নিরক্ষরতা দুর্ভাগ্যের প্রসূতি | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

নিরক্ষরতা দুর্ভাগ্যের প্রসূতি – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবেন। ভাবসম্প্রসারণ মানুষ কখনো কখনো অল্প কথায় মনের ভাব প্রকাশ করে । এই ভাবকে ঠিক রেখেই এর সম্প্রসারণ করতে হয় । ভাবসম্প্রসারণ অনেকটা ভাবার্থের বিপরীত । কোনো পদ্যাংশ বা গদ্যাংশের ভেতর একটি গূঢ় তাৎপর্য অত্যন্ত স্বপ্নায়তনে থাকে । তাকে বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করার নামই ভাবসম্প্রসারণ। ইংরেজিতে এটিকে Amplification বা Explanation of idea বলে ।

নিরক্ষরতা দুর্ভাগ্যের প্রসূতি

শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, নিরক্ষরতা যে কোনো জাতির জন্যে হুমকিস্বরূপ । শিক্ষাই আলো, নিরক্ষরতা অন্ধকার। শিক্ষা ছাড়া এ-পৃথিবীতে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই। নিরক্ষর ব্যক্তি তার নিরক্ষরতার জন্যে এ-পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ, ন্যায়-অন্যায়, লাভ-লোকসান, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ সবকিছু থেকে হয় বঞ্চিত, হয় প্রতারিত। তার জীবনটাই অভিশপ্ত ও ব্যর্থ।

 

সাহিত্য ও সৌন্দর্য | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার

 

মানবসন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই যথার্থ মানুষ হওয়া যায় না। মানুষকে যথার্থ মানুষ হতে হলে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আর এই জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার। শিক্ষার স্থান মানবজীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের উন্নতির কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীতে শিক্ষা বা জ্ঞানই একমাত্র সম্পদ যা জীবনের মতো মহামূল্যবান। জীবন ছাড়া দেহের যেমন মূল্য নেই, শিক্ষা ছাড়া তেমনি জীবনেরও কোনো মূল্য নেই । যে ব্যক্তি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তার মনুষ্যজীবন ব্যর্থ। তাকে চরম দুর্ভাগ্যের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাতে হয়। জ্ঞান- বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত নয় বলে পদে পদে সে অন্ধকার দেখে। চোখ থাকতেও সে অন্ধের মতো বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবনযাপন করে।

আধুনিক বিশ্বে অক্ষরজ্ঞানহীন ব্যক্তি প্রায় অচল। উন্নত জীবনের সঙ্গে তার পরিচয় থাকে না, উন্নত জীবন সম্পর্কে কোনো ধারণাও সে করতে পারে না। উন্নত পেশা লাভেও সে বঞ্চিত থাকে। দারিদ্র্যই তাদের জীবনের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পথ সে জানে না। এই ধরনের মানুষ শুধু ধুঁকে ধুঁকে মরে। নিরক্ষরতার অভিশাপ বয়ে বেড়ানোই এদের একমাত্র নিয়তি। শুধু ব্যক্তি জীবনেই নয়, জাতীয় জীবনেও নিরক্ষরতা দুর্ভাগ্য নিয়ে আসে।

জাতি যদি নিরক্ষর হয় তবে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হয় এবং নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় জাতীয় জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। নিরক্ষর জাতি আধুনিক উন্নত জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। বস্তুত ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত নিরক্ষর জনগোষ্ঠী তাই জাতির জন্যে বোঝাস্বরূপ।

 

নিরক্ষরতা দুর্ভাগ্যের প্রসূতি

 

শিক্ষা প্রত্যেক নর-নারীর জন্যে ফরজ। শিক্ষা ব্যতীত কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। যে দেশের লোক যত বেশি শিক্ষিত সে দেশ তত বেশি উন্নত। মানুষের পূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। শিক্ষার আলো না পেলে ব্যক্তি মানুষ যেমন বিকশিত হয় না, তেমনি দেশ ও সমাজ উন্নত হতে পারে না। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশ আজ নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তুরস্ক তার অগ্নিসন্তান কামাল পাশার নেতৃত্বে মাত্র বিশ বছরে শিক্ষার মান ৮০ ভাগে উন্নীত করেছিল। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানির মতো দেশগুলোর শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষিত। ফলে তারা এত উন্নত। আমাদের দেশেও প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বর্তমান যুগে নিরক্ষরতা মানবজীবনের সবচাইতে বড় অভিশাপ। শিক্ষা-বিবর্জিত মানুষ জাতিকে পিছিয়ে দেয়, জাতিকে পরিণত করে ন্যুব্জ, গর্বহীন, দীপ্তিহীন জনগোষ্ঠীতে। বস্তুত শিক্ষার প্রসারই পারে সব সংস্কার, জড়তা দূর করে জাতিকে গতিশীল করতে। তাই জাতীয় জীবনে তথা একটি উন্নত দেশের জন্যে চাই শিক্ষিত জনশক্তি। এজন্য বর্তমান বিশ্বে শিক্ষাকে উন্নয়নের পূর্বশর্ত বিবেচনা করা হয়ে থাকে।…… পৃথিবীতে মূর্খের কোনো স্থান নেই। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতির জন্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবন পর্যন্ত নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে সবাইকে মুক্ত করতে হবে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment