ্বনি:

যেসব ব্যঞ্জন উচ্চারণের সময় বাতাস কেবলমাত্র নাক দিয়ে বের হয় সেগুলোকে নাসিক্য (nasalized) ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে। যেমন– আম, মান, ব্যাঙ/ব্যাং শব্দের ম্, নৃ, ভূ এ-শ্রেণির ধ্বনি । উচ্চারণস্থান অনুযায়ী সৃষ্ট ধ্বনিগুলোকে এভাবে দেখানো যায় : ওষ্ঠ— ম্; দন্তমূলীয়— ন্; জিহ্বামূলীয় বা কণ্ঠ্য— ।

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ | ব্যাকরণ ও ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

 

৩. ঘর্ষণজাত ধ্বনি বা শিসধ্বনি বা উষ্মধ্বনি:

এ জাতীয় বাধ্বনি উচ্চারণে বাগ্যন্ত্র দুটি খুব কাছাকাছি আসে; চিত্র : মৌখিক ও অনুনাসিক ধ্বনির উচ্চারণ। কিন্তু একসঙ্গে যুক্ত না হওয়ায় একটি প্রায়-বন্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর ফলে ফুসফুস আগত বাতাস বাধা পায় ও সংকীর্ণ পথে বের হওয়ার সময় ঘর্ষণের সৃষ্টি করে।

বাতাসের ঘর্ষণের ফলে উচ্চারিত হয় বলে এগুলোকে ঘর্ষণজাত (fricatives) ধ্বনি বলে। এ জাতীয় ধ্বনিগুলোর এই ঘর্ষণকে শিস দেওয়ার আওয়াজের সঙ্গে সাদৃশ্য ভেবে এগুলোকে শিসধ্বনি বলে। এ ধ্বনিগুলোকে উষ্মধ্বনিও বলে। ঘর্ষণজাত ব্যঞ্জন তিনটি— স্, শ্ এবং হ্। আসমান, দাশ, হাট শব্দের উচ্চারণ এ জাতীয়। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ঘর্ষণজাত ধ্বনিগুলোকে এভাবে দেখানো যায় : দন্তমূলীয়— স্; তালব্য- শ্; কণ্ঠনালীয়— হ্।

Capture 17 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

৪. পৃষ্ট-ঘর্ষণজাত (plosive-fricatives) বা ঘৃষ্ট ধ্বনি:

এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস প্রথমে সৃষ্ট ধ্বনির মতো মুখের মধ্যে সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়, কিন্তু দ্রুত বের না হয়ে কিছুটা বিলম্বে ঘর্ষণ ধ্বনি তৈরি করে বের হয়। অর্থাৎ স্পৃষ্ট + ঘর্ষণজাত = খৃষ্ট। যেমন— কাচ, মাছ, কাজ, মাঝ শব্দের পর চ, ছ, জ, ঝ এ জাতীয় ধ্বনি।

৫. পার্শ্বিক ধ্বনি বাংলা পার্শ্বিক (lateral) ধ্বনি:

মাত্র একটি-‘ল্’। এ জাতীয় ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস জিভের পেছনের এক বা দুপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। দু পাশ দিয়ে বায়ু- নিঃসৃত হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলা হয়। যেমন— তাল, দল, শাল প্রভৃতি শব্দের ল পার্শ্বিক ধ্বনি। পার্শ্বিক ধ্বনি সাধারণত ঘোষ হয়ে থাকে। চিত্র : স্ ধ্বনির উচ্চারণ। চিত্র : র ধ্বনির উচ্চারণ।

Capture 18 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

৬. কম্পিত বা কম্পনজাত ধ্বনি:

কম্পনজাত ধ্বনিও বাংলায় মাত্র একটি –‘র্’। এ ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ কম্পিত হয়ে উচ্চারিত হয় বলে এ জাতীয় ধ্বনিকে কম্পিত (rolling/trill) বা কম্পনজাত ধ্বনি বলে। তার, ধার, বার শব্দের ‘র’ হল কম্পিত ধ্বনি। উচ্চারণস্থানের বিচারে এটি দন্ত্যমূলীয় ধ্বনি ।

৭. তাড়িত বা তাড়নজাত ধ্বনি:

বাংলায় মোট ২টি তাড়িত (flap/tap) বা তাড়নজাত ধ্বনি আছে—ডু এবং ঢু। এ জাতীয় ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিভের সামনের অংশ উলটে গিয়ে উপরের পাটি দাঁতের মূলের একটু উপরে বা মূর্ধায় টোকা দেওয়ার মতো একবার মাত্র ছুঁয়ে যায়। যেমন— বড়, গাঢ়, রাঢ় ইত্যাদি।

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ | ব্যাকরণ ও ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

৮. নৈকট্যমূলক (approximant) বা সন্নিভ বা তরল (lateral) ধ্বনি:

বাংলা বর্ণমালায় অন্তস্থ ব্ ও অন্তস্থ য়্ বর্ণ দুটিকে ব্যবহার করে দুটি শ্রুতিধ্বনি (glide)-র পরিচয় দেওয়া হয়। এগুলো হল ওঅ-শ্রুতি ও ইয়-শ্রুতি।

অন্তস্থ ব্ ও অন্তস্থ য়্ ধ্বনি দুটিকে পুরোপুরি ব্যঞ্জনধ্বনি বলে গণ্য করা যায় না। অন্তস্থ ব-এর উচ্চারণ ‘ওঅ’ অর্থাৎ ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় দুই ঠোঁট গোলাকৃতি হয়ে সংকুচিত হয় ও বাতাস বেরিয়ে যায়; কিন্তু কোথাও কোনো স্পর্শ ঘটে না। বাংলা ধোওয়া, হাওয়া শব্দের উচ্চারণে ধ্বনিটি পাওয়া যায়।

অন্যদিকে অন্তস্থ য়-এর উচ্চারণ ‘ইঅ’। এখানেও ‘জিভ শক্ত তালুর খুব কাছাকাছি আসে; কিন্তু তালুকে স্পর্শ করে না। ফলে শ্বাসবায়ু অতি সংকীর্ণ পথে বের হয়। অর্থাৎ এসব ধ্বনি উচ্চারণে ফুসফুস-আগত বাতাস বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাধা পায় ঠিকই, কিন্তু সেই বাধা সৃষ্ট ধ্বনির মতো পর্যাপ্ত নয়। বাতাসের বাধার এই বৈচিত্র্যের কারণেই এগুলো স্বর ও ব্যঞ্জন উভয় ধ্বনির নিকটবর্তী। এসব ধ্বনিকে তরল ধ্বনিও বলে। উচ্চারণের রীতি অনুযায়ী ব্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ নিচের ছকে দেখানো হল :

Capture 19 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

 

(গ) স্বরতন্ত্রীর অবস্থাভেদে ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণিবিভাগ:

আমাদের গলার মধ্যে একটি বাপ্রত্যঙ্গ আছে। একে বলে স্বরযন্ত্র। স্বরযন্ত্রের মাঝখানে স্বররন্ধ্র ও স্বরতন্ত্র নামে আরও দুটি প্রত্যঙ্গ আছে। স্বরতন্ত্রের মাঝখান দিয়ে ফুসফুসে বাতাস আসে যায়। তখন কিছু সংখ্যক ধ্বনি উচ্চারণে স্বরতন্ত্রের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয়, আবার কিছু সংখ্যক ধ্বনি উচ্চারণে স্বরতন্ত্রের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয় না। স্বরতন্ত্রের এ দুরকম অবস্থার ওপর নির্ভর করে ব্যঞ্জনধ্বনিকে দু ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : র্ স্বরযন্ত্র স্বরতন্ত্র চিত্র : স্বরযন্ত্র ও স্বরতন্ত্র ।

Capture 20 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

১. অঘোষ ধ্বনি :

যে সব বাধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র কম্পিত হয় না, সেগুলোকে অঘোষ ব্যঞ্জন বলে। যেমন : ক্, খ্, চ্, চ্, ত্ থ্, প্, ফ্।

২. ঘোষ ধ্বনি :

যে সব বাধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র কম্পিত হয়, সেগুলোকে ঘোষ ব্যঞ্জন বলে। স্বরধ্বনি সবগুলোই ঘোষধ্বনি। যেমন : গ্, খ্, ঙ, জ্, খ্, ড়, ঢ়, দ্, ধ, ন্, ব, ভ, ম্, র্, ল্, ড, ঢ, হ্।

 

(ঘ) ফুসফুসতাড়িত বাতাসের চাপের ওপর নির্ভর করে ব্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ:

মুখ দিয়ে ফুসফুসতাড়িত বাতাস বের হওয়ার সময় বা ফুসফুসতাড়িত বাতাসের চাপের তারতম্যের ওপর নির্ভর করে ব্যঞ্জনধ্বনি দু প্রকার। যথা :

১. মহাপ্রাণ (aspirated) ধ্বনি:

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে অধিক পরিমাণে বাতাস মুখের রুদ্ধতাকে সজোরে উন্মোচন করে নির্গত হয় সে ধ্বনিগুলোকে ‘মহাপ্রাণ’ ধ্বনি বলে। এ জাতীয় ধ্বনিগুলোকে অনেকে ‘হ-কার জাতীয় ধ্বনি’ বলেছেন। বাংলা পথ, বধ, মাঠ, লাখ শব্দের থ্, ধূ, ঠ, খ্ এ জাতীয় ধ্বনি ৷ লেছেন। বাং

২. অল্পপ্রাণ (unaspirated) ধ্বনি:

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে কম পরিমাণে বাতাস নির্গত হয় লে। টাক, দাগ, কা কাচ, চট্ট শব্দের এবং মুখের কাঠিন্য তুলনামূলকভাবে কম থাকে সেগুলোকে ‘অল্পপ্রাণ’ ধ্বনি বলে। ক্, গ্, চ্, ট্ এ জাতীয় ধ্বনি। বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনির সামগ্রিক উপস্থাপনা :

Capture 21 ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

যে সমস্ত ঘরে দুটি করে ধ্বনিচিহ্ন আছে তাদের মধ্যে বাম দিকেরটি অঘোষ ধ্বনি এবং ডান দিকেরটি ঘোষ ধ্বনি ৷ হ স্থানবিশেষে অঘোষ এবং স্থানবিশেষে ঘোষ হতে পারে।

 

সূত্র : ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ | ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব | ধ্বনিতত্ত্ব । ভাষা ও শিক্ষা

আরও দেখুন:

Leave a Comment