বাক্যে পদ সংস্থাপনরীতি – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “বাক্যতত্ত্ব” বিষয়ের একটি পাঠ। কতকগুলো অর্থবোধক পদ মিলে বাক্য গঠিত হয়। বাক্যে শব্দগুলো বিভক্তিযুক্ত হয়ে পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে বাক্য গঠন করে। তাই বাক্য গঠন করতে হলে পদের যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য। বাক্যের অন্তর্ভুক্ত পদগুলো উপযুক্ত স্থানে বসানোই পদ-সংস্থাপনক্রম। একে কেউ কেউ পদক্রম বলে থাকেন।
বাক্যে পদ সংস্থাপনরীতি | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
বাংলায় পদবিন্যাস সাধারণভাবে বামশাখাক্রমিক (left branching), অর্থাৎ বিশেষণ বাঁয়ে, বিশেষ্য ডানে বসে; তেমনই ক্রিয়াবিশেষণ আগে ওকর্তা + সময়বাচক পদ + স্থানবাচক পদ + গৌণকর্ম যেমন : আমি কাল স্টেশনে রুনাকে কথাটা কানে কানে বলেছি। + মুখ্যকর্ম + ধরনবাচক পদ + ক্রিয়া ROPO RONT WHE ১. বাংলা সরল বাক্যের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল, সবার আগে ‘কর্তা’, তারপরে ‘কর্ম’ এবং সবশেষে ‘ক্রিয়া’ বসে। যেমন : সে বই পড়ে; এখানে প্রথমে ‘সে’ কর্তা, পরে ‘বই’ কর্ম এবং সবশেষে ‘পড়ে’ ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে। নিচের ছকে কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া বিন্যাসক্রম দেখানো হল : ক্রিয়া পরে বসে। বাক্যের উপাদানক্রম সাধারণভাবে এরকম :
বাংলা বাক্যে পদ সংস্থাপনের এই ক্রম অনুসরণ করা হলেও এর ব্যতিক্রম যে ঘটে না, তা নয়। সাধারণত গদ্য রচনায় দু’ভাবে পদসংস্থাপনের কর্মের ব্যতিক্রম ঘটে থাকে। যেমন : ক. সম্মুখন এবং খ. পদ-বিপর্যয়। সম্মুখন : বক্তব্যের কোনো অংশকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে গিয়ে কিংবা গদ্যশৈলীতে একঘেয়েমি দূর করার জন্য একটি অংশকে বাক্যের প্রথমে নিয়ে আসা হয়। যেমন : স্বাভাবিক সম্মুখন খুব কম ছেলেই ঘটকের চোখে পাত্রী দেখে বিয়ে করতে চায়। ঘটকের চোখে পাত্রী দেখে খুব কম ছেলেই চায় বিয়ে করতে স্বাভাবিক সম্মুখন হৈম এমন সময়ে সেখানে আসিয়া উপস্থিত এমন সময়ে সেখানে হৈম আসিয়া উপস্থিত পদ-বিপর্যয় : সাধারণত ক্রিয়াপদ বসে বাক্যের শেষে। কিন্তু কোনো পদ বা পদগুচ্ছকে গুরুত্ব দিয়ে ক্রিয়াপদের পরে বসিয়ে বাক্যশৈলীগত যে পরিবর্তন করা হয় তাকে বলা হয় পদ-বিপর্যয়।
যেমন : স্বাভাবিক সে চিন্তা ও ভাব মানুষকে মানুষ হতে সাহায্য করে। সে চিন্তা ও ভাব মানুষকে সাহায্য করে মানুষ হতে। পদ-বিপর্যয় স্বাভাবিক পদ-বিপর্যয় তাঁহার পিতা উগ্রভাবে সমাজদ্রোহী ছিলেন । তাঁহার পিতা ছিলেন উগ্রভাবে সমাজদ্রোহী সাধারণ বাক্যের প্রথমে সম্প্রসারকসহ উদ্দেশ্য (বা কর্তা) এবং বাক্যের শেষে সম্প্রসারকসহ বিধেয় (বা ক্রিয়াপদ) বসবে।
যেমন- মনোযোগী (সম্প্রসারক) ছাত্ররাই (কর্তৃপদ রীতিমত পড়াশোনা করে। (ক্রিয়াপদ) (সম্প্রসারক) সম্বোধনপদ বাক্যের প্রথমে বসে। যেমন : ওহে শফিক, কোথায় চলেছ ? পরিচয় বা নাম ধরে সম্বোধন করলে তা বাক্যের প্রথমে বা শেষে বসতে পারে। যেমন : শফিক, এদিকে এস। এদিকে এস শফিক। সম্বোধন পদের শেষে কমা বসে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে বিস্ময়চিহ্ন বা প্রশ্নচিহ্নও ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন খোকা! দেখ ফুল। খোকা, শোনো গান । 8. ৫. বিধেয় বিশেষণ সর্বদা বিশেষ্যের পরে বসে। যেমন : যদি, যখন, যার, যাকে, যেখানে, যেই, যেইমাত্র ইত্যাদি যেসব শব্দ ‘আশ্রিত খণ্ডবাক্যের’ প্রথমে আছে সাধারণত সেগুলো ‘প্রধান খণ্ডবাক্যে’র আগে বসে।
