বিড়াল প্রবন্ধটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত রম্যব্যঙ্গ রচনা সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ -এর অন্তর্গত। বাংলা সাহিত্যে এক ধরনের হাস্যরসাত্নক রঙ্গব্যঙ্গমূলক রচনার ভিতর দিয়ে তিনি পরিহাসের মাধ্যমে সমকালীন সমাজ, ধর্ম, সভ্যতা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
বিড়াল প্রবন্ধ সহ পুরো পাঠটির সফট কপি ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন:
Table of Contents
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিড়াল প্রবন্ধটির শব্দার্থ ও টীকা:
- চারপায় – টুল বা চৌকি।
- প্রেতবৎ – প্রেতের মতো।
- ওয়েলিংটন – বীর যোদ্ধা।
- ডিউক – ইউরোপীয় সমাজের বনেদি বা অভিজাত ব্যক্তি।
- মার্জার – বিড়াল
- ব্যূহ রচনা – প্রতিরোধ বেষ্টনী তৈরি করা।
- প্রকটিত – তীব্রভাবে প্রকাশিত।
- ষষ্টি – লাঠি।
- দিব্যকর্ণ – ঐশ্বরিকভাবে শ্রবণ করা।
- ঠেঙ্গালাঠি – প্রহার করার লাঠি।
- শিরোমণি – সমাজপতি।
- ন্যায়ালংকার – ন্যায়শাস্ত্রে পন্ডিত।
- ভার্যা – স্ত্রী।
- সতরঞ্চ খেলা – পাশা খেলা। দাবা খেলা।
- লাঙ্গুল – লেজ। পুচ্ছ।
- সোশিয়ালিস্টিক – সমাজতান্ত্রিক।
- নৈয়ায়িক – ন্যায়শাস্ত্রে পন্ডিত ব্যক্তি।
- কস্মিনকালে – কোনো সময়ে।
- মার্জারী মহাশয়া – স্ত্রী বিড়াল।
- জলযোগ – হালকা খাবার। টিফিন।
- সরিষা ভোর – ক্ষুদ্র অর্থে (উপমা)।
- পতিত আত্মা – বিপদগ্রস্ত বা দুর্দশাগ্রস্ত আত্মা।
বেড়াল অডিওবুক:
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিড়াল প্রবন্ধটির জটিল শব্দসমূহের অর্থ ও বানান অনুশীলন:
- শয়নগৃহ – শোয়ার ঘর।
- লোচন – চোখ।
- পাষাণবৎ – পাথরের মতো।
- এক্ষণে – এখন।
- উদরসাৎ – খেয়ে ফেলা।
- অভিপ্রায় – ইচ্ছা।
- সকাতরচিত্তে – কাতর মনে।
- ক্ষুৎপিপাসা – ক্ষুধা ও পিপাসা।
- আহারিত – সংগ্রহ করা হয়েছে এমন।
- মূলীভূত – আসল, গোড়ার।
অনলাইন ক্লাস:
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিড়াল প্রবন্ধটিতে ‘বিড়াল’ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লাইন:
- আমাদের কালো চামড়া দেখিয়া ঘৃণা করিও না।
- খাইতে দাও নহিলে চুরি করিব।
- অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য এ পৃথিবীতে কেহ আসে নাই।”
- সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধন বৃদ্ধি।
- সামাজিক ধনবৃদ্ধি ব্যতীত সমাজের উন্নতি নাই।
- আমি যদি নেপোলিয়ন হইতাম, তবে ওয়াটারলু জিতিতে পারিতাম কি না।
- ওয়েলিংটন হঠাৎ বিড়ালত্ব প্রাপ্ত হইয়া, আমার নিকট আফিং ভিক্ষা করিতে আসিয়াছে।
- আমি তখন ওয়াটারলু মাঠে ব্যূহ-রচনায় ব্যস্ত, অত দেখি নাই।
- কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।
- দুধ মঙ্গলার, দুহিয়াছে প্রসন্ন।
- মনুষ্যকুলে কুলাঙ্গার স্বরূপ পরিচিত হইবে, ইহা বাঞ্ছনীয় নহে।
- অনেক অনুসন্ধানে এক ভগ্ন যষ্টি আবিষ্কৃত করিয়া সগর্বে মার্জারীর প্রতি ধাবমান হইলাম।
- এ সংসারের ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, মৎস্য, মাংস সকলই তোমরা খাইবে, আমরা কিছু পাইব না কেন?
- আমরা খাইলেই তোমরা কেন শাস্ত্রানুসারে ঠেঙ্গা লাঠি লইয়া মারিতে আইস, তাহা আমি বহু অনুসন্ধানে পাইলাম না।
- বিজ্ঞ চতুষ্পদের কাছে শিক্ষালাভ ব্যতীত তোমাদের জ্ঞানোন্নতির উপায়ান্তর দেখি না।
- আমি তোমার ধর্ম সঞ্চয়ের মূলীভূত কারণ।
- আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি?
- অধর্ম চোরের নহে- চোরে যে চুরি করে, সে অধর্ম কৃপণ ধনীর।
- চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী।
- তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ দরিদ্রের ক্ষুধা কেহ বুঝে না।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিড়াল প্রবন্ধটির সারমর্ম:
একদিন কমলাকান্ত নেশায় বুঁদ হয়ে ওয়াটারলু যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন। এমন সময় একটা বিড়াল এসে কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলে। ঘটনাটা বোঝার পর তিনি লাঠি দিয়ে বিড়ালটিকে মারতে উদ্যত হন। তখন কমলাকান্ত ও বিড়ালটির মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথন চলতে থাকে। বিড়ালের “সোশিয়ালিস্টিক’, ‘সুবিচারিক’, ‘সুতার্কিক’ কথা শুনে বিষ্মিত ও যুক্তিতে পর্যুদস্ত কমলাকান্তের মনে পড়ে আত্মরক্ষামূলক শ্লেষাত্মক বাণী- “বিজ্ঞ লোকের মতে এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবেন, তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে”-এবং তিনি সে রকম কৌশলের আশ্রয় নেন।
সাম্যবাদবিমুখ, ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষে একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়েও, বঙ্কিমচন্দ্র একটা বিড়ালের মুখ দিয়ে শাসক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু চোরের অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের কথা কী শ্লেষাত্মক, যুক্তিনিষ্ঠ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন তা এ প্রবন্ধে পাঠ করে উপলদ্ধি করা যায়।
বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিস্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনা যুক্তিগ্রাহ্য সাম্যতাত্তি¡ক সৌকর্যে উচ্চারিত হতে থাকে, “আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি? খাইতে পারলে কে চোর হয়? দেখ, যাঁহারা বড় সাধু, চোরের নামে শিহরিয়া ওঠেন, তাঁহারা অনেকে চোর অপেক্ষাও অধার্মিক।’ মাছের কাটা, পাতের ভাত- যা দিয়ে ইচ্ছে করলেই বিড়ালের ক্ষিধে দূর করা যায়,লোকজন তা না করে সেই উচ্ছিষ্ট খাবার নর্দমায় ফেলে দেয়,—যে ক্ষুধার্ত নয়, তাকেই বেশি করে খাওয়াতে চায়, ক্ষুধাকাতর শ্রীহীনদের প্রতি ফিরেও তাকায় না, এমন ঘোরতর অভিযোগ আনে বিড়ালটি।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিড়াল প্রবন্ধটির পাঠ বিশ্লেষণ :
“ বিশেষ অপরিমিত লোভ ভালো নহে।”
কোন কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা থাকা স্বাভাবিক, তবে অপরিচিত চাওয়া হলো লোভ যা মেনে নেওয়া যায় না। আফিংয়ে বুঁদ কমলাকান্ত যখন ওয়াটারলুর যুদ্ধে জেতার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাময় তখন হঠাৎ ‘মেও’ শব্দ হয়। প্রথমে তিনি ভাবেন ওয়েলিংটন হয়তো বিড়ালরূপে তার কাছে আফিং চাইতে এসেছে। তার মনে পড়ল ডিউককে যথোচিত পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, আর অতিরিক্ত দেওয়া যায় না। কারণ বিশেষ অপরিমিত লোভ ভালো নয়। কাজেই সবকিছুতেই পরিমিতি রক্ষা করা দরকার।
“আমি তখন ওয়াটার্লূর মাঠে ব্যুহ রচনায় ব্যস্ত।”
কমলাকান্ত নেপোলিয়ন হলে কীভাবে ওয়াটারলু যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারতেন আফিমের নেশায় বুঁদ হয় তারই ছক তৈরিতে তিনি ব্যস্ত। তিনি যখন যুদ্ধের মাঠে ব্যূহ রচনা করছেন, বিড়াল তখন তার জন্য রেখে যাওয়া দুধ পান করে নিঃশেষ করছে। অন্যদিকে মনোযোগ থাকায় কমলাকান্ত তা টের পাননি।
“কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।”
নিজের পরিশ্রমের ফসল অন্য কেউ বিনা পরিশ্রমে আত্মসাৎ করলে যে অবস্থা দাঁড়ায়, কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ বিড়াল এসে খেয়ে ফেলায় তারও তখন সেই অবস্থা। প্রসন্নকে দিয়ে অনেক কষ্টে তিনি দুধ আনিয়েছিলেন। অথচ বিড়াল তা নিঃশেষ করেছে। এখন বিড়াল তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসছে আর হয়তো ভাবছে, কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।
“সে দুগ্ধে আমারও যে অধিকার, বিড়ালেরও তাই।”
কমলাকান্তের মাথায় হঠাৎ সাম্যচিন্তা ঢুকেছে। তিনি হঠাৎ তার আর বিড়ালের সম অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। কারণ দুধ কমলাকান্তের বাবার নয়। দুধ মঙ্গলা গাভীর, দোহন করেছে প্রসন্ন গোয়ালিনী। কাজেই সেই দুধে কমলাকান্তেরও যে অধিকার, বিড়ালেরও সেই অধিকার।
“অতএব পুরুষের ন্যায় আচরণ করাই বিধেয়।”
বাংলায় একটা প্রথা প্রচলিত আছে যে, বিড়াল দুধ খেয়ে গেল তাকে তাড়া করে মারতে হয়। সেই প্রথা না মানলে কমলাকান্ত মানুষের কাছে পরিচিত হবেন। কাজেই বিড়ালকে তাড়া করে মেরে পুরুষের মতো আচরণ করাকেই তিনি সঙ্গত মনে করলেন।
“অতএব তুমি সেই পরম ধর্মের ফলভাগী।”
মানুষের পরম ধর্ম হলো পরোপকার করা। কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে বিড়ালের ক্ষুধা মিটেছে, সে উপকৃত হয়েছে। আর পরোপকার কাজটি করেছে কমলাকান্ত। এই যুক্তিতে কমলাকান্ত সেই পরম ধর্মের ফলভাগী।
“চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী।”
চোর যেমন দোষী, কৃপণ ধনী তেমনই দোষী। কারণ দরিদ্র সাধ করে চুরি করে না। গরিব যখন খাদ্য বস্ত জোগাড় করতে পারে না, তখন সে চুরি করে। অথচ ধনীরা গরিব বা দুস্থদের কোন রকম সাহায্য করে না, বরং বিরক্তিতে মুখ ঘুরিয়ে থাকে। এদিক থেকে চুরির দায়ে চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী নানা কারণে তার চেয়ে শত গুণে দোষী।
“ যে খাইতে বলিলে বিরক্ত হয়, তাহার জন্য ভোজের আয়োজন কর- আর যে ক্ষুধার জ্বালায় বিনা আহŸানেই তোমার অন্ন খাইয়া ফেলে, চোর বলিয়া তাহার দন্ড কর – ছি! ছি!”
নিমন্ত্রণ করলে যে বিরক্ত হয় তার জন্য ভোজের আয়োজন করা হয় এবং তাকেই খাওয়ার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়। অথচ যে ক্ষুধার্ত তাকে নিমন্ত্রণ করা হয় না। আবার সে যদি বিনা নিমন্ত্রণেই ক্ষুধার জ্বালায় খাদ্য খেয়ে ফেলে তাহলে তাকে চোর বলে শাস্তি দেওয়া হয়। এটা উচিত নয়।
“খাইতে দাও- নহিলে চুরি করিব।”
বেঁচে থাকার জন্য মানুষের প্রধান ও সর্বপ্রথম চাহিদা হলো খাদ্য। স্বাভাবিক উপায়ে খাদ্য জোগাড় করতে না পারলে মানুষকে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে বিড়াল যেমন কমলাকান্তের জন্য রেখে দেওয়া দুধ চুরি করে খায়, মানুষও তেমনি উপায়ন্তর না দেখে চুরি করে। তাছাড়া এ পৃথিবীর মাছ মাংসে সবারই অধিকার আছে। তার বত্যয় ঘটলে দাবি উঠতেই পারে. খাইতে দাও- নহিল চুরি করিব।
“যে বিচারক চোরকে সাজা দিবেন, তিনি আগে তিন দিবস উপবাস করিবেন।”
সৎ উপায়ে যখন কেউ অন্নসংস্থান করতে ব্যর্থ হয়, তখনই সে অসুদপায় অবলম্বন করে। যার জন্য তাকে অপরাধী ভাবা হয়। অথচ বিচারকরা তার কার্যকারণ অনুধাবন করেন না। কাজেই যে বিচারক চোরকে সাজা দেবেন, তিনি আগে তিন দিন না খেয়ে থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণাটা উপলদ্ধি করবেন। তারপর চোরের বিচার করবেন।
“বিজ্ঞ লোকের মত এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবে, তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে।”
পরাজিত হয়েও পরাজয় না মানার বিকল্প অভিনয় করতে হবে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে, সে পরাজিত হয়েছে-এ হলো বিজ্ঞ লোকের অভিমত। প্রসঙ্গত, কমলাকান্ত দরিদ্র বিড়ালের যুুক্তিতে পরাজিত হয়ে গম্ভীর ভাব ধারণ করে উপদেশ প্রদানে মনোযোগ দেন। বিড়ালের কথাগুলো নীতিবিরূদ্ধ, এতে পাপ হবে। আর তা থেকে মুক্তির জন্য ধর্মাচরণে মন নিতে হবে। বিড়াল এসব উপদেশ ক্ষুধানুসারে বিবেচনা করবে বলে জানিয়ে দেয়।
“একটা পতিত আত্মাকে অন্ধকার হইতে আলোকে আনিয়াছি, ভাবিয়া কমলাকান্তের বড় আনন্দ হইল।”
পতিত আত্মা আসলে পতিত নয়- সে সচেতন ও বিদ্রোহী। আর তা অন্ধকারেও অবস্থান করে না, সে আলোকিত। তবে তথাকথিত ধনীরা দরিদ্র দুস্থদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করে পণ্ডিত হিসেবে বিবেচনা করে। পতিত আত্মা ক্ষুধার্ত থাকলে নীতিজ্ঞান আর ধর্মজ্ঞান মানে না। কিন্তু বিড়াল এটাকে ক্ষুধার্তের অধিকার বলে যুক্তি দেখাও। কমলাকান্তও নানা যুক্তি দিয়ে, উপদেশ দিয়ে এসব নীতিবিরুদ্ধ কাজ থেকে বিড়ালকে বিরত থাকার সম্মতি আদায় করতে পেরেছেন। তাই এটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনতে পেরেছেন মনে করে কমলাকান্তের বড় আনন্দ হলো।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিড়াল প্রবন্ধটির মূল বক্তব্য:
‘বিড়াল’ এক ধরনের হাস্যরসাত্মক নকশা জাতীয রচনা। আলোচ্য রচনায় গল্প-উপন্যাসের মতো বিস্তৃত ও গভীর তাৎপর্যময় ছবি না একে লেখক যখন তার খসড়া একটি ছবি আঁকেন অল্প কিছু রেখায়, তখন তাকে বলা হয় নকশা। হাস্যরসের মাধ্যমে বিড়াল নামক এক প্রাণীর মুখ দিয়ে সমাজের দরিদ্র, ক্ষুধার্ত মানুষের অধিকারের মর্ম বক্তব্য লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। এ সব দিক থেকে ‘বিড়াল’ নকশা জাতীয় রচনার বৈশিষ্ট্য বহন করছে। এ রচনার প্রথমাংশ নিখাদ হাস্যরসাত্মক, পরের অংশ গূঢ়ার্থে সন্নিহিত।
সাহিত্য সম্রাট উপাধিতে ভূষিত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। প্রথম সার্থক উপন্যাসের স্রষ্টা হিসেবে তিনি সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। উপন্যাসের মতো তিনি প্রবন্ধ সাহিত্যেও সসফলতার পরিচয় রেখেছেন। তাঁর রচিত হাস্যরসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনাগুলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন। তিনি ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, ভাষা ও সমাজ বিষয়ক বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। ‘সাম্য’, ‘কৃষ্ণচরিত্র’, ‘লোকরহস্য’, ‘বিজ্ঞানরহস্য’, ‘বিবিধ প্রবন্ধ’ ইত্যাদি তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ। ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ বঙ্কিমের বিড়াল-প্রবন্ধ এক বিশিষ্ট রচনা।
বিড়াল প্রবন্ধ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত রম্যব্যঙ্গ রচনা সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ -এর অন্তর্গত। বাংলা সাহিত্যে এক ধরনের হাস্যরসাত্নক রঙ্গব্যঙ্গমূলক রচনার ভিতর দিয়ে তিনি পরিহাসের মাধ্যমে সমকালীন সমাজ, ধর্ম, সভ্যতা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতার তীব্র সমালোচনা করেছেন। ‘বিড়াল’ নকশা জাতীয় ব্যঙ্গ রচনা। এতে লেখক একটি ক্ষুধার্ত বিড়াল আফিংখোর কমলাকান্তের জন্য রেখে দেওয়া দুধ চুরি করে খেয়ে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য এবং সমাজের নানা অসংগতিকে ইঙ্গিত করেছেন। দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার, ধনীর ধনে গরিবের অধিকার, ক্ষুধার্ত অবস্থায় মানুষের আচরণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক উপস্থাপন করে লেখক সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন।
বিড়ালকে প্রহার করার জন্য উদ্যত হয়ে কমলাকান্ত নিজেই দুর্বল ক্ষুধার্ত বিড়ালের পক্ষ অবলম্বন করে যুক্তিতর্ক দাঁড় করেছেন। খাবার মাত্রেই ক্ষুধার্তের অধিকার আছে। তা ধনীর কি দরিদ্রের সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। যদি ধনীর হয় তবে তা স্বেচ্ছায় না দিলে ক্ষুধার্ত তা যে কোনো উপায়ে সংগ্রহ করবে, প্রয়োজনে চুরি করে খাবে, তাতে বিশেষ কোনো দোষ নেই। বিড়ালের এই যুক্তিকে শেষ পর্যন্ত কমলাকান্ত অস্বীকার করতে পারেননি।
বিড়াল তাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয় যে, এ সংসারে ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, মৎস্য, মাংস সবকিছুতেই তাদের অধিকার আছে। এ কথায় পৃথিবীজুড়ে যত ধন-সম্পদ আছে তাতে দরিদ্র মানুষের অধিকারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিড়াল সাধ করে চোর হয়নি। তার জিজ্ঞাসা, খেতে পেলে কে চোর হয় ? বড় বড় সাধু চোর অপেক্ষা যে অধার্মিক সেই বিষয়ে বিড়াল তার যুক্তি তুলে ধরেছে। বিড়ালের স্পষ্ট উচ্চারণ- অধর্ম চোরের নয়, চোরে যে চুরি করে সে অধর্ম কৃপণ ধনীর। কমলাকান্ত নিজেই নিজের মনে বিড়ালের পক্ষে এবং নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। বিড়ালের কথাগুলো সোশিয়ালিস্টিক, সমাজ বিশৃঙ্খলার মূল। এভাবে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রধান অন্তরায়গুলো আমাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন সচেতন শিল্পী। তিনি সমাজে নিম্নশ্রেণির দরিদ্র উপর উচ্চশ্রেণির অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার ও দোষ চাপানোর বিষয়টিকে ব্যঙ্গ করেছেন ‘বিড়াল’ রচনায়। এই রচনায় বিড়াল নিম্নশ্রেণির দরিদ্র ভুখা মানুষের প্রতিনিধি আর কমলাকান্ত যতক্ষণ পর্যন্ত ধনীর ধনবৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দেখান ততক্ষণ পর্যন্ত মনুষ্য সমাজের অন্যায়কারী ধনী চরিত্রের প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত।
‘বিড়াল’ রচনায় লেখক ‘কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই’, ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া’ প্রভূতি প্রবাদ বাক্য ব্যবহার করে শ্রমিকরা কীভাবে ফল ভোগ থেকে বঞ্চিত হয় সেই দিকে ইঙ্গিত করেছেন। মূলত জগৎসংসারে ধর্মের দোহাই দিয়ে, অন্যায়-প্রতিকারের বিধান দিয়ে মানুষের কল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। জগতের মানুষের কল্যাণ করতে হলে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের অবসান করে মানবকল্যাণে আত্মনিবেদন করতে হবে। এই বিশেষ আবেদনই ‘বিড়াল’ রচনায় হাস্যরসের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
‘বিড়াল’ প্রবন্ধে দুটি চরিত্র রয়েছে। বিড়াল ও কমলাকান্ত। বিড়াল এ রচনার প্রধান ও প্রতীকী চরিত্র। সমাজের নিম্নবিত্ত, অসহায়, বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত, মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে বিড়ালকে। এর কথা ও যুক্তিতে পর্যুদস্ত হয়েছে কমলাকান্ত। কমলাকান্ত আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকলেও সমাজ সচেতন ও উদার মানুষ। দয়ালু ও সৎ মানুসিকতার অধিকারী এ চরিত্রটি ‘বিড়াল’ রচনায় সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেছে।
উপর্যুক্ত বিষয়ের আলোচনায় দেখা যায় যে, ‘বিড়াল’ রচনার মাধ্যমে লেখক সমাজের প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তি ও অবহেলিত দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে পার্থক্য ফুটিয়ে তুলেছেন অত্যন্ত সুচারুভাবে। সেই সঙ্গে বঞ্চিতজনের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক সাম্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
বিড়াল প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কী
একদিন কমলাকান্ত নেশায় বুঁদ হয়ে ওয়াটারলু যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন। এমন সময় একটা বিড়াল এসে কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলে। ঘটনাটা বোঝার পর তিনি লাঠি দিয়ে বিড়ালটিকে মারতে উদ্যত হন। তখন কমলাকান্ত ও বিড়ালটির মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথন চলতে থাকে। বিড়ালের “সোশিয়ালিস্টিক’, ‘সুবিচারিক’, ‘সুতার্কিক’ কথা শুনে বিষ্মিত ও যুক্তিতে পর্যুদস্ত কমলাকান্তের মনে পড়ে আত্মরক্ষামূলক শ্লেষাত্মক বাণী- “বিজ্ঞ লোকের মতে এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবেন, তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে”-এবং তিনি সে রকম কৌশলের আশ্রয় নেন। সাম্যবাদবিমুখ, ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষে একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়েও, বঙ্কিমচন্দ্র একটা বিড়ালের মুখ দিয়ে শাসক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু চোরের অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের কথা কী শ্লেষাত্মক, যুক্তিনিষ্ঠ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন তা এ প্রবন্ধে পাঠ করে উপলদ্ধি করা যায়।
বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিস্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনা যুক্তিগ্রাহ্য সাম্যতাত্তি¡ক সৌকর্যে উচ্চারিত হতে থাকে, “আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি? খাইতে পারলে কে চোর হয়? দেখ, যাঁহারা বড় সাধু, চোরের নামে শিহরিয়া ওঠেন, তাঁহারা অনেকে চোর অপেক্ষাও অধার্মিক।’ মাছের কাটা, পাতের ভাত- যা দিয়ে ইচ্ছে করলেই বিড়ালের ক্ষিধে দূর করা যায়,লোকজন তা না করে সেই উচ্ছিষ্ট খাবার নর্দমায় ফেলে দেয়,—যে ক্ষুধার্ত নয়, তাকেই বেশি করে খাওয়াতে চায়, ক্ষুধাকাতর শ্রীহীনদের প্রতি ফিরেও তাকায় না, এমন ঘোরতর অভিযোগ আনে বিড়ালটি।
বিড়াল প্রবন্ধ MCQ
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যচর্চার শুরু হয় কীসের মাধ্যমে?
A. উপন্যাস
B. প্রবন্ধ
C. কবিতা
D. ছােটগল্প
উত্তর : C. কবিতা
মার্জারের মতে, তিনদিন উপবাস করলে বিচারক কী করবেন?
A. ন্যায় বিচার করবেন
B. চুরি করে খেতে চাইবেন
C. চোরের কষ্ট বুঝবেন
D. চোরের প্রতি সদয় হবেন
উত্তর : B. চুরি করে খেতে চাইবেন
‘বিড়াল” রচনায় বিড়ালের চামড়ার রং কেমন?
A. বাদামী
B. কালাে
C. সাদা
D. মিশ্র
উত্তর : B. কালাে
কমলাকান্ত নেশার ঘােরে নিজেকে কী ভেবেছিলেন?
A. মার্জার
B. ওয়েলিংটন।
C. নেপােলিয়ন
D. ডিউক
উত্তর : C. নেপােলিয়ন
অপরিমিত লােভ ভালাে নহে-উক্তিটি কার?
A. ডিউকের
B. প্রসন্নের
C. মার্জার
D. কমলাকান্তের
উত্তর : C. মার্জার
কমলাকান্ত রচনাটি কয় অংশে বিভক্ত?
A. ১ অংশ
B. ৩ অংশ
C. ২ অংশ
D. 8 অংশ
উত্তর : B. ৩ অংশ
ওয়াটারলু যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়?
A. ১৮১৩
B. ১৮১৫
C. ১৮১৭
D. ১৮১৯
উত্তর : B. ১৮১৫
নেপােলিয়ন বােনাপার্ট কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
A. ১৭৬৯
B. ১৭৭০
C. ১৭৭১
D. ১৮১৯
উত্তর : A. ১৭৬৯
চক্ষু চাহিয়া ভালাে করিয়া দেখিলাম যে, ওয়েলিংটন নহে। একটি ক্ষুদ্র মার্জার। এখানে মার্জার আসলে কী?
A. ইঁদুর
B. বিড়াল
C. টিকটিকি
D. পতঙ্গবিশেষ
উত্তর : B. বিড়াল
দুধ খেয়ে ফেলার পর কমলাকান্ত বিড়ালের ওপর রাগ করতে পারেনি কেন?
A. দুধের ওপর বিড়ালের অধিকার আছে বলে
B. বিড়ালটি জ্ঞান বুদ্ধিহীন প্রাণী বলে
C. দুধের মালিক কমলাকান্ত নিজে নয় বলে
D. কমলাকান্ত শান্ত, ন্দ্র, নমনীয় মানুষ বলে
উত্তর : A. দুধের ওপর বিড়ালের অধিকার আছে বলে
বিড়াল প্রবন্ধ প্রশ্ন উত্তর
বিড়াল কি ধরনের রচনা
উত্তর : বিড়াল রসাত্মক ও ব্যঙ্গাত্মক ধরনের রচনা ।
বিড়াল প্রবন্ধের মূল বক্তব্য?
উত্তর: ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করা ।
বিড়াল গল্পের লেখকের নাম কী?
উত্তর: বিড়াল গল্পের লেখকের নাম হচ্ছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
বিড়াল গল্পে দেয়ালের উপর ছায়া কিসের মতোন নাচতেছিল?
উত্তর: বিড়াল গল্পে দেয়ালের উপর ছায়া প্রেতের মতোন নাচতেছিল।
বিড়াল গল্পে কোন যুদ্ধে ইঙ্গিত রয়েছে?
উত্তর: বিড়াল গল্পে ওয়াটারলু’র যুদ্ধের ইঙ্গিত রয়েছে।
বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস কোনটি?
উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস হচ্ছে ‘দুর্গেশনন্দিনী’।
বিড়াল গল্পে দুধ খাওয়ার পরে ‘মেও’ শব্দের মাধ্যমে বিড়ালের কোন ধরনের অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: বিড়াল গল্পে দুধ খাওয়ার পরে ‘মেও’ শব্দের মাধ্যমে বিড়ালের ‘মন বোঝার অভিপ্রায়’ প্রকাশ পেয়েছে।
বিড়াল গল্পে, দুধ খেয়ে ফেললেও কমলাকান্ত কেন মার্জারের উপর রাগ করতে পারেনি?
উত্তর: বিড়াল গল্পে, দুধ খেয়ে ফেললেও কমলাকান্ত মার্জারের উপর রাগ করতে পারেনি কারণ সেখানে মার্জার বা বিড়ালের অধিকারের প্রশ্ন রয়েছে।
কমলাকান্ত বিড়াল লাঠি তুলে মারতে গেলে বিড়াল তুলল, বিড়ালের এরূপ আচরণে কি প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: কমলাকান্ত বিড়াল লাঠি তুলে মারতে গেলে বিড়াল তুলল, বিড়ালের এরূপ আচরণে বিড়ালের ‘নির্বিকারত্ব’ প্রকাশ পেয়েছে।
বিড়াল গল্পে মার্জার দুধ খেয়ে ফেললেও কমলাকান্ত কেন দেখতে পায়নি?
উত্তর: বিড়াল গল্পে মার্জার দুধ খেয়ে ফেললেও কমলাকান্ত দেখতে পায়নি। কারণ তিনি তখন ‘ওয়াটারলুর মাঠে বূহ্য রচনায়’ ব্যস্ত ছিলেন।
বিড়াল প্রবন্ধে মেও শব্দটি কতবার ব্যবহৃত হয়েছে
উত্তর : ১৩ বার
কমলাকান্তের দপ্তর প্রশ্ন উত্তর
বিড়াল প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের অংশ?
উত্তর: বিড়াল প্রবন্ধটি হচ্ছে ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ গ্রন্থের অংশ।
কমলাকান্তের দপ্তর গ্রন্থটি কী ধরনের রচনা?
উত্তর: কমলাকান্তের দপ্তর গ্রন্থটি হচ্ছে রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী একটি রচনা।
কমলাকান্ত কি হাতে ঝিমাইতেছিল?
উত্তর: কমলাকান্ত হুঁকা হাতে ঝিমাইতেছিল
কমলাকান্ত কোথায় বসে ঝিমাইতেছিল?
উত্তর: কমলাকান্ত চারপায়ীর ওপর বসে ঝিমাইতেছিল।
কমলাকান্ত কেন ঝিমাইতেছিল?
উত্তর: কমলাকান্ত নেপোলিয়ানের চিন্তায় পড়াতে ঝিমাইতেছিল।
কমলাকান্ত কোথায় ঝিমাইতেছিল?
উত্তর: কমলাকান্ত শয়নগৃহে ঝিমাইতেছিল।
হুঁকা হাতে কমলাকান্ত কাকে ডিউক ভাবছিলেন?
উত্তর: হুঁকা হাতে কমলাকান্ত ‘মার্জারকে’ ডিউক ভাবছিলেন।
কমলাকান্ত ওয়াটালুর যুদ্ধ নিয়ে কেন ভাবছিলেন?
উত্তর: কমলাকান্ত ‘নেশার ঘোরে ছিলেন বলে’ ওয়াটারলুর যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন।
কমলাকান্তের জবানবন্দী’ প্রথম কোন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ফাল্গুন সংখ্যায় ।
বিড়াল গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
বাবা, আমি ভুখা-ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন। তেড়িয়া হইয়া হাকিল মােল্লা ভালা হলাে দেখি লেঠা, ভুখা আছাে মর গাে ভাগাড় গিয়ে । নামাজ পড়িস বেটা? ভুখারি কহিল, ‘না বাবা’ মােল্লা হাকিল, তা হলে শালা, সােজা পথ দেখ । গােস্ত, রুটি দিয়া মসজিদে দিল তালা।
কার কথাগুলাে ভারি সােশিয়ালিস্টিক?
উত্তর: বিড়ালের কথাগুলাে ভারি সােশিয়ালিস্টিক।
‘তাহাদের রূপের ছটা দেখিয়ে অনেক মার্জার কবি হইয়া পড়ে।’ কেন?
উত্তর: বিত্তবানদের আশীর্বাদপুষ্ট মার্জারীর রূপের ছটা দেখে অনেক মার্জার কবি হয়ে পড়ে।
সমাজে বিত্তহীন শ্রেণি প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হলেও ধনিক শ্রেণি তাদের দিকে দৃষ্টি দেয় না। কদাচিৎ এই শ্রেণির কারাে দিকে যদি ধনীদের অনুকম্পার দৃষ্টি পড়ে তবে সে শ্রেণিস্বার্থ ভুলে আপসের মাধ্যমে নাদুসনুদুস হয়ে ওঠে। তখন তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সগােত্রের অনেকেই তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার স্তুতি করে।
উদ্দীপকের মােল্লার সাথে ‘বিড়াল’ রচনারকমলাকান্তের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরাে।
উত্তর: উদ্দীপকের মােল্লার মুসাফিরের প্রতি প্রদর্শিত মনােভাব ও আচরণের সাথে ‘বিড়াল’ রচনার কমলাকান্তের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
‘বিড়াল’ রচনায় কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ বিড়ালটি খেয়ে ফেলে। এতে কমলাকান্ত লাঠি দিয়ে বিড়ালটিকে মারতে উদ্যত হয়। তখন বিড়ালটি অধিকার সচেতন হয়ে যে বক্তব্য দেয় তা সমাজের শােষিত ও অধিকার বঞ্চিত শ্রেণিরই বক্তব্য এবং কমলাকান্তের সে বক্তব্যে দ্বিমত করার সুযােগ থাকে না।
উদ্দীপকের মােল্লা অভুক্ত মুসাফিরকে খাবার না দিয়ে বঞ্চিত করে। তার মাঝে স্বার্থপরতা ও অন্যের প্রতি দয়ার অভাব লক্ষণীয়। মােল্লা মসজিদে যে গােস্ত বা দান-সদকা পায় গরিবের তাতে অধিকার রয়েছে। কিন্তু সাত দিন না খাওয়া মুসাফির মােল্লার কাছে খাবার চাইলে সে তাকে তাড়িয়ে দেয় এবং মসজিদে তালা দিয়ে গােস্ত-রুটি নিয়ে চলে যায়। মােল্লার এমন আচরণ ‘বিড়াল’ রচনার কমলাকান্তের বিপরীত। কমলাকান্তের দুধ খাওয়ার পর সে বিড়ালকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় না। লাঠি নিয়ে তেড়ে এলেও বিড়ালের যুক্তিপূর্ণ কথা সে শােনে এবং অনুধাবন করে। উদ্দীপকের মােল্লার মতাে কমলাকান্ত বিড়ালের খাবারের অধিকার কেড়ে নেয় না এবং ঘরের দরজায় তালা দিয়ে চলে যায় না।
উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ রচনার সমাজচিত্রের যে দিক আলােচিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর: উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ রচনার সমাজচিত্রে শােষিত-অধিকারবতি শ্রেণির মর্মবেদনার দিকটি উদ্ভাসিত হয়েছে।
‘বিড়াল’ রচনায় শােষিত, নির্যাতিত ও অধিকারবঞ্চিত সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। বিড়ালের মধ্য দিয়ে সে অধিকারহারা মানুষের মনের বেদনা প্রকাশিত হয়েছে। গল্পে বিড়ালটি বতি মানুষের সার্থক প্রতিনিধি।
উদ্দীপকের সমাজচিত্রে উদ্ভাসিত হয়েছে দরিদ্র ও বঞ্চিত শ্রেণির বঞ্চনার চিত্র। সেখানে অভুক্ত মুসাফির সাত দিন ধরে না খেয়ে মসজিদের মােল্লার দ্বারস্থ হয়। কিন্তু মােল্লা যেন সমাজের শােষক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে। গােস্ত-রুটি থাকা সত্ত্বেও সে মসজিদে তালা দিয়ে চলে যায়। ফলে অভুক্ত মুসাফির তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
‘বিড়াল’ রচনায় কমলাকান্ত বিড়ালটিকে দুধ খাওয়ার অপরাধে মারতে উদ্যত হয়। অথচ এই বিড়ালেরও খাবার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। অন্য প্রাণীর মতাে সেও এই সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার রাখে। কিন্তু তার মতাে তুচ্ছ প্রাণীর প্রতি উচ্চ শ্রেণির দারুণ অবহেলা। সমাজের এই উচ্চ শ্রেণি বা ধনবান ব্যক্তিরা অসহায় শ্রেণির প্রতি লক্ষ রাখে না বলে সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বিড়ালের বক্তব্যে সমাজের এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে। ‘বিড়াল’ রচনার এই সমাজচিত্র উদ্দীপকেও উদ্ভাসিত হয়েছে। সেখানেও অভুক্ত মুসাফিরকে তার ন্যায্য অধিকার না দিয়ে মােল্লা মসজিদে তালা দেয়।
সমাজতন্ত্রের মূল লক্ষ্য হলাে শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থা গড়ার মাধ্যমে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা। সাম্যবাদী রাষ্ট্রে নাগরিকদের শ্রমের মাধ্যমে উৎপন্ন সম্পদ রাষ্ট্রের অধিকারে আসবে। গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে সম্পদ কুক্ষিগত থাকবে না। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা হলাে সাম্যবাদী রাষ্ট্রে পৌছানাের প্রথম ধাপ। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। প্রত্যেক মানুষ বাঁচার সমান অধিকার পায়। তাই শ্রমিক শ্রেণি আমরণ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত।
বঙ্কিমচন্দ্রের পেশায় কী ছিলেন?
উত্তর:- বঙ্কিমচন্দ্র পেশায় ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।
পরােপকারই পরম ধর্ম’– কথাটি বুঝিয়ে লেখাে।
উত্তর:- পরােপকারই পরম ধর্ম’ মানে হলাে একে অপরের উপকারের মধ্য দিয়েই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘বিড়াল’ রচনায় দেখা যায়, নিজের জন্যে রাখা দুধ বিড়াল পান করলে কমলাকান্ত বিড়ালকে মারতে গিয়েও পুনরায় শয্যায় ফিরে আসে। তখন বিড়াল কমলাকান্তকে বলে, “এই দুগ্ধটুকু পান করিয়া আমার পরম উপকার হইয়াছে। তােমার আহরিত দুৰ্থে এই পরােপকার সিদ্ধ হলাে— অতএব তুমি সেই পরম ধর্মের ফলভাগী। কারণ বিড়ালের মতে, পরােপকারই পরম ধর্ম। বস্তুত প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে মানবতাবাদী লেখকের নৈতিক দর্শন প্রকাশ পেয়েছে। এর দ্বারা তিনি বােঝাতে চেয়েছেন, অন্যের উপকারই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
প্রদত্ত উদ্দীপকের সঙ্গে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের চেতনাগত সাদৃশ্য নিরূপণ করাে।
উত্তর:- প্রদত্ত উদ্দীপকের সঙ্গে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের সাম্যবাদী চেতনার সাদৃশ্য রয়েছে।
‘বিড়াল’ প্রবন্ধের লেখক একটা বিড়ালের মুখ দিয়ে শােষক-শােষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু-চোরের অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের কথা বলে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। বিড়ালের মুখ দিয়ে শ্লেষাত্মক, যুক্তিনিষ্ঠ ও সাবলীল ভাষায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলেছেন। প্রবন্ধটি মূলত সাম্যবাদের চেতনায় সমৃদ্ধ।
আলােচ্য উদ্দীপকে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের কথা বর্ণিত হয়েছে। সমাজতন্ত্রবাদ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কারণ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেই শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। আর শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষিত হওয়া এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে শ্রমিকদের শ্রমের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সম্পদ অর্জিত হয়। তাই উদ্দীপকের এ বক্তব্যই আলােচ্য প্রবন্ধে বিড়ালের ভাষায় ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত।
আলােচ্য প্রবন্ধে বিড়ালটি ক্ষুধাকাতর শ্রীহীনদের অধিকারের কথাই বলেছে। অর্থাৎ ‘বিড়াল’ প্রবন্ধ অধিকার বঞ্চিতদের কথা বলে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, আর সেই একই চেতনা উদ্দীপকেও উঠে এসেছে।
‘অধিকারহীনতাই বিড়ালকে দুঃসাহসী করে তুলেছে- ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের আলােকে উক্তিটি বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর:- উদ্দীপকে অধিকারবঞ্চিত শ্রমিক শ্রেণির অধিকার আদায়ে যে সংগ্রামের কথা রয়েছে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বিড়ালটি অধিকার আদায়ে দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে।
‘বিড়াল’ প্রবন্ধের বিড়ালটি কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলে। এ কারণে কমলাকান্ত বিড়ালটিকে মারতে উদ্যত হয়। তখন বিড়ালটি বলে ওঠে, খেতে না পেয়েই সে চোর হয়েছে, সাধ করে নয়। এ বিষয় নিয়ে কমলাকান্তের সাথে তর্ক জুড়ে দেয় সে। উদ্দীপকে দেখতে পাই, শ্রমিকরা অধিকারবঞিত। তারাই রাষ্ট্রের সম্পদ বৃদ্ধি করছে। অথচ তাদের স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এ জন্যই শ্রমজীবী মানুষেরা পুজিপতি শ্রেণির বিরুদ্ধে সর্বদা সংগ্রামরত।
‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বিড়ালটি সাম্যবাদবিমুখ শােষিত সমাজব্যবস্থাকে ধিক্কার জানিয়েছে। তার মতে, যে ক্ষুধার্ত নয় তাকেই সমাজ বেশি করে খাওয়াতে চায়। অথচ ক্ষুধাকাতর শ্রীহীনদের প্রতি ফিরেও তাকায় না। ফলে ক্ষুধাকাতররা ক্ষুধা নিবারণে অন্যায় করতেও দ্বিধাহীন হয়ে পড়ে। এই রকম দ্বিধাহীন হয়েই বিড়াল কমলাকান্তের দুধ খেয়ে ফেলে।
উদ্দীপকেও শ্রমিজীবী মানুষের সংগ্রামের মধ্যে তার কথারই প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। অতএব উদ্দীপক ও আলােচ্য গল্পের বিশ্লেষণে যথার্থই বলতে পারি, অধিকারহীনতাই বিড়ালকে দুঃসাহসী করে তুলেছে।
[ বিশ্বে চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপন্ন হওয়া সত্ত্বেও প্রায় ১০০ কোটি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থার (FAO) খাদ্য বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়, তার এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট বা অপচয় হয়; যার পরিমাণ ১৩০ কোটি টনেরও অধিক। মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের শীর্ষে রয়েছে উত্তর আমেরিকা এবং ওশেনিয়া মহাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে ইউরােপ আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়ার উন্নত দেশগুলাে। ]
‘বিড়াল’ রচনায় কাকে ‘সুতার্কিক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে?
উত্তর:- ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালকে ‘সুতার্কিক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
‘আমি তােমার ধর্মের সহায়’- ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর:- পরােপকার যেহেতু ধর্মের মূল তাই কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ খেয়ে বিড়ালটি তাঁর ধর্মের সহায় হয়েছে—এটি বােঝাতেই বিড়াল কমলাকান্তকে কথাটি বলেছে।
পরােপকারই পরম ধর্ম। কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ পান করে। বিড়ালের অনেক উপকার হয়েছে। সে নিজ দায়িত্বে দুধ পান করেছে বলেই কমলাকান্ত সেই পরম ধর্মের ফলাভােগী হলেন। এজন্য বিড়াল কমলাকান্তকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে।
উদ্দীপকটি ‘বিড়াল’ রচনার কোন বিষয়টিকে পরিস্ফুট করে? ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর:- ‘বিড়াল’ রচনার কৃপণ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের খাদ্য অপচয় ও ক্ষুধার্ত নিরন্ন মানুষের প্রতি অবহেলার বিষয়টি ব্যাখ্যা করাে
“উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ রচনার আংশিক বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে।” বাক্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
উত্তর:- ‘বিড়াল’ রচনার সামগ্রিকতা বিশ্লেষণ করাে।
বিড়াল প্রবন্ধের উক্তি, বিড়াল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লাইন
- আমাদের কালো চামড়া দেখিয়া ঘৃণা করিও না।
- খাইতে দাও নহিলে চুরি করিব।
- অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য এ পৃথিবীতে কেহ আসে নাই।”
- সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধন বৃদ্ধি।
- সামাজিক ধনবৃদ্ধি ব্যতীত সমাজের উন্নতি নাই।
- আমি যদি নেপোলিয়ন হইতাম, তবে ওয়াটারলু জিতিতে পারিতাম কি না।
- ওয়েলিংটন হঠাৎ বিড়ালত্ব প্রাপ্ত হইয়া, আমার নিকট আফিং ভিক্ষা করিতে আসিয়াছে।
- আমি তখন ওয়াটারলু মাঠে ব্যূহ-রচনায় ব্যস্ত, অত দেখি নাই।
- কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।
- দুধ মঙ্গলার, দুহিয়াছে প্রসন্ন।
- মনুষ্যকুলে কুলাঙ্গার স্বরূপ পরিচিত হইবে, ইহা বাঞ্ছনীয় নহে।
- অনেক অনুসন্ধানে এক ভগ্ন যষ্টি আবিষ্কৃত করিয়া সগর্বে মার্জারীর প্রতি ধাবমান হইলাম।
- এ সংসারের ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, মৎস্য, মাংস সকলই তোমরা খাইবে, আমরা কিছু পাইব না কেন?
- আমরা খাইলেই তোমরা কেন শাস্ত্রানুসারে ঠেঙ্গা লাঠি লইয়া মারিতে আইস, তাহা আমি বহু অনুসন্ধানে পাইলাম না।
- বিজ্ঞ চতুষ্পদের কাছে শিক্ষালাভ ব্যতীত তোমাদের জ্ঞানোন্নতির উপায়ান্তর দেখি না।
- আমি তোমার ধর্ম সঞ্চয়ের মূলীভূত কারণ।
- আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি?
- অধর্ম চোরের নহে- চোরে যে চুরি করে, সে অধর্ম কৃপণ ধনীর।
- চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী।
- তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ দরিদ্রের ক্ষুধা কেহ বুঝে না