ফাল্গুন কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত “ফাল্গুন” কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে বসন্ত ঋতুর অনিন্দ্যসুন্দর রূপ ও আবেশময় আবহের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। কবিতাটি মূলত বসন্তের আগমন, প্রকৃতির রঙিন পরিবর্তন এবং প্রাণের নবজাগরণকে কেন্দ্র করে রচিত। ফাল্গুন মাসের উজ্জ্বল ফুল, পলাশ-শিমুলের আগুনরঙা শোভা, কোকিলের ডাক, মৃদুমন্দ বাতাস ও প্রেমের আবেশ—সবকিছু মিলিয়ে কবি এক চিত্রময়, সঙ্গীতধর্মী ও প্রাণবন্ত পরিবেশ ফুটিয়ে তুলেছেন।

এ কবিতায় শুধু প্রকৃতির বর্ণনা নয়, বরং বসন্তের মাধ্যমে জীবনে আনন্দ, প্রেম ও সৃজনশীলতার স্ফুরণ ঘটানোর আহ্বানও নিহিত রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর অনন্য শব্দচয়ন, সুরেলা ছন্দ এবং সংবেদনশীল অনুভূতির মাধ্যমে “ফাল্গুন”-কে করেছেন চিরকালীন, যা আজও পাঠকের হৃদয়ে নতুনের বার্তা পৌঁছে দেয়।

 

ফাল্গুন কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

ফাল্গুনে বিকশিত

      কাঞ্চন ফুল,

ডালে ডালে পুঞ্জিত

      আম্রমুকুল।

চঞ্চল মৌমাছি

      গুঞ্জরি গায়,

বেণুবনে মর্মরে

      দক্ষিণবায়।

      স্পন্দিত নদীজল

          ​​ ঝিলিমিলি করে,

      জ্যোৎস্নার ঝিকিমিকি

          ​​ বালুকার চরে।

      নৌকা ডাঙায় বাঁধা,

          ​​ কাণ্ডারী জাগে,

      পূর্ণিমারাত্রির

          ​​ মত্ততা লাগে।

খেয়াঘাটে ওঠে গান

      অশ্বথতলে,

পান্থ বাজায়ে বাঁশি

      আন্‌মনে চলে।

ধায় সে বংশীরব

      বহুদূর গাঁয়,

জনহীন প্রান্তর

      পার হয়ে যায়।

      দূরে কোন্‌ শয্যায়

          ​​ একা কোন্‌ ছেলে

      বংশীর ধ্বনি শুনে

          ​​ ভাবে চোখ মেলে–

যেন কোন্‌ যাত্রী সে,

      রাত্রি অগাধ,

জ্যোৎস্নাসমুদ্রের

      তরী যেন চাঁদ।

      চলে যায় চাঁদে চড়ে

          ​​ সারা রাত ধরি,

      মেঘেদের ঘাটে ঘাটে

          ​​ ছুঁয়ে যায় তরী।

      রাত কাটে,​​ ভোর হ|,

          ​​ পাখি জাগে বনে–

      চাঁদের তরণী ঠেকে

          ​​ ধরণীর কোণে।

 

 

ফাল্গুন কবিতা আবৃত্তি :

 

 

Leave a Comment