যেমন : যদি তুমি আস তাহলে আমি যাব। যখন তোমাকে ডাকলাম তখন এলে না কেন? যার কথা তুমি এইমাত্র বললে সে এসেছে। যেখানে (তুমি) পার সেখানে চলে যাও। যেই পাখিটাকে ধরতে গেলাম অমনি তা উড়ে গেল। কখন, কোথায়, কবে, কীভাবে, কেন, কী, কেমনভাবে ইত্যাদি যে সব শব্দ “আশ্রিত খণ্ডবাক্যে’র প্রথমে আছে সেগুলো সাধারণত “প্রধান খণ্ডবাক্যের পরে বসে। যেমন : সে জাে আমি কোথায় গিয়েছে।
সুমন ভাবছে কার ক্ষতি করা যায়। আমি জানি কী সে চায়। । সু কখন যাব। ইভা জানে বিভা উল্লিখিত ৫ ও ৬-এ প্রদত্ত শব্দগুলো আশ্রিত খণ্ডবাক্যের আগে না বসে তার উদ্দেশ্যের পরেও বসতে পারে। যেমন : আমি যদি আসি তবে তোমাকে যেতে হবে। তুমি যাকে খুঁজছ সে আজ এখানে আসবে। আমি দেখতে চাইলাম সে কীভাবে কাজটা করে। বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন: সে রহিম, করিম ও রমার বন্ধু। বই, খাতা আর কাগজের দাম বেড়েছে সংযোজক অব্যয় যুক্ত না থাকলে প্রত্যেকটা পদের সঙ্গে বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। যেমন সে হাত কাবায় দিয়ে যুক্ত সে হাত, পা ও মাথায় আঘাত পেয়েছে। > সে হাতে পায়ে মাথায় আঘাত পেয়েছে। য়ছে।
সে হাতে কতকগুলো পদ নিত্য সম্বন্ধযুক্ত। এদের একটা ব্যবহার করলে সাধারণত অন্যটাকেও ব্যবহার করতে হয়। যেমন : যদি তুমি আস তবে আমি যাব। যেমন কর্ম তেমন ফল। তুমি যা করতে সে তা করে নি। ক্রিয়ার আগে সাধারণভাবে অসমাপিকা ক্রিয়া সমাপিকা ক্রিয়ার আগে বসে। যেমন আমি তাকে দেখতে চাই । তুমি কী জানতে চাও ? আমার বলার কিছু ছিল না। (কাি বাক্যে অধিকরণ কারক সুবিধামত স্থানে বসতে পারে, এর জন্যে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যেমন : সকালে সূর্য ওঠে। অথবা, সূর্য সকালে ওঠে। আমি আজ যাচ্ছি। অথবা, আজ আমি যাচ্ছি। ১৩. বাক্যে ‘না’ বা ‘নে’ অব্যয় ব্যবহৃত হয় ক. সমাপিকা ক্রিয়ার পরে ‘না’, ‘নে’ বসে।
যেমন : তুই এ কাজ পারবি নে। আমি তাকে দেখতে চাই না। বসে। যেমন ← বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সমাপিকা ক্রিয়ার আগে বসে। যেমন তুমি আজ অফিসে না যাও তো বাজারটা সেরে এস। দেখো, যেন বইটা না হারায়। ~ বিকল্প বোঝাতেও ‘না’ সমাপিকা ক্রিয়ার আগে বসে। যেমন : চা না খাও শরবতটা খাও। বলতে না চাও, কিছুটা আভাস দাও । খ. বাক্যের অসমাপিকা ক্রিয়া দ্বারা যদি শর্তের ভাব বা আপেক্ষিকতা বোঝায়, তাহলে ‘না’ অসমাপিকা ক্রিয়ার আগে . বসে। দুটো অসমাপিকা ক্রিয়া পাশাপাশি থাকলে ‘না’ তাদের আগে বা মাঝে বসতে পারে। যেমন তুমি বুঝতে না পারলে আমাকে বলবে।
তুমি না বুঝতে পারলে আমাকে বলবে। মাকে বলবে দুটো বিশেষণের উভয়টাকেই অস্বীকার করা হচ্ছে এরূপ বোঝালে ‘না’ তাদের আগে বসে। যেমন : ছেলেটা না চালাক না বোকা, মাঝামাঝি। ওষুধটা না আসল না নতুন। ঘ. শর্তমূলক বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়ার আগে ‘না’ ব্যবহৃত হয়। যেমন : যদি তুমি আসতে না চাও তাহলে তাও বল। . জিজ্ঞাসাসূচক বাক্যে ‘না’ বাক্যের শেষে ব্যবহৃত হয়। এরূপক্ষেত্রে তা না-বোধক অর্থ প্রকাশ করে না। যেমন তুমি এখন বাড়ি যাবে না? চ. জিজ্ঞাসাসূচক বাক্যে জ্ঞাত তথ্যকে শ্রোতার সমর্থনের জন্যে প্রশ্নের মাধ্যমে জানানো হলে ‘না” কর্তার পরে বসে।

যেমন : তুমি না একটু আগে বললে, এখন অস্বীকার করছ কেন? ছ. বাক্যালঙ্কার অব্যয় হিসেবে (নিরর্থকভাবে) : আজ না একটা চমৎকার জিনিস দেখলাম। দাঁড়িয়ে আছ কেন, বসো না। জ. অসমাপিকা ক্রিয়ার দ্বিরুক্তির আগে ‘না’ বসে। যেমন : তাকে কিছু না বলতে বলতে সে বেড়ে গেছে। কাজ না করতে করতে লোকটা মোটা হয়ে যাচ্ছে।
আরও দেখুন: