প্রবাদ প্রবচনের জনপ্রিয়তার কারণ – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “নির্মিতি” বিষয়ের ” প্রবাদের শ্রেণিকরণ” সেকশনের একটি পাঠ। প্রবাদ একদিকে লোকোক্তি অর্থাৎ প্রাকৃত; প্রবাদ অজ্ঞাত মানুষের তৈরি, জনতার মুখে চলে আসা আপ্তবাক্য – যাতে আছে মাটির গন্ধ। আর আছে প্রাজ্ঞোক্তি-স্বনামধন্য মানুষের সৃষ্টি—যা বিকীর্ণ করে বুদ্ধির বর্ণালি দীপ্তি। মানব জীবনের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, ভূয়োদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রবাদ ও প্রবচন পরিবৃদ্ধি লাভ করে আসছে।” যুগ যুগ অভিজ্ঞতা কায়রোদর্শন মাধ্যমে, ও প্রবচন্দ্র লাভ করে আসছে। এ যুগ যুগ লোকমুখেই সীমাবদ্ধ নয়; সাহিত্যে তার বিচরণ এখন যত্রতত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।
প্রবাদ প্রবচনের জনপ্রিয়তার কারণ | প্রবাদের শ্রেণিকরণ | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা
তাই এগুলো এখন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নিজস্ব সম্পদ এবং ঐতিহ্যেরও অন্তর্ভুক্ত। যুগ-যুগান্তরের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এমনভাবে মিলে যায় যে আমরা প্রবাদে তার প্রতিফলন দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হই। জনপ্রিয় প্রবাদ-প্রবচনগুলো তাই সহজেই সর্বজনগ্রাহ্য বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পেরেছে এবং আধুনিক যুগে প্রায় সব ধরনের রচনায় প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, সংবাদপত্র, বিজ্ঞাপন, বক্তৃতা, এমনকী দৈনন্দিন কথাবার্তায়ও প্রবাদের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এর প্রয়োজনের বিভিন্ন দিক : কোনো স্বচ্ছন্দ আন্তরিক কথাবার্তায় বা বর্ণনায় বক্তব্যকে চমকপ্রদ করে ইঙ্গিতময় করে তোলার ক্ষেত্রে সাধারণত প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহার হয়ে থাকে। নতুন অর্থে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে। প্রবাদ-প্রবচন মানবজীবনের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বাণীমঞ্জরি, যা একটা পূর্ণাঙ্গ বাক্যে বা কবিতার ছন্দে রচিত হয়ে থাকে। এতে ভাষা শ্রীমণ্ডিত ও অলঙ্কারসমৃদ্ধ হয়।
প্রবাদের রয়েছে গভীর অর্থব্যঞ্জকতা বা স্বল্প শব্দ প্রয়োগে গভীর ভাব প্রকাশের আশ্চর্য ক্ষমতা। অনেক শব্দ প্রয়োগ করে যে ভাব প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ে, প্রবাদে তা অল্পকথায় সংহতভাবে প্রকাশিত হয়। প্রবাদে সাধারণত এমন অভিজ্ঞতাই বাণীরূপ পায় যা সচরাচর সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার জগৎ থেকে বাইরে নয়। প্রবাদের ভাবসত্যের জগৎ আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতার পরিমণ্ডলের মধ্যে থাকে বলে তা সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে ওঠে।
কবি, সাহিত্যিক বা প্রাজ্ঞ ব্যক্তিগণ তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে এ-জাতীয় বাক্য বা শব্দ মানব-জীবন বা সমাজের কোনো বৈশিষ্ট্য বা চরিত্র বা স্বভাব বা অবস্থাকে বোঝাতে ব্যবহার করে থাকেন। প্রবাদের সরল প্রকাশভঙ্গি সহজেই শ্রোতার মনে গেঁথে যায়। সহজ সারল্য ও অনায়াস অর্থবোধগম্যতার জন্যে – সাধারণ মানুষ তাই প্রাত্যহিক জীবনে প্রবাদ-প্রবচন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।
প্রবাদের শ্রেণিকরণ
অর্থবৈশিষ্ট্যের দিক থেকে প্রবাদকে নানাভাবে ভাগ করা যায়। অভিজ্ঞতামূলক, নীতিকথামূলক, ইতিকথামূলক ঐতিহাসিক, মানবচরিত্রের সমালোচনা, সমাজের রীতিনীতি, প্রসিদ্ধ ঘটনা ইত্যাদি বিষয়ক অসংখ্য প্রবাদ বাংলা ভাষায় ধর্মের কল বাতাসে নড়ে (নীতিকথামূলক)। ধান ভানতে শিবের গীত (ইতিকথামূলক)। &. মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত (সামাজিক রীতিনীতিজ্ঞাপক)। লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন (প্রসিদ্ধ ঘটনামূলক) ইত্যাদি।

আরও দেখুন: