Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি আমাদের “ভাষা ও শিক্ষা” সিরিজের বাংলা উচ্চারণের নিয়ম বিভাগের একটি পাঠ। |

বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

‘ঙ, ঞ’ ধ্বনির উচ্চারণ:

ঙ : ঙ এবং ং (অনুস্বার)– এর উচ্চারণ অং হয়। যেমন- ব্যাঙ (ব্যাং), বাঙালি (বাংালি), বঙ্কিম (বকিম), রঙ (র)।

ঞ : ঞ-এর উচ্চারণ তিন রকম হয় :

 

‘র, ড়, ঢ়’ ধ্বনির উচ্চারণ

বাংলা উচ্চারণে অনেকেই র, ড়, এবং ঢ়-কে প্রায় অভিন্ন উচ্চারণ করে থাকে। কিন্তু এদের উচ্চারণ-বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন। র-ধ্বনি দন্তমূলীয় রণিত ধ্বনি। জিভের ডগা কাঁপিয়ে আলতোভাবে দন্তমূল স্পর্শ করে র-ধ্বনি উচ্চারিত হয়। যেমন : করা, পড়া। পক্ষান্তরে জিভের ডগা পেছনে ও উপরের দিকে উল্টিয়ে তালুর গভীর অংশে টোকা দিয়ে ড় এবং ঢ় ধ্বনি উচ্চারণ করা হয়। যেমন : কড়া, পড়া, গাঢ়, দৃঢ়। ড় ধ্বনি ও ঢ় ধ্বনির উচ্চারণ স্থান অভিন্ন। দুটিই মূর্ধন্য দুটি ধ্বনির উচ্চারণ প্রক্রিয়াও একরকম। দুটিই তাড়িত ও ঘোষ ধ্বনি। তবে ড় এবং ঢ়-এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ড় অল্পপ্রাণ এবং ঢ় মহাপ্রাণ ধ্বনি ।

‘শ, ষ, স’ ধ্বনির উচ্চারণ

 

 

ফলার উচ্চারণ

‘য’ (j)-ফলার উচ্চারণ

ক. ‘J’ (য)—

ফলা সর্বত্র অন্য বর্ণের সঙ্গেই যুক্ত হয়ে থাকে। বাংলা ভাষায় এ-ফলাটি কখনও সংস্কৃতের মতো ‘ইঅ’ উচ্চারণ গ্রহণ করে না। তবে আদ্য বর্ণে ‘J’ (য)-ফলা যুক্ত হলে বর্ণটির উচ্চারণে সামান্য শ্বাসাঘাত পড়ে এবং বর্ণটি ‘অ’-কারান্ত বা ‘আ’-কারান্ত হলে প্রায়শ তার উচ্চারণ ‘অ্যা’-কারান্ত হয়ে থাকে। যথা : ব্যক্ত (ব্যাক্‌তো), ব্যর্থ (ব্যাথো), ব্যগ্র (ব্যাগ্রো), ব্যবস্থা (ব্যাবোস্থা), ন্যস্ত (ন্যাতো), ব্যস্ত (ব্যাতো), ব্যথা (ব্যাথা), ব্যবসায় (ব্যাবোশায়), ব্যপদেশ (ব্যাপোদেশ) ব্যবধান (ব্যাবোধান্), ত্যক্ত (ত্যাক্তো), ব্যাঙ (ব্যাঙ্)”, . ব্যাকরণ (ব্যাকরোন্), খ্যাত ((খ্যাতো), ব্যাঘাত (ব্যাঘাত্), ব্যাঘ্র (ব্যাঘ্রো), ব্যাধ (ব্যাধ), শ্যামল (শ্যামল/শ্যামোল্), ন্যায় (ন্যায়), ন্যায্য (ন্যাজো), ধ্যান (ধ্যান্) ইত্যাদি।

খ. পদের মধ্য কিংবা অন্তে যুক্ত-

ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ‘J’ (য) ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত তার কোনো উচ্চারণ থাকে না। যথা : সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাথো), সন্ন্যাসী (শোনাশি), মর্ত্য (মরুতো), হর্ম্য (হরমো), কণ্ঠ্য (কঠো) ইত্যাদি।

গ. পদের মধ্য ও অন্ত্য বর্ণে ‘J’ (য-ফলা) সংযুক্ত:

পদের মধ্য ও অন্ত্য বর্ণে ‘J’ (য-ফলা) সংযুক্ত হলে সে বর্ণটি দুবার উচ্চারিত হয় (বর্ণটি অল্পপ্রাণ হলে প্রথমটি হসন্ত, দ্বিতীয়বার ও-কারান্ত, আর মহাপ্রাণ হলে প্রথমটি তার অল্পপ্রাণ হসন্ত এবং দ্বিতীয়টি মহাপ্রাণ ও-কারান্ত)। যথা : অদ্য (ওদো), মধ্য (মোধো), ধন্য (ধোনো), শস্য (শোশো), সভ্য (শোভো), সত্য (শোতো), কন্যা (কোনা), বন্যা (বোনা), শূন্য (শুনো), নব্য (নোব্‌বো), গদ্য (গোদ্‌দো), পদ্য (পোদ্‌দো)।

 

(র)-ফলার উচ্চারণ

ক. পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে (র)-ফলা সংযুক্ত হলে (এবং বর্ণটিতে অন্য স্বরবর্ণ যুক্ত না থাকলে) তার উচ্চারণ ‘ও’-কারান্ত হয়ে থাকে, সে-বর্ণের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় না। যথা : প্রকাশ (প্রোকাশ), প্রণাম (প্রোনাম্), গ্রন্থ (গ্রোথো), গ্রহ (গ্রোহো), প্রতিজ্ঞা (প্রোতিগ্‌গাঁ), প্রজ্ঞা (প্রোগ্‌গাঁ), ব্রত (ব্রোতো), ক্রম (ক্রোম্), শ্রম (স্রোম্ ইত্যাদি।

খ. কিন্তু (র)-ফলা যদি পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হয় তবে সে-বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে। যথা : বিদ্রোহ (বিদ্রোহো), যাত্রী (জাত্রি), রাত্রি (রাত্রি), ছাত্র (ছাত্রো), মাত্র (মাত্রো), অভ্র (অভ্রো) ইত্যাদি।

 

ব-ফলার উচ্চারণ:

বাংলায় ব-ফলার উচ্চারণে বিভিন্নতা দেখা যায়। তা কখনো উচ্চারিত হয়, কখ কখনো হয় না ।

অনুচ্চারিত ব-ফলা

১. শব্দের গোড়ায় থাকলে ব-ফলার উচ্চারণ হয় না। বড় জোর তাতে বাড়তি শ্বাসাঘাত পড়ে। যেমন : ধ্বনি, জ্বর, জ্বালা’, ত্বক, দ্বিতীয়, দ্বেষ, শ্বাস, স্বত্ব, স্বদেশ, স্বভাব, স্বার্থ স্বীকার।

২. শব্দের মধ্যে বা শেষেও ব-ফলা অনুচ্চারিত থাকে। তবে তা আশ্রয়ী ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ ঘটায়। যেমন : অম্ব, আশ্বিন, দাসত্ব, পক্ক, বিদ্বান, বিশ্ব, বিধ্বস্ত, যত স্বত্ব।

৩. যুক্তব্যঞ্জনের সঙ্গে অর্থাৎ দুয়ের বেশি ব্যঞ্জনের সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব অনুচ্চারিত থাকে। যেমন : উচ্ছ্বাস, উজ্জ্বল, তাত্ত্বিক, দ্বন্দ্ব, পার্শ্ব, মহত্ত্ব, সান্ত্বনা।

ব-ফলার স্বাভাবিক উচ্চারণ

১. ব-য়ে ব-ফলার বেলায় ব-এর উচ্চারণ হয় : আব্বা, সাব্বাস, তিব্বত, নব্বই।

২. ম-য়ে ব-ফলার ব-এর উচ্চারণ বহাল থাকে : গম্বুজ, নিতম্ব, নীলাম্বর, সম্বল, সম্বোধন, লম্বা ।

৩. শব্দের মধ্যে ও শেষে দ্ব-ফলা থাকলে নিরুদ্বেগ, ভবিষ্যদ্বাণী। -ফলা থাকলে ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে : উদ্বাস্তু, উদ্বুদ্ধ, উদ্বেগ, উদ্বিগ্ন,

৪. গ্ব-ফলার ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে : ঋগ্বেদ (রিগ্‌বেদ), দিগ্বলয়, দিগ্বিজয়, দিগ্বিদিক ।

 

ম-ফলার উচ্চারণ

বাংলায় ম-ফলা যুক্তব্যঞ্জনের উচ্চারণে কিছুটা বৈশিষ্ট্য ও বিশিষ্টতা রয়েছে। কখনো ম-ফলার উচ্চারণ হয়, কখনো হয় না ।

উচ্চারিত ম-ফলা

১. গ ঙ ণ ন ম ল-এর সঙ্গে ম-ফলা যুক্ত হলে ম-এর উচ্চারণ বজায় থাকে : বাগ্মী, যুগ্ম, বাঙ্ময়, ষাণ্মাষিক, . হিরণ্ময়, উন্মাদ, জন্ম, সম্মতি, সম্মান, গুল্ম, বাল্মীকি ।

২. হ্ম (হ–য়ে ম) উচ্চারণে ম-ধ্বনির দ্বিত্ব হয়। হ-ধ্বনির প্রভাবে দ্বিতীয় ম মহাপ্রাণতা লাভ করে। ফলে ম-এর শেষে হ্-ধ্বনির আভাস পাওয়া যায় : ব্রাহ্মণ (ব্রাম্‌মাণ)।

অনুচ্চারিত ম-ফলা

১. বাংলায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ম-ফলা অনুচ্চারিত থাকে। তবে সে রকম ক্ষেত্রে আশ্রয়ী ব্যঞ্জনের স্বরধ্বনিকে সানুনাসিক করে। শ্মশান (শঁশান), শ্মশ্রু (শোসসু), স্মরণ (শঁরোন), স্মারক (শাঁরোক)।

২. শব্দের মধ্যে বা শেষে থাকলে নিচের ম-ফলা অনুচ্চারিত থাকে। তবে তা আশ্রয়ী ব্যঞ্জনের স্বরধ্বনিকে কিছুটা সানুনাসিক করে : লক্ষ্মী, যক্ষ্মা, সূক্ষ্ম, মহাত্মা, পদ্ম, রশ্মি, গ্রীষ্ম, অকস্মাৎ, আকস্মিক, বিস্ময়।

ব্যতিক্রম : শব্দের মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে ম-এর উচ্চারণ বজায় থাকে : কাশ্মীর, জ্যোতিষ্মান, সুস্মিতা।

ল-ফলার উচ্চারণ

ক. ‘ল’-ফলা সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ প্রায়শ অবিকৃত থাকে এবং কোনো দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় না। যথা : ক্লান্ত (ক্লান্‌তো), ম্লান (ম্লান্), প্লুত (পুতো), প্লীহা (প্লিহা), প্লাবন (প্লাবোন্); প্লব (প্লব্), ক্লেশ (ক্লেশ্) ইত্যাদি।

খ. কিন্তু ‘ল’-ফলা সংযুক্ত বর্ণটি যখন পদের মধ্যে বা অন্তে বসে তখন তার উচ্চারণে ‘র’ (এ)-ফলার মতো দ্বিত্ব হয়। যথা : অক্লেশে (অক্লেশে), অম্লান (অম্লান)।

“হ” সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ

“হ” এর সঙ্গে — ’ (ঋ)-কার, এ (র)-ফলা কিংবা “” রেফ সংযুক্ত হলে ‘হ’ নয় ‘র্’–ই মহাপ্রাণ হয়ে ওঠে। [তবে < -কার যুক্ত হলে ‘হ’-এর উচ্চারণ আগেই শোনা যায়, অন্যত্র ‘হ’-স্থান পরিবর্তন স্পষ্ট যেমন : হৃদয় (hriদর্), আহূত (আhriতো), সুহৃদ (সুhriদ্), হৃৎপিণ্ড (hriপিডো), হৃদি (hriদি), হৃদ্য (hriদ্‌দো), তুষ্ট (hriশ্টো), ইত্যাদি। এখানে ‘হ’-র উচ্চারণ ‘হিরি’ বা কেবল ‘রি’ নয়, মহাপ্রাণ ‘Thi’।

সুতরাং এদের উচ্চারণ হওয়া উচিত হৃদয় (rhiদয়)।

‘হ’-এর সঙ্গে ণ বা ন যুক্ত হলে (নহ্ nh)

পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ, প্রাহ্ণ, মধ্যাহ্ন, বহ্নি, সায়াহ্ন ইত্যাদি শব্দের উচ্চারণে ‘ছু’ কিংবা ‘হৃ’ আসলে ‘ন’–এরই মহাপ্রাণ রূপ। ফলে উল্লিখিত শব্দগুলোর উচ্চারণ হবে— পুরবাnho, অপোরান্‌nho, প্রান্‌nho, চিন্‌nho, মোদ্‌ধাnho, বোন্‌nhi, শায়ানnho ।

 

 

‘হ’-এর সঙ্গে ‘ম’ সংযুক্ত হলে (মহ্mh)

ব্রহ্ম, ব্রহ্মা, ব্রহ্মাণ্ড, ব্রহ্মর্ষি, ব্রাহ্ম, ব্রাহ্মণ – এ জাতীয় কতিপয় সংস্কৃত শব্দের উচ্চারণে মূলত ‘ম’-এর মহাপ্রাণ রূপই ধরা পড়ে। ফলে উল্লিখিত শব্দগুলোর উচ্চারণ : ব্রোম্‌mho, ব্রোম্‌mha, ব্রোম্‌mhaডো, ব্রোম্‌mhoশি, ব্রামmho এবং ব্রামmho।

হ্ব-এর উচ্চারণ:

হ্ব- উচ্চারণে ব-এর দ্বিত্ব হয়।

দ্বিতীয় ব-ধ্বনি হ-এর প্রভাবে মহাপ্রাণ হয়ে যায়। অর্থাৎ আহ্বান শব্দের উচ্চারণ দাঁড়ায় আবৃভান্। কিন্তু ব-শ্রুতি অনুসারে ব-এর জায়গায় ও-ধ্বনি হয়। ফলে আহ্বান-এর স্বাভাবিক উচ্চারণ হয় আওবান। এ রকম : আহ্বায়ক (আওভায়োক্), গহ্বর (গওভর্), জিহ্বা (জিওভা), বিহ্বল (বিউবল)।

‘হ’-এর সঙ্গে ‘J’ (য) ফলা যুক্ত হলে:

‘হ’-এর সঙ্গে ‘J’ (য) ফলা যুক্ত হলে ‘হ’-এর নিজস্ব কোনো উচ্চারণ থাকে না, ‘য’ (উচ্চারিত রূপ ‘জ’-এর মহাপ্রাণ ঝ আসবে)-এর দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়, প্রথমটি অল্পপ্রাণ হসন্ত (জ্) এবং দ্বিতীয়টি মহাপ্রাণ (ঝ) ও-কারান্ত উচ্চারণ হয়ে থাকে। যথা : ঊহ্য (উজ্‌ঝো), বাহ্য (বাজঝো), গ্রাহ্য (গ্রাজঝো), দাহ্য (দাজ্‌ঝো), সহ্য (শোঝো), ঐতিহ্য (ওইতিজ্‌ঝো) ইত্যাদি।

সূত্র: 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ব্যঞ্জনধ্বনি [Banjon dhoni] – বাংলা ব্যাকরণ:

 

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version