প্রথম চুম্বন গল্পটি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত একটি রেমান্টিক গল্প।
প্রথম চুম্বন – সৈয়দ শামসুল হক
প্রথম চুম্বন হয় পুণ্য, প্রথম চুম্বন হয় পাপ। প্রতিটি চুম্বনই প্রথম চুম্বন অথচ গভীরে ও প্রকৃত কিন্তু প্রথম নয়। সুরাসুরে ভাসমান ও টলমল আমার মাথার ভেতরে রমণীর ঠোট যেন এক রক্তিম নৌকা-উলটো দিক থেকে দেখছি-পানিতে তার নিখুঁত প্রতিবিম্ব রচিত হয়ে একজোড়া হয়ে আছে। সন্ধ্যে থেকে আমরা বসে আছি বাংলাের বারান্দায়। বড়া সাব কা বাংলা। বান্টি এখানে বড় সাহেব-ম্যানেজার। বই, সুরা এবং একাকিত্ব তার প্রিয় এবং একমাত্র সঙ্গী। সন্ধ্যা থেকে আমরা সুরা পান করছি। বান্টি বলে, আজ বাগানে কিছু চুরি হবে।
অমাবস্যার রাত আজ কিন্তু বান্টির কণ্ঠে চুরির জন্যে কোনাে উদ্বেগ লক্ষ্য করি না, যেনবা সে স্বগতােক্তি করেছে। মাথার ভেতর থেকে আমি রমণীর ঠোট মুছে ফেলতে পারি না। বান্টি ফরাসি সেই কবিতার পংক্তিগুলাে আবৃত্তি করছিল, তােমাকে দেখলেই আমার মনে পড়ে যায় জাতীয় পতাকার কথা। তােমার চোখের নীল, দাঁতের শাদা, ঠোটের লাল। ফরাসি পতাকায় আছে ঐ তিনটে রঙ। আমি গেলাশে চুমুক দেই। একেক সময় একেকটা ছবি হঠাৎ পেয়ে বসে। এখন ঠোটের ছবি। গেলাশে তরল সােনার মতাে সুরা। গেলাশে ছোঁয়ানাে আমার এই ঠোট যেন চুম্বন করছে। কতকাল আমি চুম্বনরহিত, কতকাল আমি অচুম্বিত। আমাদের সমুখে একটি রাত তার গাঢ় অন্ধকার নিয়ে পায়ে পায়ে নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে।
আমি পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি কোনাে মানুষ কিম্বা প্রাণী নয়, রাতের পায়ের শব্দ। রাতের পায়ের শব্দ শুনতে হলে সিলেটে আসতে হবে, আসতে হবে চা বাগানে। একদিন হঠাৎ এমনি এক ভ্রমণে খুঁজে পাই বান্টিকে। তারপর থেকে মাঝেমাঝেই আমি তার কাছে আসি । আমি বিয়ে করেছিলাম, এক বছরের মাথায় কাকলী আমাকে ছেড়ে চলে যায়। ও, না, না-সে জগত ছেড়ে চলে যায় না, সে আমাকে ছেড়ে অন্য কারাে কাছে চলে যায়। আর আমি আবিষ্কার করি, বান্টি এখনাে বিয়েই করেনি।
সন্ধে থেকে বান্টি কবিতা আবৃত্তি করছিল। অসাধারণ তার স্মৃতি। ইংরেজি কবিতা, অন্য ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনূদিত কবিতা, এমন কি রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত ইংরেজি অনুবাদে বান্টির কণ্ঠে-কারণ, সে বাংলা কখনাে পড়েনি। ইহা হয় আমার জীবনের এক ট্রাজেডি যে, আমি বাঙালি কিন্তু আমার পিতা আমাকে বাংলা শিখাইল না। ইংরেজি পড়েছে ইংরেজের কাছে নয়, তাই নির্ভুল ইংরেজি বলতে পারলেও তার উচ্চারণ ইংরেজের মতাে নয়।
কলকাতা থেকে সাতচল্লিশ সালে যখন এসেছিল, ঢাকায় আমরা তাকে পাই ক্লাস নাইনে, সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে সে বিশেষ ব্যবস্থায় ইংরেজিতেই সব বিষয়ে পড়তে এবং পরীক্ষা দিত। আজ সন্ধ্যা থেকে বান্টি আবৃত্তি করছে প্রেমের কবিতা, দেহস্পর্শের কবিতা, চুম্বনের কবিতা। আমি এখন অনেকগুলাে দরােজা দেখতে পাচ্ছি এই অন্ধকারের ভেতরে এবং যে কোনাে দরােজাই খুলছি-আমি স্তম্ভিত এবং ঈষৎ ভীত হয়ে দেখতে পাচ্ছি চুম্বনরত একেকটি যুগলকে। রদ্যা-র ভাস্কর্যের মতাে তারা একে অপরকে দৃশ্যত লঘু কিন্তু রক্তের ভেতরে কঠিন করতলে ছুঁয়ে আছে। আমি এগিয়ে যাই আরেকটি দরােজা খুলি। আরেকটি যুগলকে দেখতে পাই। রদ্যা। চুম্বন ফরাসি পতাকা। লাল, নীল, শাদা-নীল, শাদা, লাল। লাল নৌকোর নিখুঁত প্রতিবিম্ব।
বান্টি আমার গেলাশ ভরতে ভরতে বলে, তুমি জানাে, মােকাম্মেল, আমি তােমাকে। সত্য বলিতেছি, ইহা তুমি সত্য বলিয়া জানিও, আমার জননী আমাকে কখনাে চুম্বন করেন নাই। কি বলিতেছ? সাধারণত আমি বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা বান্টির সঙ্গে ব্যবহার করি না, সেই ইস্কুল জীবন থেকেই করিনি, বান্টি কিন্তু কখনাে ইংরেজি কখনাে বাংলায় কথা বলে, কখনােবা দুটোই এক বাক্যে, এক নিঃশ্বাসে মিশিয়ে- আমি এতটাই অবাক হই বান্টির এ কথা শুনে যে ইংরেজিতে বিস্ময় আমার মুখ থেকে এক আশ্চর্য স্বাভাবিকতা নিয়ে নির্গত হয়। ইহা সত্য?
আমার সন্দেহ হয়, বান্টির নেশা ধরেছে। এত তাড়াতাড়ি? অসম্ভব বলেই মনে হয়। মাছের মতাে পান করতে পারে সে। সেই বান্টি এত সহজে মাতাল হয়ে যাবে? এ কেমন করে বিশ্বাস করবাে যে মা চুমাে খায়নি তার ছেলেকে? বান্টি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসতে থাকে। হ্যা, সত্যি, আমার মা কখনাে চুমাে খায়নি আমাকে। বেয়ারা কিছু আলুভাজা এনে নিঃশব্দে আমাদের সমুখে রেখে যায়।
বান্টি গেলাশ হাতে উঠে দাঁড়ায়, বারান্দার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে যায়, কি দ্যাখে, চুমুক দেয় হেলােশে, দেখতেই থাকে, তারপর ফিরে আসে, এসে আর সে সােফায় বসে না, আমার সমুখে দুপা ছড়িয়ে সে দাঁড়িয়ে তাকে, দূরে ঝােলানাে পেট্রোম্যাকসের আলাে, সে আলােয় তার একটা বিশাল ছায়া ওদিকের শাদা চুনকাম করা দেয়ালে গিয়ে পড়ে।
আমি কামরার পর কামরায় দেখতে পাই চুম্বনরত যুগলদের। লাল ঠোট, কালাে ঠোট, পুরু ঠোট। ঘড়ির কাঁটার ভেতরে ছােট বড় হাত দুটি যেন পুরুষ ও রমণীর হাত, ক্রমাগত তারা এক অপরকে সন্ধান করে চলেছে, মাঝে মাঝেই তারা এক হতে পারছে কিন্তু মাত্র এক মিনিটের জন্যে, আবার তারা সরে যাচ্ছে, দূরে যাচ্ছে একে অপরের কাছ থেকে।
বিরহের তুলনায় মিলন কি এমনই সংক্ষিপ্ত । আমার মা কখনাে আমাকে চুমাে খায়নি। গেলাশ টেবিলের ওপর নামিয়ে রেখে বান্টি এক টুকরাে আলুভাজা মুখে দেয়। বলে, আজ বাগানে চুরি হবেই জানি। অমাবস্যার অন্ধকারের চা পাতা চুরি করবে ওরা। কুলিরা। আমি কিছু বলব না। আমি জানি কত গরিব ওরা।
আমি শীতল হয়ে যাই। বিস্ফারিত চোখে লক্ষ্য করি, বান্টি শর্টসের পকেট থেকে রিভলবার বের করে আমার দিকে তাক করছে। দুবার ফায়ার করে সে। লম্বা সােফায় যে প্রান্তে আমি বসেছিলাম তার অপর দিকে খবরের কাগজের ওপর। একটি সাপ গুলতে ছিন্নভিন্ন হয়ে চাবুকের মতাে আছড়াচ্ছে। আমি অবিশ্বাস নিয়ে ওপরের দিকে তাকাই। বান্টি বলে, ছাদের ঐ চালের ভেতরে সাপের বাসা আছে। চেষ্টা করেও কিছু হয়নি। ভাগ্যিস তােমার গায়ের ওপর পড়েনি।
বান্টি বেয়ারাকে ডাকে জায়গাটা পরিষ্কার করবার জন্যে এবং আমার দিকে ফিরে বলে, তুমি নির্বোধ নও। কেন বুঝিতে পারিতেছ না, যে, পুত্রকে জননী যে চুম্বন করে নাই, তাহা মােটেই রহস্যময় কিছু নহে। কি যে বলাে তুমি। মায়ের চুমমা আমি পাইনি কারণ আমার মা আমাকে জন্ম দেবার দুমিনিটের মধ্যে মারা যান। আমি হতভম্ব হয়ে বসে থাকি। আজ বিফ রােস্ট হয়েছে।
টেবিলে মােম জ্বেলে দিয়েছে বেয়ারা। কোমল আলােয়। ডিশগুলাে অপার্থিব বলে বােধ হচ্ছে। বান্টি বলে, আমি খেতে পছন্দ করি। খুব বেশি খাব না, যতটুকু খাব সুন্দর করে খাব। খাও। বান্টির মা যে নেই-তার সঙ্গে স্কুলে একসঙ্গে পড়েও এই তথ্যটি কি করে। আমাদের অজানা থেকে গেছে আমি জানি না। আমার ঈষৎ লজ্জা হয়।
-এতদিন বিয়ে করােনি কেন? হা হা করে হেসে ওঠে বান্টি। এই কথা জিগ্যেস করতে তােমার এত উতস্তত: বিয়ে কিরিনি, মেয়ে পাইনি, তাই। মেয়ে পাওনি, তুমি, আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? কি এক অজ্ঞাত কারণে বান্টি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যায়। আমি কি তার আহত কোনাে নাড়ি ছুঁয়ে ফেলেছি আকস্মাৎ? বরং তুমি আমাকে জিগ্যেস করতে পারতে, নারী আমার জীবনে আসিয়াছিল কিনা? তুমি প্রশ্ন করিতে পারিতে-আমার শয্যা কি রমণীমুক্ত? তুমি জানিতে চাহিতে পারিতে, আমার যৌন জীবন কিরূপ।
আমি চুপ করে থাকি। আমি জানি, সন্ধ্যায় সুরা বান্টির ওপর চমৎকার কাজ করেছে, সে মাতাল নয় কিন্তু তার কথার দরােজা এবার খুলে যাবে। সে কথা বলে। তােমাদের অনেকের ধারণা, আমরা চা বাগানে কাজ করি, আমরা কুলি মেয়েদের সঙ্গে শুই? নয়? তােমাদের ধারণা, কুলি মেয়েদের সহজে পাওয়া যায়। নয়? তুমি কি মনে করাে, যে, আমি একটি পুরুষ, আমি কুলি রমণীকে ব্যবহার করি নাই? আমার শয্যায় তাহারা আসে নাই, না মৃদু মৃদু হাস্য করিও না। উত্তর দাও। আমাকে দেখিয়ে, আমার সহিত এই কয়েকদিন অতিবাহিত করিয়া, কি ধারণা হইয়াছে? আমরা বারান্দায় ফিরে আসি।
রােজ রাতে খাবার শেষে বারান্দায় বসে আমরা চা খাই। বান্টি রাত দশটার ভেতরেই শুতে চলে যায়। ভাের সাড়ে পাঁচটায় উঠে তাকে কাজে যেতে হয়। বাগানের চা বাজারের চায়ের চেয়ে গাঢ় এবং ঈষৎ কষায়ও পিচ্ছল। চুপ করে আছ যে, বান্টি আমাকে খোঁচা দেয়। আমি বান্টির দিকে ফিরে তাকাই। না, খোচা নয় । বান্টিকে আমি ছেলেবেলা থেকে চিনি-অত্যন্ত কোমল হৃদয় মানুষ, এতটাই যে আমি আর দ্বিতীয় এমন কাউকে দেখেছি বলে বলতে পারব না। আমি বলি, চুপ করে আছি কেন? তুমি কি কথার কি উত্তর দিলে? আমি কেবল জিজ্ঞেস করেছিলাম, বিয়ে করােনি কেন?
‘ক্ষমা?’ আমি চায়ের কাপ ঠেলে দিয়ে বলি, ক্ষমার কথা বলিতেছে এমনভাবে যেন তিনি ক্ষমা পাইবার উপযুক্ত নহেন। বান্টি বলে, পরিষ্কার বাংলায়, ‘তুমি ভুলে যাচ্ছ, আমার বাবা ছিলেন পুলিশের লােক। তুমি ভুলে গেছ, উনিশশ বাষট্টির কথা। সেই উনিশশ বাষট্টিতে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ঢাকায় প্রথম আন্দোলন হয়েছিল, মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছিল। নবাবপুর দিয়ে বিরাট মিছিল আসছিল। তুমি কি সব ভুলে গেছ? সত্যি কথা বলতে কি, আমার কিছুই মনে পড়ে না।
আইয়ুব খান মনে পড়ে, বাঙালিদের মিছিল মিটিংয়ের কথা মনে পড়ে কিন্তু বিশেষ কোনাে বছর কি বিশেষ কোনাে মিছিলের কথা মনে পড়ে না। বান্টি বলে চলে, সােফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে, বারান্দায় অশান্ত পায়চারি করতে করতে, সেই মিছিল বাধা পায় মুকুল সিনেমার কাছে। পুলিশ বাধা দেয়। আমার বাবার হুকুমে সেই মিছিলের ওপর গুল চলে। সরকারি হিসেবে বলে দুজন মারা গেছে। আমি সেইদিনই বাবাকে বলতে শুনেছি, ড্রইং রুমেতিনি সরকারি কর্মকর্তাদের বলিতেছে যে, সত্য এই হয় যে যে মােট আঠারাে ব্যক্তি আমাদের গুলােতে নিহত হইয়াছে।
এই তথ্য যেন প্রকাশ না পায়। আমাদের সর্বোত চেষ্টা করিতে হইবে সত্য যেন চাপা থাকে, হ্যা লাশগুলাে কি আমরা লুকাইতে পারিয়াছি? বান্টি আমার সমুখে এসে বলে। বলে চলে, পাশের ঘর থেকে আমি সবই স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি যেন আমার বাবা নয়, অন্য কারাে কথা শুনছি। তাঁর অতিথিরা, সরকারের সেই অফিসারেরা আমার বাবাকে বলে, সমস্ত লাশ গােপন করা হয়ে গেছে।
তুমি বিশ্বাস করিতে পারাে? যেন শিশুরা আলাপ করিতেছে তাহাদের খেলা বিষয়ে। যেন যাহা লইয়া আলাপ হইতেছে তাহা মানুষের পবিত্র দেহ নহে, শিশুর খেলায় ব্যবহৃত কতিপয় বল কিম্বা ব্যাট-লুকাইয়া রাখা হইয়াছে। আমি ঠিক বুঝে পাই না, বান্টির বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজে না পাওয়ার সঙ্গে এই ঘটনার যােগ কোথায়? বান্টি কি নেশার ঘােরে বক্তব্যের পারম্পর্য হারিয়ে ফেলেছে?
আমার পড়াশােনা খারাপ হইতে লাগিল। তুমি তাে স্মরণ করিতে পারিবে-শিক্ষকেরা আশা করিতেন আমি প্রথম শ্রেণী পাইব কিন্তু পরীক্ষার ফল যখন বাহির হইল, আমি দ্বিতীয় শ্রেণীর শেষ দিকে, নয়? মনে পড়ে আমি সেই রাত হইতেই ভাবিতে থাকি, মানুষের সভ্য সমাজ যদি এই হয় যে, মানুষের ন্যায্য অধিকার চাইবার অধিকারটুকু নেই এবং চাইতে গেছে তার ওপরে গুল চালানাে হয় এবং সেই গুলতে মানুষ মারা গেলে তার লাশ গােপন করা হয়-হঁ্যা, সেই মরা মানুষটির কি স্ত্রী পুত্র সন্তান ছিল না? আমি তাে আত্মহত্যা করতে পারি না। এ জীবন আমি চাই নি, এ জীবন শেষ করবার অধিকারও আমার নেই।
আমি স্থির করি, আমি সভ্য সমাজ থেকে বেরিয়ে যাব। আমি চা বাগানে কাজ নেই। এই জঙ্গল, এই অসভ্য কুলি, এরাই আমার নিকট বর্তমানে বাস্তবের অধিক বাস্তব এবং তােমরা যে সমাজ ও শহরে বাস করাে, উহা আমার নিকট এক নিষিদ্ধ, দুর্বোধ্য এলাকা ভিন্ন আর কিছু নহে।
বান্টি । এসাে না, আমরা আর একটু পান করি । সুরা? না, রাতে খাবার পর আমি আর পান করি না। তুমি মনে করছ, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এসব বলতে, সুরা পান করলে সেরে যাবে মনে ভাবছ তাে? না বন্ধু, ইহা হয় আমার হৃদয়ের এক চিরস্থায়ী পরিস্থিতি। তুমি বলছিলে, বিয়ে করিনি কেন?
আমি কাকে বিয়ে করব? আমার মতাে বিকট বিদীর্ণ এক ব্যক্তিকে কে গ্রহণ করবে? যে জীবনের ভেতর আমি পতিত সেই জীবন আমি কাকে টেনে আনব? কি অধিকার আমার আছে আমারই সঙ্গে আমার দুর্ভাগ্য তাকে আমি ভাগ করে নিতে বলিব?-তাও একদিন দুদিনের জন্যে নয়, সারাজীবনের জন্যে?-আমি এখন শুতে যাচ্ছি। শুভরাত্রি। তােমার দ্রিা উত্তম হউক। বান্টি দ্রুত তার ঘরে চলে যায়। দুদিকে দুটি শােবার ঘর, মাঝখানে করিডর-সােজা চলে গেছে পেছনের বারান্দায়। ডান দিকের ঘরে বান্টি শােয়, বাঁদিকের ঘর অতিথিদের জন্যে।
অতিথিদের এই ঘরে বইয়ের একটা শেলফ আছে, বহুদিন আগের কিছু ইংরেজি উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনি আর শিকারের গল্প-সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ ঘরেই অতিথিদের জন্য রয়ে গেছে। আমি একটা বই তুলে নিই। আজ রাতে আমার ঘুম আসবে না। যে বই আমার হাতে উঠে আসে-আফ্রিকার এক নারী প্রধান সমাজের কাহিনি।
কাকলী, কেন তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে? কাকলী, তুমি যে আমাকে প্রথম চুমাে দিয়েছিলে, সেটা কি ছিল তােমার প্রথম চুমম? আমাদের দুজনের প্রথম চুম্বন তাে বটেই কিন্তু তােমার কি প্রথম? কিন্তু আমার সে চুমাে প্রথম চুমাে ছিল না। বান্টি আজ সন্ধ্যে বেলায় বলছিল, তার মা তাকে চুমাে দেয়নি কারণ বান্টিকে জন্ম দেবার পরপরই তার মৃত্যু হয়।
আমরা আজ বিকেলে একটা মজার তর্ক করছিলাম-মানুষ কেন এতখানি জোর দেয় প্রথমের ওপর? নারীর বেলায়? পুরুষ কেন চায় তার চুম্বনই হবে প্রথম চুম্বন। তার শয়নই হবে নারীটির জন্যে প্রথম শয়ন? কি আছে এই প্রথমের গভীরে? আমার পাশের বাড়িতে বদলি হয়ে এসেছিল নতুন এক পশু ডাক্তার। তার মেয়ের নাম ছিল সন্ধ্যা। এত চঞ্চল মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি।
সারাক্ষণ এই ঘরে, এই বাইরে, এই গাছে উঠছে, এই সাঁতার কাটছে। ক্লাস নাইনে পড়ত। বুক দুটো বড় হয়ে উঠছিল তার, তাকাতে আমার লজ্জা করত কিন্তু চোখ বারেবারে চলে যেত। আমি পড়তাম এইটে। সন্ধ্যাকে তার মা ফ্রক পরিয়ে রাখতেন। আমার বাবাকে শুনেছি এক রাতে অন্ধকারে আমার মাকে আদর করতে করতে বলছেন, সন্ধ্যারে দ্যাখাে না, তার বাপমায়ে অখনতরি নাবালিকা কইরা রাখতে চায়। আরে পানি পরলে, অখনি তার প্যাট হইব ।
সেই কথাগুলাে আমার শােনার কথা না, উচিত না-কিন্তু আমরা সবাই, বাবা মা ভাই বােন এক ঘরে টানা বিছানায় শুতাম, না শুনে উপায় কি? তারপর থেকে আমার ভীষণ লজ্জা করত সন্ধ্যার দিকে তাকাতে। আমার এক ক্লাস ওপরে পড়ত বলে বড় উঁটি দেখাত সে আমার ওপর। ছুটির এক সুনসান দুপুরবেলা। আমের সময়। বাতাসে কাঁচামিঠে আমের ঘ্রাণ। হু হু করা বাতাস। সোঁ সোঁ করে ধুলাের ঘূর্ণি। হঠাৎ হঠাৎ।
বাইরের ঘরে আমি বিছানায় উপুড় হয়ে অংক করছি। হঠাৎ দেখি আমার সমুখে একজোড়া পা-মেয়েদের পা-হাঁটু পর্যন্ত খােলা-দুলছে। চোখ তুলে দেখি-সন্ধ্যা। কাঁচা একটা আমে দাঁত দিয়ে আমার। দিকে তাকিয়ে আছে ঘন কি একটা চোখে যে আমি বুঝে উঠতে পারি না। আমার হঠাৎ প্রস্রাব পায়। খপ করে আমার হাত ধরে ফ্যালে সে। এই কোথায় পালাচ্ছিস।
একটু পরে আমি আবার উঠে দাঁড়াই। আমার ভীষণ প্রস্রাব পেয়েছে। ধমক দেয় সন্ধ্যা। অংক ভুল করে পালানাে হচ্ছে? সন্ধ্যাকে আমি কি করে বলি যে, আমার ফেটে যাচ্ছে। যদি বাইরে না যাই তাে এক্ষুণি প্যান্টে হয়ে যাবে। সন্ধ্যা টেবিলের ঐ উচ্চতা থেকে আমার কাঁধে পা রেখে বিছানার ওপর চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে দিতে বলে, আগে অংক ঠিক কর, তারপর ছুটি।
আমার বাইরে যেতে হবে। আমি মরিয়া হয়ে বলি।। আগে অংক। বলেই কচাৎ করে কাঁচা আমের গা থেকে এতখানি মাংস খুবলে নেয় সন্ধ্যা। আমার শরীরের ভেতর আশ্চর্য একটা ঝিনঝিন রব বহে যায়। আমি পুতুলের মতাে দাঁড়িয়ে থাকি। সন্ধ্যার কি দয়া হয়, সে হঠাৎ তার রণরংগিনী মূর্তি ছেড়ে মায়াবতী হয়ে ওঠে। বলে, অংকটা যদি ঠিক করতে পারিস, আমি তােকে একটা চুমাে দেব।
আমার কান ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে। এতদিন পরে এখনাে স্পষ্ট মনে আছে, এর পরের ছবি-আমি প্রস্রাব ভুলে গিয়েছি, আমি বিছানার ওপর উপুড় হয়ে অংক করে চলেছি, অংক কিছুতেই মিলছে না, বারবার রবার দিয়ে অংকের ভুল ধাপগুলাে মুছে ফেলছি, আবার পেনসিল চিবােতে চিবােতে অংকের সূত্রটা ভাবছি, সন্ধ্যা টেবিলে বসে পা দোলাচ্ছে তাে দোলাচ্ছে, আম খাচ্ছে কচ কচ করে, আমার অংকটা হঠাৎ মিলে যায়। সন্ধ্যা আমার দিকে স্থির তাকিয়ে থাকে। তার পা দোলানি থেমে গেছে।
হাতের আম হাতে রয়ে গেছে। আমাকে দেখছে। আমাকে সে দেখছে। আমি কেবল তার বুক ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না-চোখ বারবার চলে যাচ্ছে। আমরা নিশ্চল ও স্তব্ধ দুজনে। হঠাৎ সন্ধ্যা লাফ দিয়ে টেবিল থেকে নেমে, আমার ওপর ছোঁ মারবার ভঙ্গিতে শরীরটা পেছনে রেখে মুখ বাড়িয়ে দেয় এবং আমার ঠোটে কুট করে কামড় বসিয়ে দেয়।
তারপরে জড়িয়ে ধরে সে আমাকে, আদর করে ঠোটে নিজের ঠোট শুকনাে ঘষে দিতে দিতে বলে, একটা করে অংক রাইট করে দেখাবি, একটা করে চুমাে পাবি। আমি টের পাই আমার প্যান্টের সমুখটা ভিজে যাচ্ছে। যদিও ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না সন্ধ্যাকে, শুধু ঐ ভেজা পাছে টের পেয়ে যায়, আমি তাকে ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে যাই।
সেই আমার জীবনের প্রথম চুমাে-মায়ের নয়, খালার নয়, বড় বােনের নয়, এমন কারাে যে আমার কেউ নয়-কেউ নয় আবার সব কিছু। সেবার গরমের ছুটিতে, আমের সেই মৌসুমে, বাতাসের সেই ঘূর্ণি চড়াও দুপুরে আমি একশ আটাশখানা অংক রাইট করেছিলাম। আর কাউকে চুমাে খেয়ে মজা নেই, তােকে যত মজা। কি যে ঈর্ষায় আমি জ্বলে উঠেছিলাম-সন্ধ্যা তবে আরাে অনেককে চুমাে দেয়?
কাকলী যখন আমাকে প্রথম চুমাে দেয়-না, সন্ধ্যার মতাে সে আমাকে চুমাে দেয় না, আমিই তার কাছ থেকে আদায় করে নিই-এক রাতের বেলায়, কাকলীদেরই বাড়িতে বারান্দায়, খুব দ্রুত কিন্তু এতটা দ্রুত নয় যে চুমাের স্বাদ পেতে না পেতেই দুজনে বিযুক্ত-আমি তাকে জিজ্ঞেস করি-বােধহয় অবচেতন মনে সন্ধ্যা এসে হানা দিয়ে থাকবে-আর কেউ তােমাকে চুমাে খেয়েছে এর আগে? যাহ। বলে কাকলী আমার বুকে ঢলে পরেছিল-সে ঢলে পড়েছিল সে যে তার নিজের বাড়িতে এবং যে কোনাে মুহূর্তে যে কেউ এসে পড়তে পারে সব ভুলে গিয়ে।
আমি তাকে জড়িয়ে ধরে কানের লতি কামড়ে বলি, কেউ না? এত সুন্দর মেয়েটিকে আর কেউ চুমাে দেয়নি? কাকলী যখন আমাকে তালাক দিয়ে চলে যায়-হঁ্যা, কাকলীই আমাকে দেয় কারণ আমি নাকি তার উপযুক্ত নই, আমাকে বিয়ে করে সে ভুল করেছিল, আরাে অনেক কথা-তখন সে আমাকে বলেছিল, আমার মনে পড়ছে, তুমিই আমার প্রথম কিনা বারবার জিজ্ঞেস করেছিলে। না, তুমি প্রথম নাও। তুমি যে কত নম্বর তাও আমার মনে নেই, হিসেবে নেই। আমি বিয়ের রাতে অভিনয় করেছিলাম, তুমি আমার প্রথম পুরুষ। আমি ব্যথা পাবার অভিনয় করেছিলাম।
তােমার আগে আমি তিনজন চারজনের সঙ্গে শুয়েছি। আমার এখনাে বিশ্বাস, এ সবই কাকলী বানিয়ে আমাকে বলে। সে বানিয়ে এসব বলে, আমাকে আঘাত করবার জন্য আর বলে এই জন্যে যে-আমি যদি ক্ষেপে উঠি তাহলে তার চলে যাওয়াটা তার পক্ষে সহজভাবে নেয়া সম্ভব হয়। সে তখন নিজেকে বলতে পারে, আমি একটা খারাপ লােকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছি, এতে আমার।
দোষ কোথায়? আসলে, কাকলী আমাকে ছেড়ে যায় কারণ সে ভালােবাসত- ভালাে খাবার, বেড়ানাে, মােটরগাড়ি, অলংকার এবং অর্থ। আমার এ সব দেবার মতাে সঙ্গতি নেই। আমার বন্ধুটির ছিল, তার নাম বলব না- তার নাম আমাকে দংশন করে, আমাকে ছােট করে, আমাকে খুন করে, এখনাে; আমার সেই বন্ধুটির সঙ্গে কাকলী একদিন চলে যায়।
কিন্তু এই প্রথম-প্রথম-এত জরুরি কেন? কাকলীকে দেয়া আমার চুমােটি তাে প্রথম | চুমাে ছিল না। সন্ধ্যার জন্যে একশ আটাশখানা অংক, যে কটা অংক বইয়ে ছিল, সব।
আমি রাইট করেছিলাম। এমনকি, শেষদিকে, সন্ধ্যা আমাকে প্যান্টের ওপর দিয়ে নিচেও স্পর্শ করত, আমি ভিজে যেতাম, প্রথম দিনের সেই প্রস্রাবে ভিজে যাওয়া নয়। আমি কি সেদিক থেকেও কাকলীর জীবনে প্রথমত পুরুষ নই? তাহলে কাকলীর ওপর আমার কেন এই দাবি, যে, আমিই প্রথম এবং কেন আমি বিশ্বাস করতে চাই না যে, কাকলী যাবার সময় সত্যি কথা বলে গেছে?
আজ রাতে, অমাবস্যার এই রাতে, চা বাগানের গরিব কুলিরা যখন চায়ের পাতা চুরি করবে, বান্টি তার বিরাট কোল বালিশ আঁকড়ে-সেদিন তার কোল বালিশেল বপু দেখে আমি হেসে খুন, বুড়াে খােকা নাকি যে বড় কোল বালিশ চাই? ঘুমিয়ে আছে, তার নাক ডাকার প্রচণ্ড শব্দ এ ঘর থেকেই পাওয়া যায়, কাকলীর জন্যে মন কেমন করে ওঠে। আহ আমরা সভ্যতা তখনাে ছাড়তে পারি না, যখন অমাবস্যা এবং এক একটি ঘরে আমরা। মন কেমন করে?-না শরীর কেমন করে? কাকলী?-কাকলীর জন্যে? না, যে কোনাে নারীর জন্যে?
আমি জানি, আমি নিজের কাছেই নিজেকে গােপন করতে চাইছি। আমি জানি, যে কোনাে একটি নারী, যে কোনাে একটি বিপরীত লিঙ্গধারী দেহের জন্যে আমার শরীর এখন কেবলি মােচড়াচ্ছে এবং আমাকে ঘুম থেকে ছুড়ে মারছে-তবু, আমি কাকলীর আবরণের সব ঢেকে রাখতে চাইছি। এমনকি, কাকলীর জন্যে আমার চোখের পানি পড়ছে। আমি কাঁদছি। কাকলীর ঠোট কি অপরূপ লাল ছিল-সন্ধ্যার আকাশের মতাে লাল।
আহ! আবার সন্ধ্যার নাম এসে গেল। আমি উঠে গিয়ে খাবার ঘরে যাই এবং গেলাশে সুরা ঢেলে নিই, বারান্দায় বসতে চাই কিন্তু সন্ধ্যার সেই সাপের কথা মনে পড়ে যায়। আহ আবার সন্ধ্যা! সন্ধ্যা আমার পেছন ছাড়বে না। আমি শােবার ঘরে রাখা আরামচেয়ারে বসে গেলাশের সােনালি আমার গলায় ঢেলে দেই। দূরে চৌকিদার ঢং ঢং করে ঘণ্টা পিটিয়ে রাত দুটো জানায়। চারদিকে খসখস শব্দ। আবার এক স্তব্ধতা, যার তুল্য শব্দহীনতা আমি খুব কম জেনেছি।
নারীহীন জীবন বােধহয় এমনই শব্দহীন হয়। এতদিন পরে আমি আমার পরিস্থিতির একটি বাস্তব তুলনা খুঁজে পাই। কাকলী, আমি তােমার প্রথম নই। আমি প্রায় চিৎকার করে উঠি, যেন কাকলী ঘরের ভেতরেই আছে-কাকলী, তুমি জানাে, বেশ্যাও তােমার চেয়ে আমাকে বেশি আনন্দ দেয়। হ্যা, আমি বেশ্যাগমন করি। স্বামীর বন্ধুর সঙ্গে শয্যা যাবার চেয়ে বেশ্যার বিছানা আমার কাছে জননীর বিছানার মতাে নিশ্চিন্ত এক শয্যা। কাল রাতে তােমার ভালাে ঘুম হয়নি? বান্টি জননীর মতাে মমতা নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে।
ভাের সাড়ে পাঁচটায় ঘন্টির সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিল, যেমন সে প্রতি ভােরে যায়, গণতিতে দাঁড়ায় কিন্তু বান্টি মনে করে সে বড় ম্যানেজার হলেও এটা তারই দায়িত। একে কুলিদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক মানবিক এবং উত্তম থাকে। বান্টি রােজ গণতি থেকে ফিরে গরম পানিতে গােসল করে, আমাকে ডাক দেয় এবং বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে আমার অপেক্ষা করে। তারপর আমরা একসঙ্গে নাশতা করি।
বান্টি এরপর সাড়ে নটা দশটার আগে আর বেরােয় না, কাজেই এই সময়টা আমরা আমাদের স্কুলের, কলেজের, বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প করি, বন্ধুদের কথা চলে আসে, কত মজার কথা, হাসির কথা বােকামির কথা, প্রেমের কথা এবং কত হারিয়ে যাবার কথা, কখনাে দু-একটি মৃত্যুর কথা। রােজ ভােরে বান্টি যখন গণতিতে বেরিয়ে যায়, আমি বিছানায় শুয়ে টের পাই। আজ সে এসে আমাকে না ডাকা পর্যন্ত টের পাইনি।
তাড়াতাড়ি গােসল সেরে বারান্দায় এসে যখন বসি, আমি বুঝতে পারি আমাকে রাতজাগা দেখাচ্ছে, আমার চোখের ভেতর করকর করছে। দেখলাম, বােতল বের করা। আবার টেনেছিলে বুঝি? আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে নীরবে শুধু সায় দেই। ইহা ভালাে কথা নয়। তুমি আসিয়াছ ছুটি উপভােগ করিতে। রাত্রে দ্রিা না হইলে আমি ভালাে বােধ করিব না। আমি নিঃশব্দে একটু হাসি।
বান্টির জন্যে আমার খুব মায়া করে ওঠে মনটা। মায়ের চুম্বন সে পায়নি। দিনের আলাে। বান্টি আমার সমুখে। আমি সমস্ত কিছু নতুন প্রেক্ষিতে স্থাপিত বলে অনুভব করে উঠি। আমাকে বলিও, তােমার আরামের জন্যে কি প্রয়ােজন। আমি চেষ্টা করিব যাহাতে তােমার এখানে অবস্থান সুখপ্রদ হয়। আমি নারী দেহের জন্যে এখন এই অসামান্য রােদ জাড়ানাে সকাল বেলায় কোনাে ক্ষুধা বােধ করি না। বস্তুপক্ষে, নারী আমার কাছে বৃক্ষ, বাড়ি, বাতাস ওসবের মতােই এ বিশ্বের চলবার জন্যে অন্যতম উপকরণ বলে মনে হয়।
কত হবে? তিনটে, সাড়ে তিন। বান্টি একবার আমাকে দেখে নেয়, চোখে চোখ পড়তেই সে চোখ ফিরিয়ে রােদেজ্বলা বাগানেরা ফুলগাছগুলাের দিকে তাকায়। আমি জানি, সে কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বলবে কিনা। আমি জানি, এখন না বললেও সন্ধ্যেবেলা সুরার গেলাশ হাতে আমরা যখন এই বারান্দাতেই বসব, সে বলবে।
বান্টি বলে, কাল রাতে আমি বলেছিলাম না চুরি হবে । দুজন ধরা পড়েছে চা পাতাসহ। অফিস ঘরে তারা কয়েদ হয়ে আছে। কি হবে ওদের? বান্টি হেসে বলে তুমি জানাে, কুলিরা যে বেতন পায়, তা দিয়ে সপ্তাহের তিনদিনেরও খাবার হয় না। বাকি চারদিন তারা চায়ের মােটা পাতা, যে পাতা জ্বাল দিয়ে নুন দিয়ে খায়, খিদেটা মরে যায় সেই কষ গরম পানিতে, আবার খিদে পায়, আবার ঐ খায় ।
পাতা চুরি করে বিক্রি করে কেউ কেউ, সেটা খিদের জ্বালায় নয়, মদ খাবার জন্যে। দেখলে অবাক হয়ে যাবে, সপ্তাহের বেতন পাবার দিন, কুলিদের বেতন ছিনিয়ে নেবার জন্যে মেলা বসে যায় অফিস ঘরের সামনে, বাইরে সড়কের ওপর । নানা রকম সৌখিন জিনিস, চুরি, মালা, নাকের ফুল, জামা, শাড়ি-এই সব তাে আছেই, আছে জুয়াখেলা, তারপর চোলাই। বেতনের অর্ধেক ঐতে দিয়ে মাঝরাতে যখন বাড়ি ফেরে তখন প্রায় ফতুর।
তাহলে কি বলতে চাও, হিসেব করে যদি খরচ করে, মদ যদি না খায় তাহলে যে বেতন কুলিরা পায় তা দিয়ে সাতদিন তারা ভালােভাবে চলতে পারবে? খুব ক্রুদ্ধ গলায় বান্টি বলে, না, নহে। আমরা যে শ্রমমূল্য দেই তাহা মােটেই যথেষ্ট নহে। আমরা কুলিদিগকে মানবেতর বলিয়া মনে করি। আমরা তাহাদিগকে যে বেতন দেই তাহার অধিক আমরা আমাদের জুতা পালিশ করিতে ব্যয় করিয়া থাকি। বান্টি বাথরুমে চলে যায়। আমার পক্ষে জানবার কথা নয়, বাথরুমে সে কাঁদে।
সে যখন ফিরে আসে তখন তার চোখ লাল দেখায় এবং আমার এমন মনে হয়-সে কাঁদছিল। কেন? কুলিদের জন্যে? আমি ঈষৎ বিস্ময় অনুভব করি। বান্টির চোখ লাল দেখালেও তার মুখে সরল হাসি খেলা করে । বান্টি বলে, জানাে আমার প্রথম যে বাগানে চাকরি হয়, সহকারি ম্যাসেজার আমি, এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়। কাল আমরা চুমাে নিয়ে কথা বলছিলাম না? চুমাে বলতে আমরা তাে প্রথমেই বুঝি নারী পুরুষের চুমাে, কামগন্ধী চুম্বন ভিন্ন অন্যপ্রকার চুম্বর আমাদের চিন্তায় আসিতেই পারে না, নহে?
অথচ কতপ্রকার চুম্বর রহিয়াছে। মাতা শিশুকে চুম্বন করিতেছে। পিতা সন্তানকে চুম্বন করিতেছে। কোনাে কোনাে দেশে চুম্বন হয় স্বাগত করিবার একটি ভঙ্গিম, যেমন আরবদিগের ভিতরে। সুরা পান করিবে? বান্টির কথায় চমকে উঠি। যে কদিন হলাে এসেছি, বান্টিকে দিনের বেলা দূরে থাক, সকালবেলা সুরাপান করতে দেখিনি। বুঝতে দেরি হয় না, তার ভেতরে কোথায় ভাঙচুর হচ্ছে। কার জন্যে, কিসের জন্যে এই ভাঙচুর? আমি কোনাে কুলি রমণী সংক্রান্ত রসালাে কাহিনির জন্যে প্রস্তুত হয়ে তার দিকে তাকাই এবং বলি, হ্যা, আপত্তি নেই।
বান্টি বেয়ারাকে সুরার জন্যে আদেশ করে। লক্ষ্য করি, বেয়ারাও অবাক হয়েছে এই সকালবেলায় সুরার আদেশ শুনে। সে ইতস্তত করে-ঠিক শুনেছে কিনা। কিন্তু তার তেমন সাহস নেই বলে, কৌশল অবলম্বন করে, জানতে চায়। বাদাম দেবে কিনা। যদি উত্তর হয় হ্যা তাহলে নিশ্চিত যে, সাহেব সুরাই চেয়েছেন। বান্টি বেয়ারাকে আদরভরা গলায় বলে, বুরবাক, হুইস্কি কা সাথ জো কুছ চলতা হ্যায় লাও না? সুরা আসে কিন্তু অনেকক্ষণ স্পর্শ করে না বান্টি। বলে চলে, আমার সেই প্রথম বাগানের একটা আউট গার্ডেন ছিল, মানে দূরে ছােট একটা বাগান ছিল, নতুন গড়ে তােলা হচ্ছিল।
সেখানে কুলিদের ভেতরে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সে লম্বা ব্যাপারটা একটু বেশি দূর গড়িয়ে যায়। আমার আগে যে সহকারি ম্যানেজার গিয়েছিল কুলিদের সঙ্গে কথা বলতে, তার গায়ে হাত পড়ে। এখন তুমি তাে জানাে, ম্যানেজারের গায়ে হাত পড়ার অর্থ। মালিক পক্ষ যেমন মরিয়া হয়ে ওঠে, কুলিরাও ভাবে মরেছি যখন তখন আর রাখঢাক করে লাভ কি? তারা আউট গার্ডেন থেকে মালিকপক্ষের সব লােককে তাড়িয়ে, বাংলা জ্বালিয়ে, পথ কেটে দিয়ে বিদ্রোহ ঘােষণা করে বসে। দুজন কুলি এদিক থেকে পাঠানাে হয়েছিল, বেশ মাতবর বেশ পুরনাে কুলি-তারা দায়ের জখম নিয়ে ফিরে আসে।
তখন পুলিশের সাহায্য নিতে হয়। সে বিস্তারিত বিবরণে গিয়ে লাভ নেই, মােকাম্মেল, তুমি খামােখা বাের হবে। সংক্ষেপে ইহাই হইল যে, আমি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রেরিত হইলাম আউট গার্ডেনে। আমার তখন নবীন বয়স। আমি নিজেকে অ্যালেকজান্ডার মনে করিতেছি সেই গার্ডেনে পা রাখিয়া। নতমুখে কুলিসকল আমাকে দেখিয়া সরিয়া যাইতেছে। আমি দিল্লিশ্বরের ন্যায় ঘােষণা করিলাম-তােমাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করা হইল, তােমরা অতঃপর মন দিয়া কাজ করিতে থাক।
যদি কাহারাে এ বাগান ভালাে না লাগে তবে সে চলিয়া যাইতে পারে, তাহার বিরুদ্ধে কানাে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে না-মােকাম্মেল, তুমি হয়ত জানেন না, চা বাগানে অলিখিত দাসব্যবস্থা আজো আছে। কোনাে কুলি পালিয়ে গেলে বা বাগান ছেড়ে চলে গেলে, সেই আমেরিকায় তুলাক্ষেতের নিগ্রোদের মতাে, তাদের ধরে আনা হয়, কোনাে বাগান তাদের কাজ দেবে না। তারা শুধু পলাতক হয়ে এক বাগানের পর আরেক বাগান ঘুরে ফিরবে রাতের আঁধারে, দিনে বেরুতে পারবে না। তাই আমি যখন বললাম, যার ইচ্ছে সে বাগান ছেড়ে চলে যেতে পারে, কেউ সে সুযােগ গ্রহণ করল না। সকলেই আমার বশ্যতা স্বীকার করল ।
আমাদের হেডক্লার্কবাবু আমার কানে কানে বললেন, সবাইকে মাফ করেছেন, ভালাে কথা। তবে, নষ্টামির মূলে যে আছে তাকে বাগান থেকে বের করে না দিলে আবার গােলমাল হবে, আবার উৎপাত হবে। আমি তখন সেই ব্যক্তিটিকে বহিষ্কারের আদেশ দেই।
আমি পাহাড়ের একটি ঢালে দাঁড়াইয়াছিলাম, আমি দেখতি পাইলাম সেই ব্যক্তিটিকে, আমি বিস্মিত হইলাম কারণ তাহার চেহারা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিবার মতাে মােটেই ভয়ঙ্কর নহে বরং তাহার শীর্ণ দেহ দেখিয়া হাসপাতালের রুগি সাব্যস্ত করাই যে কাহারো পক্ষে স্বাভাবিক, সে নীরবে পথের উপর আসিয়া দাঁড়াইল, তাহার বগলে ছােট একটি পুটুলি, সে একবার দূরে সমবেত কুলিদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিল, একবার আমাকে ও বাবুটিকে দেখিয়া লইল, তাহার পর অগ্রসর হইতে লাগিল।
বাগান সে ছাড়িয়া যাইতেছে কিনা নিশ্চিত হইবার জন্যে আমি ও হেডক্লার্ক বাবু পাহাড় বাহিয়া হাঁটিতে লাগিলাম। অচিরে বাগানের সীমানায় আসিয়া পড়িলাম। তখন দেখিলাম, কুলিটি দাঁড়াইয়া পড়িল। একবার মনে হইল, সে যাইতে চাহে না। মনে হইল, সে আমার নিকটে ছুটিয়া আসিয়া ধুলায় গড়াগড়ি দিবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করিবে, এখানেই থাকিয়া যাইবার অনুমতি ভিক্ষা করিবে । আমি স্থির করিয়া রাখিলাম, সে যদি সত্য সত্যই ক্ষমা চাহে, ক্ষমা করিয়া দেব। কিন্তু না। সে এক অদ্ভুত কাণ্ড করিয়া বসিল। সে নত হইল। সে নত হইয়া মাটিতে মস্তক ঠেকাইল । মােকাম্মেল, সে মাটিকে চুম্বন করিল। তাহার পর দৃষ্টিসীমার বাহিরে সে চলিয়া গেল ।
সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছে, তাহাকে অনতিকাল পরে আর ভালাে করিয়া দেখা গেল না। আমি তাঁবুতে ফিরিয়া আসিলাম। তােমার হয়ত স্মরণ হইবে, বিদ্রোহীরা বাংলাে জ্বালাইয়া দিয়াছিল তাই আমাকে তাঁবু আনিতে হইয়াছিল। তাঁবুতে যখন শয়ন করিতে যাই, গভীর রাত, আহার আগে মােরগ পােড়া দ্বারা ডিনার সারিয়া প্রায় আধ বােতল হুইস্কি গলায় ঢালিয়াছি, বিছানায় শয়ন করিতেই, মাটির ঘ্রাণ নাকে আসিয়া লাগিল। মাটি। সেই মাটি। যে-মাটি কুলিটি চুম্বন করিয়াছিল।
আমার একবার লােভ হইল-দেখিই না, মাটি চুম্বন করিতে কেমন লাগে। আমি বিছানার নিচে পাতা ক্যাম্বিস সরাইয়া মাটি উন্মুক্ত করিলাম, নত হইলাম, ঠোট দিয়া মাটি স্পর্শ করিলাম, আমি কিছুই অনুভব করিতে পারিলাম না। অথচ কি বলিব তােমাকে, সেই কুলি যখন মাটি চুম্বন করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়াছিল, তাহার চক্ষুদ্বয় দিয়া অঞ অবিরল ধারায় নির্গত হইতেছিল।
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, বান্টির চোখ দিয়ে এখন পানি পড়ছে-সম্ভবত সে নিজেও জানে না, পানি মােছার চেষ্টা করে না, সুরায় প্রথম চুমুক দেয়। সকালে সুরা পানের অভ্যেস নেই বলে, এতক্ষণ সমুখে গেলাশ পড়েই ছিল, এখন এক ছােট চুমুকের পর মুখ বিকৃত করে গেলাশটা সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায়। বলে, মাটি যদি জননী হয়, এই প্রথম আমি কাউকে চুমাে দেই । মাটি যদি প্রেয়সী হয়, তাে সেই আমার প্রথম চুম্বন। সত্য এই যে, কাব্য পড়িয়া থাক, আমি কাহাকেও চুম্বন করি নাই, আমাকেও কেহ চুম্বন করে নাই।
বিকেলে বান্টি আমাকে ফ্যাকটরিতে নিয়ে যায়। দূর থেকেই চমৎকার ঘ্রাণ আসছিল বাতাসে ভেসে-সবুজ ঘ্রাণ, পাতার পিষ্ট পত্রালীর ঘাণ। পুরােদমে মেশিনে কাজ চলছে। ফ্যাকটরির বাইরে কুলি নারী ও পুরুষেরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে চা পাতা জমা দিচ্ছে টুকরি উজাড় করে। একটি মেয়েকে আমার চোখে পড়ে।
বান্টি।
বান্টি প্রশ্নবােধকে চোখে আমার দিকে তাকায় এবং আমার চোখ অনুসরণ করে অচিরে বুঝতে পারে আমি কি দেখছি এবং কি বলতে চাইছি। আমি শুধু বলতে চেয়েছিলাম, মেয়েটি তাে খুব সুন্দর দেখতে। বান্টি কি আশংকা করে জানি না, সে আমাকে দ্রুত সেখানে থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এবং যেতে যেতে বলে, ইহাদের সাক্ষাতে ইহাদের বিষয়ে কোনাে মন্তব্য করিও না। ততক্ষণ আমরা তাদের শ্রুতি সীমার বাইরে বলে গেছি। আমি বলি, মেয়েটি অপূর্ব।
বান্টি কেমন অস্বস্তি বােধ করে। আমি জিগ্যেস করি, ওর নাম কি? এতদূরেও সাবধানতা অবলম্বন করে থাকে বান্টি, নামটা সে ইংরেজি বানান করে বলে, টি-এ-আর-এ। তারা? বান্টি সঙ্গে সঙ্গে চাপা গলায় আমাকে শাসন করে ইংরেজিতে, বলিয়াছি না, ইহাদের সমুখে মুখ খুলিবে না। আমি অপ্রস্তুত বােধ করি। বান্টি ফ্যাকটরির ভেতরে যেতে যেতে আমাকে বলে, তুমি বাংলায় ফিরিয়া যাও। আমি আসিতেছি।
অবাক হই। কথা ছিল, বান্টির সঙ্গে ফ্যাকটরির কাজ দেখব কিভাবে চায়ের সবুজ পাতা বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে আমাদের চেনা চা পাতায় পরিণত হয়। বান্টি এখন আমাকে এক তরফা বিদায় করে দেয়। আমি ঠিক বুঝে উঠি না, আমার শুধু অস্পষ্টভাবে মনে হয়, কোনাে কিছু তাকে হঠাৎ বিচলিত করে ফেলেছে। আমি বাংলােয় ফিরে যাই। না। আমি ফিরে আসি কুলিদের দাঁড়িয়ে থাকা লাইনের কাছে।
আমি সেই মেয়েটি-যার নাম তারা, তাকে সন্ধান করি। বেশ কয়েকটি নার-যুবতী, প্রৌঢ়া, কিশােরীও দু-একজন। সকলেরই পরনে শত ময়লা শাড়ি, গায়ের রঙ কালাে, মুখে হাতে, পায়ে ধুলাের ঘন প্রলেপ, হঠাৎ একজন থেকে আরেকজনকে আলাদা করা যায় না। আমি প্রথমবার পুরাে লাইন হেঁটে গিয়েও আমার সেই মেয়েটিকে খুঁজে পাই না। চলে গেছে? আমি ঈষৎ বঞ্চিত বােধ করি। আমি আবার হেঁটে আসি লাইন ধরে ।। তারা । ঐ তাে তারা সেই মেয়েটি। আমি তার সমুখে এসে স্থির হই। ছিপছিপে শরীর, আঁটো করে জড়ানাে শাড়ি, ভােরের প্রথম আকাশের মতাে গায়ের রঙ-কালাের ভেতরে চাপা একটা ফর্সা আলাে যেন কোথায়।
ঠোট। তার ঠোট আমার চোখে পড়ে। আমি তৎক্ষণাৎ শরীরের ভেতরে মেয়েটির জন্যে বাসনা অনুভব করি। পাতলা ঠোট, জামের মতাে রঙ, সে ঠোটে ধুলাের আভাস; আমার শরীরের ভেতরে ক্ষুধা বােধ হয়। আমি একটু পিছিয়ে দাঁড়াই এবং তাকে সরাসরি দেখতে থাকি। শহরে হলে এতেঠ সরাসরি দেখতাম না, অরণ্যে ভেতরে, চা বাগানে, কুলি এক যুবতীকে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিতে হবে? অরণ্যের পরােক্ষ, আড় বা। বাঁকা বলে কিছু নেই, সকলেই সরল, প্রত্যক্ষ ও স্পষ্ট।
আমি একটা জায়গায় পাছা ঠেকিয়ে মেয়েটির রূপ গ্রহণ করতে থাকি। যতই তাকে দেখি ততই আমার রক্তে আগুন তীব্র হয়ে ওঠে। মেয়েটি, তারা নাম বলেছিল বান্টি-তারা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে চোখ ফিরিয়ে নেয়। এই চোখ ফিরিয়ে নেয়া এমন নয় যে, শহরে যেমন লজ্জায় ফিরিয়ে |
আরও পড়ুন: