মানুষ কবিতাটি বাংলাদেশী বিশিষ্ট কবি নির্মলেন্দু গুণ এর রচনা। নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী, যিনি ২১ জুন ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন, বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। সাধারণত তিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে সর্বাধিক পরিচিত। তিনি একজন কবি, গদ্যকার, ভ্রমণকাহিনীকার এবং চিত্রশিল্পী হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর সাহিত্যকর্মে নারীপ্রেম, শ্রেণি সংগ্রাম এবং স্বৈরাচারবিরোধী ভাবধারা গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়। নির্মলেন্দু গুণের কবিতা মানবতা, সমাজবিজ্ঞান ও রাজনীতির মিশেলে গভীর ভাবনা ও সংবেদনশীলতার ছোঁয়া বয়ে আনে। তাই তাঁর “মানুষ” কবিতাটি শুধুমাত্র একটি সৃজনশীল কাজ নয়, বরং মানব জীবনের বিভিন্ন দিক ও সামাজিক বাস্তবতার এক সূক্ষ্ম চিত্রণ।
মানুষ কবিতা – নির্মলেন্দু গুণ
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ।
আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না ।
কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি,
সকালবেলা, দুপুরবেলা অবাক করে
সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে । অবাক লাগে ।
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,
বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,
রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো ।
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন ?
মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে,
নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে,
নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে
ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে ।
মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো ,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো,
ভালোবাসার লোক থাকতো,
হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো ।
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা
আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত
বেঁচে থাকাটা আর হতো না ।
মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ;
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি ।
মানুষ কবিতা নিয়ে বিস্তারিত ঃ