পাহাড় নিয়ে কবিতা – পাহাড় চূড়ায় – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

পাহাড় নিয়ে কবিতা সমূহ – পাহার নিয়ে বেশ কিছু কবি কবিতা লিখেছেন এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর পাহাড় চূড়ায় কবিতা।

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পাহাড় নিয়ে কবিতা - পাহাড় চূড়ায় - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়।

তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি “কাকাবাবু-সন্তু” নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

পাহাড় নিয়ে কবিতা

 

পাহাড় চূড়ায় – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 

অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।
যদি তার দেখা পেতাম,
দামের জন্য আটকাতো না।
আমার নিজস্ব একটা নদী আছে,
সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।

কে না জানে, পাহাড়ের চেয়ে নদীর দামই বেশী।
পাহাড় স্থানু, নদী বহমান।
তবু আমি নদীর বদলে পাহাড়টাই
কিনতাম।
কারণ, আমি ঠকতে চাই।

নদীটাও অবশ্য কিনেছিলামি একটা দ্বীপের বদলে।
ছেলেবেলায় আমার বেশ ছোট্টোখাট্টো,
ছিমছাম একটা দ্বীপ ছিল।
সেখানে অসংখ্য প্রজাপতি।
শৈশবে দ্বীপটি ছিল আমার বড় প্রিয়।
আমার যৌবনে দ্বীপটি আমার
কাছে মাপে ছোট লাগলো। প্রবহমান ছিপছিপে তন্বী নদীটি বেশ পছন্দ হল আমার।
বন্ধুরা বললো, ঐটুকু
একটা দ্বীপের বিনিময়ে এতবড়
একটা নদী পেয়েছিস?
খুব জিতেছিস তো মাইরি!
তখন জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হতাম।
তখন সত্যিই আমি ভালবাসতাম নদীটিকে।
নদী আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিত।
যেমন, বলো তো, আজ
সন্ধেবেলা বৃষ্টি হবে কিনা?
সে বলতো, আজ এখানে দক্ষিণ গরম হাওয়া।
শুধু একটি ছোট্ট দ্বীপে বৃষ্টি,
সে কী প্রবল বৃষ্টি, যেন একটা উৎসব!
আমি সেই দ্বীপে আর যেতে পারি না,
সে জানতো! সবাই জানে।
শৈশবে আর ফেরা যায় না।

এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।
সেই পাহাড়ের পায়ের
কাছে থাকবে গহন অরণ্য, আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাব, তারপর শুধু রুক্ষ
কঠিন পাহাড়।
একেবারে চূড়ায়, মাথার
খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী,
চরাচরে তীব্র নির্জনতা।
আমার কষ্ঠস্বর সেখানে কেউ শুনতে পাবে না।
আমি ঈশ্বর মানি না, তিনি আমার মাথার কাছে ঝুঁকে দাঁড়াবেন না।
আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো,
প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী, এখানে আমি একা-
এখানে আমার কোন অহঙ্কার নেই।
এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।
হে দশ দিক, আমি কোন দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো।

 

পাহাড় নিয়ে কবিতা
লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় [ Author Sunil Gangopadhyay ]
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

পাহাড় চূড়ায় কবিতা আবৃত্তিঃ

 

 

 

পাহাড় নিয়ে আরও একটি কবিতা

 

পাহাড়ে জোছনা দেখার নিমন্ত্রণ – মোঃ নুরুজ্জামান রুবেল

 

আমি , তুমি আর ঝিঁঝিঁ ডাকা রাত,
সাক্ষী থাকবে শীতল বাতাস আর আকাশের ঐ চাঁদ।
মাঝে মাঝে দূর পাহাড়ের ঝর্নার শব্দ আসবে ভেসে,
রাতের নীরবতা ভেঙ্গে তার‍ই মাঝে উঠবে তুমি হেসে।
পাহাড়ের ঐ ঢালে বসে থাকবো দুজনে,
মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকবো আমি তোমার পানে।
যাবে তুমি আমার সাথে,
ঐ পাহাড়ে জোছনা দেখতে।
চাঁদের আলোয় ভিজবো মোরা,
দেখবো বসে পাহাড় ঘেঁষে যাচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা।
মেঘ ছোঁবে তোমার কোমল গালে,
চাঁদের আলো সঙ্গ দিবে,
এই দেখে মোর হিংসে হবে।
যাবে তুমি আমার সাথে ,
ঐ পাহাড়ে জোছনা দেখতে।

 

আরও দেখুনঃ

 

BanglaGOLN.com Logo 252x68 px Dark পাহাড় নিয়ে কবিতা - পাহাড় চূড়ায় - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

Leave a Comment