এই পাঠটি আমাদের “ভাষা ও শিক্ষা” সিরিজের “আবেদন পত্র” বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ব্যবহারিক বা বৈষয়িক প্রয়োজনে মানুষকে বিভিন্ন সময় চিঠিপত্র লিখতে হয়, যা ইংরেজিতে Official Letter বা আনুষ্ঠানিক পত্র নামে পরিচিত। এই ধরনের পত্রের বিষয়বস্তু সাধারণত অফিস বা প্রশাসনিক প্রয়োজনে সীমাবদ্ধ থাকে।
বৈষয়িক পত্রের বিষয় হতে পারে—ছুটির জন্য আবেদন, চাকরির জন্য দরখাস্ত, সরকারি বা বেসরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ বা দাবিপত্র, কোনো সমস্যা বা পরিষেবার উন্নয়নের জন্য আবেদন, সংবাদপত্রের সম্পাদকের কাছে মতামত পেশ ইত্যাদি।
এই শ্রেণির পত্রে ভাবাবেগ প্রকাশের কোনো স্থান নেই; এখানে কেবল বক্তব্য ও তথ্যই মুখ্য। বক্তব্যের ধারাবাহিকতা, ভাষার স্পষ্টতা ও শুদ্ধতা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কোনো ধরণের অলংকার বা ব্যক্তিগত অনুভূতির ব্যবহার না করে নিরপেক্ষ ও সৌজন্যপূর্ণভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করাই এক্ষেত্রে আদর্শ।
বৈষয়িক পত্র লেখার সময় নির্ভুল কাঠামো অনুসরণ করতে হয়—যেমন প্রাপকের ঠিকানা, বিষয়বস্তু, সম্বোধন, মূল বক্তব্য, উপসংহার এবং প্রেরকের স্বাক্ষর ও ঠিকানা। এই কাঠামোগত শৃঙ্খলা রক্ষা করলে পত্রটি হয় প্রভাবশালী, পরিষ্কার ও গ্রহণযোগ্য।
এই ধরনের চিঠি লেখার অভ্যাস শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বৈষয়িক বা ব্যবহারিক পত্র
আবেদন-পত্র (ছুটি, চাকরি ও অন্যান্য বিষয়)
ছুটির আবেদন পত্র : এ-ধরনের পত্রে ছুটির আবেদন করা হয়। আবেদন পত্রের বক্তব্য হবে সুস্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত। ছুটির উপযুক্ত কারণও উল্লেখ থাকতে হবে। বাহুল্য অবশ্যই বর্জনীয়। এতে কোনো প্রকার আবেগ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা যাবে না।
” চাকরির আবেদন-পত্র : এ-ধরনের পত্রে চাকরির প্রার্থনা করে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়। চাকরির আবেদন-পত্রে বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ থাকে বলে বিজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হয়। বাহুল্য অবশ্যই বর্জনীয়। এতে কোনো প্রকার আবেগ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা যাবে না।
জনপ্রিয় বিষয় সম্পর্কে সংবাদপত্রে চিঠি : দৈনিক সংবাদপত্রের চিঠিপত্র কলামে জনগণের বিভিন্ন সমস্যা, অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিনিয়ত যে চিঠিপত্র প্রকাশিত হয় তাকে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে চিঠি বলা হয়।
এ-ধরনের চিঠিতে পাঠক যে কোনো সমস্যাকে খোলাখুলি ও স্পষ্টভাবে আলোচনা করতে পারে, কারণ এ-চিঠির বক্তব্য সম্পর্কে সব দায়-দায়িত্ব পত্র লেখকের, পত্রিকা কর্তৃপক্ষ কোনো দায়-দায়িত্ব নেন না বলে চিঠিপত্র কলামের ওপরে অথবা নিচে “মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নন’ কথাটি লেখা থাকে। এই পত্রের পাঠক একজন মাত্র নয়। সংবাদপত্রের অসংখ্য গ্রাহককেই এই পত্রের পাঠক বলে ধরে নেওয়া হয়। এই পত্র কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লেখা নয়, আবার এ-জাতীয় পত্রকে ব্যক্তিগত পত্রও বলা যায় না। জনমত প্রকাশ বা জনমত গঠনই এ- জাতীয় পত্রের উদ্দেশ্য। সেকারণেই এগুলো বৈষয়িক চিঠির অন্তর্ভুক্ত।

জনগণ কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অনেক আবেদন-নিবেদন করে যখন ব্যর্থ হয় তখন তারা পত্রিকার শরণাপন্ন হয়। যেখানে জনগণ নিজের ইচ্ছানুযায়ী তার সমস্যার কথা জানাতে পারে। চিঠিতে লেখকের নাম ঠিকানা উল্লেখ থাকে, আবার বেনামিও হয়। এ-ধরনের পত্রে ব্যক্তিগত সমস্যাও স্থান পেতে পারে। এ-পত্রের বক্তব্য হবে সুস্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত।
একটি বৈষয়িক বা ব্যবহারিক পত্রের অংশ বিভাজন:
ক্রমিক | পত্রের অংশ | বর্ণনা / ভূমিকা |
---|---|---|
১ | প্রেরকের ঠিকানা | চিঠি লেখকের ঠিকানা পত্রের ওপরের দিকে ডান পাশে লেখা হয়। |
২ | তারিখ | ঠিকানার নিচে চিঠি লেখার তারিখ উল্লেখ করা হয়। |
৩ | প্রাপকের ঠিকানা | পত্র যাঁর উদ্দেশ্যে লেখা, তাঁর নাম, পদবি ও প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বাম পাশে লেখা হয়। |
৪ | বিষয় (Subject) | চিঠির মূল বিষয় বা উদ্দেশ্য সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়। |
৫ | সম্ভাষণ (Salutation) | যেমন: “জনাব”, “মহাশয়”, “মাননীয় স্যার” ইত্যাদি। |
৬ | মূল বক্তব্য (Body) | পত্র লেখার মূল কারণ, সমস্যা বা প্রস্তাব বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়। |
৭ | উপসংহার (Closing) | চিঠি শেষে ভদ্র ও বিনীতভাবে বক্তব্য শেষ করা হয়। যেমন: “অতএব, বিনীত অনুরোধ…” |
৮ | শুভেচ্ছা বাক্য | যেমন: “আপনার বিশ্বস্ত”, “সুধী”, “বিনীত” ইত্যাদি লেখা হয়। |
৯ | প্রেরকের নাম ও স্বাক্ষর | পত্র লেখকের নাম ও স্বাক্ষর দিয়ে চিঠি শেষ করা হয়। |