কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতনামা কবি। তার কবিতায় ভাষিত হয়েছে সমগ্র দুনিয়ার প্রতারিত মানুষের বেদনা, মানবতা-বিরোধী ঘটনার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ তীব্র-প্রতিবাদ। অন্যদিকে রোমান্টিকের মতো সমাজ জীবনের সুন্দর স্বপ্নকে শেষমুহূর্ত পর্যন্ত রক্ষা করে গেছেন।
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী:
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ২ রা সেপ্টেম্বর বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের । পড়াশোনা কলকাতার রিপন স্কুল ও কলেজে। প্রথমদিকে অনুশীলন সমিতি দলের সঙ্গে ও পরে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম:
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যের জগত – প্রেম, প্রকৃতি, চারপাশের মানুষ, তুচ্ছ ছোট ঘটনা, সমাজ আন্দোলন, পৃথিবীর নানা স্পন্দন – ঘিরে। আর কাব্যকে ঘিরে আছে তার সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা। কেননা তার নিজের জীবনকেও নিয়ন্ত্রিত করেছে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী মনন। এই বিশ্বাসেই রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন, কারাবাস করেছেন। তার ‘রাজা আসে যায়’ কবিতা বাংলায় এক প্রবাদ-বাক্যের স্থান করে নিয়েছে।
এছাড়া ‘উলুখড়ের কবিতা’, ‘লখিন্দর’,’জাতক’,’সভা ভেঙ্গে গেলে’,’রাস্তায় যে হেঁটে যায়’,’মানুষ খেকো বাঘেরা বড় লাফায়’, এই জন্ম জন্মভূমি’,’পৃথিবী ঘুরছে’,’ভিয়েতনাম ভারতবর্ষ’,’শীত বসন্তের গল্প’,’বেঁচে থাকার কবিতা’,আমার কবিতা’,’আর এক আরম্ভের গল্প’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

তার বহু কবিতায় সুর সংযোজন করে পরিবেশন করেছেন- হেমাঙ্গ বিশ্বাস, প্রতুল মুখোপাধ্যায়,অজিত পাণ্ডে, হাবুল দাস, সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিনয় চক্রবর্তী, বিপুল চক্রবর্তী, অনুপ মুখোপাধ্যায়, অসীম ভট্টাচার্য,অমিত রায় প্রমুখ বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পীরা। তার কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা বিপুল যদিও গ্রন্থগুলির বেশির ভাগই ক্ষীণকায়। উল্লেখযোগ্য কাব্য গ্রন্থগুলি হল –
- গ্রহচ্যুত (১৯৪৪)
- রাণুর জন্য (১৯৫১)
- লখিন্দর (১৯৫৬)
- ভিসা অফিসের সামনে (১৯৬৭)
- মহাদেবের দুয়ার (১৯৬৭)
- মানুষের মুখ (১৯৬৯)
- ভিয়েতনাম:ভারতবর্ষ (১৯৭৪)
- আমার যজ্ঞের ঘোড়া (১৯৮৫)

বীরেন্দ্রের কবি জীবন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নানা কারণে স্মরণীয়। তার মধ্যে একটি হল তিনি বিশেষভাবে ছোট পত্রিকা’-র কবি। কোনো বড় পত্রিকায় তার কবিতা ছাপা হয় নি। বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা না পেয়েও তিনি অভাবনীয় জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তিনি রাজনৈতিক কবি, কিন্তু রাজনৈতিক কবির স্টেরিওটাইপ ছিলেন না। তার কবিতা সংক্ষিপ্ত, সংকেতময়, তার অন্তরঙ্গে মন্ত্রের গাঢ়তা ও গীতিকার কবিতার নিবিড় উচ্চারণ।

কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন। ক্যানসারে আক্রান্ত কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ শে জুলাই ৬৫ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন।

আরও পড়ুন: