বিশ্ব পরিবেশ রক্ষা ও ধরিত্রী সম্মেলন রচনা

পৃথিবীর প্রাণ ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে এর পরিবেশের ওপর। পরিবেশ যদি দূষিত ও বিপর্যস্ত হয়, তবে তা সমগ্র মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই ধরিত্রীর ভারসাম্য রক্ষায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা ও উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ রক্ষায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে নানা আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে “ধরিত্রী সম্মেলন” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বিশ্ব পরিবেশ রক্ষা ও ধরিত্রী সম্মেলন রচনা

 

রচনার উদ্দেশ্য:

আজকের এই রচনাটি আমাদের “প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ দূষণ” বিষয়ক ধারাবাহিকের অন্তর্গত। এটি মূলত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ধারণামূলক রচনা — মুখস্থ করার জন্য নয় বরং পাঠ্য ও চিন্তার সহায়ক হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। শিক্ষার্থীরা এটি থেকে ধারণা গ্রহণ করে নিজের ভাষায় এবং নিজের চিন্তায় রচনা তৈরি করবেন।

 

ভূমিকা :

পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে ২০০২ সালের ২৬ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হয় দশ দিনব্যাপী বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলন। এই সম্মেলনের চূড়ান্ত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ২ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর, যেখানে বিশ্বের ১৯১টি দেশ অংশগ্রহণ করে। এটি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায় পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য একত্রিত হয়।

এর আগে, ১৯৯২ সালের ৩-১৪ জুন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন — United Nations Conference on Environment and Development (UNCED), যা “Earth Summit” বা “ধরিত্রী সম্মেলন” নামেই পরিচিত। সেই সম্মেলনে পরিবেশ ও উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। পরে ২০০২ সালের জোহানেসবার্গ সম্মেলনটিকে আধুনিক বাস্তবতা ও পরিবর্তিত পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে World Summit on Sustainable Development বা বিশ্ব টেকসই উন্নয়ন সম্মেলন নামকরণ করা হয়।

 

পরিবেশ সমস্যার কারণ :

বিগত শতাব্দীগুলোতে পরিবেশ নিয়ে তেমন চিন্তাভাবনা করা হয়নি। কিন্তু এ শতাব্দীর ঘাট দশকে পানি, বায়ু ও সামুদ্রিক দূষণ, ভূমিক্ষয়, বন ধ্বংস ও মরুকরণ ইত্যাদি সমস্যা বিশ্ব পরিবেশের স্থিতিশীলতাকে হুমকির সম্মুখীন করে তোলে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব উ থান্ট ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে পরিবেশগত সমস্যার তিনটি প্রধান কারণ শনাক্ত করেন :

১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি,

২. নগরায়ন ও

৩. নতুন প্রযুক্তির প্রভাব।

পরবর্তী সময়ে কানাডার ভ্যাংকুবারে গ্রিন পিস নামক পরিবেশ সংস্থা সমস্যার কারণসমূহ শনাক্ত করে বিশ্বজুড়ে অভিযান চালায়। এভাবে বহু আন্তর্জাতিক ফোরামের সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সমস্যা ও এর করুণ পরিণতি সম্পর্কে সকলেই সচেতন হয়ে ওঠে।

 

পরিবেশ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংগঠন :

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বায়ু, পানি ও শব্দদূষণ, ভূমিক্ষয় এবং অন্যান্য মাধ্যম। কর্তৃক পরিবেশের দ্রুত ক্ষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৬৮ সালে এ সংক্রান্ত একটি সম্মেলনের গুরুত্ব অনুভব করে। সে অনুযায়ী সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালে United Nations Conference on the Human Environment অনুষ্ঠিত হয়।

এ সম্মেলনে ১১৩টি দেশ অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনে গৃহীত ঘোষণায় বলা হয়, সব রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব রয়েছে যে তাদের কার্যকলাপ অন্যান্য রাষ্ট্রের পরিবেশ নষ্ট করছে না সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া। এ সম্মেলনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৭২ সালে United Nations Environment Programme (UNEP) প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের UNEP পরিবেশ দূষণ রোধে পরিবেশ আইনের প্রতিরোধক চরিত্রের ওপর গুরুত্ব দেয়। ১৯৮৭ সালে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন গ্যাসের নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যে মন্ট্রিল চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।

 

ধরিত্রী সম্মেলন ১৯৯২ :

পরিবেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতার জন্য ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওতে প্রথম ধরিত্রী সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে ১৫৮টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, এনজিও কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য চুক্তি ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের উদগীরণ ও তার মাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। বিশ্ব পরিবেশ সুবিধা গ্রহণ ও এজেন্ডা-২১ এ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বিষয় । তবে তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা যেমন বনধ্বংস ও ভূমিক্ষয় এ সম্মেলনে তেমন গুরুত্ব পায়নি।

 

ধরিত্রী সম্মেলন +৫ :

পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি নিয়ে ২৩-২৭ জুন ১৯৯৭ জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ৭০ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশগ্রহণ করেন। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে ১৯৯২ সালে পরিবেশের ওপর যে ধরিত্রী সম্মেলন হয় সেই সম্মেলনের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি এবং গত পাঁচ বছরে পরিবেশগত উন্নয়ন পর্যালোচনা করাই এ অধিবেশনের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু সম্মেলনটি তেমন গুরুত্ব বহন করেনি।

 

টেকসই উন্নয়ন :

২০০২ সালের সম্মেলনকে টেকসই উন্নয়ন সম্মেলন বলা হয়েছে, যার প্রধান এজেন্ডা পরিবেশ ও মানুষ। জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব কফি আনান টেকসই উন্নয়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘We live on one planet, connected in a delicate, intricate web of ecological, social, economic and cultural relationships that shape our lives. If we are to achieve sustainable development. We will need to display greater responsibility for the ecosystems on which all life depends, for each other as a single human community. অভিসংঘের ব্যাখ্যা মতে, পৃথিবীর টেকসই উন্নয়নের অর্থ হচ্ছে ‘পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত যাতে এর ভারসাম্যের ওপর চাপ না পড়ে।’ এ এমন এক উন্নয়ন ধারা যা মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

 

সম্মেলনের গুরুত্ব :

টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতিসংঘের এ শীর্ষ সম্মেলন বহুবিধ কারণে গুরুত্বপূর্ণ । যথা :

১. জোহানেসবার্গে ধরিত্রী সম্মেলন এমন এক সময়ে হয়েছে যখন পৃথিবী পরিবেশ দূষণে ভারাক্রান্ত । বিশ্বে গত ৫০ বছরে জ্বালানি তেলের ব্যবহার সাত গুণ বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বাতাসে দূষণ ছয় গুণ বেড়েছে। উন্নত দেশগুলো উন্নয়নের নামে পরিবেশকে অনবরত দূষিত করে তুলছে। অথচ এসব উন্নত দেশ পরিবেশ দূষণের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঢালাওভাবে দায়ী করছে।

২. এ সম্মেলনে ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনের অঙ্গীকার ও অর্জন নিয়ে আলোচনা হয় ।

৩. এ সম্মেলনে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য নিয়ে নেতৃবৃন্দ জোরালো ও খোলাখুলি বক্তব্য রাখেন। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দৈনিক মাত্র দুই ডলারে জীবনধারণ করছে। বিশ্বের ২০টি ধনী দেশের গড় আয় ২০টি দরিদ্র দেশের গড় আয়ের ৩৭ গুণ বেশি। উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ডের মাত্র ৭০ লক্ষ মানুষ বছরে যা আয় করে তা সাব-সাহারা অঞ্চলের ৭০ কোটি মানুষও আয় করতে পারছে না। সম্মেলনে এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

৪. সম্মেলনে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

 

জোহানেসবার্গ ঘোষণা :

দশ দিন আলোচনার পর সম্মেলনে অ্যাকশন প্ল্যান নামে একটি ঘোষণাপত্র প্রণীত হয় যা ‘জোহানেসবার্গ ঘোষণা’ নামে পরিচিত। জোহানেসবার্গ সম্মেলনের ৭১ দফা অ্যাকশন    প্ল্যানের মধ্যে প্রাধান্যকৃত বিষয়গুলো হলো : পরিবেশ, কৃষি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ধনী দেশগুলোর দরিদ্র দেশকে সাহায্য প্রদান, কিয়োটো প্রটোকলের বাস্তবায়ন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, জ্বালানি, এইডস, নারী অধিকার ও গরিব দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ঋণ।

 

জোহানেসবার্গ সম্মেলনে জাতিসংঘের এজেন্ডা :

টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ পাঁচটি এজেন্ডা বেছে নেয় । এগুলো হলো : ১. পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ২. জ্বালানি, ৩. কৃষি উৎপাদনশীলতা, ৪. স্বাস্থ্য ও ৫. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ।

 

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ :

জোহানেসবার্গের এ সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকি সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, দারিদ্রোর অকুল পাথারের মধ্যে এক চিলতে প্রাচুর্যের দ্বীপ এমন সমাজ কখনো টিকে থাকতে পারে না। তিনি উন্নত বিশ্বের স্বল্পসংখ্যক মানুষের অতিরিক্ত ভোগ ও আরাম-আয়েশের প্রতি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, এমন একটি উপায় বের করতে হবে যাতে ক্ষমতাশালী ও বিত্তশালীরাই টিকে থাকে—এমন বিভ্রান্ত ব্যবস্থার অবসান ঘটে। সম্মেলনের শেষ দিন সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান বলেন, এ সম্মেলন টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করেছে।

এ সম্মেলন আমাদের দারিদ্র্য হ্রাস এবং পরিবেশ সংরক্ষণের এক মহাসড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ পথ আমাদের আজ এবং আগামীকালের ধনী-দরিদ্র সব শ্রেণীর মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেবে। সম্মেলনের শেষ দিন ৪ সেপ্টেম্বর জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্রনেতাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আমরা ইউরোপের এক ইঞ্চি জমিও দখল করিনি। আপনারা আফ্রিকার জমি দখল করতে আসবেন না। আপনারা আপনাদের জায়গায় থাকুন, আমরা আমাদের জায়গায়। নামিবিয়ার প্রেসিডেন্ট সাম নজুমাও পশ্চিমা বিশ্বকে অতীত ঔপনিবেশিক ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার জানান, তার দেশ আফ্রিকায় দেয়া সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করবে।

সেই সঙ্গে তার সার্বিক সহায়তার পরিমাণ আরো ৫০ শতাংশ বাড়াবে। ব্লেয়ার কিয়োটো চুক্তি অনুমোদনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করলে বিশ্ব এক বিশাল বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে । ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক সহায়তার পরিমাণ আগামী ১০ বছরের তার দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ০.৭ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

জার্মান চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে তার দেশের সহযোগিতার পরিমাণ পাঁচ কোটি ইউরো পর্যন্ত উঠতে পারে বলে জানান। সম্মেলনের শেষ দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল বক্তব্য দিতে ওঠে উপস্থিত প্রধান প্রধান গ্রুপের সদস্যদের প্রতিবাদের সম্মুখীন হন। প্রেসিডেন্ট বুশ সম্মেলনে যোগ দিতে রাজি না হওয়ায় শেষ দিনে তার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল। পাওয়েলের বক্তৃতার সময় সম্মেলনকক্ষে ব্যানার তুলে ধরে মার্কিন নীতির প্রতিবাদে অনেকে ধিক্কার জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জীবনমান উন্নয়নে আরো বিনিয়োগের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। জোহানেসবার্গের সেন্টন সম্মেলন কেন্দ্রে ধরিত্রী সম্মেলনের পানীয় জল সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাবিষয়ক প্ল্যান্যারি সেশনে বক্তৃতাকালে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ বলেন, সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে যৌথ অংশীদারিত্বপূর্ণ পানিপ্রবাহের সমতাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। 

 

সম্মেলনে পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদ:

এবারও ধরিত্রী সম্মেলন পরিবেশবাদীদের চাপের মুখে পড়েছে। অক্সফাম, গ্রিনপিস এবং অন্যান্য সংগঠনের কর্মীরা, ‘ওপেন ইউর আইস’ লেখাসম্বলিত শার্ট পরে সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে সমবেত হয়ে হুইসেল আর সাইরেন বাজিয়ে প্রতিবাদ জানায়।

কানাডার গ্রিনপিসের নির্বাহী পরিচালক পিটার টাবলুস বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো শীর্ষ সম্মেলন ছিনতাই করেছে এটা নিশ্চিত করতে যে, দরিদ্রদের হাতে যাতে অর্থপূর্ণ কোনো সুফল না পৌঁছে। প্রতিবাদকারীরা জানায়, এখন সময় এসেছে একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরির। সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের মুখে পড়েন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল বক্তৃতা দিতে ওঠে। তিনি প্রতিনিধিদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন। কিয়োটো প্রটোকল না মানা, আফ্রিকানদের দুর্দশা—এসব নিয়ে তাকে নাস্তানাবুদ হতে হয়।

 

সম্মেলনে গৃহীত অঙ্গীকারসমূহ :

দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ধরিত্রী সম্মেলনে মোট ৩৭টি অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো :

১. সম্মিলিত শক্তি ও টেকসই উন্নয়নের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

২. মানবিক ঐক্য গঠনের গুরুত্ব অনুধাবন করে সভ্যতা ও জনগণের মধ্যে সংলাপ ও সহযোগিতায় অনুপ্রেরণা জানানো।

৩. জোহানেসবার্গের সম্মেলনে মানুষের সমান অধিকারের ওপর আলোকপাত এবং মৌলিক চাহিদা যেমন – বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, পর্যাপ্ত আশ্রয়, জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দ্রুত উন্নয়নের জন্য লক্ষ্য, সময়সীমা এবং অংশীদারিত্বের বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকে স্বাগত জানানো। একই সময়ে আর্থিক সংস্থানের প্রবৃদ্ধি ঘটাতে একে অন্যের সহযোগী হিসেবে একত্রে কাজ করা। মুক্তবাজারের সুফল পেতে এবং অনুন্নয়নকে বিতাড়িত করতে প্রযুক্তি হস্তান্তর, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা।

৪. টেকসই উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাপী কঠোর হুমকিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া। এসব হুমকি হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য, অপুষ্টি, বৈদেশিক আগ্রাসন, সশস্ত্র বিরোধ, অবৈধ মাদক সমস্যা, সংঘবন্ধ অপরাধ, দুর্নীতি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনা, সন্ত্রাসবাদ, অসহিষ্ণু ও প্রতিক্রিয়াশীল জাতিভেদ, ছোঁয়াচে এবং স্থায়ী রোগ বিশেষত এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া এবং যক্ষ্মা।

৫. মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস অ্যান্ড দি জোহানেসবার্গ প্লান অব ইমপ্লিমেন্টেশন অনুযায়ী সব কার্যক্রমে মেয়েদের সমান অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীমুক্তি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো।

৬. দারিদ্র্য দূরীকরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং মানব জাতির টেকসই উন্নয়নের জন্য যে সংগ্রাম তার জন্য বিশ্বসম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন। একই সঙ্গে মানবিক সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত সংস্থান নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেয়া।

৭. উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আবেদন জানানো ।

৮. আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন পরিচালনার লক্ষ্যে স্থানীয় ভিত্তিতে আঞ্চলিক সংগঠন এবং জোটগুলোর যেমন নিউ পার্টনারশিপ ফর আফ্রিকা’স ডেভেলপমেন্টের (এনইপিএডি) অনিবার্যতাকে সমর্থন প্রদান।

৯. উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ এবং স্বল্পোন্নত দেশের উন্নয়নমূলক প্রয়োজনের প্রতি বিশেষ মনোযোগ অব্যাহত রাখা। 

১০. আইএলওর আইন অনুযায়ী চাকরি সুবিধাদির জন্য আরমুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর ব্যাপারে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা।

 

ধরিত্রী সম্মেলন ও বাংলাদেশ :

এবারের ধরিত্রী সম্মেলনে আলোচিত সব কয়টি বিষয় বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলো হলো পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্ত ও জীববৈচিত্র। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রস্তাবে ২০১৫ সালের মধ্যে দৈনিক মাথাপিছু ৬০ টাকার কম আয় করে এমন দরিদ্রের সংখ্যা বিশ্বের অর্ধেকের নিচে নামানো এবং ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০ কোটি বস্তিবাসী জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই শোচনীয়। দেশের ভূগর্ভস্থ পানি আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত। দেশের বিভিন্ন এলাকার ধান, চাল, তরকারিসহ খাদ্যচক্রে মারাত্মক আর্সেনিক দূষণ দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে একটি জেলার পানিতেই গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশিমাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এর ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঢাকা শহরে বসবাসকারী ২৫ লক্ষ মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। রাজধানীতে ৭০ শতাংশ লোকের সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। এর ফলে ঢাকা শহরে প্রতি বছর ১০ হাজারেরও বেশি শিশু পানিবাহিত রোগে মৃত্যুবরণ করে।

পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে দুই দিন আলোচনা হলেও কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ রিপোর্ট মতে, পরিবেশ দূষণের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে তিন কিলোমিটার পুরু ধোঁয়াশার মেঘ জমেছে। এ মেঘ থেকে করতে পারে এসিড বৃষ্টি যা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে। ছাই, এসিড, দাবানল, অ্যারোসল, অনিয়ন্ত্রিত জ্বালানির ব্যবহার, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও কলকারখানার বিষাক্ত গ্যাস মিলে বাদামী মেঘের আস্তরণ তৈরি হয়।

এ বাদামি মেঘের জন্যই এ এলাকার বৃষ্টিপাত দীর্ঘস্থায়ী ও অনিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এতে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক রোগ হচ্ছে। এশিয়ার বিষাক্ত বাদামি মেঘ সম্মেলনে কোনো গুরুত্ব পায়নি। ধরিত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বন্যা, ভয়াবহ আর্সেনিক দূষণ ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে ধনী দেশসমূহের সাহায্য কামনা করেছেন।

তিনি উন্নত দেশসমূহকে ভর্তুকি দিয়ে নিজ দেশের পণ্য উৎপাদন খরচ কমিয়ে অন্য দেশের রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বন্ধ করার আহ্বান জানান। ধরিত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশ্বের করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ধরিত্রী সম্মেলনে প্রত্যাশা ছিল বহু কিন্তু পেয়েছে সামান্য।

 

জোহানেসবার্গ সম্মেলনের সফলতা ও ব্যর্থতা :

গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০০২ জোহানেসবার্গ শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনের পর এর সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। জাতিসবে মহাসচিব কফি আনান মনে করেন এ ধরনের সম্মেলন প্রত্যাশার বাইরে বিস্ময়কর কিছু দিতে পারার কথা নয়। অনেক এশীয় নেতৃবৃন্দ যেমন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট মেঘবতী সুকর্নপুরী মনে করেন, প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সম্মেলনের ফলাফল তাৎপর্যপূর্ণ, যদিও পর্যাপ্ত না-ও হতে পারে।

 

সম্মেলনের সফলতা:

১. সম্মেলনে বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের ভাগ্নোন্নয়ন তথ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উন্নয়নশীল দেশসমূহ এ বিষয়ে বড় কিছু না পেলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনের আশ্বাস দেয়া হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি, জার্মানির চ্যান্সেলর ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নশীল দেশগুলোর দারিদ্র্য বিমোচন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে যে সমস্ত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ তা থেকে লাভবান হবে বলে আশা করা যায়।

২. যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সবাই কিয়োটো প্রটোকল বাস্তবায়নে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাসহ বহু দেশের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি অনুমোদনে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।

৩. উন্নত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ জোরালো ভাষায় উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অধিক আর্থিক ও বাণিজ্য সহায়তা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ১ জানুয়ারি ২০০৩ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোটা ও শুল্ক বাধা তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশসহ ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশ এ সুবিধা পাবে। এছাড়া তিনি জাতিসংঘে তাদের উন্নয়ন তহবিল দ্বিগুণ করার কথা বলেছেন।

৪. বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে একাত্ম হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান থেকে বঞ্চিত। পানিবাহিত রোগে পৃথিবীর অগণিত মানুষ মারা যায়। পৃথিবীর যেসব মানুষ, বিশেষ করে আফ্রিকায় যারা বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা পাচ্ছে না, তাদের সংখ্যা ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেক কমিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

৫. যুক্তরাজ্য, ইতালিসহ ইউরোপীয় দেশগুলো উন্নয়নশীল বিশ্বের কৃষি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে ভর্তুকি দিতে রাজি হয়।

 ৬. বিশ্বের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । 

 

সম্মেলনের ব্যর্থতা :

অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ করে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শীর্ষ সম্মেলন ব্যর্থ হয়েছে। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর স্বার্থপরতার কারণে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। পরিবেশ ভারসাম্যহীনতার জন্য জীববৈচিত্রে বিপর্যয় ঘটছে। বিলুপ্তি ঘটছে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গের। সম্মেলনে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বর্তমানে একমত পোষণ করেছেন, আবহাওয়ার তাপমাত্রা কম করে হলেও ৩° সে. বাড়বে । এ বৃদ্ধির প্রবণতা উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলেই বেশি হবে।

সিএফসির দৌরাত্ম্যে ওজোন স্তরের ক্ষয় হচ্ছে । বিজ্ঞানীদের অনুমান, গ্রিন হাউস প্রভাবের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার সমুদ্রের স্তর বাড়বে। মেরু অঞ্চলের বরফ কিছু গলে সমুদ্রের স্তরের উচ্চতা ৪ ফুট বাড়বে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশের উপকূলীয় এলাকার বিরাট অংশ তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মারাত্মক হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে লন্ডন, নিউইয়র্ক, সউল, বেইজিং ইত্যাদি শহর । এ বিষয়ে সম্মেলনে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারের পরিমাণ এখনকার ১৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০১০ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ করার কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র ও রুল উৎপাদনকারী দেশগুলোর বিরোধিতার জন্য সে বিষয়ে অনুমোদন মিলেনি।

 

উপসংহার:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বড় রকম উন্নতি সত্ত্বেও প্রকৃতিকে তা দিয়ে বশে আনা সম্ভব হয়নি। উপরন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকৃতিকে বৈরী করে তুলেছে। গ্রিন হাউস ইফেক্ট, পানীয় জলের সংকট, বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য, রায়ুদূষণ, বিভিন্ন ভাইরাস, গাছপালা ও পশুপাখির প্রজাতি বিলুপ্তিসহ বহু কিছু মানুষের জীবনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশের এই মারাত্মক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আয়োজন করা হয়েছিল ধরিত্রী সম্মেলন। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে ধরিত্রী সম্মেলনের মতো কল্যাণধর্মী গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে উন্নত বিশ্ব খোলা মন নিয়ে স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে থেকে এগিয়ে না এলে বিশ্ববাসীর তেমন কোনো উপকার হবে না ।

Leave a Comment