বাক্য বিভাজন – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “বাক্যতত্ত্ব” বিষয়ের একটি পাঠ।
বাক্য বিভাজন | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
প্রতিটি বাক্যের প্রধান দুটি অংশ থাকে। যথা :
১. উদ্দেশ্য এবং ২. বিধেয়।
১. উদ্দেশ্য : বাক্যের যে অংশে কাকেও উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় সেই অংশকে বাক্যের উদ্দেশ্য বলে। যেমন: ক. কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি। খ. পাখিরা আকাশে ওড়ে। বাক্যের উদ্দেশ্য অংশে এক বা একাধিক পদ থাকতে পারে। যেমন: সুজন, সুমন, রিমন আজ কলেজে আসে নি। বিশেষ্য বা বিশেষ্যস্থানীয় অন্যান্য পদ বা পদসমষ্টি যোগে গঠিত বাক্যাংশও বাক্যের উদ্দেশ্য হতে পারে। যেমন- সৎ লোকেরাই প্রকৃত সুখী। (বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত বিশেষণ)। মিথ্যা কথা বলা খুবই অন্যায় ।
(ক্রিয়াজাত বাক্যাংশ)। কখনো কখনো বাক্যে উদ্দেশ্য পদ অনুল্লিখিতও থাকতে পারে। যেমন : (তুমি) কার কথা বলছিলে? (ও) তোমাকে চেনে না। (আমি) পরিচয় করিয়ে দেব। বিধেয় : কর্তা বা উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বাক্যে যা কিছু বলা হয় তাকে বিধেয় বলে। যেমন : ক. কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি। খ. পাখিরা আকাশে ওড়ে। বাক্যের বিধেয় অংশে অন্তত একটি সমাপিকা ক্রিয়া এবং একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। হাসে। আমি যেতে পারব না। যেমন : সে কখনো কখনো বাক্যে একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। সে ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য অংশের কর্তার বা উদ্দেশ্য পদের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্রিয়াই বিধেয় ক্রিয়া হয়।
যেমন : তুমি জানালে যে ও নাচতে জানে। এখানে সঙ্গে ক্রিয়া সম্পর্কিত বলে ‘জানালে’ বিধেয় ক্রিয়া। সঙ্গে ক্রিয়া সম | কর্তার (তুমি) ‘উদ্দেশ্য’ ও ‘বিধেয়’- এ দুটো প্রধান অংশে বাক্যকে বিভক্ত করা গেলেও আরও কয়েকটি সূক্ষ্ম বিভাগ এর মধ্যে আছে; সেগুলো হচ্ছে; কর্তা; ক্রিয়া; কর্ম। কর্তা ক্রিয়া যে করে সেই কর্তা। বাক্যকে কর্তাই চালনা করে। ক্রিয়া ক্রিয়া বাক্যের প্রাণ, তথা সর্বপ্রধান অঙ্গ। ক্রিয়া ছাড়া কোনো বাক্য রচিত হতে পারে না। কর্ম আর কিয়া থাকেরে বা যে বস্তুকে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে কর্ম বলে। ক্রিয়াকে কী বা কাকে দিয়ে প্রশ্ন করে যে উত্তর পাওয়া যায় তা-ই কর্ম।
এবারে ওপরের উদাহরণগুলো যদি লক্ষ করি তাহলে দেখব যে, যে অংশকে আমরা ‘উদ্দেশ্য’ বলছি তারই থাকে কর্তা, আর ‘বিধেয়’ অংশের মধ্যে থাকে কর্ম ও ক্রিয়া; আরও একটি ব্যাপার চোখে পড়বে, তা হচ্ছে এই কর্ম সর্বদা ক্রিয়ার পূর্বে বসছে। এবার নিচের ছক লক্ষ কর, বুঝতে সুবিধা হবে : বাক্য = উদ্দেশ্য বিধেয় কর্ম ক্রিয়া ১. সে ২. আমি হাসছে- খাব যায় ভাত ৩. মেয়েটি স্কুলে ৪. তমালের ছোট ভাই-
রাম-লক্ষ্মণ ও সীতা স্কুলে বনে পড়তে গেছে ওপরে আমরা ছোট-বড় অনেক প্রকার বাক্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি এবং তাদের উদ্দেশ্য-বিধেয় এবং কর্তা, কর্ম, ক্রিয়া ইত্যাদি ভাগে বিশ্লেষণ করে দেখেছি। এ থেকে বাক্য গঠনের নিয়ম বেরিয়ে আসে : গেলেন সাধারণত বাক্যের প্রথম কর্তা ও সবশেষে সমাপিকা ক্রিয়া বসে। ক্রিয়াটি সকর্মক হলে ক বসে ক্রিয়ার পূর্বে। সে (কর্তা) ভাত (কর্ম) খায় (ক্রিয়া) ।
ক্রিয়া দ্বিকর্মক হলে গৌণকর্ম (ব্যক্তিবাচক কর্ম) মুখ্য কর্মের (বস্তুবাচক কম) ( গোণকর্ম) ইংরেজি (মুখ্য কর্ম) পড়ান । কর্ম) পূর্বে বসে। হেড মাস্টার আমাদের অসমাপিকা ক্রিয়া সমাপিকা ক্রিয়ার পূর্বে বসে এবং তা সকর্মক হলে কর্ম তার পূর্বে বসে। রাজার ছেলে এই কথা শুনে (অসমাপিকা ক্রিয়া) ক্রুদ্ধ হলেন (সমাপিকা ক্রিয়া) । উদ্দেশ্যের গঠন উদ্দেশ্য দুই প্রকার। যেমন : ক. সরল উদ্দেশ্য খ. সম্প্রসারিত উদ্দেশ্য। সরল উদ্দেশ্য : উদ্দেশ্য যদি একটিমাত্র পদ দ্বারা গঠিত হয়, তাহলে তাকে সরল রহিম ভাল খেলে।
সম্প্রসারিত উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ্য পদের প্রসারক : সরল উদ্দেশ্য যদি এক বা একাধিক বিশেষণ বা বিশেষণস্থানীয় পদ দ্বারা সম্প্রসারিত হয়, বা উদ্দেশ্য যদি একটিমাত্র পদ না হয়ে একটি বাক্যাংশ হয়, তাহলে তাকে বলে সম্প্রসারিত উদ্দেশ্য। যেমন : এই ক্লাসের রহিম ভাল খেলে। সম্প্রসারক : যে পদ বা পদগুচ্ছের দ্বারা সরল উদ্দেশ্যকে উদ্দেশ্য প্রসারক সম্প্রসারিত উদ্দেশ্যে রূপান্তরিত করা হয়, অর্থাৎ যে পদ বা পদগুচ্ছ উদ্দেশ্য অংশে থেকে উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য প্রদান করে তাকে উদ্দেশ্য পদের সম্প্রসারক বলে। যেমন এই রহিম ভাল খেলে।
ক্লাসের এই ক্লাসের রহিম ভাল খেলে । উদ্দেশ্য উদ্দেশ্য সম্প্রসারণের কৌশল : বিভিন্নভাবে উদ্দেশ্য পদের সম্প্রসারণ করা যায়। যেমন বিশেষণযোগে : বিশেষণ + বিশেষ্য = উদ্দেশ্য। যেমন : ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। সম্বন্ধপদ যোগে : সম্বন্ধপদ + বিশেষ্য বা, বিশেষ্য । বিশেষণ + -এর + বিশেষ্য উদ্দেশ্য। যেমন রহিমের বাড়িটা সুন্দর। তার কথা শুনলাম। বিশেষণ / বিশেষ্য + অসমাপিকা ক্রিয়া উদ্দেশ্য। যেমন : প্রকৃত শিক্ষিত হয়েই সে দেশে ফিরল। = ৩. 8. বিশেষণস্থানীয় বাক্যাংশ যোগে : যার চোখ নেই সে চশমা চায় কেন?—এখানে ‘যার চোখ নেই’ দ্বারা ‘সে’– কে বোঝানো হচ্ছে।

সুতরাং এটা হল ‘সে’ উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক, যা একটি বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ। বিধেয়ের গঠন বিধেয় সম্প্রসারক বা বিবর্ধক বা বিধেয় পদের প্রসারক : বিধেয় ক্রিয়াপদ (সমাপিকা ক্রিয়া) বাদে বিধেয় * গঠনকারী অন্য সব পদকে বিধেয়ের সম্প্রসারক ধরা যায়। তাহলে বিধেয় গঠন নিম্নরূপে দেখানো যায় : ১. ক্রিয়াপদ সে হাঁটে ক্রিয়াবিশেষণ ক্রিয়াপদ ।
যেমন : সে তাড়াতাড়ি হাঁটে + বিশেষণের বিশেষণ + নামবিশেষণ + ক্রিয়াপদ। যেমন : সে অত্যন্ত দ্রুত হাঁটে। শুচী ক বিশেষণের বিশেষণ + নামবিশেষণ + বিশেষ্য : সে অত্যন্ত ভাল ছেলে। 8. ৫.. সম্প্রসারক + কর্মপদ (বিশেষ্য) + ক্রিয়াপদ। যেমন : সে একটা আম খায়। ক্রিয়াবিশেষণীয় বাক্যাংশ + ক্রিয়াপদ : আমি যেখানেই পারি থাকব।
⇒ লক্ষ কর উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্প্রসারণের কৌশলগুলো প্রয়োগ করে একটা সহজ, ছোট বাক্যকে বড় এবং অর্থবহ, শ্রুতিমধুর বাক্যে পরিণত করা যায়। নিচে ধাপে ধাপে তা দেখান হল ভাই যাচ্ছে। আমার ভাই যাচ্ছে। আমার বড় ভাই যাচ্ছে। আমার বড় ভাই আজ যাচ্ছে। আমার বড় ভাই আজ খুলনায় আমার বড় ভাই আজ সকাল দশটায় প্লেনে খুলনায় যাচ্ছে। যাচ্ছে।
আমার বড় ভাই আজ সকাল দশটায় প্লেনে ভাবিকে সঙ্গে নিয়ে খুলনায় যাচ্ছে। আমার বড় ভাই যাকে তুমি একদিন দেখেছিলে, আজ সকাল দশটায় প্লেনে, বৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও, ভাবিকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের ছুটিটা কাটানোর জন্যে খুলনায় যাচ্ছে।
আরও দেখুন: