বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি রচনা

বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি নিয়ে রচনার একটা নমুনা তৈরি করবো আজ। এই রচনাটি আমাদের “মানবতা শান্তি মৈত্রী” সিরিজের একটি রচনা। আমাদের সকল রচনা শিক্ষার্থীদের ধারণা দেবার জন্য। মুখস্থ করার জন্য নয়। এই রচনা থেকে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ধারণা নেবেন। তারপর নিজের মতো করে নিজের নিজের ভাষায় লিখবেন।

বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি রচনা

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস | আন্তর্জাতিক ও জাতীয় দিবস | বাংলা রচনা সম্ভার

 

ভূমিকা :

মানুষ সহজাতভাবে শান্তিকামী । কিন্তু মানুষের সহজাত শান্তি-প্রত্যাশাকে নস্যাৎ করার অজস্র প্রয়াস কলঙ্কিত করেছে মানুষের ইতিহাসের অনেক অধ্যায়কে। বিগত সাড়ে পাঁচ হাজার বছরে মানুষের ইতিহাস প্রত্যক্ষ করেছে সাড়ে চৌদ্দ হাজার যুদ্ধ। সব শেষে বিশ শতকে দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ মারণযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে শান্তিকামী বিশ্ববাসী বুঝেছে যুদ্ধ মানে সভ্যতার বিনাশ, যুদ্ধ মানে মানুষের অস্তিত্বের অবসান। আর তাই শান্তিকামী মানুষ শান্তি রক্ষার প্রত্যাশায় শান্তির বাণী উচ্চারণ করে প্রতিষ্ঠা করেছে জাতিসংঘ । গোটা বিশ্ব জুড়ে স্লোগান তুলেছে : যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।

Atomic bombing of Japan বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি রচনা

 

যুদ্ধের কারণ :

যুদ্ধ সব সময় অনভিপ্রেত। তবুও যুদ্ধের দাবানলে বিশ্ব দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে  কিন্তু কেন? উত্তর অতি সহজ। মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকেই যুদ্ধের সূত্রপাত। এক রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের ওপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধ নামক মরণ খেলায় মেতে ওঠে। তাছাড়া স্বার্থবুদ্ধি যখন প্রবল হয়ে ওঠে, যুদ্ধ তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ব্যক্তি জীবনের ঈর্ষা জাতীয় জীবনে ছড়িয়ে পড়লে যুদ্ধ বাধে। শক্তিশালী জাতি অপেক্ষাকৃত দুর্বল জাতিকে পদানত রেখে নিজের স্বার্থ আদায় করতে চায়। তখন দুর্বল জাতি টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রনায়কদের অদূরদর্শিতা ও লোলুপার কারণেও যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এভাবেই পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য যুদ্ধ।

বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি | মানবতা শান্তি মৈত্রী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

যুগে যুগে শান্তির অন্বেষণ :

পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ যুদ্ধ চায় না। তাই হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ শান্তির অন্বেষণ করে আসছে বিভিন্ন পন্থায়। কখনো রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, আবার কখনো শান্তির জন্য যুদ্ধ করে, বিপ্লব করে, শেষ পর্যন্ত ধর্মের রাজনীতি করে। মানবজাতিকে শান্তির পথে আনার জন্য যুগে যুগে আল্লাহ নবী-রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল মহাপুরুষেরই আদর্শ ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। মানুষও সদা শান্তিপিয়াসী। তারা জানে, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও মারামারি শান্তির পথকে পিচ্ছিল করে, ধ্বংসলীলাকে সম্প্রসারিত করে। তবু মানুষ অনাহূত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, বাজে মৃত্যুর উন্মাদ রাগিণী। শান্তির ললিতবাণী বার্থ পরিহারের মতো শোনায়।

War and Destruction 1 বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি রচনা

অস্ত্রভাণ্ডার ও পৃথিবীর অস্তিত্ব:

বর্তমান বিশ্বে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৃহৎ শক্তিবর্গের শক্তির মত্ততায় 1: ও অস্ত্রের ঝনঝনানিতে পৃথিবী প্রকম্পিত। বর্তমানেও যুদ্ধ ছাড়া পৃথিবী একটি দিনও শান্তিতে অতিবাহিত করতে পারছে না। বর্তমান বিশ্বে বৃহৎ শক্তিগুলো অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা একের পর এক তৈরি করে চলেছে জীবনবিধ্বংসী পারমাণবিক ও হাইড্রোজেন বোমা। পৃথিবীতে এখন যে পরিমাণ মারণাস্ত্র মজুদ আছে, তা দিয়ে কয়েকবার এ বিশ্বকে ধ্বংস করা যাবে। এদিকে বিভিন্ন জাতির মধ্যে অবিশ্বাস ও ভুল বোঝাবুঝি দিনদিন বেড়েই চলেছে ।

War and Destruction 2 বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি রচনা

 

একক পরাশক্তি ও যুধ্যমান পৃথিবী :

গত শতাব্দীতে শীতল যুদ্ধ এবং পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক বুকে বিশ্ব বিভক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি মুহূর্তে যুদ্ধের ভয়ে সময় কাটিয়েছে দুনিয়াবাসী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরস্পর পরস্পরের দিকে তাক করে রেখেছিল দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। ফলে বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য ক্ষুণ্ন হয় এবং সারা দুনিয়া আমেরিকার শিকার ক্ষেত্র (Hunting ground)-এ পরিণত হয়।

জাতিসংঘ হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তল্পিবাহক। আফগানিস্তানে তালেবান এবং ইরাকে সাদ্দাম সরকারকে উৎখাতের নামে যুক্তরাষ্ট্র চালাচ্ছে আগ্রাসন ও দখলদারিত্ব। যুক্তরাষ্ট্র এখন সুদান, ইরান ও সিরিয়ার ওপর হামলা চালানোরও পাঁয়তারা করছে । কাজেই একক পরাশক্তি বিশ্ববাসীকে অন্যায় ও অসম শক্তির সমর আতঙ্কে ভাবিয়ে তুলেছে।

War and Destruction 3 বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি রচনা

 

যুদ্ধর কুফল :

যুদ্ধের পরিণতি ধ্বংস ও সর্বনাশ। যুদ্ধের ফলে যুগে যুগে কত নিরীহ মানুষের যে মৃত্যু হয়েছে, কত ঘর-বাড়ি জ্বলেপুড়ে ছাই হয়েছে, কত মানুষ বিকলাঙ্গ হয়েছে, তার ইয়াত্তা নেই। যুদ্ধ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে স্ত করে দেয়। জীবনে আশঙ্কা, উত্তেজনা ও অস্বস্তি বৃদ্ধি করে। তাছাড়া অনিশ্চিয়তা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি যুদ্ধের ক্ষতিকর দিক।

যুদ্ধ জাতিতে জাতিতে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে । রোগ, শোক, দুর্ভিক্ষ যুদ্ধের বড় অবদান । যুদ্ধের আগুনে কত শস্য নষ্ট হয়, দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা সভ্যতা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ১০০ বছরে গড়ে ওঠা সভ্যতা যুদ্ধের কারণে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। যুদ্ধে স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ আকাশ-বাতাস ভারী করে তোলে। যুদ্ধ পরিবেশকে বিষাক্ত করে অসংখ্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়। Nepoleon বলেন, ‘It is easy to start a war but difficult to stop; peace is desired to eliminate the possibility of war.’

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বিশ্বপরিস্থিতির লক্ষণীয় পরিবর্তন :

যতই দিন যাচ্ছে বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষের ধারণা ও তার পরিপ্রেক্ষিত পাল্টে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে অনেক ছোট হয়ে গেছে আজকের পৃথিবী। নতুন শতাব্দীতে পদার্পণ করে আজ যদি পিছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখব শুধু বিংশ শতাব্দীতে কত অকল্পনীয় পরিবর্তন ঘটে গেছে বিশ্বে। সাময়িক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য কতবারই না এদিক-সেদিক পরিবর্তিত হয়েছে।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্যাস্ত না হওয়ার যে সদম্ভ ঘোষণা লর্ড কার্জন করেছিলেন তা আজ শতাব্দী না পেরোতেই হাস্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বলশেভিক বিপ্লবের দুনিয়া কাঁপানো আওয়াজ একদিন সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিল মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়, দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল মুক্তির সংগ্রাম। অমিত ক্ষমতার অধিকারী সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন সে সংগ্রামকে হীনবল করে দিয়েছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একক ক্ষমতাধর শক্তিতে পরিণত হয়েছে, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারা বিশ্ব।

এ মুহূর্তে বিশ্বের সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা এক বিশ্বকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার, অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, অতি উন্নত ইন্টারনেট ও দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যম পৃথিবীকে পরিণত করেছে এক বৈশ্বিক গ্রামে। অথচ এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার কোটি কোটি মানুষ প্রাযুক্তিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও ব্যাধি এদের নিত্যসঙ্গী। একদিকে সম্পদের পাহাড়, অঢেল ঐশ্বর্য, অকল্পনীয় বিলাস বৈভব, অন্যদিকে এক ‘জলহীন ফলহীন আতঙ্ক পাণ্ডুর মরুক্ষেত্রে, পরিকীর্ণ পশু কঙ্কালের মাঝে মরীচিকার প্রেতনৃত্য’ চলছে— এ বিপরীতধর্মী অসুন্দর অসভ্যতা বর্তমান বিশ্বের এক নিয়ামক চিত্র।

Rescue workers and US Military soldiers search through rubble and debris at the United Nations (UN) Office of Humanitarian Coordinator Building in Baghdad, Iraq, after a truck bombing destroyed much of the building during Operation IRAQI FREEDOM.

যুদ্ধের আশঙ্কা ও শক্তির ভারসাম্য :

বৈষম্য বঞ্চনার বিরুদ্ধে যুগে যুগে মানুষ লড়াই করেছে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় । আজও মানুষ তার সহজাত বাঁচার তাগিদে সাম্রাজ্যবাদ-বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কোথাও তা গণতন্ত্রের সংগ্রাম, কোথাও তা স্বাধীনতার সংগ্রাম নামেই চলছে। ফলে ছোট ছোট আঞ্চলিক যুদ্ধ-বিদ্রোহ দিকে দিকে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বৃহৎ শক্তিগুলো অযাচিতভাবে আগের মতোই স্বীয় স্বার্থে হস্তক্ষেপ করে চলেছে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে।

বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি | মানবতা শান্তি মৈত্রী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঘটে চলেছে সারা বিশ্বে। আমাদের উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তান আজ একে অপরকে পারমাণবিক হুমকি দিচ্ছে। পাল্টা সামরিক শক্তির অস্তিত্ব ও প্রতিযোগিতা আর না থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ নতুন নতুন মারণাস্ত্রের বিকাশ ঘটাচ্ছে। এমনকি মহাশূন্যেও চলছে  অস্ত্রের বিস্তার । এ শতাব্দীর প্রথমদিকে মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে সংঘটিত দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধে সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ মারা যায়। অপরিমেয় মানবিক ও আর্থিক ক্ষতি বিশ্বকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যায়।

সৌভাগ্যের কথা, এর পরে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় পৃথিবীতে আর কোনো বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। যদি হতো তাহলে সঞ্চিত আণবিক অস্ত্র পৃথিবী নামক এ গ্রহকে মহাশূন্যে মিলিয়ে দিত চিরতরে ধ্বংস হয়ে যেত মানবসভ্যতা। সভ্যতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ভয়েই বৃহৎ শক্তিবর্গ বিশ্বকে যুদ্ধের কিনারায় ঠেলে দিয়েও আবার সভয়ে পিছনে চলে আসছে। শক্তির এ ভারসাম্য পৃথিবীকে তাপ- পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেশ কয়েকবার রক্ষা করেছে।

Action for Peacekeeping 2018 বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি রচনা

শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের ভূমিকা :

১৯৪৫ সালের আগস্টে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসান ঘটালেও এ নতুন অস্ত্রের ভয়াবহ ক্ষমতা দেখে সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। শান্তিকামী মানুষের উদ্যোগে এ সময়ে গঠিত হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা জাতিসংঘ। তখন থেকে সারা বিশ্বে জাতিসংঘ তার নানা সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও মোটামুটিভাবে বিশ্বশান্তির সপক্ষে কাজ করে চলেছে।

বৃহৎ শক্তিবর্গ অনেক সময় ক্ষমতার জোরে জাতিসংঘকে চ্যালেঞ্জ করলেও বিশ্বজনমতের ভয়ে তারা এখনো জাতিসংঘকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করতে পারেনি। আজ বিশ্বের নানা গোলযোগপূর্ণ জায়গায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ও পর্যবেক্ষকরা কাজ করে চলেছে শান্তির সপক্ষে। শুধু তাই নয়, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষদেরও তারা সাহায্য জুগিয়ে চলেছে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অশান্তি ও বিদ্রোহজনিত কারণে সৃষ্ট উদ্ভ্রান্ত সমস্যায় তারা আর্থিক ও নৈতিকভাবে সাহায্য করছে।

Long range patrol with the MINUSMA contingent of Bangladesh based in Gao, northern Mali.

বিশ্বশান্তি উদ্যোগ :

জাতিসংঘের এ ভূমিকার পাশাপাশি বিশ্বের প্রগতিশীল শক্তির সাহায্য- সহযোগিতায় সে সময় গড়ে ওঠে এক শান্তি আন্দোলন, যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’— এ শ্লোগান নিয়ে। বিশ্বশান্তি পরিষদ সে শান্তির সংগ্রামকে নেতৃত্ব দেয়। দুটি বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপ রুটির পাশাপাশি শান্তির দাবি তোলে। ইউরোপের লাখ লাখ মানুষ শান্তির মিছিলে অংশ নিতে শুরু করে। দেশে দেশে গড়ে ওঠে বিশ্বশান্তি পরিষদের সংগঠন।

শান্তির দাবি বাঁচার দাবিতে রূপান্তরিত হয়। কারণ, তাপ- পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের যুগে যুদ্ধ আর বিলাসিতার পর্যায়ে থাকে না। এ কালের যুদ্ধ আর কাউকে বঁচতে দেবে না এ প্রত্যয় মানুষকে সচেতন করে। সে সচেতন মানুষ যুদ্ধবাজ শক্তিকে প্রতিরোধ করতে শুরু করে। ফলে বিচ্ছিন্ন আকারে স্থানীয়ভাবে অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হলেও তা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কোনো যুদ্ধে রূপ লাভ করেনি।

Bangladeshs contribution to UN peacekeeping mission 2 বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি রচনা

 

যুদ্ধের বিপদ এখনো বিদ্যমান:

বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের অসতর্ক ব্যবহারের বিপদ এখনো আমাদের মাথার উপরে ঝুলছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীচক্রের হাতে যদি কোনো কারণে সেসব মারণাস্ত্র গিয়ে পড়ে তাহলে একটি পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য বিশ্বের দিকে দিকে জন্ম দিচ্ছে উদ্বেগের। নক্ষত্রযুদ্ধের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে মার্কিনমূলকে। লেসার রশ্মির সাহায্যে প্রতিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র মহাশূন্যে ধ্বংস করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে মার্কিন সমর বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের ফলে বিশ্বে শক্তির ভারসাম্যের যে ক্ষতি হয়ে গেছে তাতে অনুন্নত জাতিসমূহকে আজ অসহায়ভাবে মার্কিন অবরোধ ও সামরিক হুমকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। লিবিয়া, ইরাক, কিউবা, উত্তর কোরিয়া আজ সে হুমকির শিকার। এতে যে কোনো সময় পৃথিবীতে শান্তি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কাজেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান হলেও পৃথিবী আজ অন্য ধরনের এক সংকটের মোকাবিলা করছে।

বর্তমান বিশ্ব ও বিশ্বশান্তি | মানবতা শান্তি মৈত্রী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

উপসংহার:

যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। যুদ্ধ মানেই দুর্ভিক্ষ, উপবাস, মৃত্যু, তিলে তিলে গড়ে তোলা সভ্যতার সম্পূর্ণ ধ্বংস। তাই যুদ্ধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আজ প্রতিরোধী সৈনিক, শান্তির জাগ্রত প্রহরী। অতীতের মতোই আজ বিশ্বব্যাপী শান্তির আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। সারা বিশ্বে যদি কোটি কোটি মানুষ আজ অস্তিত্বের তাগিদে শান্তির সপক্ষে রাস্তায় নেমে আসে তাহলেই শুধু যুদ্ধবাজ বর্বরজাতি দংশন থেকে এই বিশ্বকে রক্ষা করা সম্ভব।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment