বাক্যের গুণগত বিভাগ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা , বাক্যে ব্যবহৃত পদগুলো এমনভাবে সাজাতে হয় যাতে ভাষার সৌন্দর্য, সৌষ্ঠব, লালিত্য ও মাধুর্য প্রকাশ পায়। বাক্যের এ জাতীয় বৈশিষ্ট্যকে বাক্যের ‘গুণ’ বলা হয়। বাক্যে আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি ও যোগ্যতার সুষম ব্যবহার থাকলে আদর্শ বাক্য গঠিত হয় ঠিকই, তবে বক্তার মনোভাবকে সৌন্দর্যমণ্ডিতভাবে প্রকাশ করারও প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষত বাক্যের সৌন্দর্য, সৌষ্ঠব, লালিত্য ও মাধুর্য— এই গুণগুলো সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাক্যের এই গুণ তিন প্রকার। যথা : ১. ওজোগুণ ২. প্রসাদগুণ ৩. মাধুর্যগুণ ৷
বাক্যের গুণগত বিভাগ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
১. ওজোগুণ : বাক্যে জোরালো, বলিষ্ঠভাব সংবলিত পদের ব্যবহারে যে উচ্চারণগত সৌষ্ঠব সৃষ্টি হয় তাকে nিবাক্যের ওজোগুণ ব বলে। যেমন : ক. আমার সঙ্গে লড়তে এলে তোমার মাথা গুঁড়িয়ে দেব। খ. হে মৃত্যু তুমি মোরে কী দেখাও ভয়, ও ভয়ে কম্পিত নয় আমার হৃদয় ২. প্রসাদগুণ : বাক্যে সহজ, সরল ও অলঙ্কারসমৃদ্ধ পদের সমন্বয়কে বাক্যের প্রসাদগুণ বলে। যেমন: যতবার লে। ভুলে যেতে চাই, হৃদয় বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ৩. মাধুর্যগুণ : বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ বা পদগুলোর কোমল, মধুর, ও হৃদয়গ্রাহীরূপে প্রকাশকে বাক্যের মাধুর্যগুণ বলে।
যেমন : ক. বাবা, তুমি মাকে কেন এত কষ্ট দাও? খ. এমন সুন্দর চেহারা ও মধুর আচরণ সবার ভালো লাগে। বাক্য-বিশ্লেষণ বা বাক্য-ব্যবচ্ছেদ বাক্যকে তার গঠন-উপাদানে ভেঙে প্রতিটি গঠন-উপাদানের স্বরূপ নির্ণয় করে, একটি উপাদানের সঙ্গে অন্যান্য উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় করার পদ্ধতিকে বলে বাক্য-বিশ্লেষণ কোনো উ উ. সম্প্র.. → বাক্য-বিশ্লেষণের সাধারণ পদ্ধতি কোনো বাক্যকে বিশ্লেষণ করার আগে জানতে হবে বাক্যটি— সরল, না জটিল, না যৌগিক। অতঃপর বিশেষ বিশেষ বাক্যের জন্যে বিশেষ বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে তাকে বিশ্লেষণ করতে হবে।
সরল বাক্য বিশ্লেষণের নিয়ম ১. প্রথমে বাক্যটির উদ্দেশ্য এবং বিধেয় অংশ দুটো ভাগ করতে হবে। যেমন তার পোষা কুকুরটা সেদিন হঠাৎ করে মারা গেল। উদ্দেশ্য (উ.) বিধেয় (বি.) এরপর বাক্যের উদ্দেশ্য পদটিকে চিহ্নিত করতে হবে। একইসঙ্গে উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক পদ বা পদগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। যেমন : তার পোষা কুকুরটা সেদিন হঠাৎ করে মারা গেল ।
উ: পদ বিধেয় ৩. এরপর বিধেয় ক্রিয়াটিকে চিহ্নিত করে তার সম্প্রসারক পদ থাকলে তাকে বা সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। যেমন : তার পোষা কুকুরটা সেদিন হঠাৎ করে মারা গেল। উ. সম্প্র উ. পদ বি. ক্রিয়া ৪. উদ্দেশ্যপদ ও বিধেয়পদ উহ্য থাকলে, তা লক্ষ রাখতে হবে। যেমন : (আমি) গিয়ে দেখলাম সে নেই। তিনি আমার চাচা (হন) । উ. উদ্দেশ্য উ. বিধেয় নিচে একটি ছকে সরল বাক্যের বিশ্লেষণ দেখানো হল
জটিল বাক্যের বিশ্লেষণ প্রথমে খণ্ডবাক্যগুলোকে প্রধান এবং আশ্রিত হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়। যেমন : যে তোমার মঙ্গল চায় সেই তোমার বন্ধু । আ. খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যের সঙ্গে আশ্রিত খণ্ডবাক্যটির বা বাক্যগুলোর সম্বন্ধ নির্ণয় করতে হবে। যেমন : “যে তোমার প্র. খণ্ডবাক্য মঙ্গল চায়’— এই আশ্রিত খণ্ডবাক্যটা প্রধান খণ্ডবাক্যের উদ্দেশ্যের (সে) সম্প্রসারক । আশ্রিত খণ্ডবাক্যটার স্বরূপ নির্দেশ করতে হবে (বিশেষ্যস্থানীয়, বিশেষণস্থানীয়, না ক্রিয়া-বিশেষণস্থানীয় । ) উল্লিখিত ১নম্বর উদাহরণটি বিশেষণস্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য।
খণ্ডবাক্যগুলোর মধ্যে কোনো সংযোজক পদ থাকলে তা দেখাতে হবে। অবশেষে প্রত্যেকটা খণ্ডবাক্যকে সরল বাক্যের মতো বিশ্লেষণ করতে হবে। যেমন : আমার বাবা, যিনি তোমাকে গতকাল একশত টাকা দিয়েছিলেন, আজ সকালে লণ্ডন গিয়েছেন। এখানে— প্রধান খণ্ডবাক্য : আমার বাবা আজ সকালে লন্ডন গিয়েছেন। আশ্রিত খণ্ডবাক্য : যিনি তোমাকে গতকাল একশত টাকা দিয়েছিলেন,—এটি প্রধান খণ্ডবাক্যের উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক এবং বিশেষণস্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য। সংযোজক পদ : যিনি ।

( + প্রধান খণ্ডবাক্যের বিশ্লেষণ আমার উদ্দেশ্য বাবা আজ সকালে লন্ডন গিয়েছেন বিধেয় আমার বাবা আজ সকালে লন্ডন সম্প্রসারক উদ্দেশ্যপদ সম্প্রসারক গিয়েছেন বিধেয়ক্রিয়া বি. সম্প্র বি. সম্প্র উদ্দেশ্য বিধেয় আশ্রিত খণ্ডবাক্যের বিশ্লেষণ (আমার বাবা) তোমাকে একশত টাকা উহ্য দিয়েছিলেন বিধেয় সম্প্রসারক বিধেয়ক্রিয়া ~ যৌগিক বাক্যের বিশ্লেষণ ১. নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।
২. সংযোজক অব্যয় / শব্দ থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে। ৩. প্রত্যেকটা নিরপেক্ষ বাক্যকে সরল বাক্যের মতো বিশ্লেষণ করতে হবে। উদাহরণ : রহিম আর করিম এ কথা বলল । বিশ্লেষণ নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্য-১ : রহিম একথা বলল। নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্য-২ : করিম একথা বলল । ~ খণ্ডবাক্যের বিশ্লেষণ ১ম খণ্ডবাক্য : একথা বলল বি. ক্রিয়া উদ্দেশ্য ২য় খণ্ডবাক্য : করিম একথা বলল
বাক্যের গুণ – ব্যাকরণ বাংলা ২য় পত্র :
আরও দেখুন: