বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস উপলক্ষে ভাষণ এর নমুনা তৈরি করে দেয়া হলো। ভাষণ নিয়মিত চর্চার বিষয়| এই ভাষনটি আমাদের ভাষা ও শিক্ষা বিষয়ের ভাষন আর্কাইভের একটি রচনা। ‘বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস’ উপলক্ষে এই বেতার ভাষণটি দেখে চর্চা করুণ । এরপর নিজের মতো করে ভাষন তৈরি করুন।
বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস উপলক্ষে ভাষণ
প্রিয় দেশবাসী— সকলের প্রতি আমার আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা।
আজ ৩১ অক্টোবর, বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস। মিতব্যয়িতা মানব চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ। অপরদিকে, অমিতব্যয়িতা দারিদ্র্যের একটি প্রধান লক্ষণ। প্রত্যেক ব্যক্তিরই মিতব্যয়ি হওয়া উচিত। জীবনকে সফল করে তোলার জন্য এই বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রয়োজন বিবেচনা করে সম্পদ ব্যয় করা হলে নিজের যেমন কল্যাণ হয়, তেমনি উদ্বৃত্ত সম্পদ দিয়ে জনগণের বৃহত্তর কল্যাণে নিয়োজিত হওয়া যায়। তাই মিতব্যয়িতা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের জন্য কল্যাণকর। মানুষ সম্পদ অর্জন করে এবং তা সঞ্চয়ও করে। সঞ্চয়ই মানুষের সহজাত প্রবণতা।
মানুষ শুধু সম্পদ সঞ্চয়ই করে না, তা ব্যয়ও করে। বস্তুত অর্থ উপার্জন করা হয় ব্যয়ের জন্য, জীবনের নানাবিধ প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ অর্থ ব্যয় করে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রয়েছে কিনা। আয় ও ব্যয়ের দিকটি বিশেষভাবে বিবেচনায় না আনলে, যেমন অর্থ সংকট দেখা দেবে তেমনি দৈনন্দিন জীবনেও অন্তহীন দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হতে হবে। রাজার ভাণ্ডারও একদিন শেষ হয়ে যেতে পারে শুধু ব্যয়ের পথ খোলা থাকলে। তাই বলা হয় ‘দুই হাতে কুড়াও, এক হাতে ছড়াও’। সুপ্রিয় শ্রোতা ভাই ও বোনেরা, আয় বুঝে ব্যয় কর’— এই বহুল প্রচলিত প্রবাদটি আপনাদের সবারই জানা। মানুষের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায় তার উপার্জিত অর্থ সে কীভাবে ব্যয় করছে, তার মধ্য দিয়ে।
সংসারের দাবি মেটাতে গিয়ে আমরা সবাই কম-বেশি বেহিসেবি হয়ে উঠি। আবার অনেকে আছে যারা খরচ করতে গিয়ে কোনো হিসেবই করে না। এই ধরনের প্রবণতা কখনোই জীবনের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। এ জন্যই কবি বলেছেন : ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের ভাতি / আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি।’ প্রচুর অর্থও অমিতব্যয়ীদের হাতে নষ্ট হয়ে যায় এবং অতি প্রয়োজনের দিনে হাত শূন্য থাকে। অমিতব্যয়িতা ব্যক্তিগত জীবনে দুর্গতি টেনে আনে, এবং সামাজিক ও জাতীয় জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে। তাই সম্পদ ব্যয় করার সময় ব্যয়ের প্রয়োজন ও যৌক্তিকতা বিবেচনা করতে হবে।
কঠোর শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সম্পদ হেলাফেলা করে ব্যয় করা উচিত নয়। সুধী, সম্পদের যথাযোগ্য ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনে সুখ ভোগ করা যায়। জনগণের কল্যাণ করা যায় বলে জীবনে মিতব্যয়িতার বিশেষ প্রয়োজন। মানুষের আয় উপার্জন যে চিরদিন সমান গতিতে হবে এমন আশা করা যায় না। মানুষের জীবনে রয়েছে বাধা-বিপত্তি ও সংঘাত। আমাদের সংসারে দুঃখ আছে, বিপদ আছে, লাঞ্ছনা ও অপমান আছে; এখানে ভয়ের ও বিপদের ভ্রুকুটি আছে, নৈরাশ্যের বেদনা আছে, পরাজয়ের দুঃসহ গ্লানি আছে এবং শোক ও দুঃখের হৃদয়বিদারক আঘাত আছে; এসব জীবনের বৈশিষ্ট্য, জীবনেরই অঙ্গ। হয়ত একসময় আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সঞ্চয় না থাকলে জীবন চালানোই কঠিন হবে।

এ কারণে মানুষের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সঞ্চয় পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। উদ্বৃত্ত অর্থ সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে- যাতে প্রয়োজনের সময় উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যয় করা যায়। মিতব্যয়িতা মানব জীবনের একটি উত্তম গুণ। তাই আজকের মিতব্যয়িতা দিবসে ‘আমরা সবাই সঞ্চয়ী ও মিতব্যয়ী হব; সুন্দর ও সচ্ছল জীবন গড়ে তুলব’- এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। পরিশেষে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজকের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমাকে কিছু বলার সুযোগ করে দিয়েছেন এবং এতক্ষণ যারা অসীম ধৈর্য নিয়ে আমার বক্তব্য শুনেছেন— আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
আরও দেখুন: