বাংলাদেশের ষড় ঋতু, বাংলার ষড়ঋতু [ Six seasons of Bangladesh ] অথবা, বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।
Table of Contents
বাংলাদেশের ষড় ঋতু রচনার ভূমিকা:
বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু নিজ নিজ সৌন্দর্যের পশৱা নিয়ে একে একে এসে হাজির হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, বিভিন্ন রূপ-বৈচিত্রা বাংলাদেশের নৈসর্গিক দৃশ্য বার বার পরিবর্তনের সূচনা করে। প্রতিটি ঋতুর হেমন্ত, শীত, বসন্ত-এদের আগমনে বাংলাদেশের প্রকৃতি যেন সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যে অপরূপ শোভা ধারণ করে।
মূল বক্তব্য :
গ্রীষ্ম ঋতু:
গ্রীষ্ম হলো বছরের উষ্ণতম কাল, যা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে সাধারণত জুন, জুলাই এবং আগস্ট জুড়ে অবস্থান করে। পৃথিবীর সর্বত্রই গ্রীষ্ম হলো কর্মোদ্যমের সময়। বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশগুলোতে গ্রীষ্ম খুবই আরাধ্য, কারণ সেসকল দেশে শীতকালে কোনো ফসল উৎপাদিত হয় না, গ্রীষ্মকালেই সব ফসল উৎপাদন করে রাখতে হয়।

গ্রীষ্মে সূর্য প্রায় মাথার ওপর থেকে প্রথর কিরণ বর্ষণ করে। ফলে মাঠ-খাট শুকিয়ে খাঁ খাঁ করতে থাকে। খাল, বিল, ডোবা, পুকুর শুকিয়ে যায়। পানির অভাবে সবাই যেন ছাপিয়ে ওঠে। দুপুরে সূর্যীকরণ খুবই প্রথর বলে রাস্তাঘাটে জনমানবের চলাফেরা বিরল হয়ে যায়। হঠাৎ এসময় কালবৈশাখীর তাণ্ডব নৃত্য শুরু হয়ে যায়। ঈশান কোণে কালো মেঘের সমারোহ দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে রোদের তাপে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু এবং আরো বহু রসাল ফল পাকতে শুরু করে। কাল-বৈশাখীর ঝড়কে তুচ্ছ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আম কুড়িয়ে বেড়ায়। এসময় ক্ষেতে ক্ষেতে, হৈমন্তিক ধানের অঙ্কুর বের হয়ে আসে।
বর্ষা ঋতু:
বর্ষা, মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের অঞ্চলগুলোতে উদযাপিত একটি ঋতু, যখন মৌসুমী বায়ুর প্রভাব সক্রীয় হওয়ায় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুয়ায়ী এটি হচ্ছে বাংলা বছরের দ্বিতীয় ঋতু, যেখানে আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস জুড়ে এই বর্ষাকাল ব্যাপৃত থাকে।

গ্রীষ্মের পর বর্ষার সাড়ম্বর আগমনে বাংলাদেশে প্রকৃতি এক অভিনব রূপ ধারণ করে। গ্রীষ্মের খর রোদের যে দাহ মানুষের জীবনকে ক্লান্ত ও দুর্বিসহ করে তুলেছিল, বর্ষার সজল বারিবর্ষণে তা দূর হয়ে যায়। কালোমেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। দিনের পর দিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। প্রবল বর্ষণে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ভরে যায়। মাঠ-ঘাটও পানিতে তলিয়ে যায়। কোন কোন জায়গায় রাস্তার ওপরে পানি এসে দাঁড়ায়। মাছেরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। বহুলোক এসব মাছ ধরবার জন্যে ছুটাছুটি করে। বিলে-ঝিলে পদ্ম ও শাপলা ফুল ফুটে। কোন কোন সময় বন্যা হয়, গ্রামকে গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। বাড়িগুলোকে ছোট ছোট দ্বীপের মত পানিতে ভাসতে দেখা যায়। নৌকা, ডিডি ও ভেলায় করে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়।
শরৎ ঋতু:
ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে শরৎ বাংলার ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু। শরৎকে ইংরেজিতে “অটাম” বলা হলেও উত্তর আমেরিকায় একে “ফল” হিসেবে ডাকা হয়। পৃথিবীর ৪টি প্রধান ঋতুর একটি হচ্ছে শরৎকাল। উত্তর গোলার্ধে সেপ্টেম্বর মাসে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ মাসে শরৎকাল গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মধ্যবর্তী ঋতু হিসেবে আগমন করে।

এরপর ধীরে ধীরে বর্ষা সরে দাঁড়ায় আর শরৎ তার শুদ্র জোছনা ও ফুলের সুষমা নিয়ে হাজির হয়। বর্ষার স্যাঁত স্যাঁতে বাংলাদেশ যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। আকাশ থেকে কালো মেঘ বিদায় নেয় এবং সেখানে জলহারা সাদা মেঘদল ভেসে বেড়ায়। শরতে শিউলি, কামিনী ও আরো বহু রকমের ফুল ফুটে। এদের সৌন্দর্যে সকলে মুগ্ধ হয়। এ সময় সবুজ ধান গাছে বাংলাদেশের মাঠগুলো সবুজতায় ভরে যায়। খ্যাপা বাতাস যখন ধান খেতের ওপর দিয়ে ঢেউ খেলে যায়, তখন সত্যই অপরূপ লাগে।
হেমন্ত ঋতু:
হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত। শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। কৃত্তিকা ও আর্দ্রা এ দুটি তারার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের।

শরৎ যে কাজ শুরু করে, তা সম্পূর্ণ করতে এগিয়ে আসে হেমন্ত। সবুজ ধানের ক্ষেত্রে শরৎ যে সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিল, তারই পরিপূর্ণতা হেমন্তে দেখা দেয়। ক্ষেতগুলো ধীরে ধীরে সোনালি হয়ে ওঠে। কৃষকেরা পাকা ধান। এ কেটে ঘরে তোলে। সারা দেশে উৎসব ও আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়।
শীত ঋতু:
তারপর আসে শীত। শীত আমাদের পঞ্চম ঋতু। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। প্রতিটি ঋতুর মতোই শীতকাল তার নিজস্ব রূপ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়।

কুয়াশা-কালো আশ্বিনের রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ এসময় রঙ ধারণ করে। সুদুর দক্ষিণ থেকে সূর্য কিরণ দিতে থাকে এবং দিনের চেয়ে রাত বড় হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। প্রবল ঠাণ্ডায় যেন সারা দেশ কাঁপতে থাকে। গাছের পাতা ঝরে পড়ে। মনে হয় প্রকৃতি যেন মৃত্যুশয্যা গ্রহণ করেছে এবং এক এক করে তার সবগুলো ভূষণ খুলে দিয়ে সম্পূর্ণ নিরাভরণ হয়ে যাচ্ছে। তার সবখানে যেন একটা বিষাদের ছায়া পড়েছে।
বসন্ত ঋতু:
বসন্ত ষড়ঋতুর শেষ ঋতু। ফাল্গুন এবং চৈত্র মাস মিলে হয় বসন্ত ঋতু। বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটে শীত চলে যাবার পর এবং গ্রীষ্ম আসার আগে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় তাপমাত্রা বাড়তে থাকে কারণ পৃথিবী সূর্যের দিকে হেলে থাকে। পৃথিবীর অনেক প্রান্তে এই ঋতুতে ফুল ফুটে, নতুন গাছের পাতা গজায়, নতুন গাছের জন্ম হয়। এর ফলে গাছপালা বেড়ে উঠে, ফুল ও ফলের পরবর্তী বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শীতের শেষে ঋতুরাজ বসস্ত অনুপম নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে এসে হাজির হয়। এ সময় গাছপালা নতুন ফুল ও পাতায় ভরে যায়। ফলে দেখতে না দেখতেই শীতের শ্রীহীনতা থেকে প্রকৃতি মুক্তি পায়। বনে বনে ফুল ফুটে। আমগাছও মুকলিত হয়। মৌমাছি গুণ গুণ রবে ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহ করে বেড়ায়। প্রজাপতি রঙিন পাখা মেলে উড়তে থাকে। কোকিল ফিরে আসে এবং তার মধুর গানে প্রাণ উতলা হয়ে ওঠে।
উপসংহার:
প্রকৃতি যেন বাংলাদেশে এসে তার মনের মত জায়গাটি খুঁজে পায়। এখানে ছয়টি ঋতুর প্রতিটিরই নিজ নিজ বিশেষ সৌন্দর্য সম্পদ রয়েছে। প্রতিটি ঋতুতেই বাংলাদেশের মাঠ-ঘাট, বন-উপবন, গাছ-পালা, তরু লতা অপূর্ব রূপ-বৈচিত্র্যে অপরূপ হয়ে ওঠে।
![বাংলাদেশের ষড় ঋতু, বাংলার ষড়ঋতু প্রতিবেদন রচনা | Six seasons of Bangladesh 8 বাংলাদেশের ষড় ঋতু রচনা [ Six seasons of Bangladesh ] প্রতিবেদন রচনা](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/02/Bangla-GOLN-10-300x157.jpg)
আরও পড়ুন: