Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

বাক্যতত্ত্বের ভূমিকা ও বাক্য নির্মাণ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

বাক্যতত্ত্বের ভূমিকা ও বাক্য নির্মাণ – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “বাক্যতত্ত্ব” বিষয়ের একটি পাঠ।  বাক্যতত্ত্বের ভূমিকা বাক্যতত্ত্ব বা অন্বয় (syntax) কথাটি ব্যাকরণে বাক্যনির্মাণ প্রক্রিয়ার পরিভাষা। বাক্যে ভাষার ক্ষুদ্রতর উপাদানগুলো কীভাবে পাশাপাশি সজ্জিত হয়, অন্বয় মূলত তারই নিয়মের সমষ্টি। এই মন্তব্যে দুটি জিনিস ব্যাখ্যা করার আছে। ভাষায় বাক্যের চেয়ে ছোট উপাদান বলতে কী বোঝায়, এবং পাশাপাশি সজ্জা বলতেই বা কোন অর্থ প্রকাশ করে।

বাক্যতত্ত্বের ভূমিকা ও বাক্য নির্মাণ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

এ ছাড়াও প্রশ্ন থাকে। বাক্যের নির্মাণে শব্দগুলোর পাশাপাশি সজ্জা ছাড়াও আরও কিছু ঘটে কি না তাও অবশ্যই অন্বয়ের আলোচনায় বিচার্য। উপরিউক্ত ব্যাখ্যাযোগ্য বিষয়দুটি আপাতত মুলতুবি রেখে আমরা প্রমিত বাংলার অন্বয় বলতে কী বুঝব তার একটি তালিকা করি :

১. বাক্যের উপাদান বা অঙ্গগুলোর চরিত্র নির্ধারণ— তাদের সংগঠন এবং ভূমিকা অনুধাবন,

২. এই উপাদানগুলো কীভাবে ‘সরল বাক্য’ গঠন করে তা দেখা, প্রাথমিক কাঠামোর হিসাব;

৩. সরল বাক্যকে ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করে কীভাবে একাধিক সরল বাক্য নিয়ে যৌগিক ও জটিল বাক্যের নির্মাণ ঘটে তার বিচার।

৪. সরল বাক্যের নানা ধরন : উক্তি বাক্য, প্রশ্নবাক্য, অনুজ্ঞাবাক্য, বিস্ময় বা উচ্ছাসসূচক বাক্য,

 

৫. বাক্যগুলোতে উপাদান-সজ্জার ক্রমের কোনো পরিবর্তন ঘটে কিনা;

৬. বাক্যগুলোর উপাদানের কোনোটির কোনো লোপ ঘটে কিনা;

৭. বাক্যগুলোতে কর্তার ভূমিকার কোনো হেরফের ঘটে কি না— প্রথাগত ব্যাকরণে ‘বাচ্যের’ আলোচনা এরই অন্তৰ্গত;

৮. বাক্যগুলোতে কোনো বিশেষ উপাদানের উপর বিশেষ নজর টানা হয় কি না, তাতে বাক্যের কী শারীরিক বা উচ্চারণগত পরিবর্তন ঘটে;

৯. বাক্য উচ্চারণে মনস্তত্ত্বের কোনো প্রতিক্রিয়া ঘটে কিনা। এমন হতেই পারে যে ৫-৮-এর পরিবর্তনগুলো সম্পূর্ণ পৃথকভাবে ঘটে না, একটির সঙ্গে আর-একটি জড়িয়ে থাকে।

বাক্য নির্মাণ লোকপ্রচলিত ধারণা এই যে, একাধিক শব্দ সম্মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করলে একটি বাক্যের সৃষ্টি হয়। যদিও এ ধারণার প্রতিবাদ করে অনেক এক শব্দের বাক্য, যেমন— ‘যাও!’, ‘এসো’, ‘খা!’, ‘না!’, ‘কেন?’, ‘বেশ।’ ••‘ঠিক!’ ইত্যাদি, তবু লোকপ্রচলিত ধারণাটি অমূলক নয়।

 

 

অর্থাৎ শারিরীক গঠনের দিক থেকে প্রকাশ্যে একটিমাত্র শব্দের বাক্য হলেও, অনুমানযোগ্যভাবে এগুলোতে একাধিক শব্দই আছে— আসলে এ বাক্যগুলোর অন্তর্নিহিত রূপ হয়তো এরকম— তুমি যাও!, তুমি এসো! ইত্যাদি। ভাষাবিজ্ঞানে এই অনুমিত বাক্যগঠনের পরিভাষা হল Deep Structure বা D-structure, বাংলায় অধোগঠন।

কিন্তু এই পরিভাষার চেয়েও বড় কথা হল যে, বাইরে যা এক শব্দের বাক্য বলে মনে হয় তা আসলে একাধিক শব্দে তৈরি বাক্য। বক্তা ও শ্রোতার বাক্যব্যবহারের বিশেষ প্রতিবেশে সব কটি শব্দ বলবার প্রয়োজন হয় না— এই হল কথা। তবু, বাক্যে যত শব্দই থাকুক, শব্দ বাক্য নির্মাণ করে না। অর্থাৎ সব ক-টা শব্দ পরস্পর মিলিত হয়ে বাক্য নির্মাণ করে না, একদল মানুষের পাশাপাশি হাত ধরে দাঁড়ানোর মতো। অন্য কথায়, বাক্যের সব শব্দের সঙ্গে সব শব্দের সম্পর্ক তৈরি হয় না। কোনো কোনো শব্দ কোনো কোনো শব্দের সঙ্গে জোট বাঁধে, অন্য শব্দের সঙ্গে নয়। যেমন বিশেষণ বিশেষ্যের সঙ্গে, ক্রিয়াবিশেষণ ক্রিয়ার সঙ্গে জোট বাঁধে। এ ভাবেই তৈরি হয় পদবন্ধ (phrase)। বাক্যের আসল অঙ্গ এই পদবন্ধগুলো, পৃথক, একক শব্দ নয় ৷

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version