বাংলাদেশের বন্যা, বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার প্রতিবেদন রচনা | Essay on Floods in Bangladesh

বাংলাদেশের বন্যা, বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার  [ Essay on Floods in Bangladesh ] অথবা, আমাদের দেশের বন্যা – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]
Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]

বাংলাদেশের বন্যা রচনার ভূমিকা:

নদী-নালা, খাল-বিলের পানি যখন কূল ছাপিয়ে মানুষের বাড়িঘর ও জমি-জমা সব কিছু ডুবিয়ে দিয়ে তীব্র বেগে প্রবাহিত হয়, তখন তাকে বন্যা বলে। বন্যা আমাদের দেশের একটি জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত। প্রতি বছরই বন্যা। আমাদের জাতীয় জীবনে মারাত্মকভাবে আঘাত হানছে। হতভাগা বাঙালি জাতির জন্য নিষ্ঠুর বন্যা সবচেয়ে বড় দুঃখ অভিশাপ।

Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]
Flood in-Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]

মূল বক্তব্য:

(ক) বন্যার কারণ:

বাংলাদেশে সাধারণত জলবায়ু ও ভৌগোলিক কারণে বন্যা দেখা দেয়। এখানে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে নদ-নদী, খাল-বিল ইত্যাদি ডুবে বন্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া হিমালয়ের অস্বাভাবিক বরফগলা পানি এবং ভারত ও নেপালের অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি করে। নদ-নদীগুলো পলিমাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং কতিপয় নদীর গতি পরিবর্তন হওয়ায়ও বন্যা দেখা দেয়। অনেক সময় নদীর বাঁধ ভেঙ্গে এবং সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের ফলেও বন্যা হয়ে থাকে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

(খ) বাংলাদেশের বন্যা:

বিগত চার দশক থেকে বন্যা বাংলাদেশের একটি বার্ষিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। কোন কোন এলাকায় বছরে একাধিক বারও বন্যা দেখা দেয়। ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালের বন্যা মানুষের মনে এখনও বিভীষিকারূপে বিরাজ করছে। ১৯৬৪ সালের বন্যায় সারা বাংলাদেশ পানিতে প্লাবিত হয়েছিল। ১৯৭০ সালেও দেশের লক্ষ লক্ষ লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৭৪ সালেও বাংলাদেশের ১৯টি জেলার মধ্যে ১৭টি জেলা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৯৮৭ সালের বন্যায় দেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ বন্যায় দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়। ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। এ বন্যায় দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৩টি জেলা প্লাবিত হয়েছিল। তখন মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সীমা ছিল না। ১৯৯৮ সালের বন্যাও খুব হ দীর্ঘস্থায়ী ছিল। এ বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলা গ্লাবিত হয়। এ বন্যায় দেশের নানা স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]
Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]

(গ) বন্যার কুফল বা ক্ষয়ক্ষতি:

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দুঃখ ও অভিশাপ হচ্ছে বন্যা। প্রতি বছর ইনায়ে মানুষের বাড়িঘর ডুবে ও ভেঙে যায়, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে, মানুষ ও গবাদি পরে মৃত্যু ঘটে। সর্বহারা মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। বন্যার সময় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম অত্যধিক বেড়ে যায়। এতে করে দেশে দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। বন্যার সাথে সাথে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে কলেরা, বস্তু, ইনফ্লুয়ো ইত্যকার ব্যাধি। গোটা দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন ও ডাক চলাচলসহ বিভিন্ন বিভাগের কার্যাদি প্রচণ্ড হাচট খায়।

Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]
Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]

(ঘ) বন্যার সুফল:

বন্যার অনেক কৃষ্ণল থাকা সত্ত্বেও এর কিছু ভাল ফলও রয়েছে। বন্যা পলিমাটি বহন করে এনে আমাদের কৃষিভূমিকে উর্বরতা দান করে। এতে করে বন্যার পর দেশে প্রচুর ফসল জন্যে। এছাড়া, বন্যা গোটা দেশের সমুদয় ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে মুছে দেশকে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর করে দেয়।

Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]
Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]

(ঙ) বন্যা প্রতিরোধের উপায় :

বর্তমানে বন্যা সমস্যা আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা। বন্যা প্রতিবছরই আমাদের মুখের আস কেড়ে নিচ্ছে। তাই বন্যা সমস্যার একটা স্থায়ী ও আশু সমাধান প্রয়োজন। বন্যা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকার অনেক দিন থেকে বহুবিধ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু তাতে আশানুরূপ কোন ফল পাওয়া যায়নি। বন্যার প্রধান উৎস নদী। আর এ নদীগুলোর প্রধান উৎস মুখ হচ্ছে ভারত ও নেপালে। স্থায়ীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাহায্য ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তাছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য জলাধার তৈরি, বাঁধ নির্মাণ, নদী পথের গভীরতা বৃদ্ধি, প্রবাহের পথ পরিবর্তন ইত্যাদি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]
Flood in Bangladesh and its remedy [ বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা ]

উপসংহার:

বন্যা আমাদের জন্য এক বিরাট অভিশাপ। প্রতিবছর বন্যা দেশের বিপুল ক্ষতি সাধন করছে। আমাদের জাতীয় জীবনকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে। তাই বন্যা প্রতিরোধের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথিবীর নানা দেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নীতিমালা প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ করতে হবে। তবেই আমাদের দেশ বন্যার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment