বর্ষণমুখর একটি দিন, দিনের শুরুতে বর্ষা প্রতিবেদন রচনা। Esdsay on A Rainy day

বর্ষণমুখর একটি দিন, দিনের শুরুতে বর্ষা [ Esdsay on A Rainy day ] অথবা,  বর্ষার একটি দিন – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

বর্ষণমুখর একটি দিন রচনা । Esdsay on A Rainy day
বর্ষণমুখর একটি দিন রচনা । Esdsay on A Rainy day

বর্ষণমুখর একটি দিন রচনার ভূমিকা:

ঋতু বৈচিত্র্যের এ দেশে প্রতিটি ঋতুই আলাদা চিহ্ন ফেলে যায় তার সময়কালে । বসন্ত আমাদের ঋতুরাজ; আবির্ভাবের বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতিতে রাখা প্রভাবই তাকে এ খ্যাতি দিয়েছে। তবে সবগুলাে ঋতুর মধ্যে বর্ষা একেবারেই স্বতন্ত্র তার আপন চেহারায়। রােদ-বৃষ্টির খেলা আর কোনাে ঋতুতেই দেখা যায় না, যেমন দেখা যায় বর্ষায়।

প্রকৃতি ও বর্ষা:

প্রকৃতিতে বর্ষা ঋতু একটু আলাদা মেজাজ নিয়ে আসে। কবি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়:

‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাই আর নাহিরে।’

অর্থাৎ বর্ষা নিজেই তার বৈশিষ্ট্যকে সামনে তুলে ধরে। গ্রীষ্মের দাবদাহে মলিন প্রকৃতি যেন প্রাণ পায় বর্ষার ছোঁয়ায় । মাঠ-ঘাট জলে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। নদীনালার দুকূল ভরে ওঠে; ফসলের মাঠ জল-বাতাসের স্পর্শে তােলপাড় হয়ে যায়। কৃষকের ‘আল্লা মেঘ দে পানি দে প্রার্থনা পূর্ণ হয় সর্বাত্মকভাবে । মাঝির নৌকায় বাতাসের দোলা লাগে; পাগল হয় তার পাল । কদম, কেয়া ও জুই অরণ্যকে সাজিয়ে তােলে নববধূর সাজে।

বর্ষণমুখর একটি দিন রচনা । Esdsay on A Rainy day
বর্ষণমুখর একটি দিন রচনা । Esdsay on A Rainy day

আমাদের বর্ষাকাল:

আমাদের বর্ষাকাল দু’মাস আষাঢ় ও শ্রাবণ । কিন্তু ভৌগলিক ও জলবায়ু নানা পরিবর্তনে মাসের হিসেবে বর্ষা আর আটকে নেই। এখন আষাঢ়ের শেষভাগে বর্ষা শুরু হয়ে আশ্বিন পর্যন্ত গড়ায়। চারদিকে প্রকৃতির ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন তা ঋতুচক্ৰকেও ভালােভাবে ধাক্কা দিয়েছে। মানুষ তার ইচ্ছেমতাে প্রকৃতিকে তৈরি করতে গিয়ে শুধু বিপর্যয়ই সৃষ্টি করেছে। তাতে অবশ্য বর্ষা তার সময়সূচিতে পরিবর্তন আনলেও বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আনেনি। এখনাে এদেশে বর্ষা ঝর ঝর শব্দে মুখর করে তােলে চারিদিক।

দিনের শুরুতে বর্ষা:

দিনের শুরুতে ঘুম ভেঙে যখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম তখন মনে সন্ধ্যার অনুভূতি হলাে। চারদিক ঘনকালাে মেঘে আকাশ আবৃত হয়েছিল; উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম কোন দিক দিয়ে যে বাতাস বইছিল তা ঠিক বােঝা যাচ্ছিল তবুও জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ভেজা সে বাতাসে মুখও খানিকটা ভিজিয়ে নিলাম। তারপর চোখের সামনেই দিঘির জলে টুপটাপ বৃষ্টির ফোটা পড়তে শুরু করল। বাতাসের তােড়ে দিঘির জলে জোরে জোরে ঢেউও দিতে লাগল। তার মধ্যেই ছােট্ট একটা নৌকা এপার থেকে ওপারে হেলেদুলে পার হতে লাগল। মা পেছন থেকে ডাক দিলেন; বাধ্য হয়েই চোখ সরাতে হলাে।

মধ্যাহ্নের বর্ষা:

ঘড়ির কাঁটা বলছে বেলা গড়িয়েছে বেশ। কিন্তু বেলা ঠিক যেখানে ছিল সেখানেই আছে। এর মধ্যে বৃষ্টি তার গতি কমিয়েছে। কুলগাছের ডালে একটা কাক কা কা শব্দে রব করছে। একটুখানি রােদের দেখা মিললেও তা খুবই ক্ষণিকের; পরমুহুর্তেই মেঘমালা আবার জড়িয়েছে আকাশের কোল। তাই অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক। ভেজা কাপড়গুলাে পত পত শব্দে ছাদের রেলিঙে উড়ছে। ফুলগাছের টবগুলাে জলে পরিপূর্ণ হয়েছে; পাতাগুলাে গাঢ় সবুজ রং পেয়েছে।উঠোনের মধ্যে কয়েকটা চড়ই স্নান সেরে নিচ্ছে। বেশিক্ষণ তারা সেখানে থাকতে পারল না; ঝমঝম করে নেমে এলাে বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টি।

বর্ষণমুখর একটি দিন রচনা । Esdsay on A Rainy day
বর্ষণমুখর একটি দিন রচনা । Esdsay on A Rainy day

সায়াহ্নের বর্ষা:

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলাে, বৃষ্টি কমল না। কখনাে কখনাে একটু সময়ের জন্য বৃষ্টি তার গতিকে কমিয়েছে; কিন্তু একেবারে ক্ষান্ত দেয়নি। জানালা দিয়ে আবারাে বাইরে তাকালাম। দেখলাম একঝাক সাদা বক উড়ে গেলাে উত্তর থেকে দক্ষিণে। কোথা থেকে খুব কম সময়ের জন্যে অদ্ভুত একটা গন্ধ নাকে ভেসে এলাে। মনােযােগ দিতেই বুঝলাম বাতাবি লেবুর ফুল। মেঘ ডাকছে, মাঝে মাঝে বিজলিও চমকাচ্ছে। হয়ত আবারাে খুব জোরে বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টি দেখব বলে দাড়িয়ে রইলাম ।

 

বর্ষায় আত্মপ্রতিকৃতি:

এক ফাঁকে এসে আয়নার সামনে দাড়িয়েছিলাম; বৃষ্টির জল তখনাে হাতে মুখে লেগে আছে। তাতে নিজের মধ্যে কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলাে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখে বর্ষার সঙ্গে মেলাতে লাগলাম বাইরে দুটি বেনে বৌ পাখি ডাকছে। দেয়ালে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি টানানাে ছিল তার চোখে চোখ রাখলাম। মনে মনে গেয়ে উঠলাম ‘এসাে ! নীপবনে ছায়াবীথি তলে এসাে করাে স্নান নবধারা জলে। নিজেকে যেন নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম ওই স্বল্প একটু সময়ে। বড় অদ্ভুত সেই স্বল্প সময়ের অনুভূতি।

গানে কবিতায় বর্ষাযাপন:

হাতের কাছে ছিল রবীন্দ্রনাথের সঞয়িতা; উল্টাতে উল্টাতে কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’ আবৃত্তি করতে শুরু করলাম । সকাল বেলায় পড়ছিলাম বৃষ্টি পড়ে টাপুর-টুপুর নদে এলাে বান। দুপুরে খাওয়ার পর শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা হাতে ছিল— কী অসাধারণ কটি পঙক্তি বৃষ্টি পড়ে এখানে বারাে মাস, এখানে মেঘ গাভীর মতাে। চরে।’ সন্ধ্যায় নজরুলের একটি অসাধারণ গান মনে ভেসে এলাে শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মােরে।’ হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে গেল, আর তখনি বর্ষার অনুভূতি যেন আরও বেশি করে জাগ্রত হলাে । আবার রবীন্দ্রনাথের একটি গান গুন গুন করে উঠলাম আজি ঝড়ের রাতে তােমার অভিসার; পরান সখা বন্ধু হে আমার।

বর্ষণমুখর একটি দিন রচনা । Esdsay on A Rainy day
বর্ষণমুখর একটি দিন রচনা । Esdsay on A Rainy day

বর্ষায় স্মৃতিরােমন্থন:

আমার বয়স যখন ছয় বছর তখন এক বর্ষার পুরােটা সময় গ্রামে কাটিয়েছিলাম। আজ হঠাৎ করেই সেসব কথা মনে ভেসে এলাে। গ্রামের বর্ষা আরও চঞ্চল আরও অদ্ভুত। চারদিকের পথঘাট কাদায় পরিপূর্ণ; তাতেই লুটোপুটি করেছি। নদীর জলে কলাগাছের ভেলা ভাসিয়ে ভেসে গেছি বেশ খানিকটা। তারপর মাছের নৌকাগুলাে জোর করে ধরে এনেছি পাড়ে। পিচ্ছল পেয়ারা গাছে কতবারের চেষ্টায় তবেই উঠতে পেরেছি। তারপর যখন মিষ্টি পেয়ারায় কামড় বসিয়েছি, তখন মন আনন্দে ভরে গেছে। কিন্তু সেগুলাে এখন শুধুই স্মৃতি।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার:

দিনের শুরুটা হয়েছিল অন্ধকার দিয়ে। কিন্তু বর্ষা অন্ধকারের ঋতু নয় । আমার মনে সে সবসময় চঞ্চলতা সৃষ্টি করেছে। চারদিক যেমন সে জলে পূর্ণ করেছে, তেমনি আমাকেও সিক্ত করেছে তার কোমলতায়। আমার সমস্ত স্মৃতি ও সত্তাকে জড়িয়ে রেখেছে বর্ষার একটি ক্ষণ, একটি মুহূর্ত, একটি দিন। তবে কিছুটা শূন্যতাও তৈরি করেছে বর্ষা আমার মধ্যে; মনে মনে আওড়েছি—

‘আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ছবি এঁকেছি…

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment