বাক্য সংযোজন ও বাক্য বিয়োজন | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা , বাক্য-সংযোজন : দুই বা ততোধিক বাক্যকে একটিমাত্র বাক্যে পরিণত করাকে বাক্য-সংযোজন বলে। নানাভাবে বাক্য সংযোজন করা যায়। যেমন। সূত্র : ১। বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা করে। যেমন : বিযুক্ত বাক্য মাছ ধরা হয়। : 陶 নৌকার খোলে জমা করা হয়। মাছ ধরে নৌকার খোলে জমা করা হয়। সূত্র : ২। বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়ার পর একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যোগ করে। যেমন : বিযুক্ত বাক্য নৌকা ও জালের মালিক ধনঞ্জয়। । : ধনঞ্জয় পরিশ্রম করে কম : নৌকা ও জালের মালিক বলে ধনঞ্জয় পরিশ্রম করে কম ।
বাক্য সংযোজন ও বাক্য বিয়োজন | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
সূত্র : ৩। সমাপিকা ক্রিয়ার পরে ‘যে’, যখন’ প্রভৃতি অব্যয় যোগ করে। যেমন : বিযুক্ত বাক্য : আমি জানতাম না । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসল নাম ছিল প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । আমি জানতাম না যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসল নাম ছিল প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। বাক্য সংযোজনের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নিয়মগুলো ছাড়াও কিছু সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা যায়। যেমন :
সূত্র : ১। দুটি বাক্যের মধ্যে একটি কারণ এবং অপরটি তার ফল— এরূপ সম্পর্ক থাকলে তাদের : করা যায়। যেমন ⇒ যেহেতু + (কারণ) + সেহেতু + (ফল) + ⇒ (কারণ) + ফলে + (ফল) … (কারণ) অসমাপিকা ক্রিয়া + (ফল)। যেমন : সে লেখাপড়া করে নি।
যেহেতু সে লেখাপড়া করে নি সেহেতু সে ফেল করেছে। সি বিযুক্ত বাক্য : সে ফেল করেছে। যুক্ত বাক্য বা, সে ফেল করেছে, কারণ সে লেখাপড়া করে নি । বা, সে লেখাপড়া করে নি, ফলে সে ফেল করেছে। বা, লেখাপড়া না করায় (বা, না করার কারণে) সে ফেল করেছে। বা, লেখাপড়া করে নি বলে সে ফেল করেছে।
সূত্র : ২। দুটো বাক্যের মধ্যে কোনো কার্য-কারণ সম্পর্ক না থাকলেও যদি তাদের ঘটনার পারম্পর্য থাকে, অর্থাৎ একটার কাজ ঘটার পর অন্যটার কাজ ঘটে— এরূপ বোঝায়, তাহলে সেগুলোকে নিম্নরূপে সংযুক্ত করা যায়।
যেমন : ⇒ (আগের ঘটনা) অসমাপিকা ক্রিয়া + (পরের ঘটনা) ⇒ যখন + (আগের ঘটনা) + তখন + (পরের ঘটনা) ⇒ অসমাপিকা ক্রিয়া + (পরের ঘটনা) ⇒ আগের ঘটনা + এবং + পরের ঘটনা। যেমন বিযুক্ত বাক্য সে বাজারে গেল । সে একটা কলম কিনল । সে বাজারে গিয়ে একটা কলম কিনল । বা, যখন সে বাজারে গেল তখন (সে) একটা কলম কিনল । যুক্ত বাক্য নিম্নরূপে সংযুক্ত বা, বাজারে যাওয়ার পর সে একটা কলম কিনল । বা, সে বাজারে গেল এবং একটা কলম কিনল।
সূত্র : ৩। দুটো বাক্যের অর্থ যদি পরস্পরের বিরোধিতা করে, অর্থাৎ বিপরীত অর্থবোধক হয়, তাহলে তাদের নিম্নরূপে সংযুক্ত করতে হয়। যেমন : + + ঘটনা) অসমাপিকা ক্রিয়া + সত্ত্বেও + (পরের ঘটনা)। ছুটি → পূর্বের ঘটনা + কিন্তু / তবু + পরের ঘটনা। যেমন : বিযুক্ত বাক্য : সে তেমন লেখাপড়া করে নি । সে পাশ করেছে। যুক্ত বাক্য : যদিও সে তেমন লেখাপড়া করে নি তবু (সে) পাশ করেছে। সে তেমন লেখাপড়া না করা সত্ত্বেও পাশ করেছে। সে লেখাপড়া করে নি কিন্তু পাশ করেছে। / সে তেমন লেখাপড়া না করলেও পাশ করেছে।
সূত্র : ৪। দুই বা ততোধিক বাক্যের উদ্দেশ্য একই হলে, বা বিধেয় একই হলে বা বিধেয়ের সম্প্রসারক একই হলে সেগুলোকে নিম্নরূপে সংযুক্ত করা যায়। যেমন এবং / আর / ও ব্যবহার করে। বিযুক্ত বাক্য সে আম খায় না । : সে কাঁঠাল খায় না। যুক্ত বাক্য

সূত্র : ৫। দুটো বাক্যের একটিতে শর্ত এবং অন্যটিতে সম্ভাব্য ফল প্রকাশিত হলে, তাদের নিম্নরূপে সংযুক্ত করা যায়। যেমন → যদি + (শর্ত) + তবে / তাহলে + (ফল) -> (শর্তবাক্য) অসমাপিকা ক্রিয়া + (ফল)। যেমন : বিযুক্ত বাক্য ভালভাবে পড়। পাশ করবে। যদি ভালভাবে পড় তাহলে পাশ করবে । বা, ভালভাবে পড়লে পাশ করবে। বা, ভালভাবে পড়, পাশ করবে।
সূত্র : ৬। একটা বাক্যে কাজ এবং অন্য বাক্যে ওই কাজের উদ্দেশ্য প্রকাশিত হলে তাদের নিম্নরূপে যুক্ত করা যায়। যেমন : ⇒ উদ্দেশ্যবাক্য অসমাপিকা ক্রিয়া + কাজ। যেমন : বিযুক্ত বাক্য : আমি তাকে দেখতে চেয়েছিলাম । তাই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। যুক্ত বাক্য : আমি তাকে দেখতে সেখানে গিয়েছিলাম । বা, আমি তাকে দেখার জন্যে সেখানে গিয়েছিলাম।
সূত্র : ৭। একটা বাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় সম্বন্ধে অন্য বাক্যে কিছু বলা হলে, দ্বিতীয় বাক্যটাকে প্রথম বাক্যের যথাক্রমে উদ্দেশ্য বা বিধেয়ের সম্প্রসারক খণ্ডবাক্য হিসেবে ব্যবহার করে বাক্য দুটিকে যুক্ত করা যায়। যেমন বিযুক্ত বাক্য : রহিম সাহেব আজ ঢাকায় গিয়েছেন। তিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক । যুক্ত বাক্য এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রহিম সাহেব আজ ঢাকায় গিয়েছেন। বা, রহিম সাহেব, যিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আজ ঢাকায় গিয়েছেন। উল্লিখিত নিয়মে শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে চেষ্টা করেও বাক্যসংযোজন করতে পার।
আরও দেখুন: