বন্যায় ত্রাণ কাজে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বিদেশি বন্ধুর কাছে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা

বন্যায় ত্রাণ কাজে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বিদেশি বন্ধুর কাছে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , ঐতিহাসিকভাবে, চিঠির প্রচলন ছিল প্রাচীন ভারত, প্রাচীন মিশর, সুমের, প্রাচীন রোম, মিশর এবং চীনে, এবং এই ইন্টারনেটের যুগেও এর চল বর্তমান।

বন্যায় ত্রাণ কাজে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বিদেশি বন্ধুর কাছে পত্র

কলেজ ছাত্রাবাস, সিলেট

১৫ জুন, ২০০০

প্ৰিয় ‘ক’, ১৫

আমার অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। আশা করি ভালো আছ। গত এক সপ্তাহ আমরা সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। তাই তোমার চিঠির উত্তর দিতে বিলম্ব হল। তোমার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে এ সময়ে হঠাৎ বন্যা কেন? তোমার মতো আমারও একই প্রশ্ন। বর্ষা আসতে এখনও অনেক দেরি। কিন্তু সিলেট এলাকায় হঠাৎ বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল, ভারতীয় সীমান্তে নদী, বাঁধ ইত্যাদি কারণে অকালে যে বন্যার সৃষ্টি হয় তা তোমার জানার কথা নয়। যে কারণেই হোক নিশ্চয়ই তোমাদের দেশে এরকম অকাল বন্যা হয় না- না হোক তা-ই কাম্য। আমাদের দেশে এরকম বন্যা প্রায় প্রতি বছরই হয়ে থাকে।

 

বন্যায় ত্রাণ কাজে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বিদেশি বন্ধুর কাছে পত্র

 

এবারেও তাই হয়েছে। তবে ক্ষতির মাত্রা অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উঠতি ফসলের। এলাকার চাষিদের ঘরে ঘরে হাহাকার। বন্যার ফলে অগণিত লোক গৃহহীন হয়েছে। শতকরা নব্বই ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে। মানুষ আশ্রয়হীন, খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। অনিবার্য কারণে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে অঞ্চলটিতে, পথ ও পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর অভাব চরমে উঠেছে। ত্রাণের অভাবে এই বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারিভাবে এখনও কোনরূপ ত্রাণ-সামগ্রী এসে পৌঁছায় নি।

 

বন্যায় ত্রাণ কাজে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বিদেশি বন্ধুর কাছে পত্র

 

তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগটনগুলো যতটুকু জোগান দিতে পারছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তোমার শুনে ভালো লাগবে যে ত্রাণকার্যে আমার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল লক্ষ করার মতো। আজ প্রায় তিন দিন হলো ঘরে ফিরতে পারি নি, স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দিনরাত নৌকায় করে ত্রাণসামগ্রী বিলিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের জোগান খুব সীমিত। ইতোমধ্যে আমরা শহরাঞ্চলের অবস্থাসম্পন্ন লোকদের বাসাবাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করতে শুরু করেছি, এলাকার এই চরম দুরবস্থার মধ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বানও করেছি। এতে আশানুরূপ সাড়া পড়েছে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আজ-কালের মধ্যে সরকারি ত্রাণ এসে পৌঁছবে বলে আশা করা যায়। এতে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যাবে। তুমি ইচ্ছে করলে আর্থিক সাহায্য পাঠিয়ে আমাদের এই মহতী উদ্‌যোগের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পার। আপাতত লেখাপড়া বন্ধ। স্কুল-কলেজ কবে খুলবে, বন্যার পানি কতদিনে নামবে, তার কোন স্থিরতা নেই। সমস্ত স্বাভাবিক হলে পরবর্তী পত্রে তোমাকে জানাব। তুমি আমার আন্তরিক ভালোবাসা নিও। বাসার সবার প্রতি শ্রেণিভেদে সালাম ও স্নেহ রইল।

ইতি

গুণমুগ্ধ

আরও দেখুন:

Leave a Comment