বিশেষণ ও বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

বিশেষণ ও বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা , বিশেষণ হচ্ছে বাক্যে ব্যবহৃত শব্দকে বিশেষিত করে শব্দের অর্থকে বিশদ বা সীমিত করে। বিশেষণ যখন কোনো কিছুর গুণ বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে তখন বিশেষ্য শব্দের অর্থ বিশদ করে। যেমন- নীল আকাশ, ঠান্ডা হাওয়া, চৌকস লোক ইত্যাদি।

বিশেষণ ও বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

বিশেষণ যখন কোনো কিছুর পরিমাণ, সংখ্যা, সম্মন্ধ ইত্যাদি প্রকাশ করে তখন শব্দের অর্থ সীমিত হয়ে যায়। যেমন- একটি বই, প্রথম পুরুস্কার, আমার বাড়ি। বিশেষণের ক্ষেত্রে সংস্কৃত ঋণশব্দে লিঙ্গান্তর দেখা যায়, অন্যত্র নয়। যেমন- সংস্কৃত বিশেষণ : খরস্রোতা নদী, ওজষিনী ভাষা।

 

বিশেষণ ও বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ

প্রধানত তিনটি মানদণ্ডে (ক) কোন শ্রেণির শব্দকে বিশেষিত করে, (খ) বিশেষণ শব্দটি কীভাবে গঠিত হয়েছে এবং (গ) বাক্যে বিশেষণের অবস্থান অনুযায়ী বিশেষণকে শ্রেণিবিভাগ করা হয়।

ক. কোন শ্রেণির শব্দকে বিশেষিত করে সে অনুযারী বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ

এ জাতীয় বিশেষণকে প্রথমত দু ভাগে ভাগ করা হয়। যথা—— (১) নাম-বিশেষণ ও (২) ভাব-বিশেষণ।

১। নাম – বিশেষণ :  যে বিশেষণ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম শব্দকে বিশেষিত করে, তাকে নাম-বিশেষণ বলে।

যথা — বিশেষ্যের বিশেষণ সুস্থ-সবল দেহকে কে না ভালবাসে ?

সর্বনামের বিশেষণ সে রূপবান ও গুণবান।

 

নাম বিশেষণ নিম্নলিখিত কয়েক প্রকারের হতে পারে। যেমন-

Capture80 বিশেষণ ও বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

 

২। ভাব-বিশেষণ :  যে পদ বিশেষণ পদকে বিশেষিত করে তাকে বলে ভাব-বিশেষণ। ভাব বিশেষণ দু প্রকার।

যথা —

ক. ক্রিয়া-বিশেষণের বিশেষণ :  যে পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়া-বিশেষণ

বলে। যথা— গাড়িটা বেশ জোরে চলছে। ধীরে ধীরে বায়ু বয় ক্রিয়া সংঘটনের ভাব বোঝায়।। পরে একবার এসো!ক্রিয়া সংঘটনের কাল বোঝায়।

খ. বাক্যের বিশেষণ : কখনো কখনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষিত করতে পারে, তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলে। যেমন— একটা টকটকে লাল গাড়ি করে লোকটা এসে পৌঁছল।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

খ. বিশেষণ শব্দটি কীভাবে গঠিত হয়েছে অর্থাৎ রূপতত্ত্বের ব্যুৎপত্তি অনুযায়ী বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ

শব্দসংগঠন অনুযায়ী বিশেষণ সাধারণত দুই শ্রেণির সিদ্ধ ও সাধিত। সিদ্ধ বিশেষণ শব্দগুলো ব্যাকরণগতভাবে অবিভাজ্য- ভালো, খারাপ, উঁচু, লাল, মিষ্টি ইত্যাদি। আর কীভাবে গঠিত হয়েছে সে অনুযায়ী সাধিত বিশেষণ কয়েক রকম হতে পারে : ১. ক্রিয়াজাত বিশেষণ, ২. বিশেষ্য ও সর্বনামজাত বিশেষণ।

১. ক্রিয়াজাত বিশেষণ :  এ ধরনের বিশেষণ ধাতুর বা ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় বা ধাতুপ্রত্যয় যোগ করে গঠিত হয়। একে কৃদন্ত বিশেষণও বলা হয়। যেমন : জ্বলন্ত আগুনে লোকটার ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। এ রকম : চলিত ভাষা, পঠিত গ্রন্থ, চলন্ত ট্রেন। -আ, আনো যুক্ত ক্রিয়াবিশেষ্যজাত বিশেষ্যও এরই অন্তর্গত। যেমন : হারানো সম্পত্তি, হাঁটা পথ, পোকায় খাওয়া আম, ইট-বসানো রাস্তা, দেখা ছবি, হাতে কাটা সেমাই। ক্রিয়াজাত বিশেষণকে কয়েকটি উপশ্রেণিতে ভাগ করা চলে :

ক. একপদী ক্রিয়াজাত বিশেষণ:  এতে কেবল একটি পদ থাকে। যেমন ফুটন্ত পানি, নিতন্ত আগুন, পড়ন্ত বেলা।

খ. বহুপদী ক্রিয়াজাত বিশেষণ :  একাধিক কৃদন্ত শব্দ সহযোগে গঠিত হয়ে থাকে। যেমন হারিয়ে যাওয়া সম্পদ, কুড়িয়ে পাওয়া টাকা, উঠে যাওয়া বস্তি।

গ. ক্রিয়াধিজাত বিশেষণ :  ক্রিয়াপদের দ্বিত্ব ঘটিয়ে গঠিত হয়। যেমন যায় যায় অবস্থা, খাই খাই ভাব, কাঁদো কাঁদো চেহারা।

২. বিশেষ্য ও সর্বনামজাত বিশেষণ :  কিছু সর্বনাম শব্দ প্রত্যয়যুক্ত হয়ে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন :

কবেকার কথা, কোথাকার লোক। এছাড়াও স্বীয় (য+ইয়া উদ্যোগ, তদীয় (তৎ+ঈয়) সম্পত্তি ইত্যাদি।

গ. বাক্যে অবস্থান অনুযায়ী বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ

বাক্যে অবস্থান অনুযায়ী বিশেষণকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. সাক্ষাৎ বিশেষণ :  বিশেষিত শব্দের আগে বসে। যেমন— গভীর সমুদ্র, ঘোলা পানি, হলুদ গাড়ি, জ্বলন্ত মশাল।

২. বিধেয় বিশেষণ : বাক্যের বিধের অংশে বসে (বাক্যে বিধেয় বিশেষণের পর আর বিশেষ্য থাকে না।। যেমন-

ছেলেটি শান্ত। এ পুকুরের পানি স্বচ্ছ। মেয়েটি অসুস্থ।

সংখ্যাবাচক বিশেষণ (Numerative adjective) সংখ্যাবাচক বিশেষণ মূলত চার প্রকার : পূর্ণসংখ্যাবাচক, ২. সংখ্যাক্রমবাচক, ৩. তারিখবাচক, ৪. গুণিতক। [সংখ্যাবাচক শব্দ (গানবিধি’ অধ্যায়ে (ভাষা-শিক্ষা-১৫) বিস্তৃত জানতে পারবে।।

বিশেষণ ও বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

 

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment