বাংলা ভাষার রূপভেদ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি পলিটেকনিক বাংলা ৬৫৭১১ এর পাঠ।
Table of Contents
বাংলা ভাষার রূপভেদ
স্থান, কাল ও সমাজভেদে ভাষার রূপভেদ দেখা যায়।
ধ্বনির সৃষ্টি হয় বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে। মানুষের গলনালি, দাঁত, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, নাসিকা ইত্যাদির সহযোগ হলো বাগ্যন্ত্র।
যেকোনো ধ্বনি বা আওয়াজই ভাষা নয়। সেখানে অর্থ এবং অর্থের ধারাবাহিকতা থাকা চাই। ধ্বনির অর্থপূর্ণ মিলনে গঠিত হয় শব্দ। আর একাধিক শব্দের সমন্বয়ে অর্থের ধারাবাহিকতায় তৈরি হয় বাক্য।
যেমন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষারীতি: ‘ঔগেগায়া মাইনেষ্যর দুয়া পোয়া আছিল।’ অর্থাৎ একজন লোকের দুটি ছেলে ছিল। আঞ্চলিক ভাষাকে উপভাষা বলে। আঞ্চলিক ভাষায় শব্দের বহুবিচিত্র রূপ দেখা যায়। যেমন ‘ছেলে’ শব্দটি অঞ্চলভেদে ছোয়াল, ছাওয়াল, ছাবাল, ছেইলে, পোলা, পোয়া, পুরা, ব্যাটা, ব্যাডা, পুত, হুত ইত্যাদি উচ্চারিত হয়।
প্রমিত ভাষারীতি :
বিভিন্ন ভাষারীতি কালক্রমে পরিমার্জিত হয়ে সবার গ্রহণযোগ্য একটি রূপ লাভ করে। এই ভাষারীতি সাধারণত শিক্ষিত লোকের কথাবার্তা ও নিত্যব্যবহারে আরও আকর্ষণীয় হয়। ভাষাও যে শ্রমসাধ্য, প্রযত্নলব্ধ এবং শেখার কোনো বিষয়—প্রমিত ভাষারীতি তার প্রমাণ। এক কথায়, ভাষার সর্বজনগ্রাহ্য ও সমকালের সর্বোচ্চ মার্জিত রূপকেই প্রমিত ভাষারীতি বলে।
যেমন : ‘একজনের দুটো ছেলে ছিল।’
সাধু ভাষারীতি :
যে ভাষারীতি অধিকতর গাম্ভীর্যপূর্ণ, তৎসম শব্দবহুল, ক্রিয়াপদের রূপ প্রাচীনরীতি অনুসারী এবং আঞ্চলিকতামুক্ত তা-ই সাধু ভাষারীতি।
যেমন : ‘এক ব্যক্তির দুইটি পুত্র ছিল।’
এই রীতি এখন শুধু লিখিত গদ্যে পরিদৃষ্ট হয়।
চলিত ভাষারীতি :
ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী স্থানসমূহের মৌখিক ভাষারীতি মানুষের মুখে মুখে রূপান্তর লাভ করে প্রাদেশিক শব্দাবলি গ্রহণ এবং চমৎকার বাক্ভঙ্গির সহযোগে গড়ে ওঠে। এই ভাষারীতিকেই চলিত ভাষারীতি বলে। এই রীতি মৌখিক ও লিখিত উভয় ক্ষেত্রেই আকর্ষণীয় ও আদরণীয়।
যেমন : ‘একজন লোকের দুটি ছেলে ছিল।’

সাধু ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য
ক. সাধু ভাষার রূপ অপরিবর্তনীয়। অঞ্চলভেদে বা কালক্রমে এর কোনো পরিবর্তন হয় না।
খ. এ ভাষারীতি ব্যাকরণের সুনির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে চলে। এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট।
গ. সাধু ভাষারীতিতে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বেশি বলে এ ভাষায় এক প্রকার আভিজাত্য ও গাম্ভীর্য আছে।
ঘ. সাধু ভাষারীতি শুধু লেখায় ব্যবহার হয়। তাই কথাবার্তা, বক্তৃতা, ভাষণ ইত্যাদির উপযোগী নয়।
ঙ. সাধু ভাষারীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পূর্ণরূপ ব্যবহূত হয়।
চলিত ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য
ক. চলিত ভাষা সর্বজনগ্রাহ্য মার্জিত ও গতিশীল ভাষা। তাই এটি মানুষের কথাবার্তা ও লেখার ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এটি পরিবর্তনশীল।
খ. এ ভাষারীতি ব্যাকরণের প্রাচীন নিয়মকানুন দিয়ে সর্বদা ব্যাখ্যা করা যায় না।
গ. চলিত ভাষারীতিতে অপেক্ষাকৃত সহজ-সরল শব্দের ব্যবহার বেশি বলে এটি বেশ সাবলীল, চটুল ও জীবন্ত।
ঘ. বলার ও লেখার ভাষা বলেই এ ভাষা বক্তৃতা, ভাষণ, নাটকের সংলাপ ও সামাজিক আলাপ-আলোচনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
ঙ. চলিত ভাষারীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের সংক্ষিপ্তরূপ ব্যবহূত হয়।
আরও দেখুন: