বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট ও তার প্রতিকার, বিদ্যুৎ সংকট [ Power crisis in Bangladesh and its remedy ] অথবা, বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।
Table of Contents
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট ও তার প্রতিকার রচনার ভূমিকা :
বিদ্যুৎ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বিদ্যুৎ এই পৃথিবীকে আলোকিত করেছে। বিদ্যুৎ ব্যতীত বর্তমান মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফলে জনজীবন হয়ে পড়েছে অত্যন্ত দুরুহ।
বিদ্যুৎ সংকট ও প্রতিক্রিয়া বিদ্যুৎ সংকটের ফলে বিরাট বিস্তীর্ণ অন্ধকার নেমে আসে। ঘরে ঘরে মোমবাতি ও হারিকেন জ্বলে উঠে, পথচারী সন্তর্পণে এগোয় পথ। রেডিও-টেলিভিশন থেমে যায়, পাখা যায় থেমে হাসপাতাল, সংবাদপত্র, অফিস, শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থবির হয়ে পড়ে। কারণ লোডশেডিং। ব্যাহত হয় উৎপাদন, অচল হয়ে পড়ে কল-কারখানা বেড়ে চলে জিনিসপত্রের দাম, দেশে শিল্পের অগ্রগতির থমকে দাঁড়ায়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি স্তব্ধ হয়ে পড়ে শ্রমিক ছাঁটাই, কৃষি উৎপাদন কম, ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে সব থেকে বিপজ্জনক হয় অস্ত্রোপচারে নীত রুগীর জীবন। অর্থাৎ বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে শিল্প, কৃষি, চিকিৎসা, শিক্ষা সর্বক্ষেত্রেই নেমে আসে হতাশা।
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের গুরুত্ব :
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের গুরুত্ব অপরিসীম। বিদ্যুতের অসাধারণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বিচিত্র সমৃদ্ধি লাভ করেছে। পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানুষ বিদ্যুৎকে বিভিন্ন খাতে কাজে লাগাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন অর্থহীন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের ব্যবহার অনস্বীকার্য। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনা করা সম্ভব নয়। আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন- কম্পিউটার, টেলিভিশন, বৈদ্যুতিক পাখা, বাতি, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, ই-মেইল, টেলেক্স, ছাপাখানা, এয়ারকন্ডিশনার প্রভৃতি পরিচালনার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন। এছাড়াও চিকিৎসাক্ষেত্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা, অফিস-আদালত শিল্পক্ষেত্রেও বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
বিদ্যুৎ সংকটের কারণ:
বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট অতান্ত প্রকট। বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে এদেশের জনজীবন বিষিয়ে উঠেছে। আতঙ্কের কথা, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বিদ্যুৎ ঘাটতির অন্যতম সংক্ষেপে আলোচিত হলো। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:
- দেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রয়োজন ৫,২০০ মেগাওয়াট কিন্তু উৎপাদিত হচ্ছে ৩৬০০-৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
- বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার আনুপাতিক হারে যোগান বাড়েনি গত পঁয়ত্রিশ বছরে।
- বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো আমলাতান্ত্রিক কারণে কোন সংস্কার করা হয়নি।
- উৎপাদনে ঘাটতি, সারাদেশে সমভাবে বণ্টন করলে কিছু সংকট কম হত। কিন্তু দুর্নীতি ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না।
- জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচামালের যোগান সম্ভব হচ্ছে না।
- নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির অভাব।
- সরকারের পরনির্ভরশীল মনোভাব।
- অবৈধ সংযোগ, সিস্টেম লস ও কৃচ্ছতার অভাব।
- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও প্রশাসনিক জটিলতা
- বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিকার : বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকটের সবচেয়ে বড় কারণ এখানে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমেই
বেড়ে চলেছে কিন্তু এখানকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার আশানুরূপ বৃদ্ধি ঘটেনি। দীর্ঘদিন নির্মীয়মান বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ অবহেলিত হয়েছে। বর্তমান সরকার অতি সম্প্রতি দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। রাশিয়ার কারিগরি সহায়তায় নির্মীয়মান ২১০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম ঘোড়াশাল ষষ্ঠ ইউনিট কিছুটা বিদ্যুৎ সংকট লাঘব করবে এছাড়া আরো দুটি কোম্পানির সাথে বার্ক্স মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করা হয়েছে।
হরিপুর কেন্দ্রে ২৬০ মেগাওয়াট, বাগাবাড়ি কেন্দ্রে ১০০ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩০০-৪৫০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম ইউনিট অচিরেই শুরু হবে। খুলনায় স্থাপিতবা বার্জ মাউন্টেটড কেন্দ্রটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তাছাড়া বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আরো দুটি কোম্পানি এগিয়ে এসেছে।
কিছুকাল যাবত দেশে বিদ্যুতের হ্রাসপ্রাপ্ত সরবরাহ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ইউনিটগুলোর স্বল্প উৎপাদনের ফলে দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এ সমস্যার মোকাবিলা স্থায়ীভাবে করতে গেলে যেমন করে হোক দেশের নিজস্ব
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু তা বাতারাতি বা দু’চার মাসে করা যাবে না। কিন্তু সংকট মোচনের সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিদ্যুৎ ঘাটতির সমস্যাটি জরুরি অবস্থার মত গুরুত্ব দিয়ে আপামর জনগণকে উদ্যোগী হতে হবে। তাই নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে বিদ্যুৎ ঘাটতি কিছুটা লাঘব হতে পারে:
- চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
- প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা ও পুরনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সংস্কার করা।
- অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও কৃচ্ছতা সাধনের মাধ্যমে অপচয় রোধ করা।
- উৎপাদিত বিদ্যুৎ সুষমভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা করা।
- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা।
- বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচামাল সরবরাহ করা।
- একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকান ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চালু রাখা।
- স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক হোমরাচোমরাদের কবল হতে বিদ্যুৎ সেক্টরকে মুক্ত করা।
উপসংহার :
বিদ্যুৎ আমাদের জীবনে এনেছে গতি, আনন্দ, আলো, এনেছে কষ্ট লাঘব করার শক্তি। বিদ্যুৎ আমাদের দিবারাত্র সহচর। বিদ্যুৎ আধুনিক সভ্যতার ধারক বিদ্যুৎ শক্তি আমাদের দৈনন্দিন ও জাতীয় জীবনের প্রধান উপাদান। আধুনিক জীবন মানেই বিদ্যুৎ।
আরও দেখুন: