“নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অনবদ্য প্রেমাশ্রয়ী ও আধ্যাত্মিক ভাবসম্পন্ন কবিতা। এটি মূলত তাঁর কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি-র অন্তর্গত, যেখানে মানবপ্রেম ও ভগবৎপ্রেম মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কবিতায় কবি এক গভীর আত্মিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন—চোখে দেখা না গেলেও হৃদয়ের অন্তঃস্থলে প্রিয় সত্তা বা ঈশ্বর সর্বদা বিরাজমান।
কবিতার প্রতিটি চরণে রয়েছে গভীর প্রেম, মায়া ও অনন্ত আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। এখানে “নয়ন” কেবল শারীরিক দৃষ্টি নয়, বরং মানবমনের সীমাবদ্ধতা ও অন্তরের গভীর অনুভবের প্রতীক। দৃশ্যমান জগতের বাইরে যে অদৃশ্য অথচ সর্বব্যাপী সত্তা বিরাজ করেন, তাঁকে অনুভব করার জন্য কবি পাঠককে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এই কবিতার ভাষা সহজ অথচ হৃদয়স্পর্শী, এবং এতে রবীন্দ্রনাথের অনন্য গীতিময়তা, দার্শনিকতা ও আবেগের মিশ্রণ ঘটেছে। ফলে এটি শুধু প্রেমের কবিতা নয়, বরং ভক্তিমূলক ও জীবনদর্শনসমৃদ্ধ এক অসাধারণ কাব্য রচনা হিসেবে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে।
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।
বাসনা বসে মন অবিরত,
ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।
স্থির আঁখি তুমি ক্ষরণে শতত
জাগিছ শয়নে স্বপনে।
সবাই ছেড়েছে নাই যার কেহ
তুমি আছ তার আছে তব কেহ
নিরাশ্রয় জন পথ যার যেও
সেও আছে তব ভবনে।
তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর
সমুখে অনন্ত জীবন বিস্তার,
কাল পারাপার করিতেছ পার
কেহ নাহি জানে কেমনে।
জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি
তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যতো পাই তোমায় আরো ততো যাচি
যতো জানি ততো জানি নে।
জানি আমি তোমায় পাবো নিরন্তন
লোক লোকান্তরে যুগ যুগান্তর
তুমি আর আমি, মাঝে কেহ নাই
কোনো বাঁধা নাই ভুবনে।
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে।
![নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 1 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/03/Rabindranath-Tagore-রবীন্দ্রনাথ-ঠাকুর-2-300x167.jpg)
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে কবিতা আবৃত্তি ঃ
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে