বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য – অনলাইন ক্লাস

“বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য” আজকের ক্লাসের আলোচনার বিষয়। বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বাংলা ভাষার ব্যাকরণ অধ্যায়নের গুরুত্বপুর্ন অংশ। বাংলা ভাষা কিছু চমৎকার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত।

 

বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য

বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য – অনলাইন ক্লাস

 

এই ক্লাসটি এসএসসি স্তরের শিক্ষার্থীদের বাংলা ২য় পত্র প্রস্ততি (SSC Bangla 2nd Paper), অর্থাৎ নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের বাংলা ২য় পত্র প্রস্ততি (Class 9 Bangla 2nd Paper) এবং দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের বাংলা ২য় পত্র প্রস্ততিতে (Class 10 Bangla 2nd Paper) সহায়তা করবে। পাশাপাশি এইচএসসি শিক্ষার্থীদের বাংলা ২য় পত্র প্রস্ততি (HSC Bangla 2nd Paper), অর্থাৎ একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের বাংলা ২য় পত্র প্রস্ততি (Class 9 Bangla 2nd Paper) এবং দ্বদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের বাংলা ২য় পত্র প্রস্ততিতে (Class 10 Bangla 2nd Paper) সহায়তা করবে। পাশাপাশি এই ক্লাসটি পলিটেকনিক (Polytechnic Bangla) এর বাংলা (৬৫৭১১) বিষয় এ শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে।

আজকের ক্লাসে বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে তোমাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন রায়হান সানন।

 

 

 

ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বাংলা ভাষার ধ্বনিসমূহ বৈজ্ঞানিকভাবে সুবিন্যস্থ। এর আছে স্বর ও ব্যঞ্জন ধ্বনি। উচ্চারণ স্থান ও উচ্চারণের রীতি অনুসারে বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনিসমূহকে আবার বিন্যস্ত করা হয়েছে। উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী বাংলা ৫টি বর্গের ব্যঞ্জনধ্বনিমালা নিম্নোক্তভাবে সজ্জিত –

জিহবামূলীয় বা কণ্ঠ্য ক খ গ ঘ ঙ – ক বর্গ
পশ্চাৎ দন্তমূলীয় বা তালব্য চ ছ জ ঝ ঙ – চ বর্গ
মূর্ধন্য ট ঠ ড ঢ ণ – ট বর্গ
দন্ত্য ত থ দ ধ ন – ত বর্গ
ওষ্ঠ্য প ফ ব ভ ম – প বর্গ

৫টি বর্গে বিভক্ত/বিন্যস্ত প্রথম ও তৃতীয় ধ্বনি অল্পপ্রাণ (উচ্চারণে মুখ থেকে বাতাস কম জোরে
বের হয়), দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনি মহাপ্রাণ (বাতাস বেশি জোরে বের হয়)। আবার ৩য় ও ৪র্থ
ধ্বনি ঘোষ (উচ্চারণে গলার স্বরতন্ত্রী বেশি কাঁপে) — ফলে ৪র্থ ধ্বনিটি মহাপ্রাণ এবং ঘোষ।
প্রতিটি বর্গের শেষ ধ্বনিটি নাসিক্য। বাংলা ভাষার রয়েছে মৌলিক ও সাধিত শব্দ। সাধিত শব্দ
প্রধানত চারটি উপায়ে গঠিত হয়- (১) সন্ধির সাহায্যে, (২) সমাসের সাহায্যে, (৩) উপসর্গ
যোগে, (৪) প্রত্যয় যোগে।

বাংলা ভাষার বাক্যের রয়েছে দুটি রীতি– সাধুরীতি ও চলিত রীতি।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ভাষা, ভাষার বৈশিষ্ট্য, ভাষার পরিচয়, বাংলা ভাষার উৎপত্তি, ভাষার রীতি

ভাষা

মানুষ তার ভাব, ভাবনা, চিন্তা ইত্যাদি ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশ করার জন্য অর্থাৎ নিজেদের প্রয়োজনেই নিজেরাই ভাষা গড়ে তুলেছে। ভাষার বৈশিষ্ট্য হলো বদলে যাওয়া। ভাষার বিবর্তনধারা লক্ষ করেই পণ্ডিতগণ ‘প্রাচীন বাংলা’, ‘মধ্যযুগীয় বাংলা’ অথবা ‘আধুনিক বাংলা’ নাম দিয়েছেন। প্রাচীন বাংলার আদিতম নিদর্শন ‘চর্যাপদের’ ভাষার সঙ্গে তাই আদি মধ্যযুগের বাংলা ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের’ ভাষার পার্থক্য রয়েছে। আবার এগুলোর সঙ্গেও পার্থক্য দেখা যায় অন্ত্যমধ্যযুগের বাংলা, আলাওলের কাব্য ‘পদ্মাবতী’ কিংবা ভারতচন্দ্রের কাব্য ‘অন্নদামঙ্গলে’। অথবা ষোড়শ শতকের চিঠিপত্রে বা দলিলাদিতে যে বাংলা গদ্যের নিদর্শন পাওয়া গেছে সেসব ভাষানিদর্শনের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের ভাষারও পার্থক্য রয়েছে। যেমন রয়েছে বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমের ভাষার সঙ্গে আর রবীন্দ্রনাথ-প্রমথ চৌধুরী’র ভাষার।

 

ভাষার সংজ্ঞা

মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যমকে ভাষা বলে। অথবা মানুষ মুখে উচ্চারিত অর্থবোধক বা বোধগম্য কথাকে ভাষা বলে। অথবা বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি অথবা শব্দ বা শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে যা মনের ভাব প্রকাশে সাহায্য করে। অথবা কোন সম্প্রদায় বা জাতির মনের ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত অর্থবোধক শব্দ বা বাক্যকে ভাষা বলে। অথবা মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগযন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা জনসমাজে কৌশলে উচ্চারিত অপরের কাছে বোধগম্য তার নাম ভাষা।

ভাষা সম্পর্কে ভাষাবিজ্ঞানীদের দেওয়া সংজ্ঞা

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: মনুষ্য জাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে, তাহার নাম ভাষা।

মুহাম্মদ আব্দুল হাই: এক এক সমাজে সকল মানুষের অর্থবোধক ধ্বনির সমষ্টিই ভাষা।

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়: মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দ সমষ্টিকে ভাষা বলে।

ড. মুনীর চৌধুরী: ভাষা মানুষে মানুষে সম্পর্ক স্থাপনের প্রধানতম সেতু, সামাজিক ক্রিয়া কর্ম নির্বাহের অপরিহার্য মাধ্যম, সভ্যতার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। ভাষা সাহিত্যের বাহন, ভাবের আধার, অবেগের মুক্তিপথ, চিন্তার হাতিয়ার।

ভাষাগবেষক সুকুমার সেন: মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনি সমষ্টিই ভাষা।

সুকুমার সেনের এই কথায় বোঝা যায়, ভাষার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো মানুষের মনে স্পৃহার অনুকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা।

ভাষাবিজ্ঞানী স্টার্টেভান্ট: A language is a system of arbitraryvocal symbols by which members of a social group co-operate andinteract.

 

ভাষার বৈশিষ্ট্য

মনের ভাব প্রকাশ ছাড়াও ভাষার আরো কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন:

১. ভাষা কণ্ঠনিঃসৃত ধ্বনি দ্বারা গঠিত।

২. ভাষায় অর্থদ্যোতকগুণ বিদ্যমান।

৩. ভাষা একটি বিশেষ সম্প্রদায় বা জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ও ব্যবহৃত।

৪. ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোন বিশেষ জনসমাজে কৌশলে উচ্চারিত স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত শব্দসমষ্টি।

৫. ভাষা মানবসৃষ্ট প্রধান মাধ্যম।

৬. ভাষা মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম বা ভাষা পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময় ও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।

৭. ভাষা মুখে বা বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবোধক বা বোধগম্য কথা।

৮. ভাষা মানুষের স্বেচ্ছাকৃত আচরণ ও অভ্যাসের সমষ্টি।

১০. ভাষা ধ্বনি, শব্দ, পদ ও বাক্যের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিণ গাঠনিক পর্যায় রক্ষাকারী শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
মানুষের কাছে ভাষার গুরুত্ব অনেক। ভাষা আছে বলেই মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারে। সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। ভাষা প্রকাশের সঙ্গে দৈনন্দিন সকল কাজের মিল আছে বলেই জীবন এতো সহজ হয়ে যায়।

 

ভাষার পরিচয়

শব্দে শব্দে তৈরি হতে থাকল ভাবের ভুবন। যার নাম ভাষা। বহু বছরের সাধনায় তৈরি এই ভাষার জন্ম দিনক্ষণটির বয়স প্রায় এক লক্ষ বছর। আর লেখার জন্ম? মাত্র পাঁচ হাজার বছর আগে। জায়গাটি ছিল মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় অঞ্চল। সেখানকার মানমন্দিরের দানের হিসাব রাখার জন্য মাটির ফলকে কাঠি দিয়ে লেখাই পৃথিবীর প্রথম লেখা।

বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ-এ ভাষার জৈব-তাত্ত্বিক ভিত্তি অংশে হাকিম আরিফ দেখাতে চেয়েছেন, মস্তিষ্কে ভাষা উৎপাদন ও উপলব্ধির নির্দিষ্ট অঞ্চল রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলেছেন-ফরাসি স্নায়ু বিজ্ঞানী পল ব্রোকা ও জার্মান স্নায়ু তাত্ত্বিক কার্ল ভেরনিক মানুষের মস্তিষ্কের দুটি অঞ্চল আবিষ্কার করেছেন, ‘ভাষা উৎপাদক’ ও ‘ভাষা উপলব্ধি’ কেন্দ্র সনাক্ত করেন। এই দুটি অঞ্চলের নাম দেয়া হয়েছে ‘ব্রোকা অঞ্চল’ ও ‘ভেরনিক অঞ্চল’। মানুষের মস্তিষ্কের এই চিরায়ত ভাষিক এলাকা ছাড়াও ভেরনিক এলাকার পার্শ্ববর্তী আরও দুটি এলাকা রয়েছে, তা হলো-এংগিউলার জাইরাস ও সুপরা মারজিনাল জাইরাস ভাষার বর্ণ সনাক্তকরণ ও পঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত।

 

বাংলা ভাষার উৎপত্তি, জন্ম, পরিচয় ও বিবর্তন বা ক্রমবিকাশ

বাঙালিরা যে ভাষায় কথা বলে তাকে বাংলা ভাষা বলে। চলিত ভাষার প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরীর মতে—‘যে ভাষা আমরা (বাঙালিরা) সকলে জানি, শুনি ও বুঝি, যে ভাষায় আমরা ভাবনা চিন্তা সুখদুঃখ বিনা আয়াসে, বিনা ক্লেশে বহুকাল হতে প্রকাশ করে আসছি এবং সম্ভবত আরও বহুকাল পর্যন্ত প্রকাশ করব, সেই ভাষাই বাংলা ভাষা।’ তবে বর্তমানে বাঙালি ছাড়াও অনেক জাতিসত্ত্বার মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে।

 

BanglaGOLN.com Logo 252x68 px White বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য - অনলাইন ক্লাস

 

ইন্দোইউরোপীয় ভাষা পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর ভাষাগোষ্ঠী হিসাবে বিবেচিত। এই ভাষা খ্রিস্টপূর্ব প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ইয়োরোপ, এশিয়ার ইরান ও ভারতের বিস্তৃত অঞ্চলে বিকাশ লাভ করে। এই ভাষাগোষ্ঠীর মূল আবাসভূমি ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্তী উত্তরে দানিয়ুব নদীর মুখ থেকে কাস্পিয়ান সাগরের অঞ্চলবর্তী ভূখণ্ডে।

পরবর্তিকালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মূল অঞ্চল থেকে ভাষাভাষীরা ইয়োরোপের পশ্চিম অঞ্চলে ক্রমশ অগ্রসর হওয়ার পর একটি দল প্রথমে ইরানে প্রবেশের পর সেখান থেকে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। তারা ভারতের উত্তরাঞ্চলে বসবাসের পর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন সময়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

যাযাবর ইন্দোইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীরা উত্তর ভারতে স্থায়ী বসবাসের সময় সেখানে বসবাসরত অনার্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষে অনার্য ভাষাভাষীরা পরাজিত হলে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে সরে আসে। আর্যদের ভারতে অনুপ্রবেশের পূর্বে সিন্ধু উপত্যকায় উন্নত সভ্যতার অধিকারী অনার্য সম্প্রদায় বসবাস করতেন। যাঁদের সভ্যতা মেসোপটোমিয়ার নীল উপত্যকায় সভ্যতার সঙ্গে তুলনা করা যায়।

মহেঞ্জোদারোর হরপ্পা খননের পর প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন দিক আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। অনার্য সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর আগে গড়ে ওঠে। বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় সম্প্রদায় ছাড়াও ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাঁওতাল, মুন্ডার অন্যান্য সম্প্রদায়ের অসংখ্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বসবাসরত।

ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলেও বহিরাগত আর্য সম্প্রদায় স্থানীয় অধিবাসীদের ওপর প্রভাব বিস্তারসহ নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। দানিয়ুব নদীর কৃষ্ণসাগর থেকে মূল ইন্দোইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী ইয়োরোপের বিভিন্ন অঞ্চল, ইরানর ভারতে বসবাসের পর মূল ভাষাগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর প্রত্যেক অঞ্চলে মূল ভাষা পরিবর্তিত হয়ে আঞ্চলিকরূপ লাভ করে। এই পরিবর্তন সত্ত্বেও ইরানীয় ও ভারতীয় ভাষায় ব্যবহৃত রূপমূলের সঙ্গে আংশিক হলেও ধ্বনিগত মিল পাওয়া যায়।

 

BanglaGOLN.com Logo 252x68 px Dark বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য - অনলাইন ক্লাস

 

বাংলা ভাষার বিভিন্নরূপ ও রীতি

আধুনিক বাংলা উদ্ভবের পর থেকে সাধু, চলিত ও আঞ্চলিক এই তিন রকম রীতি প্রচলিত। এই তিন রীতির মধ্যে পার্থক্য মূলত ক্রিয়ার সর্বনাম এবং রূপমূল ব্যবহারের ক্ষেত্রে। চলিত বা প্রমিতরীতিতে সাধুরীতির রূপমূল অপেক্ষাকৃত সংকুচিত(রৌদ্র>রোদ, মস্তক>মাথা, তাহার>তার)। বাংলার প্রমিতরূপ নদীয়ার কৃষ্ণনগর অঞ্চলের কথ্যরূপ অবলম্বনে গঠিত হলেও পরবর্তিতে ঢাকার কলকাতার প্রমিতরূপের মধ্যে উচ্চারণভঙ্গির রূপমূলের ব্যবহারগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় (ঢাকা ‘যাচ্ছেন’, কলকাতা ‘যাচ্চেন’, ঢাকা ‘বের হয়ে গেল’, কলকাতা ‘বার হয়ে গেল’, ঢাকা ‘বিশ’, কলকাতা ‘কুড়ি’)। বাংলাভাষা প্রকাশের দুইটি রূপ বা রীতি আছে। যেমন: কথ্য ও লেখ্য রীতি।

কথ্যরীতি

কথার ভাষাই কথ্য। (কথ্য ভাষা=মুখের ভাষা) কোলকাতার ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের মৌখিক মান ভাষাটিই বর্তমানে লেখার ভাষা হিসাবে সচল। সাধু ভাষাও একসময় কথার ভাষাই ছিল। পৃথিবীর প্রায় আট থেকে দশ হাজার ভাষার মধ্যে অধিকাংশই উপভাষা। কথ্যভাষা সাধারণত কোন ব্যাকরণ অনুসরণ করে না। কথ্যভাষার রূপ তিনটি: আঞ্চলিক উপভাষা, সমাজ উপভাষা, প্রমিত চলিত কথ্য। যেমন :

আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা

বিভিন্ন অঞ্চলে যে ভাষা প্রচলিত সেই ভাষাকে আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা বলে। যে ভাষা শিশু প্রাকৃতিক নিয়মে শেখে, যার লিখিত কোন ব্যাকরণ নাই, যে ভাষা অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয় সেই ভাষাই আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা। প্রায় ত্রিশ মাইল অন্তর এই পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এই পরিবর্তনে উচ্চারণ দোষ বা নানারকম ভুল থাকে। তাই নদীয়া বা পুরুলিয়া, চাটগাঁ ও ময়মনসিংহের ভাষায় যথেষ্ট ভিন্নতা পাওয়া যায়।

আবার কুষ্টিয়ার সঙ্গে কোলকাতা, ত্রিপুরার সঙ্গে চট্টগ্রামের, সিলেটের সঙ্গে আসাম সংলগ্ন অঞ্চলের ভাষার ঐক্যও খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলা ভাষায় অসংখ্য উপভাষা রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রধানগুলো হলো: রাঢ়ি উপভাষা (উত্তর ও দক্ষিণ), ঝাড়খণ্ডি উপভাষা, বরেন্দ্রি উপভাষা (পশ্চিম), কামরূপি উপভাষা (উত্তর ও পশ্চিম) ইত্যাদি।

একই আচার রীতিনীতি এমনকি একই সংরক্ষিত এলাকার একই গোত্র বা সমাজের মানুষের একই রকমের ছাঁদের প্রচলিত ভাষাই আঞ্চলিক উপভাষা। একটি ভাষার অন্তর্গত এমন একটি বিশেষরূপ যা একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত থাকে এবং যার সঙ্গে সেই আদর্শ ভাষা বা সাহিত্যিক ভাষার ধ্বনির রূপগত পার্থক্য সৃষ্টি করে।

উপভাষা সম্পর্কে সুকুমার সেন বলেছেন, কোনো ভাষা সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছোট ছোট দলে বা অঞ্চলে বিশেষে প্রচলিত ভাষাছাঁদকে উপভাষা বলে। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাতেই উপভাষা আছে। উপভাষায় রচিত প্রাচীন মৌখিক সাহিত্যই ‘লোক সাহিত্য’, উপভাষার শব্দাবলির মধ্যে রয়েছে একটি জাতির ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিকর সামাজিক পরিচয়, মূল্য মান ভাষার একান্ত আঞ্চলিক রূপটি আছে উপভাষাতেই, আছে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের প্রাধান্য, বিশেষ অঞ্চলের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ভাষা এবং অকৃত্রিম সারল্য।

উপভাষার মধ্যে রয়েছে কোনো ভাষার মূলশক্তি। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ’ গ্রন্থে বলেছেন—ভাষার জীবন্তরূপ তাহার কথ্য ভাষায়। স্থান ভেদে বাঙ্গালার কথ্যরূপ নানাবিধ—

অঞ্চল আঞ্চলিক ভাষার নমুনা

খুলনা, যশোহর : অ্যাক জন মানশির দুটো ছাওয়াল ছিল।

মানভূম : এক লোকের দুটো বেটা ছিল।

রাঁচি (সরাকি) : এক লোকের দু বেটারাহে।

সিংহভূমি (ধলভূম) : এক লোকের দুটা ছা ছিল।

মেদিনীপুর (দক্ষিণ পশ্চিম) : এক লোক্কর দুট্টা পো থাইল।

পূর্ণিয়া (সিরিপুরিয়া) : এক ঝনের দুই পুআ ছিল।

মালদা : য়্যাক ঝোন ম্যান্শের দুটা ব্যাটা আছ্লো।

বগুড়া : য়্যাক ঝনের দুটা ব্যাটা আছিল।

রংপুর : এক জন ম্যানশের দুইক্না ব্যাটা আছিল্।

ঢাকা : একন মানশের দুইডা পোলা আছিল।

ময়মনসিংহ : য়্যাক জনের দুই পুৎ আছিল্।

সিলেহেট : এক মানুশর দুই পুয়া আছিল্।

কাছাড় : এক জন মানুশর দুগুয়া পুয়া আছিল্।

চট্টগ্রাম : এগুয়া মানশের দুয়া পোয়া আছিল্।

নোয়াখালি : একজনের দুই হুত আছিল।

চট্টগ্রাম (চাকমা) : এক জন তুন দিবা পোয়া এল্।

মণিপুর (মায়াং) : মুনি আগোর পুতো দুগো আসিল্।

 

BanglaGOLN.com Logo 252x68 px White বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য - অনলাইন ক্লাস

 

সমাজ উপভাষা
সমাজের ব্যবহৃত ভাষাই সমাজ উপভাষা। অন্যভাবে বলা যায়, সমাজের মধ্যে যেসব ভাষা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ব্যবহার করে সেসব ভাষাকে সমাজ উপভাষা বলে। সামাজ উপভাষা নির্ণয় করার সহজ উপায় মানুষের শিক্ষাদীক্ষার অবস্থান। একজন শিক্ষিত লোক যেভাবে কথা বলে, একজন অশিক্ষিত লোক সেভাবে কথা বলে না।

যেভাষা মানুষের সামাজিক পরিচয় বহন করে সেভাষাই সমাজ উপভাষা। সমাজ উপভাষা সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো সামাজিক শ্রেণি বিভাজন ও সীমারেখার প্রতিবন্ধকতা। নমুনা হিসেবে দেখা যায়, আমি কাজটি করছি/আমি কাজটি করতাছি/আমি কাজটি করতেছি। সমাজে যেসব স্তর আছে তাদের ভাষারীতি আলাদা, ভাষা অভ্যাসও আলাদা।

এই পার্থক্য বক্তা, শ্রোতা, উপলক্ষ্য বা পরিস্থিতি অনুসারে আলাদা হয়। উচু ও নীচু সমাজের ভাষাও আলাদা হয়ে থাকে। অন্যদিকে একই সমাজে বা অঞ্চলে বসবাস করলেও ভাষার ভিন্নতা হতে পারে। যেমন : নারী-পুরুষ অথবা তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়ে) মানুষের ভাষা পার্থক্য দেখা যায়। বয়সের কারণেও ভাষা ব্যবহারের ধরণ আলাদা হতে পারে। বিত্ত, জীবিকা, শিক্ষা ইত্যাদির প্রভাবে মান্য বা শিষ্ট ভাষাও কিছুটা পরিবর্তিত হয়।

ফলে সমাজের মধ্যে মান্য ভাষার একাধিকরূপও ব্যবহার হতে থাকে। আর্থিক উন্নতির ফলে সমাজে মানুষের মধ্যে পার্থক্য হয় এবং বিভিন্ন স্তর বা শ্রেণি সৃষ্টি হয়। সেই স্তরে ভাষা অভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়। ভাষাবিজ্ঞানী ব্লুমফিল ভাষার এই স্তরকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন : সাহিত্যক আদর্শ, আদর্শ চালিত, প্রাদেশিক আদর্শ, আদর্শের ভাষা, স্থানীয় উপভাষা। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এই ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ব্যবহৃত হয়।

 

BanglaGOLN.com Logo 252x68 px Dark বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য - অনলাইন ক্লাস

প্রমিত চলিত কথ্য

অনেক সময় দেখা যায়, উপভাষাগুলো সব এলাকার সব লোকের কাছে বোধগম্য হয় না। তাই উপভাষাকে উপলক্ষ করে সবার বোধগম্য ব্যাকরণ সম্মত একটি আদর্শভাষা তৈরি করা হয় এই আদর্শভাষাই প্রমিত চলিত কথ্য ভাষা। এই ভাষাই হয়ে ওঠে সকল ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য। প্রমিত চলিত ভাষার লিখিত ব্যাকরণ দরকার হয় এবং চর্চার মাধ্যমে শিখতে হয়। তবেই ভাষা আঞ্চলিকতার গণ্ডি পেরিয়ে হয়ে ওঠে সার্বজনীন, রাষ্ট্রীয়। নির্দিষ্ট ওই ভাষা দীর্ঘ প্রাণশক্তি সঞ্চিত করে। টিকে থাকে কাল-মহাকাল।

লেখ্যরীতি

মুখের ভাষাকে লিখিতভাবে প্রকাশ করাকে লেখ্যরীতি বলে। লেখ্যরীতির ২টি রূপ রয়েছে। যেমন :

সাধু লেখ্য

সংস্কৃত ভাষার সংস্কার বা এই ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রেখে যে ভাষা তৈরি হয় সেই ভাষাকে সাধুভাষা বলে। চলিত ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টির আগপর্যন্ত যে ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি হতো সেই মার্জিত লিখিত ভাষাকে সাধুভাষা বলে। অথবা সাধু পণ্ডিতদের দ্বারা কৃত্রিমভাবে তৈরিকৃত লেখার উপযোগী ভাষাকে সাধুভাষা বলে।

বৈদিকভাষার সংস্করণ হলো সংস্কৃত বা তৎসমভাষা আর সংস্কৃতভাষার সংস্করণ হলো সাধুভাষা। এভাষা মিশনারির মুনশিদের হাতে গড়ে উঠলেও সাধু নামটি দেন রাজা রামমোহন রায়। অনেকে বলে থাকেন সাধুভাষা মৃত। ভাষার কাজ যে কোনভাবে অন্যভাষার মধ্যে নিজেকে জীবিত রাখা। সাধু ভাষার প্রাণ সঞ্চার করেন ঈশ্বরচন্দ্র ও বঙ্কিমচন্দ্র। এখনও কলকাতার দুই একজন লেখক সাধুভাষায় লেখেন। কলকাতার ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ আর বাংলাদেশের ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ এখনও সম্পাদকীয় সাধুভাষায় লেখা হয়। এছাড়া আরও কিছু ক্ষেত্রে যেমন সরকারি অফিসের বিজ্ঞপ্তি, দরপত্র, কোন কোন মামলা মোকদ্দমায় সাধুরীতির প্রচলন রয়েছে।
প্রমিত চলিত লেখ্য

প্রমিত চলিত কথ্যভাষার লেখ্যরূপকেই প্রমিত চলিত লেখ্যরীতি বলে। কোলকাতার ভাগীরথী তীরের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা থেকে প্রথম লিখিত ভাষায়রূপ দান করেন প্যারীচাদ ও কালীপ্রসন্ন তাঁদের উপন্যাসে। এইজন্য এই ভাষাকে আলালি-হুতোমি ভাষাও বলা হতো। বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরীসহ অনেকেই চলিত ভাষায় লিখেছেন। প্রমিত চলিত লেখার ক্ষেত্রে ১৯১৪ সালে প্রকাশিত সবুজপত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

 

বাংলা ভাষায় সাধু ও চলিত রীতির মধ্যে পার্থক্য:

ধরন
সাধুরীতি
চলিত রীতি
সংজ্ঞা
বাংলা ভাষায় সাধুরীতি সংস্কৃত ভাষাঘনিষ্ট পণ্ডিত, বোদ্ধা লেখকদের এক লেখার উপযোগী প্রায় কৃত্রিম ভাষা। চলিত রীতিতে সাহিত্য সৃষ্টির আগপর্যন্ত যে ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি হতো সেই মার্জিত লিখিত বাংলা ভাষাকেই সাধুভাষা বা সাধুরীতি বলে।
অথবা সাধু পণ্ডিতদের দ্বারা কৃত্রিমভাবে তৈরিকৃত লেখার উপযোগী ভাষাকে সাধুভাষা বলে।
সাধু ভাষার রক্ষণশীলবৃত্ত ভেঙে সৃষ্টি হলো বাংলা ভাষার চলিত রীতি। স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন এবং প্রচলিত আদর্শ প্রমিত ভাষাকে চলিতভাষা বলে।
অথবা বর্তমানে সব ধরণের বই, পত্রিকা, পোস্টার ইত্যাদি যে ভাষায় প্রকাশ হচ্ছে তাকেই চলিতভাষা বলে।
বৈশিষ্ট্য
১. তৎসমশব্দের প্রাধান্য বেশি
২. কঠিন ও গম্ভীর স্বভাবের
৩. লেখার উপযোগী আর বলার অনুপযোগী
৪. নাটকের সংলাপ, চিঠির বক্তৃতার অনুপযোগী
৫. আঞ্চলিক প্রভাবমুক্ত
৬. কৃত্রিম ও অপরিবর্তনশীল
৭. বানান নির্দিষ্ট বা অপরিবর্তনশীল
৮. এর প্রচারক রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র
৯. পুরোপুরি ব্যাকরণ মেনে চলে
১. তদ্ভবশব্দের প্রাধান্য বেশি
২. সহজ ও সাবলীল স্বভাবের
৩. লেখা ও বলা দুইয়ের উপযোগী
৪. নাটকের সংলাপ, চিঠির বক্তৃতার উপযোগী
৫. আঞ্চলিক প্রভাবযুক্ত
৬. অকৃত্রিম ও পরিবর্তনশীল
৭. বানান অনির্দিষ্ট বা পরিবর্তনশীল
৮. প্রমথ চৌধুরী চলিত গদ্যের প্রচারক
৯. সংস্কৃত ব্যাকরণ মেনে চলে না
শব্দগঠন
১. বিশেষ্য, যোজক, ক্রিয়া, সর্বনাম ও অনুসর্গের পূর্ণরূপ বসে। যেমন: মস্তক, যদ্যপি, সহসা, করিতেছি, করিতে, থাকিব, তাহাদের, যাহা, ধরিয়া, সবচেয়ে, ব্যতিত।
২. সমাসবহুল শব্দ বেশি। যেমন: মাতৃভূমি, বেত্রাঘাত।
১. বিশেষ্য, যোজক, ক্রিয়া, সর্বনাম ও অনুসর্গের খণ্ডরূপ বসে। যেমন: মাথা, আজ, হাত, যদিও, হঠাৎ, করছি, করতে, থাকব, তাদের, যা, ধরে, সবচে, ছাড়া ইত্যাদি।
২. বিভক্তির কারণে সমাসবহুল শব্দ কম। যেমন: মায়ের ভূমি, চাবুক মারা বা চাবুকের আঘাত।
বাক্যগঠন
১. বাক্য গঠন সবসময় অপরিবর্তনশীল। যেমন: কর্তা+ কর্ম+ক্রিয়া (সাধারণ গঠন)। তবে বাক্যে অন্যান্য শব্দ থাকলে পরিবর্তন করা যায় না। যেমন: সারথি কশাঘাত করিবামাত্র, অশ্বগণ বায়ুবেগে ধাবমান হইল।
২. সাধু ও চলিতভাষার মিশ্রণে বাক্যগঠন দোষণীয় নয়।
৩. দুটি বহুবচন চিহ্ন বসার নিয়ম আছে। যেমন: শিক্ষক রুমে ঢুকামাত্র ছেলেগুলো সব দাঁড়াল।
৪. দুটি নারী চিহ্ন বসার নিয়ম আছে। যেমন: মেয়েটি সুন্দরী বা কুলসুম সুন্দরী বা কুলসুম অস্থীরা।
৫. ক্ষুদ্রার্থক শব্দ নারী বাচক হয়। যেমন: পুস্তিকা, নাটিকা, উপন্যাসিকা ইত্যাদি।
১. বাক্য গঠন সবসময় পরিবর্তনশীল। যেমন: কর্তা+কর্ম+ক্রিয়া বা কর্তা+ ক্রিয়া + কর্ম বা অন্যান্য পদে হয় তবে বাক্যে অন্যান্য শব্দ থাকলে পরিবর্তন করা যায়। যেমন: সারথি চাবুক মারা মাত্র ঘোড়াগুলো বায়ুবেগে বা বাতাসের গতিতে চলতে শুরু করল। এই বাক্যের শব্দগুলো অন্যভাবে সাজানো যেতে পারে।
২. সাধু ও চলিত মিশ্রণে বাক্যগঠন দোষণীয়। এটি যে কোন শব্দ গঠনে হতে পারে।
৩. দুটি বহুবচন চিহ্ন বসার নিয়ম নাই। যেমন: শিক্ষক রুমে ঢুকামাত্র ছেলেগুলো দাঁড়াল।
৪. দুটি নারী চিহ্ন বসার নিয়ম নাই। যেমন: মেয়েটি সুন্দরী বা কুলসুম সুন্দরী বা কুলসুম অস্থীর।
৫. ক্ষুদ্রার্থক শব্দ নারী বাচক হয় না। যেমন: পুস্তিকা, নাটিকা, উপন্যাসিকা ইত্যাদি।

সাধুর চলিত বাক্যরূপান্তরের নমুনা:

সাধু :
কতিপয় পদ গমন করিয়া, শকুন্তলার গতি ভঙ্গ হইল। শকুন্তলা, আমার অঞ্চল ধরিয়া কে টানিতেছে; এই বলিয়া মুখ ফিরাইলেন।
চলিত :
কয়েক পা গিয়ে শকুন্তলার গতি থেমে গেল। শকুন্তলা, আমার আঁচল ধরে কে টানছে, এই বলে মুখ ফেরালেন।
সাধু :
কল্য যে ভূম্যধিকারীর লক্ষ মুদ্রারাজস্ব ছিল, অদ্য হইতে তাহাতে আর পঞ্চাবংশতি সহস্র যুক্ত হইল। অতএব ইজারার নাম শুনিলেই প্রজাদের হৃৎকম্প না হইবে কেন?
চলিত :
কাল যে জমিদারের লাখ টাকা খাজনা ছিল, আজ থেকে তাতে আর পঁচিশ হাজার যোগ হলো। কাজেই ইজারার নাম শুনলেই প্রজাদের বুক কাঁপবে না কেন?
সাধু :
গ্রামের মধ্যে যিনি অন্যান্য অপেক্ষায় কিঞ্চিৎ ধনবান তাঁহার অভিলাষ যে আর সকলেই তাহার দ্বারস্থ থাকে-সকলেই তাহার দাস হইয়া সেবা করে।
চলিত :
গাঁয়ের মাঝে যিনি আর অন্যদের চেয়ে সামান্য ধনী তাঁর ইচ্ছে যে আর সবাই তার দোরে আসে, সবাই তাঁর গোলাম হয়ে সেবা করে।

 

 

Our Disclaimer & Social Network Links:
A Gurukul Online Learning Network Production. © 2019 Gurukul Online Learning Network. All Rights Reserved. Don’t re-upload, re-distribute or re-production Gurukul Online Learning Network’s content to avoid copyright strikes.

BanglaGOLN.com Logo 252x68 px White বাংলা ভাষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য - অনলাইন ক্লাস

Gurukul Online Learning Network Official :
➤ GOLN Bangla Facebook: https://www.facebook.com/GOLNBangla
➤ GOLN Bangla Website: https://banglagurukul.com/
➤ GOLN Bangla Website: https://banglagoln.com/
➤ GOLN Facebook: https://www.facebook.com/GurukulOnlineLearningNetwork/
➤ GOLN Web: http://gurukul.edu.bd
➤ GOLN Linkedin: https://www.linkedin.com/company/golnofficial/
➤ GOLN Twitter: https://twitter.com/GOLNOfficial

#GurukulOnlineLearningNetwork #Bangla #Polytechnic

Leave a Comment