পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব ভাষণ তৈরি করবেন। বারংবার পাঠ করে উদ্ধৃত বাক্যের মর্মোদ্ধার করা প্রথম করণীয়। বাক্যের অলংকারের আড়ালে নিহিত সারসত্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। সহজ, সরল ও বাহুল্যবর্জিত বাক্য ব্যবহারে বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রয়োজনানুসারে প্রাসঙ্গিকভাবে দৃষ্টান্ত, তথ্য ও উদ্ধৃতি ব্যবহার করতে হবে।
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
পৃথিবীতে কোনো মানুষই সৌভাগ্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। সৌভাগ্য সকলেরই কাম্য। কিন্তু এ সৌভাগ্য অনায়াসলব্ধ নয়। একে অর্জন করতে হয় নিরলস শ্রম ও একনিষ্ঠ সাধনায়। পরিশ্রমই সৌভাগ্যের জন্মদাতা। ইংরেজিতে প্রবাদ রয়েছে, ‘The man is maker of his won fortune.’
সংস্কৃতে একটি কথা আছে— “দৈবনং দেয় মিতি কাপুরুষং বদন্তি” অর্থাৎ, দৈবলব্ধ অর্থের গল্পকাহিনি দুর্বল কাপুরুষের স্বপ্নবিলাস মাত্র। পৃথিবীতে এমন একটি জিনিসও নেই যা শ্রমলব্ধ নয়। নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমের ফলে অর্জিত হয়েছে সমাজ ও সভ্যতার নিরন্তর অগ্রগতি। ব্যক্তিগত ও জাতীয় উন্নতির মূলে রয়েছে পরিশ্রম। তাই, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শ্রমের কোনো বিকল্প নেই। জীবনে সফলতা অর্জনের জন্যে শ্রম অপরিহার্য। শ্রমকে উন্নতির চাবিকাঠি বলা হয়। প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, যশ-সুনাম, মর্যাদা এসবের জন্যে প্রয়োজন শ্রম ও কঠোর সাধনা।
অন্যথায় ব্যর্থতা এসে জীবনকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলে। কথায় বলে, ‘পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্য আনে সুখ’ –এ কথা তর্কাতীতভাবে সত্য। শ্রমবিমুখতা ও অলসতা জীবনে বয়ে আনে নিদারুণ অভিশাপ। ভাগ্যে নেমে আসে হতাশার কালরাত্রি। নিরন্তর ও নিরলস শ্রমে জীবনাকাশ থেকে দারিদ্র্যের ঘনঘটা দূর হয়ে সফলতার নবীন সূর্যালোক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। জীবনে অর্থ, বিদ্যা, যশ, প্রতিপত্তি অর্জন করতে হলে পরিশ্রম করতে হয়। কর্মসাধনার মাধ্যমেই জীবনে সফলতার স্বর্ণদুয়ারে পৌঁছানো সম্ভব। তাই শ্রমেই সফলতা, শ্রমেই সুখ, শ্রমই জীবন।

বাস্তব জীবনে আপাতদৃষ্টিতে যাকে সৌভাগ্য বলে মনে হয় তা আসলে মানুষের উদ্যম, চেষ্টা ও শ্রমেরই সমারোহ। আধুনিক বিশ্বের প্রত্যেকটি উন্নত জাতির উন্নয়নের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা প্রত্যেকেই নিরন্তর প্রচেষ্টা ও শ্রমসাধনার বিনিময়ে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছে। একমাত্র শ্রমশক্তির মাধ্যমেই জীবনে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য, স্থিতি ও পরিপূর্ণতা। নিরলস শ্রমসাধনায় সাফল্য অর্জন করে জীবজগতের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করেছে। সুতরাং জীবনকে সুষ্ঠু স্বাভাবিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে শ্রম ব্যতীত অন্য কোনো সহজ পথ নেই। যে জাতি পৃথিবীতে যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত উন্নত। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত পরিশ্রম এবং সাধনাই জাতির
(ক)সৌভাগ্যের নিয়ামক। সৌভাগ্যের সূচনার জন্যে তাই মানুষের নিরন্তর পরিশ্রম করা প্রয়োজন ।
(খ) পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না। পরের জন্য তোমার হৃদয়-কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও। [৮ নম্বর ভাব-সম্প্রসারণ দেখ।]
(গ) পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন, / নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন।